নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাতুল ভাই

সব কিছু নিয়েই ভাবি সবকিছু নিয়েই লিখি৷

রাতুল ভাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

শুভ জন্মদিন জলিল বস

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:০৩

তখন মুভি দেখতাম খুব।
সাপ্তাহে কমপক্ষে ৪-৫টা মুভি দেখা হতো। কিন্তু সেগুলোর মাঝে বাংলা সিনেমা ছিল না।
বাংলা সিনেমা দেখাটা আমার কাছে কেমন যেন লজ্জার বিষয় ছিল। তবে রিমোট টিপতে টিপতে টিভিতে 'আম্মাজান' এর মতো জনপ্রিয় সিনেমা গুলো এসে পড়লে একটু আধটু দেখা হতো মাঝে মাঝে। এছাড়া ঈদে টিভিতে বাড়ির সবাই দল বেঁধে চ্যানেল আইয়ের সিনেমা দেখতাম।
কিন্তু সিনেমা হলে চলতি বাংলা সিনেমার খবর রাখা হতো না কখনো। বরং রাস্তায় সিনেমার পোস্টার দেখলেই নজর সরিয়ে নিতাম।
কারন খুব সম্ভবত ক্লাস ওয়ান এ থাকা কালীন রিক্সায় করে দীপিকা হলের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় মা কে সিনেমা হলে যাওয়া নিয়ে কিছু একটা প্রশ্ন করেছিলাম। মা তখন কি বলেছিল স্পষ্ট ভাবে মনে না থাকলেও কথা গুলোর সারাংশ ছিল অনেকটা এরকম, 'সিনেমা হলে খারাপ মানুষেরা যায়। সিনেমার পোস্টারের দিকে তাকাতে নেই'.... ছোট বেলা থেকেই নিজের এক ধরনের ভদ্র ছেলে ইমেজ ছিল। ভদ্র ছেলেরা মায়ের কথা শোনে। সেজন্যই হয়তো কথা গুলোর প্রভাব আমার মাঝে বেশ গভীর ভাবে পড়েছিল। যেসব রাস্তায় বাংলা সিনেমার পোস্টার বেশী লাগানো হতো সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় সামনের দিকে তাকিয়ে থাকতাম আশেপাশে লাগানো পোস্টারে চোখ পড়ার ভয়ে।
এতো সাবধানতার পরেও মাঝে মাঝে ফাঁক ফোকর গলে বিভিন্ন পোস্টারে চোখ পড়ে যেত। সেবার ঢাকায় আমার এক খালার বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। রাস্তায় বাসে করে যাওয়ার সময় হঠাৎ একটা পোস্টারে চোখ পড়তেই চোখ আটকে গেল। পোস্টারটিকে গতানুগতিক পোস্টার থেকে আলাদা মনে হচ্ছিল! এমনকি নামটাও গতানুগতিক থেকে একেবারেই আলাদা ছিল 'দ্যা স্পিড'
দেওয়ালে, থাম্পসে, বাসের পিছনে সর্বোপরি সারা ঢাকা শহর জুড়ে ছেয়ে থাকা পোস্টারটি বার বার আমার দৃষ্টি আকর্ষন করছিল। দ্যা স্প্রিড নামটা মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল।
বাড়ি ফিরে এলাম। নিয়মিত পত্রিকা পড়ার অভ্যাস ছিল। বাড়িতে আমাদের সময় এবং বাংলাদেশ প্রতিদিন রাখা হতো। আমাদের সময়ের বিনোদন পাতায় বাংলা সিনেমা নিয়ে নিয়মিত সংবাদ ছাপা হতো। কখনো পড়তাম না। কিন্তু সেদিনের পর থেকে নিয়মিত পড়তে শুরু করলাম। আস্তে আস্তে জানতে পারলাম সিনেমাটির নায়কের নাম অনন্ত জলিল। এটি বাংলাদেশ আর মালয়শিয়ার যৌথ প্রযোজনার ছবি। এবং এটিই বাংলাদেশের প্রথম ঝকঝকে তকতকে ডিজিটাল চলচ্চিত্র। অনন্তকে নিয়ে আগ্রহ বাড়তে লাগলো। ওনকে নিয়ে করা সব নিউজ, টিভি ইন্টারভিউ নিয়মিত পড়তে ও দেখতে থাকলাম। একসময় আবিষ্কার করলাম শুধু আমি না আমার আশেপাশের অনেকেই ওনাকে নিয়ে ইন্টারেস্টেড।
