নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"আমি সেই অবহেলা, আমি সেই নতমুখ, নিরবে ফিরে যাওয়া অভিমান-ভেজা চোখ, আমাকে গ্রহণ কর\"- রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ

রাকিব আর পি এম সি

একজন মহাকাশপ্রেমী

রাকিব আর পি এম সি › বিস্তারিত পোস্টঃ

মহাকাশ পরিচিতি (প্রথম পর্ব)

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:২৫

মহাকাশের সর্বত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মহাজাগতিক বস্তুগুলোকে নিয়ে অায়োজিত ধারাবাহিক এই অালোচনার প্রথম পর্বে অাজ থাকছে গ্রহ, বামন গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণু(asteroid), উল্কা(meteoroid), ধূমকেতু(comet), গ্রহাণু বেষ্টনী(asteroid belt) ও কাইপার বেষ্টনী(kuiper belt) এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।


গ্রহ, বামন গ্রহ ও উপগ্রহঃ
→জ্যোতির্বিজ্ঞানে কোন একটি মহাজাগতিক বস্তুকে গ্রহ হিসেবে গণ্য করা হয় যখন এর নিন্মলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো থাকে-
i) যা নিজের মহাকর্ষ বলের প্রভাবে গোলাকার রূপ ধারণ করেছে
ii) যার ভর নিউক্লিয় বিক্রিয়া শুরু করার মত যথেষ্ট নয়
iii) যা তার অাশেপাশের ক্ষুদ্র বস্তুগুলোকে সরিয়ে দিয়েছে অথবা গ্রাস করেছে
iv) যা এক বা একাধিক নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে নিজ অক্ষে অাবর্তন করছে

২০০৬ সালে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন গ্রহের এই বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখপূর্বক গ্রহের সুস্পষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করে। যার ফলশ্রুতিতে প্লুটো গ্রহের তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায়। প্লুটোর ক্ষেত্রে গ্রহের অন্য সব বৈশিষ্ট্য থাকলেও এটি তার অাশেপাশের ক্ষুদ্র বস্তুগুলোকে সরিয়ে নিজের কক্ষপথকে স্বতন্ত্র করতে পারেনি। ২০০৯ সালে প্লুটোকে বামন গ্রহের স্বীকৃতি দেয়া হয়। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন বামন গ্রহেরও কিছু বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করে দিয়েছে-
i) এদের ভর গ্রহের সমান, কিন্তু গ্রহও নয়, উপগ্রহও নয়
ii) এরা সূর্যকে সরাসরি প্রদক্ষিণ করে এবং নিজস্ব অাকৃতি লাভের মত মহাকর্ষ বল রয়েছে
iii) কিন্তু কক্ষপথকে অন্যান্য বস্তু থেকে অালাদা বা স্বতন্ত্র করতে পারেনি।
প্লুটো ছাড়াও সৌরজগতে অারো ৪টি বামন গ্রহ রয়েছে- সেরেস, এরিস, হাউমেয়া এবং মেকিমেকি।


উপগ্রহ হলো এমন মহাজাগতিক বস্তু যা কোন গ্রহকে প্রদক্ষিণ করে। দুই ধরনের উপগ্রহ রয়েছে, ১) প্রাকৃতিক উপগ্রহ ২) কৃত্রিম উপগ্রহ। কোন গ্রহ, বামন গ্রহ কিংবা ক্ষুদ্র গ্রহাণুর সাথে প্রাকৃতিকভাবে বিরাজমান মহাজাগতিক বস্তুগুলোকে প্রাকৃতিক উপগ্রহ বলে। অামাদের সৌরজগতে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৪০টি প্রাকৃতিক উপগ্রহের সন্ধান পাওয়া গেছে যার মধ্যে ১৬২ টি উপগ্রহ বিভিন্ন গ্রহকে প্রদক্ষিণ করছে, ৪টি উপগ্রহ বামন গ্রহকে প্রদক্ষিণ করছে এবং অবশিষ্ট উপগ্রহগুলো অন্যান্য ক্ষুদ্র সৌরজাগতিক বস্তুকে প্রদক্ষিণ করছে। পক্ষান্তরে কৃত্রিম উপগ্রহ হলো মানুষ প্রেরিত যন্ত্রবিশেষ যা প্রাকৃতিক উপগ্রহের মতই পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে। বর্তমানে প্রায় ৪৯০০টি কৃত্রিম উপগ্রহ কক্ষপথে রয়েছে। পৃথিবীর কক্ষপথ ছাড়াও বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি গ্রহে, চাঁদ ও সূর্যে, কিছু গ্রহাণু এমনকি ধূমকেতুতেও কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানো হয়েছে।

গ্রহাণু(asteroid), উল্কা(meteoroid), ধূমকেতু(comet) ও অন্যান্য ধূলিকণাঃ
→গ্রহ, বামন গ্রহ এবং উপগ্রহ ব্যাতীত সৌরজগতের অন্য সব বস্তুকে একত্রে ক্ষুদ্র সৌরজাগতিক বস্তু বা small solar system body বলা হয়। এর মধ্যে রয়েছে গ্রহাণু, উল্কা, ধূমকেতু ও অন্যান্য মহাজাগতিক ধূলিকণা।

