নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাতুল ভাই

সব কিছু নিয়েই ভাবি সবকিছু নিয়েই লিখি৷

রাতুল ভাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

শুভর ওয়ার্নিং এবং কিছু আলাপ প্রলাপ

০৫ ই মে, ২০১৫ রাত ১০:০৯

অগ্নি, তারকাটা, কিস্তিমাত, ছুয়ে দিলে মন আরেফিন শুভর পর পর চারটা গতানুগতিকের বাইরের মুভি দেখার পর অনেকেই ওয়ানিংয়েও অসাধারন কিছু আশা করছিলেন৷ আপনিও যদি এ আশা করে থাকেন তবে আমার মতে আপনার জন্য ওয়ারনিং না দেখাটাই উত্তম৷ কারন ওয়ারনিং আর পাঁচটা সাধারন মানের ঢালিউড সিনেমার মতোই একটি সিনেমা৷

গল্পটা অবশ্য খারাপ ছিল না৷ নিসন্দেহে এ কাহিনী কোন মেধাবী পরিচালকের হাতে পড়লে আমরা টানটান উত্তেজনা পূর্ণ একটা ছবি উপহার পেতাম৷ কিন্তু আফসোস ভালো জিনিস ভুল মানুষের হাতে পড়েছে৷ ফলে যা হবার কথা তাই হয়েছে৷ ইলিশ মাছ যদি মূলা দিয়া রান্না করা হয়, তবে কি আর ইলিশের টেস্ট থাকে? এ কাহিনীর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে দুর্বল নির্মান শৈলীর কাছে ভালো কাহিনী মার খেয়ে গেছে৷

ছবির লোকেশন গুলো ছিল একেবারে যা তা! সাধারন মানের বাংলাদেশি সিনেমায় যেমনটা হয় আরকি৷ এদেশের নাটক/টেলিফিল্ম গুলোতেও হয়ত পরিচালকরা লোকেশনের ব্যাপারে এর চেয়ে বেশি সিরিয়াস হয়৷ আসলে বুঝতে হবে তো পরিচালকটা কে? বছরে পাঁচটা ছবি পরিচালনা করা পরিচালকের কাছে লোকেশনের দিকে নজর দেওয়ার সময় কৈ? আসলে ফিল্মটা কোন ডিরেক্টরের কাছে একটা শিল্প আবার অনেকের কাছে শুধুই টাকা কামানোর ধান্দা৷ অবশ্য শুধুই টাকার জন্য যারা সিনেমা বানায় তাদেরকে ডিরেক্টর না বলে কনট্রাক্টর বলাই শ্রেয়৷ কেননা এরা কনট্রাক্টরদের মতোই গুজামিল দিয়ে কোন রকমে কাজ শেষ করে৷ কে জানে এরা কনট্রাক্টারদের মতো কম টাকা দিয়ে ফিল্ম বানিয়ে প্রযোজকের বাকি টাকা পয়সাও মেরে দেয় কিনা!? যাইহোক, এ ব্যাপারে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই, কেননা এতো অনিয়মের পরও প্রযোজকরা এসব কনট্রাটারদের ওপরই বিশ্বাস করতে ভালবাসে, তাইতো এদের হাতে ফিল্মের অভাব হয় না৷

ছবির সংলাপ গুলোও নিম্নমানের এবং অনেক ক্ষেত্রেই বিরক্তিকর৷ যদিও গতানুগতিক ধারার ছবি গুলোতে এধরনের সংলাপ সরচারাচরই দেখা যায়৷ তাছাড়া ছবির চিত্রনাট্যকারও যে আরেক কনট্রাক্টার লেভেলের লোক৷ বছরে ডজন খানেক ছবির চিত্রনাট্য না কপি করে তো এই মক্কেল থাকতেই পারে না!

এছাড়া এ্যাকশন দৃশ্যে ফাইটিং গুলোও ছিল সাধারন মানের৷ তবে বাংলাদেশী সিনেমায় অতীতেও তেমন আহামরি মানের ফাইটিং দেখা যায়নি! সেই বিবেচনায় এ ছবির ফাইটিংকে পাশ নম্বর দেওয়া যায়৷

ছবিতে চোখে পড়ার মতো অনেক অসামঞ্জস্যতা ছিল৷ যেমন:

টিভি চ্যানেলের অফিসের সেট এরকম ফকিন্নি মার্কা হয় কখনও???

