নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কথা হয়ে যায়..

নূরুল আলম রাজু, উন্নয়নকর্মী! একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত।

রাজু নূরুল

রাজু নূরুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

কর দেবো! কিন্তু কেনো দেবো?

১০ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ১:০৭

প্রতি মাসে বেতন পাওয়ার পর আমার চোখে মুখে অন্ধকার নেমে আসে। অফিস আমার বেতন থেকে প্রায় ১৫% ট্যাক্স (এসেসমেন্ট সাপেক্ষে কমবেশি হয়) কেটে রাখে! সেই টাকা সরকারের খাতে জমা করে দেয় সরাসরি। আমি দুই/চার দিন হৈচৈ করি, হাহুতাশ করি। তারপর ভুলে যাই। অাবার পরের মাসে একই ঘটনা...

ব্যাপারটা এরকম নয় যে, আমি ট্যাক্স দিতে চাই না। অথবা ট্যাক্স ফাঁকি দিতে চাইছি! প্রশ্নটা হলো, আমি ট্যাক্স দেবো কেনো?
আমার দেয়া প্রতি ১০০ টাকা ট্যাক্স থেকে ২২ টাকা যায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন ভাতা বাবদ, প্রায় সাড়ে ৯টাকা যায় তারা যখন বুড়ো হয়ে যান, সেসময়ের পেনশন বাবদ! ১৭ টাকা সরকার খরচ করে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য যে ঋণ করেছে, তার সুদ পরিশোধ করা বাবদ!

অথচ কোন সেবাটা আমি পাচ্ছি?

রাস্তায় গেলে কোন পাবলিক বাস নাই। বাস পেলে বসার জায়গা নাই। সিএনজিতে উঠতে চাইবেন, সে আকাশছোঁয়া দাম হাঁকাবে। পরিস্থিতি যত বেশি প্রতিকূল, সে দামও চাইবে তত বেশি। অসহায় আত্মসমর্পণ করতে হবে আপনাকে, কেননা সেসব দেখার কেউ নেই! বাজারে জিনিসপত্রের দাম নাগালের বাইরে, মোটা চালের দাম ৫০ টাকা কেজি! মাসে মাসে গ্যাসের দাম বাড়ছে। অথচ চুলা জ্বলছে না। কুইক রেন্টাল, এটা সেটা বলা হয়েছে, অথচ সামাণ্য গরম বাড়লেই সীমাহীন লোডশেডিং! আমার ট্যাক্সের টাকায় এসব সুবিধাই পাওয়ার কথা না?

একটা জিডি করতে যাবেন থানায়, ২০০ টাকা ঘুষ দিতে হবে। আপনার একটা ফাইল নড়াতে হলে দিনের পর দিন ঘুরতে হবে। পা চাটতে হবে। পা চাটতে না চাইলে বড় অংকের টাকা ছেড়ে দিয়ে আসতে হবে। যে কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে কয়েক গুণ বেশি খরচে। একটা প্রকল্প শুরু হওয়ার সময় আছে, কখন শেষ হবে সে উপরওয়ালাও জানেন না। হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাবে ভিনদেশে! আমরা তাদের নামও জানতে পারবো না!

ফিরে আসি বেতনের প্রসঙ্গে! মূল উৎসে বড় অংকের ট্যাক্স কেটে রাখার পর, আমি সারা মাসে যা কিছু কিনতে যাবো, তার উপর ভ্যাট দিতে হবে। মাছ কিনবো? ভ্যাট দাও। মুদি দোকানে যাবো? ভ্যাট দাও! রেস্টুরেন্টে খেতে যাবো? ভ্যাট দাও! একই বেতন থেকে আমি আসলে কতবার, কত পার্সেন্ট ট্যাক্স আর ভ্যাট দেবো সরকারকে? আমার কেনো হাহুতাশ লাগবে না?

