নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজেকে একা রাখতেই বেশি পছন্দ করি, তারপরও মাঝে মাঝে এক অদৃশ্য অস্তিতকে উপলদ্ধি করি।

বিজ্ঞান আমাদের দিয়েছে বেগ, হারিয়েছি আবেগ।

বিবর্ন সভ্যতা

বিজ্ঞান আমাদের দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ, আমরা প্রতিনিয়ত প্রবেশ করছি এক বিবর্ন সভ্যতায় ।

বিবর্ন সভ্যতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক টাকায় তোমায় কেনা অতঃপর...

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:২৫

অন্যান্য সরকারি প্রাইমারি স্কুলের মত আমাদের স্কুলেও ছেলেরা একপাশে ও মেয়েদের অন্যপাশে বসতে হত। তখন আমাদের মত পিচ্ছিরা ছেলে-মেয়ের পার্থক্য বুঝতাম না জেনেও কতৃপক্ষ কেন যে একসাথে বসতে দিত না সেটা মাথায় ধর‌তো না। যাই হোক, জিবনের সেই ঐতিহাসিক ঘটনার দিনেও (পড়ুন অপমানিত হওয়ার দিনে) যথারিতি টিফিন টাইমে আমরা ৪/৫ বন্ধু একটা টেনিস বল নিয়ে ক্লাসের ভিতরেই খেলায় ব্যস্ত ছিলাম। খেলার নিয়ম ছিল, একজন দেয়ালে বল ছুড়ে মারবে তারপর সেই বল রিটার্ণ আসলে অন্যজন সেটা ক্যাচ নিয়ে আবারও পুনরাবৃত্তি করতে থাকবে। যে যত বেশি ক্যাচ নিবে সে তত ভাল পারর্ফমার হি‌সে‌বে বাপ দাদার নাম উজ্জল কর‌বে।
এই পর্যন্ত সব ঠিকঠাক চলছিল, কিন্তু আমাদের খেলাটা যে ক্লাসের অন্যপ্রান্তের গুটিকিছু মেয়ের বিরক্তির কারন হচ্ছিল তা বুঝার বা দেখার কোন আগ্রহ আমাদের ছিল না। সেই অনাগ্রহটার কারনেই আজকে এতগু‌লো বছর পরেও সেই দুঘর্টনা আগ্রহ ভরে লিখতে হচ্ছে।

খেলার একপর্যায়ে বলটা গিয়ে প্রথম সারিতে বসা এক মেয়ের মাথায় আঘাত হানল। মেয়েটা যেমন কিউট তেমনি মেধাবিও ছিল। মানুষের মত জড় পদার্থ টেনিস বলও যে মেয়ে চিনতে ভূল করে না তা সেই প্রাইমারিতেই বুঝে গিয়েছিলাম। মে‌য়ে‌টির মাথায় যতটা না আঘাত লেগেছিল তার থেকে অভিযোগ মিশ্রিত চিৎকারের গতি ছিল প্রায় দ্বিগুন। তার ওভার এ্যক্টিংএ মেজাজ পুরাই চরমে, আমরা বললাম এটাতে এত কান্নার কি আছে? ওমা সে কি !! এতে তার কান্নার ভলিউম আরো জোরালো হয়েছে। মনে হয় যেন চার্জ শেষ হওয়া ব্যাটারি নতুন করে চার্জ হয়েছে। সুন্দ‌রির ওভার এ্যাক্টিং কান্নাকাটিতে বিরক্তপ্রায় আমি আমার এক বন্ধুকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলাম রমনীকে যেন ১ টাকা দামের কোন চুইংগাম কিনে এনে দেয়। আমার ধারনা ছিল চুইংগাম চিবাতে চিবাতে তো কান্নার আসল টোন আনা সম্ভব হবে না সুতরাং এইটা একটা সমাধান হলেও হতে পারে। কিন্তু বিধি বাম, সমাধানের আগেই সমস্যাটা বিস্ফোরিত হয়ে গিয়েছিল। কারন ততক্ষনে কান্নার শব্দে FBI খ্যাত ম্যাডামরা ক্লাসে এসে হাজির । মহিলাদের সময়ের ব্যাপারে এত পারফেক্ট টাইমিং ইতির্পূবে আমি কখনো দেখি নাই। এখানে একটা বিষয় বলে নেয়া ভাল আমাদের স্কুলে একমাত্র হেডস্যারই ছিল পুরুষ বাকি সবাই (প্রায় ১০/১২ জন ) ম্যাডাম । সুতরাং তাদের আধিপত্যটাও ছিল দেখার মত । ক্লাসে প্রবেশ করার পরেই ঘটনা জানার জন্য তাদের অতি উৎসাহ আমাদের মনে ভয়ের সঞ্চার করেছিল। আমরা ৪ জন বন্ধু সশ্রম কারাদন্ড প্রাপ্ত আসামির ন্যায় ক্লাসের এক কোনে দাড়িয়ে ছিলাম। এইদিকে ঐ মে‌য়ের এত এত কাল্পনিক ও অতিরন্জিত নির্যাতনের বর্ননা শুনে ম্যাডামরা তো আমাদের দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছিল যেন আমরা এইমাত্র ধর্ষনকার্য সমাপ্ত করে ধরা পরেছি। তার সাথে সহযোগি হিসেবে বান্ধবিরাও তালে তাল মিলাচ্ছে যেন তারাও মাথায় সমপরিমান আঘাত পেয়েছে। সমস্ত অভিযোগের মধ্যে হাইলাইট করা অভিযোগটি ছিল- আমি নাকি তাকে ১ টাকা দিয়ে বাজার থেকে কিনতে চেয়েছিলাম!! এইটা কেন, কোন উদ্দেশ্য নিয়ে বলা হয়েছিল তা আজও অজানা। কিন্তু অজানা হলেও এর প্রভাব ছিল ব্যাপক। বাজার থেকে কোন মেয়েকে কিনে আনা দ্বারা ঠিক কি বুঝানো হয়, সেটা বুঝার মত ক্ষমতা নিশ্চয় আজ থেকে ২০ বছর আগের কোন প্রাইমারি স্কুলের ছাত্রের বুঝার কথা নয়। আমরা না বুজলেও আমাদের মহামান্য ম্যাডামরা ঠিকই এর অস্বাভা‌বিক অনুবাদ করে আমাদের দোষারোপ করেছিলেন।