ঐদিকে কিছু দিন পরে বাংলাদেশ প্রতিদিনও নিয়মিত বাংলা সিনেমার নিউজ ছাপাতে থাকলো। আমি নিউজ গুলোর আগা থেকে গোড়া খুব আগ্রহ নিয়ে পড়তে থাকলাম। এভাবে একটা সময় আসলো যখন আমি পত্রিকা খুলেই সবার আগে বিনোদনের পাতাটা পড়তাম। নিয়মিত বিনোদন পাতায় চোখ রাখার কারনে আমার আগ্রহ অনন্ত জলিলের মাঝে থেমে থাকলো না। বাপ্পি-মাহি, জাজ সর্বোপরি সেসময়ের পত্রিকা গুলোতে ঢাকাই সিনেমায় যেই ডিজিটাল বিপ্লবের কাথ বলা হচ্ছিল সেটা নিয়ে আগ্রহ বাড়তে থাকলো। তখন পত্রিকা গুলোতে এমন ভাবে নিউজ ছাপা হতো যে পড়লে মনে হতো এই তো কয়দিন পরেই ঢালিউড হলিউড হয়ে যাবে। ব্যাপারটা আমাকে আনন্দ দিতো। বদলে যাওয়া ঢালিউডের কথা ভেবে রোমাঞ্চ অনুভব করতাম। পত্রিকা গুলোতে সবাইকে হলে যেতে উৎসাহিত করা হতো। আমারও হলে যাওয়া নিয়ে আগ্রহ জাগতে শুরু করলো। কিন্তু সাহস পাচ্ছিলাম না। এক খালাতো ভাইকে আকারে ইঙ্গিতে হলে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়ে, উল্টো ধমক আর বাড়িতে বিচার দেওয়ার হুমকি খেলাম।
কয়েক বছর পরের কথা এক ঈদে ধর্ম সাগর পড়ে ঘুরতে বেরোলাম এলাকার এক ছোট ভাইকে নিয়ে। দীপিকা হলের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় সে বললো 'রাতুল ভাই এক জায়গায় যাবেন?'..... আমার মাথায় তখন সিনেমা হলের চিন্তা ঘুরছে। কোথায় যাবো মেনশন না করার পরেও আমি উত্তর দিলাম কোথায় সিনেমা হলে? সে হ্যা সূচক মাথা নাড়লো। দীপিকায় সম্ভবত ইঞ্চি ইঞ্চি প্রেম চলছিল। সিনেমাটি নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। বরং পত্রিকায় পজেটিভ নিউজ পড়ে এবং 'আমি নিঃস্ব হয়ে যাবো না গানটা শুনে' সেই ঈদেই রিলিজ পাওয়া পূর্ণ দৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী সিনেমাটির প্রতি আমার আগ্রহ ছিল বেশ। বললাম মধুমতি সিনেমা হলটা কোথায়? সেখানে ভালো সিনেমা দেখাবে, সেখানে চল।
রিক্সায় ওঠলাম। টিকেট কাটলাম।
ভয়ে ধড়ফড় করা বুক নিয়ে হলের সিটে বসলাম। কথা ছিলো শুধু হলের পার্দাটা কতো বড় সেটা দেখতে যাবো। সিনেমাটা কিছুক্ষন দেখেই চলে আসবো। কিন্তু হলে গিয়ে পুরো সিনেমাটা শেষ না করে আসতে পারলাম না। বাড়ি ফিরতে ফিরেতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। বড়ির সবাই আমকে খুঁজতে খুঁজতে অস্থির। সে আরেক কাহিনী সেই দুঃখময় কাহিনী আজকে থাক।
