নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কথা হয়ে যায়..

নূরুল আলম রাজু, উন্নয়নকর্মী! একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত।

রাজু নূরুল

রাজু নূরুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছিটমহল বিনিময়: পতাকার অধিকারে নির্মাণ হোক দেশহীন মানুষের জীবন!

০১ লা আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩০


বৃষ্টিরুদ্ধ অলস দুপুরে টিভি দেখছিলাম! আজ টিভির প্রধান খবর ছিটমহল বিনিময়! খুবই আগ্রহ নিয়ে দেখলাম। তার মধ্যে একজন ছিটমহলবাসী নারীর দেয়া মন্তব্য বুকের মধ্যে গিয়ে বাঁধলো! প্রচন্ড আবেগ মাখা কন্ঠে তিনি বলছেন, ‘আমরাতো ৬৮ বছর পরে স্বাধীন হলাম! এই হামগো সুখ!’ বারবার মনে হচ্ছিল, ‘দেশহীন’মানুষের দেশ পাওয়ার উচ্ছ্বাসের চেয়ে সুখের কিছু নাই!

বড়ই দুর্ভাগা আমাদের প্রজন্ম! স্বাধীনতার সাধ কেমন হয় আমরা দেখি নাই। ছিটমহল বাসীর আনন্দ, মিছিলে মিছিলে মুখরিত, শিশুদের গায়ে নতুন জামা, লাল সবুজ পতাকা উত্তোলন, বুক চিতিয়ে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’ গাওয়ার দৃশ্য দেখে কিছুটা অনুভব করা যাচ্ছে। মুক্তির স্বাদ এমনই হয়। বাঁধভাঙ্গা!

একটু তথ্যের দিকে চোখ ফেরানো যাক!

ছিটমহল বিনিময় দ্বারা সব অর্থেই বাংলাদেশ লাভবান হয়েছে। বাংলাদেশ পেয়েছে ভারতের পেটে থাকা ১১১টি ছিটমহল; যার বাসিন্দা ৩৭ হাজার। ভূমির পরিমাণ ১৭ হাজার ১৬০ একর! অন্যদিকে ভারত পেয়েছে ৫১টি ছিটমহল, ৭ হাজার ১১০ একর ভূমি এবং ১৪ হাজার নতুন নাগরিক! বাংলাদেশে থাকা ভারতীয় ছিটমহলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৯টি লালমনিরহাটে যার ১৭টিতে জনবসতি নেই। চারটি পেয়েছে নীলফামারী জেলা এবং ৩৬টি পঞ্চগড় জেলায়! কুড়িগ্রামের ১২টি ছিটমহল সদর, ফুলবাড়ী এবং ভুরুঙ্গামারী উপজেলায়।

দেশ শুধু পেলে হয়না, দেশ নিয়ে গর্ব করার উপলক্ষ্যও জরুরি। দেশ রক্ষায়, দেশের জন্য কিছু করার ক্ষেত্রে সেটি প্রেরণার কাজ করে! কয়েকদিন আগে বিবিসি বাংলায় (২১ জুলাই, ২০১৫) একটা খবর পড়ে অমনটাই মনে হয়েছিল। ভারতের ভেতর থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের একজন নাগরিকও বাংলাদেশে আসতে রাজি হননি! অপরদিকে, বাংলাদেশের ভেতর ভারতের ১১১টি ছিটমহল থেকে ৯৭৯ জন ভারতের নাগরিক হতে চেয়েছেন। খবরটা পড়ে বেশ খারাপই লেগেছিল! অবশ্য এর পেছনে কারণও আছে:

ছিটমহল বিনিময় প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পরই ভারত তাদের অধিবাসীদের জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আবাসিক প্রকল্পের পাশাপাশি জীবিকায়নের লক্ষ্যে বড় ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে! যেখান থেকে অধিবাসীরা দীর্ঘ সময়ে আর্থিক সুবিধা পাবেন! অন্যদিকে বাংলাদেশে এখনো সেরকম কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। জরিপ, তালিকা বানানো আর কিছু শোডাউন ছাড়া! বরং কিছু ছিটমহলবাসী উল্টো অভিযোগ করেছেন যে, তাদেরকে জোরজবরদস্তি করে বাংলাদেশে রাখা হয়েছে! (বিবিসি বাংলা, ৩০ জুলাই ২০১৫)

এই খবরগুলো বেশ অস্বস্তির কারণ! দেশ কোনো জবরজবরদস্তির বিষয় নয়! দেশ আবেগের নাম। আবেগ না থাকলে ভালবাসাটা কোত্থেকে আসবে? ফলে জোরজবরদস্তি বাদ দিয়ে কিছু বিষয়ের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

এই মানুষগুলোর নাগরিক সুবিধা বলতে কিচ্ছু নাই। বিদ্যুত নাই। ছিটমহলের ভেতরে এবং বাইরের দুনিয়ার সাথে সংযোগের জন্যে কোন রাস্তাঘাট নাই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবেশ অনুপস্থিত! আর্থিক সঙ্গতি নেই। সব অর্থেই তারা অবরুদ্ধ!

মধ্যরাতে আলোক শিখা প্রজ্জলন করে ছিটমহল বিনিময়, বিশাল র‌্যালি এবং দেশহীন মানুষকে দেশ ফিরিয়ে দেয়া নি:সন্দেহে বিরাট সাফল্য গাঁথা! এই সাফল্যের মালা পূর্ণতা পাবে যদি তাদের নাগরিক সুবিধা ফিরিয়ে দেয়া যায়। মানুষের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করা যায়। তাদের যেন একটি দিনের জন্যেও মনে না হয় যে, বাংলাদেশে থেকে ভুল হয়েছে!

রাজনৈতিক দল, সাধারণ মানুষ আর সরকারের সম্মিলিত প্রয়াসে ৬৮ বছরের ক্ষত কিছুটা হলেও কমে আসবে! যে পতাকাটা ওরা ৬৮ বছর ধরে বুকে লালন করেছে, ৬৮ বছর পর তুলে ধরার অধিকার পেয়েছে, ওরা বুঝুক সেই পতাকার মূল্য অপরিসীম!

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:২৭

মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: এই সুবিধা বঞ্চিত মানুষ গুলো যে কতটা দুর্ভাগা সেটা একটু ভাবতে গেলেই গা শিউরে ঊঠে। আশা করব বাংলাদেশ সরকর তাদের কল্যাণে এগিয়ে আসবে (যদিও এই আশা দুরাশা)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.