তারপর আমাদের অভিবাকদের ডাকা হল। তাদের এবং পুরো ক্লাসের স্টুডেন্টের সামনে আমাদের‌কে মেয়ে মানুষ কেনার (¡¡) অভিযোগে অভিযুক্ত করে ১০০ বার কান ধরে উঠাবসা সহ ম‌নের মাধু‌রি মি‌শি‌য়ে বেত্রাঘাত করা হয়েছিল। তখন ক্লাসের কোন মেয়ের ঠোটের কোনায় হাসির রেখা ফুটে উঠেছিল, কারো বা করুনামিশ্রিত দৃস্টি, কারো বিমষৃ চোখগুলি আমাদের অবলোকন করছিল। কোন মেয়েকে বাজার থেকে কেনাটা (যদিও ১ টাকার চুইংগাম কিনার কথা ছিল) যে কি কারনে এত গুরুতর অন্যায় হতে পারে তা আমার কাছে পরের ১০ বছর রহস্যই থেকে গিয়েছিল। শাস্তির কথা প্রায় ভু‌লেই গে‌‌য়েছিলাম কিন্তু এবারও বিধি বাধ সাধল।

ক‌লে‌জে পড়ার সময় এক স্যারের কাছে প্রাইভেট পরার জন্য নতুন ব্যাচে জয়েন্ট করলাম। প্রথমদিনে ব্যাচের এক মেয়ের দিক থেকে চোখ সরাতেই পারলাম না। কেমন যেন মনে হতে লাগল সে তো আমার জনম জনমের পরিচিত (অনেকটা বাংলা ফিল্মের মত)। কিন্তু ঠিক কিভাবে পরিচিত সেটা বুজতে শত চেস্টা ক‌রেও ম‌নে কর‌তে পারলাম না। দ্বিতীয় দিনে প্রাইভেটে তাকে নিয়ে অনেক গবেষনা করার পর বুজতে পারলাম তিনিই সেই রমনী যার কারনে আমার ১ টাকার হিসেব মিলাতে দশ বছর সাধনা করতে হয়েছিল। সেই চেহারা, সেই মেয়ে এখন পরিপূর্ন এক যুবতিতে পরিনত হয়েছে চিনতে তো একটু কষ্ট হওয়ারই কথা । তবে সে আমাকে চিনতে পেরেছিল কিনা তা আজও জানতে পারিনি। এবং আ‌মিই যে সেই স্বনামধন্য ব্য‌ক্তি সেট‌া তাকে জানতে দেয়ার সুযোগ না দি‌য়েই তৃতিয় দিন থেকে আমি আর সেই প্রাইভেটে যাইনি। যেখানে হিসাববিজ্ঞান শিখতে গিয়েছিলাম জিবনকে গড়ার জন্য সেখানে জিবন ভাঙ্গার হিসাবটাই যে মিলিয়ে নিয়েছিলাম। সেই সাথে দশটি বছর ধরে রহস্য হয়ে থাকা সেই ১ টাকার হিসাবও…!!

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:৪৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


লেখায় গতি ও প্রাণ আছে; মেয়েটাকে চেনার পর, আপনি তার সাথে বাল্যকালের সেই স্মৃতি নিয়ে কথা না বলে কেটে পড়েছিলেন?

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:১৫

বিবর্ন সভ্যতা বলেছেন: ধন্যবাদ। না কেটে পরে উপায় কি বলুন...
প্রাইমারিতে দিয়েছিল বাজারি মেয়ে কেনার অভিযোগ, এখন তো কলেজে নির্ঘাত রেপ কেস দিয়ে দিবে। :P

২| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৪৪

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: কথা বলা উচিত ছিল। এখন তো বাকী জিন্দেগী এই আফসোস থেকে যাবে ঐ ঘটনার পর মেয়েটার খারাপ লেগেছিল কিনা জানার জন্য...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.