নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজেকে একা রাখতেই বেশি পছন্দ করি, তারপরও মাঝে মাঝে এক অদৃশ্য অস্তিতকে উপলদ্ধি করি।

বিজ্ঞান আমাদের দিয়েছে বেগ, হারিয়েছি আবেগ।

বিবর্ন সভ্যতা

বিজ্ঞান আমাদের দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ, আমরা প্রতিনিয়ত প্রবেশ করছি এক বিবর্ন সভ্যতায় ।

বিবর্ন সভ্যতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কমফোর্ট জোনের প্রতি ভালোবাসা

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৮:৪৭

বিড়ালের একটা স্বভাব আছে। যেকোন পরিস্থিতিতে নিজের আশেপাশের সবচেয়ে আরামের জায়গাটা খুঁজে বের করে সেটাকে নিজের আস্তানা বানিয়ে ফেলা। একবার আস্তানা গাড়ার পর তাকে কোনভাবে সরানো যায় না। দুনিয়াদারি সম্পর্কে নির্বিকার হয়ে আয়েশি ভঙ্গিমায় শুয়ে বসে, নির্লিপ্ত দার্শনিকের চোখে সে চারপাশ পর্যবেক্ষন করতে থাকে। ইউটিউবে এরকম অনেক মজার মজার ভিডিও পাবেন। চার বছর আগের শীতে সিরিয়াতে মাউন্টেড মেশিনগানের ওপর গুটিসুটি মেরে বসে থাকা বিড়ালের ছবিও দেখেছিলাম। বিড়ালের এ স্বভাব একটু অন্যভাবে মানুষের মাঝেও বিদ্যমান। যেকোন পরিস্থিতিতে একটা কন্সিডারেবল সময় থাকতে হলে মানুষ নিজের জন্য একটা কমফোর্ট যোন বানিয়ে নেয়। অবস্থা, প্রেক্ষাপট পারিপার্শ্বিকতা যতোই খারাপ হোক না কেন, মানুষ তার কমফোর্ট জোন থেকে নড়তে চায় না। সেই কমফোর্ট জোন যতোই তুচ্ছ বা ঠুনকো হোক না কেন।
.
একজন কয়েদীর কথা চিন্তা করুন। সব বিচারে পার্থিব সম্পদ থেকে মুক্ত একজন মানুষ। তার কাছে তেমন কিছু থাকে না। প্রতিদিনের ব্যস্ত রুটিন, জীবিকার পেছনে ছোটা, সামাজিকতা, কোন কিছু নিয়েই তাকে মাথা ঘামাতে হয় না। তার পার্থিব সম্পদ বলতে সর্বসাকুল্যে হল বিছানা বালিশ, থালা বাসন, কিছু শুকনো খাবার, কিছু পোশাক, হয়তো বা কিছু বই, সাবান, ব্রাশ, টুথপেইস্ট ইত্যাদি। এরকম পরিস্থিতিতে বস্তুবাদী ভালোবাসা থেকে মুক্তি পাওয়া অনেক সহজ হবার কথা। অ্যাটলিস্ট থিওরি তাই বলে। কিন্তু আসলে হয় উল্টোটা। দেখা যায় এসব তুচ্ছ সম্পদ নিয়েও কয়েদীরা ঝগড়া-মারামারি করে। একটা স্যাঁতস্যাঁতে বিল্ডিংয়ের, স্যাঁতস্যাঁতে সেলের কোন কোণায়, কোন দেয়ালের পাশে তার “সিট” পড়ছে এ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। দিন কাটে আজকের খাবার কী দেয়া হবে, এ সপ্তাহে কি ইমপ্রুভড ডায়েট দেয়া হবে কি না – এসব নিয়ে গবেষণায়। কখন যদি তার সেল বদলে দেয়া হয় তখন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বস্তুর সংস্পর্শ থেকে প্রায় মুক্ত অবস্থায়ও মানুষ বস্তুর মায়া কাঁটাতে পারে না। সবচেয়ে আনকমফোর্টেবল অবস্থাতেও মানুষ নিজের মতো করে একটা কমফোর্ট জোন বানিয়ে নেয়। একেক জনের কমফোর্ট জোন একেক রকম হয়। কিন্তু সবাই নিজ নিজ কমফোর্ট যোনকে প্রায় একই ধরণের তীব্রতার সাথে আকড়ে ধরে রাখে।
.
কমফোর্ট জোন গুলো অনেকটা ইকুইলিব্রিয়াম পয়েন্টের মতো। মানুষ সহজে এখান থেকে নড়তে চায় না। কেবল তখনই নড়ে যখন বর্তমান জোনের চেয়ে আরো উন্নত কোন কমফোর্ট জোনে যাবার সুযোগ আসে। বিড়ালের মতোই মানুষকে তার কমফোর্ট যোন থেকে নাড়াতে গেলে মেলা হ্যাপা। রেগে যায়, ফুঁসে ওঠে, গজগজ করে, অনেক সময় আক্রমন করে বসে। যে সত্য স্বীকার করলে নিজের কমফোর্ট জোনকে ত্যাগ করতে হবে, মানুষ সেটা স্বীকার করতে চায় না। নানা যুক্তি, নানা ছুতো, নানা বাহানা খোঁজে সত্যকে অস্বীকার করার জন্য। না পারলে, নিদেনপক্ষে আড়াল করার জন্য।
.
মনে করুন একটা জলপ্রপাত। একটা নৌকা ভর্তি কিছু মানুষ। নৌকা নিশ্চিত পতনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় একজন উঠে দাঁড়িয়ে নৌকার গতিপথ পরিবর্তনের চেষ্টা করলো। নৌকা দুলতে শুরু করলো। নিশ্চিত পতনের দিকে এগিয়ে যাওয়া নৌকার মধ্যে কমফোর্ট যোন খুঁজে পাওয়া অন্য যাত্রীরা উঠে পড়ে লাগবে, ঊঠে দাঁড়ানো লোকটার বিরুদ্ধে।
.
“নৌকা দুলাচ্ছো কেন? নৌকা উল্টে যাবো তো! স্থির হয়ে বসতে পারো না!”
দুলতে থাকা নৌকার চেয়ে নিশ্চিত পতনের দিকে এগিয়ে যাওয়া নৌকার কমফোর্ট জোনে স্থির হয়ে বসে থাকায় অধিকাংশের কাছে পছন্দনীয়।
.
অধিকাংশ মানুষ নমরুদ, ফিরআউন, কিংবা আবু জাহলের অবস্থানে থাকে না। সত্যকে মেনে নেয়ার কারণে সারা দুনিয়াব্যাপী সাম্রাজ্য, বিপুল ক্ষমতা, নেতৃত্ব , আধিপত্য হারানোর ভয় অধিকাংশের থাকে না। অধিকাংশ মানুষ হয় সাধারণ। তাদের অবস্থা হয় সাধারণ। অনেক কিছু হারানোর ভয়ে তারা সত্যকে অস্বীকার করে, সত্যকে ভুলে থাকে – এমন না। তারা ছাপোষা, মিডিওকার, তুচ্ছ গৃহী জীবনের মোহে, কমফোর্ট জোন থেকে সরার অনীহার কারণে সত্যকে ভুলে থাকে। সত্য নিয়ে চিন্তা বন্ধ রাখতে চায়। তারা নিজেদের জন্য একটা রুটিন বানিয়ে নেয়, জীবনের একটা নির্দিষ্ট ভাসর্ন বানিয়ে নেয়। আর যা কিছু এ খেলাঘরের জন্য হুমকি স্বরূপ তার বিরোধিতা করে। কারণ সত্যকে স্বীকার করতে গেলে কমফোর্ট জোন থেকে সরতে হয়। নৌকা দোলাতে হয়। নিজের কিছু পছন্দের জিনিস ছাড়তে হয়। কিন্তু বিনিময়ও পাওয়া যায়। সাহাবীদের রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া আজমাইন, জীবনির দিকে তাকালে ছবিটা আরো পরিষ্কার বুঝতে পারবেন।
.
বছরের পর বছর যাবার পর, ভুলকে ভুল হিসেবে চেনার পর, সত্য আমাদের সামনে প্রকাশিত হবার পরও আমরা যে নিজেদের বদলাতে পারি না। ভুল শোধরাতে পারি না, তাওবাহ করতে পারি না, সাধারণ হয়েও অসাধারন হয়ে উঠতে পারি না, তার কারণ হল এই বিড়াল প্রবণতা। কমফোর্ট জোনের প্রতি ভালোবাসা। এটা আমাদের সবার গল্প। তবে সফল তাঁরাই যারা সত্যের কারণে নিজ নিজ কমফোর্ট জোন থেকে সরে আসেন, দেরিতে হলেও।
.
#KnowYourDeen