শুভর ভয়ে মিশা তেলের ট্যাংকারের ভিতরে থাকে! ক্যামনে সম্ভব!???

দুজন মেয়েকে সাদা সার্ট আর হুন্ডার হেলমেট পরাইয়া দিলেই কি বোম্ব স্কোয়াড হইয়া যায়???

নারী পাঁচাকারীদের আস্তানায় ঢুকে পড়েছে টিভি সাংবাদিক মাহি! সাথে করে নিয়ে আসা ক্ষুদে ক্যামেরার মাধ্যমে সে দৃশ্য আবার টিভিতে সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছে! কিন্তু বাইরের গাড়িতে যেটায় মাহির সহকর্মী অবস্থান করছিল সেটায় কোন স্যাটেলাইট সদৃশ্য কিছু ছিল বলে মনে পড়ছে না! শুধু সহকর্মী মেয়েটায় সামনে একটা ল্যাপটপ ছিল! তবে কি আমাদের প্রচার ব্যাবস্থা আজকাল এতোই উন্নতি করেছে যে, শুধুমাত্র একটি ল্যাপটপের মাধ্যমে টিভিতে কোন জিনিস সরাসরি সম্প্রচার সম্ভব হচ্ছে!!

এরকম আরও অনেক অসামঞ্জস্যতা ছিল যেগুলো উল্লেখ করে অযথা লেখা দীর্ঘায়িত করতে চাই না৷

এবার আসি অভিনয়ের প্রসঙ্গে৷
ছবিতে মাহি শুরুর দিকে একটু একটু ন্যাকামি করেছে যা বিরক্তিকর ছিল, যদিও পরেরদিকে ব্যাপারটা সহনীয় পর্যায়ে চলে আসে৷ মাহির ভাই ও সি আই ডি অফিসারের চরিত্রে রুবেল বিশেষ কিছু করতে পারেনি৷ পুলিশের চরিত্রে কমেডিয়ান চিকন আলীর পারফারমেন্সটা উল্লেখ করার মতো৷ মিশা সওদাগরের সিংহভাগ ছবির মতো এ ছবিতেও ওনাকে ভিলেন হিসেবে লুইচ্চা ও চামার টাইপ একটা চরিত্র দেওয়া হয়েছে! আসলে আমাদের দেশের ডিরেক্টরদের কুসংস্কার ভিলেনরা শুধুই চামার,কসাই হবে, ওরা সারাদিন মদ গিলবে, বারে বসে নেংটা নাঁচ দেখবে এবং কারনে অকারনে আঞ্চলিক ভাষায় অশ্রব্য গালিগালাজ করবে৷ কিন্তু ভিলেন ব্যাতিক্রম ক্যারেক্টারেরও হতে পারে উদাহরন: কলকাতার রজদভ দত্ত৷ অতএব ডিরেক্টদের উচিত সব ধরনের কুসংস্কার থেকে বের হয়ে নতুন কিছু করে দেখানো৷ বিশেষ করে যখন আমাদের ইন্ড্রাস্ট্রীতে মিশা সওদাগরের মতো প্রতিভা আছে তখন তারা চাইলেই অনেক ব্যাতিক্রম কিছুর চেষ্টা করে দেখাতে পারে৷ হুম,, মিশাকে কাজে লাগিয়ে কত কি করা সম্ভব তার একটা ঝলক আমরা কয়েক সাপ্তাহ আগেই "ছুয়ে দিলে মন" সিনেমায় দেখেছি৷ যাইহোক, ছবিতে সবচেয়ে নিখুত অভিনয় করেছে নায়ক আরেফিন শুভ৷ বিশেষ করে পাঁচটি ছদ্নবেশে অভিনয়টা দর্শককে একটু হলেও মুগ্ধ করেছে৷ এছাড়া অন্যান্যরা কোন রকমে চালিয়ে নেওয়ার মতো অভিনয় করেছে৷

ছবির নির্মান যে আহামরি হবে না সেটে হলে যাওয়ার আগেই জানতাম৷ তবে ছবিটা দেখে প্রান খুলে হাসার আশা করেছিলাম৷ কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে পুরো ছবিতে দর্শক হেসেছে বড়জোর ছয় সাত বার৷ এর মধ্যে চিকন আলীর কমেডিতে আমি একটু আধটু হেসেছি৷ এছাড়া স্টার জলসার পাখিকে নিয়ে একটি সিকোয়েন্স ছিল যেটি বেশ বিনোদন দিয়েছে৷

