নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কথা হয়ে যায়..

নূরুল আলম রাজু, উন্নয়নকর্মী! একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত।

রাজু নূরুল

রাজু নূরুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাজ কর্মচারিদের বেতন বৃদ্ধি, শিক্ষকদের আন্দোলন, ক্ষমতার মুলো আর মরিচের কেজি ৩০০ টাকা!

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:২২


বছর দুয়েক আগে, আমার এক প্রাক্তন সংঠনের হয়ে একটা পলিসি ব্রিফ করেছিলাম। বিষয় ছিলো মানসম্মত শিক্ষার বিষয়-আশয় দেখা। আমরা দেখলাম, মানসম্মত শিক্ষার জন্য সবার আগে যে বিষয়টি গুরুত্ব পাওয়া দরকার সেটি হলো, মানসম্মত শিক্ষক। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মানসম্মত শিক্ষক পাওয়া বেশ দূরহ ব্যাপার। এর কারণ অনেক: মান-মর্যাদা নেই বলে মেধাবীরা কেউ আর এখন শিক্ষক হতে চায়না। মান-সম্মান দিয়ে পেট চলেনা। শিক্ষায় টাকা নেই। অতএব শিক্ষক হয়ে নিজেরে পেটে লাথি মারার কোনো মানে হয়না। প্রচলিত আছে, এখন নাকি কারো যাওয়ার আর কোন গতি না থাকলে শিক্ষক হতে চায়। সেখানেও আবার ঠ্যালা আছে। শিক্ষক হতে হলে যে টেবিলের নিচে লেনদেনটা করতে হয়, তার বাজার কিন্তু বেশ চড়া! বছর দুই/তিনেক আগে আমার নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের সেইসব কেচ্ছা/কাহিনী আমরা পত্রিকায় পড়েছি। ফলে, বহু গ্রামে, চরাঞ্চলে বর্গা-শিক্ষকের উদ্ভব হয়েছে!

২.
আমরা খুঁজে দেখলাম, আমাদের পাশের দেশ ভারতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক বেতন পায় ১৩,০০০ রুপি। মানে বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় হাজার বিশেক টাকা। সে একই পদে বাংলাদেশের একজন শিক্ষকের বেতন ৮০০০ টাকার আশেপাশে। এখন সেটা বেড়েছে অবশ্য। প্রায় সব আফ্রিকান দেশেই একই পদের বেতন বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে ৮০০০ টাকা দিয়ে একজন শিক্ষক এবং তার পরিবার-পরিজনের পেট চলবে বলে মনে করি আমরা? ফলত: শিক্ষক হওয়া এখন পার্ট টাইম চাকুরি। কেউ পাশাপাশি গরু-ছাগল লালন পালন করে, কেউ দোকানদারি করে। একজনকে পেয়েছিলাম, যিনি স্কুলে আসার সময় হাতে করে দোকানের চাবিটাও নিয়ে আসেন। টিফিনের ফাঁকে দোকান খোলেন, তারপর ছেলেমেয়েরা এটা-সেটা কেনে এবং টিফিনের ব্রেক শেষ হলে তিনিও আবার ক্লাসরুমে ফিরে যান।

৩.
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবস্থা আরো করুণ! বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক সংগঠন করতাম। উৎসব এলে বা নিয়মিত প্রোগ্রামে শিক্ষকদের কাছে হাত পাততাম। একবার এক শিক্ষক ২০ টাকা দিয়েছিলেন, আমার খুব অভিমান হয়েছিলো। বড় হওয়ার পরে, আমি সে শিক্ষককে ক্ষমা করে দিয়েছি। তাঁর আসলে উপায়তো ছিলনা। বরং যারা উদার হস্তে পাশে দাঁড়াতেন, তাদের দেখলে এখন চোখ বড় বড় করে তাকাই। শ্রদ্ধায় অবনত হই। কলিজার প্রশংসা করি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বেতন কম পান! কিন্তু সংসারতো চালাতে হবে। অর্থনীতির শিক্ষক না হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে দু’চারটা ক্লাস নেন, কিন্ত ইতিহাসের শিক্ষক? বাংলার শিক্ষক যিনি? আমাদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েতো আবার বাংলা পড়ানো মানা। অতএব শিক্ষকরা পরীক্ষার হলে পাহারা দেয়। খাতা দেখে। ভর্তি পরীক্ষা কখন আসবে মুখিয়ে থাকে। এই কমিটি, সেই কমিটির সদস্য হয়। কনভেনশন এলে খুব নামিদামি শিক্ষককে দেখেছি লাকড়ি কমিটির প্রধান হতে। শুধু দু’চারটা টাকা পকেটে আসবে বলে। এই অপেক্ষাটা কী অন্যায়? এইভাবে, পেটে চালাতে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে হণ্যে হয়ে ঘুরতে হয়, তবে ক্লাস রুমের জন্য প্রস্তুতি কী করে সম্ভব? তখন মানসম্মত শিক্ষাকে বেশ বড়সড় বুলিই মনে হয় বৈকি। পৃথিবীর আর একটা দেশেও একজন নিয়মিত শিক্ষক পরীক্ষার হলে গার্ডের দায়িত্ব পালন করেননা।