গ্রহাণু হলো শিলা ও ধাতু দিয়ে গঠিত মহাজাগতিক বস্তু। সাধারণত এক মিটারের অধিক দৈর্ঘ্যের বস্তুগুলোকে গ্রহাণু হিসেবে অাখ্যায়িত করা হয়। সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহাণুটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১০০০ কিলোমিটার। গ্রহাণুর তুলনায় অাকারে ক্ষুদ্র বস্তুগুলোকে উল্কা বলা হয়। অাকারে এরা ছোট ধূলিকণা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ এক মিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট হতে পারে। উল্কা যখন পৃথিবীতে প্রবেশ করে তখন বায়ুমণ্ডলের সাথে সংঘর্ষের ফলে এটি প্রচুর উত্তপ্ত হয় এবং উজ্জ্বল অালোকছটার সৃষ্টি করে যাকে অামরা তারা-খসা বা shooting star বলি।

ধূমকেতু হলো ধূলা, বরফ ও গ্যাস নির্মিত বস্তু। গ্যাসের মধ্যে কার্বন মনোক্সাইড, কাবর্ন ডাই অক্সাইড, মিথেন, অ্যামোনিয়া প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এগুলো ছাড়াও ধূমকেতুতে মিথানল, সায়ানাইড, ফরমালডিহাইড, ইথানল, ইথেন প্রভৃতি জৈব যৌগও থাকে। ২০০৯ সালে নাসার স্টার ডাস্ট মিশনে ধূমকেতুতে অ্যামিনো এসিডের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ধূমকেতুর একটি নিউক্লিয়াস এবং একটি উজ্জ্বল লেজ থাকে। নিউক্লিয়াসটি প্রস্থে কয়েকশ মিটার থেকে দশ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে এবং লেজটি দৈর্ঘ্যে কয়েকশ কোটি কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। ধূমকেতু সূর্যের দিকে অগ্রসর হলে সূর্যের বিকিরণে উদ্বায়ী পদার্থগুলো ধূলা ও গ্যাস হয়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে, যা সূর্যের অালোয় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

গ্রহাণু বেষ্টনী ও কাইপার বেষ্টনীঃ
→অধিকাংশ গ্রহাণুই মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত গ্রহাণু বেষ্টনী বা asteroid belt থেকে নির্দিষ্ট উপবৃত্তাকার কক্ষপথে সূর্যকে অাবর্তন করছে। এই গ্রহাণু বেষ্টনীর মোট ভর চাঁদের ভরের প্রায় ৪%। বেষ্টনীর প্রায় অর্ধেক ভর নিহিত রয়েছে ৩টি বৃহৎ গ্রহাণু (ভেস্তা, প্যাল্যাস ও হাইজিয়া) ও একটি বামন গ্রহের (সেরেস) মাঝে। গ্রহাণু বেষ্টনীর একমাত্র বামন গ্রহ সেরেসের ব্যাস প্রায় ৯৫০ কিলোমিটার। অপরপক্ষে ভেস্তা, প্যাল্যাস ও হাইজিয়া গ্রহাণুর গড় ব্যাস প্রায় ৬০০ কিলোমিটার। গ্রহাণু বেষ্টনীতে গ্রহাণুগুলো হালকাভাবে বিস্তৃত হওয়ায় নভোযান কোন ধরনের দুর্ঘটনা ছাড়াই এই বেষ্টনী অতিক্রম করতে পারে।

অাবার নেপচুন গ্রহের কক্ষপথ থেকে সৌরজগতের বহিঃস্থ অঞ্চলে গ্রহাণু বেষ্টনীর মত অারেকটি বেষ্টনী রয়েছে যা কাইপার বেষ্টনী(Kuiper belt) নামে পরিচিত। এটি সূর্য থেকে প্রায় ৩০-৫০ মহাজাগতিক একক দূরত্বে অবস্থিত। কাইপার বেষ্টনী গ্রহাণু বেষ্টনীর চেয়ে প্রায় ২০ গুণ প্রশস্ত এবং ২০-২০০ গুণ বেশি ভর বিশিষ্ট। এই বেষ্টনীর ক্ষুদ্র সৌরজাগতিক বস্তুসমূহ সাধারণত হিমায়িত উদ্বায়ী বস্তু যেমন মিথেন, অ্যামোনিয়া ও পানি দিয়ে গঠিত। এই বেষ্টনীতে ৩টি বামন গ্রহ রয়েছে- প্লুটো, হাউমেয়া ও মেকিমেকি।

[Note: সৌরজগতের অভ্যন্তরে বিভিন্ন দূরত্ব পরিমাপের জন্য যেই একক ব্যবহৃত হয় তাকে মহাজাগতিক একক বা Astronomical Unit সংক্ষেপে AU বলে। এক মহাজাগতিক একক হলো সূর্য থেকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ ও সর্বনিন্ম দূরত্বের গড় মান যা প্রায় ১৪৯,৫৯৮,০০০ কিলোমিটার বা ৯৩,০০০,০০০ মাইল]

তথ্যসূত্র ও ছবি কৃতজ্ঞতাঃ Wikipedia, NASA, Phys.org, solar story, express.uk, mother nature, science mag, photos gratuite

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০৬

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: চমৎকার একটা পোস্ট.......

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:২৫

রাকিব আর পি এম সি বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:০৬

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: ছবিগুলো অত্যান্ত মনোমুগ্ধকর!

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:৩৮

রাকিব আর পি এম সি বলেছেন: হুম, পুরো মহাবিশ্বটাই অপূর্ব।

৩| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:২১

রাজীব নুর বলেছেন: মহাকাশ বন্ধ করে দিচ্ছে সরকার।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৪৩

রাকিব আর পি এম সি বলেছেন: হাহাহা,,, রাজীব ভাই, সরকার বাধ দিয়ে নদীর পানিকে অাটকাতে পারে, সমুদ্রের পানিকে নয়। অার সামু তো এক মহাসমুদ্র।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.