ছবির আইটেম গানটার কথা উল্লেখ না করলেই নয়৷ ভারতীয় সিনেমাকে অনুসরন করে ছবিতে আইটেম গান রাখা মন্দ কিছু নয়৷ কেননা এর দর্শক চাহিদা রয়েছে যথেষ্ঠ৷ কিন্তু যখন সব সিনেমায় একই সেটে একই মহিলাকে দিয়ে একই ধরনের আইটেম গান বারবার করানো হয় তখন বিরক্তি প্রকাশ করতেই হয়৷ বিপাশা কবীরকে দিয়ে আর কয়দিন??? এবার প্লিজ নতুন কিছু করুন নতুন কাউকে আনুন৷

ছবির একমাত্র ভালো দিক ছিল এর গান৷
একেকটা গান যেন গোবরে পদ্নফুল৷
"ফেসবুকেতে নেই" গানটা যেমন শ্রুতিমধুর ছিল তেমনি কোরিওগ্রাফিটাও ছিল খুবই মজার এবং যুগপোযোগী, চিত্রায়নটাও ভালো ছিল৷ "এক্সকিউজমি" গানটায় নতুন কিছু করার চেষ্টা করা হয়েছে যা প্রশংসার দাবিদার৷ "শোন তুমি" গানটাও দেশীয় লোকেশন ব্যাবহার করে অসাধারন ভাবে চিত্রায়ন করা হয়েছে৷ তবে মন ছুয়ে গেছে জেমসের "এতো কষ্ট" গানটা৷ গানটার মিউজিক ভিডিও যখন অনলাইনে উন্মুক্ত করা হয় তখন এটার কোরিগ্রাফি ও চিত্রায়ন নিয়ে অনেকেই আপত্তি করেছিলেন৷ কিন্তু সত্যি কথা বললে "হলের বড় পর্দায় ঐ চিত্রায়ন আর কোরিওগ্রফিটাই অসাম মনে হচ্ছিল! হয়ত পুরো ছবি জুড়ে বহু অসামঞ্জস্যতা দেখার প্রভাবেই এটাকে অমৃত মনে হচ্ছিল৷ মোট কথা গান গুলো দেশীয় লোকেশনে সল্প অয়োজনের মধ্যে যেভাবে চিত্রায়ন করা হয়েছে সেটা প্রশংসার দাবিদার৷ গানগুলোও কিন্তু সাফির নির্দেশনাতেই নির্মিত হয়েছে৷ তবে কি সাফির দ্বারাও ভালো ছবি নির্মান সম্ভব??? আমার মতে অবশ্যই সম্ভব৷ আরে এই সাফিইতো কয়েক বছর আগে "পূর্ণ দৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী" এর মতো সিনেমা বানিয়েছিলেন৷ অতএব সম্ভব তবে তখনই যখন তিনি ছবি ঠিকাদারি নয় বরং ছবি পরিচালনা করবেন৷

উল্লেখ্য ছবিটা আমি গত রবিবার তিনটার শো'তে কুমিল্লার মধুমতি সিনেমা হলে দেখেছিলাম৷ হলে আশি ভাগ দর্শক ছিল!
আমার পাশের সিটেই বসে ছিল চশমা পড়া একটা ছেলে৷ ছেলের হাব-ভাব দেখে মনে হচ্ছিল হলে নতুন, এবং ভদ্র ঘরের সন্তান৷ তাই জিগেস করলাম হলে প্রথম নাকি? জানাল এটার দ্বিতীয় বার প্রথম বার এসেছিল "ছুয়ে দিলে মন" দেখতে৷ কথায় কথায় আরও জানতে পারলাম ওর নাম ছায়মন এবং সে ইবনে তাইমিয়া স্কুলের নবম শ্রেনীর ছাত্র৷ স্কুল বন্ধ এই সুযোগে বাড়ির সবাইকে প্রাইভেটের কথা বলে বোকা বানিয়ে হলে চলে এসেছে! আরও জানতে পারলাম সে নাকি সেদিন প্রথমে রূপালি হলে গিয়েছিল৷ সেখানে ছবির মান তেমন ভালো না বিধায় এই হলে এসেছে! আরও জানালো ঐ হলে নাকি তার কাছে ষাট টাকার টিকেট আশি টাকায় বিক্রি করা হয়েছিল! বুঝুন কান্ড এমনিতেই টিকেটের দাম নেয় ষাট টাকা অথচ টিকেটে লেখা থাকে বিশ টাকা তার ওপর নতুনদের কাছ থেকে সুযোগ পেলেই দশ বিশ টাকা বেশি মারে! এরকম করলে নতুন দর্শক কেন মরতে আসবে হলে??? যাইহোক এ ঘটনা থেকে একটা ব্যাপার উপলব্ধি করলাম৷ ভালো ছবি নির্মান হলে এমনিতেই নতুন ও মানসম্মত দর্শক তৈরি হবে৷ ঐ ছেলেটি দ্বিতীয় বারের মতো হলে এসেছিল কারন দুই সাপ্তাহ আগে উপভোগ করা "ছুয়ে দিলে মন" ছবিটি তার ভালো লেগেছিল৷ সেই মোহ থেকেই তার আবার হলে ছুটে আসা! নিয়মিত দর্শক আসলে এভাবেই তৈরি হয়৷ তবে ছেলেটি যদি প্রথমবার হলে এসে "ছুয়ে দিলে মন" না দেখে কোন নিম্নমানের ছবি দেখত তবে কি সে সারা জীবনেও আর হলের চৌকাঠ পেরোত??? উত্তরটা আপনারাই ভালো বলতে পারবেন৷