সেদিনের পর থেকেই আমি সিনেমা হলে নিয়মিত যাওয়া শুরু করি। আর এখনতো অনেক মাসে ৩ বারও সিনেমা হলে যাওয়া হয়।
ফেসবুকের কল্যানে দূর দুরান্তের আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব, সহপাঠী সবাই আমার বাংলা সিনেমা প্রেমের কথা জানে। বাংলা সিনেমা প্রেম আমার ভদ্র ছেলে ইমেজটাকে খেয়ে দিয়েছে। সবার মাঝে আমার একটা বাংলা সিনেমা বিশেষজ্ঞ ইমেজ সৃষ্টি হয়েছে। আমার বাংলা সিনেমা দেখতে হলে যাওয়াকে অনেকেই এখনও পজেটিভলি নিতে পারেনি। ফলে প্রায়ই অনেক ঠাট্টা, ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ, শাসন সহ্য করতে হয় আমাকে। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। একজন বাংলা সিনেমাখোর হিসেবে আমি গর্বিত।
মাঝে মাঝে ভাবি। যদি স্পিডের সেই পোস্টারে চোখ না পরতো... যদি অনন্ত জলিল সিনেমা নির্মানে না আসতো তাহলে কি আমি কখনও এভাবে বাংলা সিনেমার সাথে জড়িয়ে পড়তাম? হয়তো না।
অনন্ত ঢালিউডের জন্য আশীর্বাদ না অভিশাপ সেটা নিয়ে অনেকের মতভেদ আছে। অনন্তকে ঢালিউডের ডিজিটাল সিনেমার জনক হিসেবেও মানতেও চায় না অনেকেই। এমন কি ব্যাক্তি অনন্ত সত্যিই এতো মহৎ কিনা? সেটা নিয়েও প্রশ্ন তোলে অনেকে। ঢালিউডে অনন্তর প্রভাব নিয়ে সন্দেহ থাকতে পারে কিন্তু আমার জীবনে অনন্তর প্রভাব অনেক। তিনিই প্রথম বাংলা সিনেমার প্রতি আমার দৃষ্টি আকর্ষন করিয়েছিল। তিনি যদি না আসতো আমি হয়তো আজও বাংলা সিনেমা দেখতাম না।
আজ আমার মতো আরো অনেককে বাংলা সিনেমার ভক্ত বানানোর কারিগর অনন্ত জলিলের জন্মদিন।
না জেনেই অনেকে আমাকে বিভিন্ন নায়কের ফ্যান বানিয়ে দেয়। বাস্তবে আমি একজন ঢালিউড হিরোরই ভক্ত আর তিনি হলেন অনন্ত জলিল।
যখন ওনার কোন সিনেমা দেখি নাই, শুধু নাম শুনেছি তখন থেকে ভক্ত।
ওনার অনেক সিনেমাই ভালো লাগে নাই, তবুও ভক্ত। কি গুন দেখে আমি ওনার ভক্ত হলাম সেই প্রশ্নেরও জবাব নেই। তারপরেও আমি ওনার ভক্ত, যেনতন ভক্ত না একেবারে অন্ধ ভক্ত।
শুভ জন্মদিন অনন্ত বস :)

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:০৬

রাজীব বলেছেন: শুভ জন্মদিন।
এই লোকটা আমাদের সিনেমা উন্নয়নের জন্য অনেক করেছে।

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ২:৪৪

রাতুল ভাই বলেছেন: কতটুকু করতে পেরেছে জানি না। তবে শুরুটা যে উনি এগিয়ে না আসলে কখনও হতো না সে ব্যপারে কোন সন্দেহ নেই।

২| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ২:৪৭

গেম চেঞ্জার বলেছেন: অনন্ত জলিল বর্তমানে অন্যতম সেরা ব্রান্ড বাংলাদেশের তরুণদের ফেবুতে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.