এদেশের মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই সঞ্চয়ী! সে সারা মাসে এত জায়গায়, এতভাবে ভ্যাট ট্যাক্স দেয়ার পরেও সেখান থেকে কয়েকটা টাকা সরিয়ে রাখে তার ভবিষ্যতের জন্য! অনেকটা গ্রামীণ নারীদের মুঠো চাল সঞ্চয় করার মতো! ঝড়-বন্যায় বন্ধু হিসাবে কাজ করবে। কিন্তু সরকার সেদিকেও চোখ দিয়েছে! ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করা যাক:

মন্ত্রী বলছেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কারো ব্যাংক একাউন্টে ১ লাখ ১ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা থাকলেই তাকে ৮০০ টাকা ট্যাক্স দিতে হবে। অর্থ্যাৎ, আগামীকাল আপনি তিনমাস মেয়াদি ১ লাখ টাকার এফডিআর করলে মেয়াদ শেষে ৪.৫০% হারে মুনাফা পাবেন ১,১২৫ টাকা। উৎস কর হিসাবে এই ১,১২৫ টাকার ১৫% হিসাবে কাটা যাবে ১৬৯ টাকা এবং ট্যাক্স ৮০০ টাকা। অর্থ্যাৎ মোট কাটা যাবে (১৬৯+৮০০) = ৯৬৯ টাকা । তিন মাস পরে অাপনি ফেরত পাবেন, (১০০,০০০ + ১,১২৫ -৯৬৯)= ১,০০১৫৬ টাকা। তিন মাস খাটানোর পর আপনার মোট লাভ ১৫৬ টাকা! কি করবেন এই লাভের টাকা দিয়ে?

মাঝখানে এদেশের মানুষ বিভিন্ন কো-অপারেটিভ সোসাইটিতে টাকা খাটাতে শুরু করেছিল! কিছু কিছু সোসাইটি নিজেরা লুটপাট করে ভেগে গেছে, আর বাকিদের সরকার পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করেছে! এখন সাধারণ মানুষের একমাত্র ভরসা হলো ব্যাংক! সরকার সেই সুযোগটাই নিতে চাইছে!

আরও একটা বড় কারণ হলো, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ১ লাখ থেকে ২ লাখ টাকা জমা আছে এরকম ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ৩৩ লাখ ৬২ হাজার ৯১৪! সরকার আসলে এই দানটাই মারতে চেয়েছে!

কয়েক বছর ধরে অর্থমন্ত্রী বাজেট ঘোষণার পরেরদিন সংবাদ সম্মেলন করেন। আজ সেদিকে চোখ রাখছিলাম। ভেবেছিলাম, তিনি এই বিষয়টা পুর্নবিবেচনা করবেন। তা হয়নি। তিনি আমানতের উপর সুদ বহাল রাখার পক্ষে!

আমার তখন ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেলো! শীতকালে গ্রামে চোরের উপদ্রুপ ছিল খুব বেশি। সিঁদ কেটে ঘরে ঢুকতো। যা পেতো পোটলা ভরে নিয়ে পালাতো। বিশেষ করে গরু চোরের প্রকোপ ছিল অনেক!

সম্ভবত: সেই দিন আবার আসছে! অর্থমন্ত্রীর ভয়ে লোকে টাকা পয়সা ঘরে, ট্রাংকে, সিন্ধুকে রাখতে শুরু করবে। শীতকালে মধ্যরাতে ঘুম ভেঙ্গে যাবে! দূরে কোথাও থেকে সমস্বরে শুনতে পাবো, ‘চোর! চোর!! চোর!!!

আহা শৈশব ফিরে আসছে! ধন্যবাদ অর্থমন্ত্রী!

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ২:০৪

নীল আকাশ ২০১৬ বলেছেন: ৭২-৭৫ সালে আপনাদের বাপ দাদারা দেখেছে আওয়ামী লীগ কি চীজ। তাদের কাছে শুনেও আপনাদের শিক্ষা হয়নি, এদেরকে আবার দাওয়াত করে এনে ক্ষমতায় বসিয়েছেন। বিএনপি-জামায়াত যখন ক্ষমতায় ছিল শেষ ২০০৬ সালে, তখন আপনার ইনকাম-এক্সপেন্সের সাথে এখনকার টা তুলনা করে দেখেন।
দেশে অনেকগুলো ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট অনগোয়িং। এগুলো করতে গিয়র অনেক কন্সট্রাকশন কোম্পানিকে কোটি কোটি টাকা দিতে হয়েছে। ব্যাংক থেকে লোন নিতে হয়েছে। এ টাকা জোগাড় করে দেবে কে? আপনি আমি যদি না দেই?

২| ১০ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ২:৫৭

বিজন রয় বলেছেন: দেশে এখন ভূত আছে। তাই সবাই চুপ।

৩| ১০ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:২১

তাওহিদ হিমু বলেছেন: বড় কষ্ট লাগে। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয়, দুর্নীতিবাজ লুটেরাদের ধরে জুতা পেটা করি।

৪| ১০ ই জুন, ২০১৭ রাত ৯:১৩

করুণাধারা বলেছেন: খুব ভাল লিখেছেন।

শুভকামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.