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই মে, ২০১৫ রাত ১০:৪৮

আহসানের ব্লগ বলেছেন: দেখতে হবে মুভিটা ।

০৬ ই মে, ২০১৫ সকাল ৮:২৮

রাতুল ভাই বলেছেন: এটা পড়ার পরেও দেখবেন!!!
@আহসানের ব্লগিং

২| ০৬ ই মে, ২০১৫ সকাল ১০:২২

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: খুব চমৎকার একটা রিভিউ। খুব ভালো লেগেছে। সত্যি বলতে আমি মনে করি, মাহির অভিনয় প্রতিভা নষ্ট হচ্ছে আপনার ভাষায় কিছু ডিরেক্টর নামের কন্ট্রাক্টরের হাতে পড়ে। অভিনয় শেখানোর চাইতে কিভাবে আবেদনময়ী হওয়া যায়, তাই শিখাচ্ছে।

আমার মুভির পোস্টারটা দেখে কেন যেন মনে হইছিল, কোন ঝামেলা আছে, আপনার রিভিউ পড়ে আমার সেই ধারনা আরো পোক্ত হইল।

পোস্টে প্লাস।

১৪ ই মে, ২০১৫ রাত ২:০২

রাতুল ভাই বলেছেন: আমি আপনার সাথে একমত। ডিরেক্টর দের অবহেলার কারনে অভিনয় শিল্পীদের অভিনয় প্রতিভা নষ্ট হচ্ছে। :(

৩| ০৬ ই মে, ২০১৫ সকাল ১০:৩৮

জে.এস. সাব্বির বলেছেন: ভাবছিলাম পরীক্ষার মাঝেও সময় বের করে দেখব ছবিটা ।কিন্তু এখন আর মনটানছেনা অযথা সময় নষ্ট করতে ।

পোস্ট মার্কঃ ++

৪| ০৬ ই মে, ২০১৫ সকাল ১১:৫৮

সুমন কর বলেছেন: রিভিউ ভাল হয়েছে। কিন্তু আমি একটি মুভিও দেখিনি। যেহেতু,

আসলে ফিল্মটা কোন ডিরেক্টরের কাছে একটা শিল্প আবার অনেকের কাছে শুধুই টাকা কামানোর ধান্দা৷

তাই দেখবো না।

০৭ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৭

রাতুল ভাই বলেছেন: অগ্নি, তারকাটা, কিস্তিমাত, দেশা দ্যা লিডার,জিরো ডিগ্রি ছুয়ে দিলে মন এই ছবি গুলো সময় করে দেখে নিয়েন৷ দুই একটা বাংলাদেশী সিনেমা যে আসলেই ভালো হচ্ছে তার প্রমান এই সিনেমা গুলো৷

৫| ০৭ ই মে, ২০১৫ রাত ১১:৫৬

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:

চমৎকার রিভিউ।++

৬| ০৮ ই মে, ২০১৫ রাত ১২:৩৫

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: দারুন রিভ্যু! ++++

৭| ১৪ ই মে, ২০১৫ রাত ২:০৬

রাতুল ভাই বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.