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:১৫

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: খুব ভাল লিখেছেন।
আমাদেরকে সব সময় সত্যটা মেনে নিতে শিখতে হবে।

২| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:২৭

চাঁদগাজী বলেছেন:



এগুলো আপেক্ষিক, কমফোর্ট জোন আছে, কমফোর্ট জোন থাকে না; উহা চিরস্হায়ী হলে ফরাসী বিপ্লব হতো না, মুক্তিযুদ্ধ হতো না

৩| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: লেখাটা পড়ে ভালো লাগলো।
সহজ সরল ভাষায় সুন্দর লিখেছেন।

৪| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:৩০

কামরুননাহার কলি বলেছেন: ভালো লাগলো।

৫| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:৫৮

সৈয়দ ইসলাম বলেছেন:
বিড়ালের উদাহরণটা ভালই লাগলো। সর্বোপরি সাজানো কথাগুলো।

কিন্তু কমফোর্ট জোন থেকে সরে আসা তেমন সহজ বলে মনে হয় না। কারণ মানুষ সর্বক্ষণ এমনটাই চায়। আর তার চাওয়া থেকে সে কখনো সরে না। যদিও অনেক ক্ষেত্রে সরা উচিত

৬| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:২২

কৃষ্ণ কমল দাস বলেছেন: সত্যিই বলেছেন

৭| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১২

এম. হাবীব বলেছেন: আপনার উপলব্ধি ও উপস্থাপনা দুটোই সাবলিল হয়েছে।
এটা মানুষের সহযাত প্রবৃত্তি। মানুষ এর থেকে বের হতে চায় না।

মনে হয় বিড়াল থেকে শিখেছে :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.