ঘটনা যদি এখানে শেষ হতো তাহলে তো কথা শেষ হতো। শিক্ষকরা বহুদিন ধরে দাবি করে আসছেন বেতন বাড়াতে এবং এ দাবি তাদের অধিকার। সরকার মানবে কী-না, সেটা সময়ের ব্যাপার। কিন্তু যেভাবে অপমানমূলক কথা-বার্তা ছুঁড়ে দেয়া হচ্ছে, তা বেশ কষ্টকরই বটে। একজন বলছেন, ‘শিক্ষকদের জ্ঞানের অভাব সেজন্যে আন্দোলন করছে।’ আরেকজন বলছে, শিক্ষকদেরকে নাকি মনোবিজ্ঞানের ক্লাসে পাঠাতে হবে। অবশ্য গত এক দশকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যেভাবে নিজেদেরকে বেচা-বিক্রি করেছেন, এসব তাদের প্রাপ্য কীনা, সেটা্ও বিবেচ্য।

৪.
সরকারি কর্মচারিদের বেতন বেড়েছে। ৯১ ভাগ থেকে ১০১ ভাগ। সাহসী উদ্যোগ। দেশে কী এমন ঘটনা ঘটলো যে, হঠাৎ করে বেতন ১০০ ভাগ বাড়িয়ে দিতে হলো? কবে কোথায় বেতন বৃদ্ধি নিয়ে তুমুল আন্দোলন হয়েছে তাতো মনে পড়েনা! স্বীকার করি, এই বেতন বৃদ্ধির উদ্যোগ যথার্থ ছিলো। কিন্তু যে হারে বাড়ানো হলো, সে উদ্যোগ কী যথার্থ হলো? দেশের গোটা পদ্ধতির সাথে মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা কী আমাদের আছে? এই দেশের অর্থনীতির গোটা ভিত্তিটা দাঁড়িয়ে আছে বেসরকারি খাতের ওপর। দুইকোটির বেশি চাকুরিজীবির ২১ লাখ সরকারি চাকুরে। এই বেতন বৃদ্ধির সময় কী বাকিদের কথা ভাবা হয়েছে? ৯০ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিকের বেতন কী বাড়বে? আচ্ছা, বেতন বাড়ার কথা বাদ দেই। ওরা এই ঈদে ঠিকঠাক বেতনটা পাবেতো?

৫.
বেতন বেড়েছে। অতএব বাজারে আগুন লেগেছে। ঘটনা এমন, এইদেশে কেবল সরকারি চাকুরিজীবিরাই বাজার করে। আমার বাজার করে শশুর! কোনো মনিটরিং নাই। কাঁচা মরিচের কেজি ৩০০ টাকা। আচ্ছা, এক কেজিতে কয়টা কাঁচা মরিচ ধরে? ৩০০টা ধরেতো? এসবের ধার কেউ ধারেনা। দেখার কেউ নাই।

ভাবছি খরচ কমাবো! কোথায় যে কমাই? সবইতো নিত্যপ্রয়োজনীয়। আচ্ছা বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব রাখলে কেমন হয়?

না থাক! বাজার যা চড়া! যদি বলে দেয়, আপনাকে আর লাগবেনা। থাক বরং! আমি চুপচাপ থাকি।

বাজারে আগুন, মনেও আগুন! পেটটা অন্তত: বাঁচুক!!! এই যাত্রায়...

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:১১

নতুন বলেছেন: শিক্ষকের বেতন অবশ্যই বাড়ানো দরকার যাতে ভাল ছাত্ররা শিক্ষক হতে চায় তবেই নতুন পযন্ম ভালহয়ে গড়ে উঠবে।

অবশ্য আমাদের রাজনিতিকরা মনে হয়না আসলে শিক্ষার উন্নতি হোক তা চায়না। তবে জনগন তাদের নেতা হিসেবে মানবেনা। তাই তারাও লোক দেখানো উন্নতি করে শিক্ষাখাতে।

পুলিশও এমন একটা চাকুরী হয়ে দাড়িয়েছে। যে বেতন পায় তাতে ঘুষ নাহলে চলতে চায়না। তবে সুযোগ থাকলে কে কস্ট করবে বলেন?

ভাল বেতন দিয়ে যদি অন্যায়ের সাজার ব্যবস্তা থাকে তবে চাকুরি বাচাতে দূনিতি করবেনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.