নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাজু সিদ্দিকের মননভুবন

আমার অনুমতি ব্যতীত কেহ আমার গল্প বা গল্পের অংশ এবং নাটক বা নাটকের দৃশ্য বা সংলাপ বা সংলাপের অংশ কোখায়ও ছাপাতে বা ব্যবহার করতে পারবেন না। -- রাজু সিদ্দিক

রাজু সিদ্দিক

আমার অনুমতি ব্যতীত কেহ আমার গল্প বা গল্পের অংশ এবং নাটক বা নাটকের দৃশ্য বা সংলাপ বা সংলাপের অংশ কোখায়ও ছাপাতে বা ব্যবহার করতে পারবেন না। -- রাজু সিদ্দিক .

রাজু সিদ্দিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফ্রিল্যান্স ভেগাবন্ড ( টিভি নাটক )

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৫৯

পরিচালনা : সকাল আহমেদ



দৃশ্য - ১

দিন। কাঠমান্ডুর রাস্তা।

( পিউ নেপালের রাস্তায় একা একা হাঁটছে। মাঝে মাঝে রাস্তার পাসের দোকানে ঢোকে সাব্বিরের ছবি দেখিয়ে দোকানদারকে জিজ্ঞেস করে, ছবির মানুষটাকে দেখেছে কি না ? সবাই মাথা এপাশওপাশ করে। পিউ দোকান থেকে বেরিয়ে অন্য দোকানে যায়। তার চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ।)



দৃশ্য - ২

দিন। নেপালের কোন থ্রি-স্টার হোটেল।

( মামুন ও টিপু দুই বন্ধু। খুবই অন্তরঙ্গ বন্ধু। দু’জন সারাক্ষণ ঝগড়া করে, নানান রকম ছেলে-মানুষী করে। তারপরেও মামুন যেখানে যায়, টিপুকে সাথে নিয়ে যায়। এবার মামুন টিপুকে নিয়ে নেপাল বেড়াতে এসেছে। নেপাল এসে তারা একটা হোটেলে উঠে। হোটেল কাউন্টারে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে তারা তাদের রুমে যায়। কিন্তু নেপালে আসার পর থেকেই টিপুর মেজাজা খারাপ হয়ে আছে। টিপুর এই মেজাজ খারাপের বিষয়টা মামুন উপভোগ করছে, কারণ সে জানে, যতই মেজাজ করুক, যতই গজ গজ করুক, টিপু কখনোই তাকে সমস্যায় ফেলার মত কিছু করবে না। তাদের লাগেজ নিয়ে একজন হোটেল বয় রুমে আসে। )

টিপু ঃ এটা একটা হোটেল হলো ? দেয়ালে এ কি রং দিছে ? কটকটা ! এই রুমে একমাস কেউ থাকলে কালার ব্লাইন্ড হয়ে যাবে। রং করার আগে আমাকে জিজ্ঞেস করতো বলে দিতাম। ( মামুন ভ্রূ কুঁচকে তাকায় ) এমন হোটেলে আমাদের পাড়ার ঐ বুড়ি আছে না, সবার সাথে ঝগড়া করে, সেও থাকবে না। আর আমারে তুই এ হোটেলে উঠালি ? ( মামুন হোটেল বয়কে টিপস দিয়ে বিদায় করে। বয় চলে যায়। ) এ তুই কী করলি ? এতো টিপস দিবি বললেতো আমিই লাগেজগুলো নিয়ে আসতাম।

মামুন ঃ সেটা শোভন দেখাতো না।

টিপু ঃ আরে আশ্চর্য ! শোভনকে দেখিয়ে দেখিয়ে আমি লাগেজ আনতাম না কি ? আমিতো এভাবে চামে চামে নিয়ে আসতাম। আচ্ছা বাদ দে, তুই এমন বিশ্রী রংয়ের হোটেলে উঠলি কেন ? এমন হোটেলে রাত কাটাতে হবে জানলে আমি তোর সাথে জীবনেও আসতামই না।

মামুন ঃ আমরা এ হোটেলে রাত কাটাব কে বলেছে ?

টিপু ঃ তা হলে, রাতে থাকব কোথায় ?

মামুন ঃ রাস্তায় । ( মামুন মিটিমিটি হেসে ওয়াসরুমে ঢুকে। )

টিপ ঃ ও আচ্ছা, কী ! ঐ, ঐ বার হ’, আমারে তুই রাস্তায় রাখবি ? বার হ’, হ’ খালি । ( টিপু একা একা গজ গজ করতে রুম থেকে বের হয়ে যায়। )



দৃশ্য - ৩

দিন। হোটেল লাউঞ্জ।

( টিপু গজ গজ করতে করতে হোটেল লাউঞ্জে আসে। )

টিপু ঃ আমাকে বলে রাস্তায় থাকতে, আশ্চর্য ! চান্দু তুমি আমারে নেপাল নিয়া আইসা রাস্তায় থাকার প্লান বানাইছো, আমি তোমার হাড্ডি-মাংস যদি এক না করছি আমার নাম টিপু সুলতান না। রাস্তায় থাকব, রাস্তায় ? আরে এই টিপু সু-ল-তা-ন ? ( পিউ টিপুর সামনে দিয়ে হেঁটে যায়। পিউকে দেখে টিপুর কথা থেমে যায়। অবাক চোথে পিউকে দেখে, যতক্ষণ দেখা যায় ততক্ষণ তাকিয়ে থাকে, তারপর ইশারায় এক হোটেল বয়কে ডেকে জিজ্ঞেস করে ) হু ইজ সি ?



দৃশ্য - ৪

দিন। হোটেলের নিজস্ব রেস্তরা।

( টিপু রেস্তরা বসে চা খেতে খেতে ইংরেজি পত্রিকা পড়ছে, খুটিয়ে খুটিয়ে । মামুন ও টিপু এসে অন্য চেবিলে বসে। )

মামুন ঃ কি খাবি ওডার দে।

টিপু ঃ কিছু না।

মামুন ঃ বিল আমার।

টিপু ঃ ( টিপু কিছুক্ষণ মামুনকে দেখে এক নাগারে আইটেমের নাম বলতে থাকে ) ফ্রাইড চিকেন উইংস, বাটার ফ্রাই প্রণ, প্রণ অন টোস্ট, বিফ উইথ বেসিল লিফ, সুইট এন্ড সোর ফিস, লেমন চিকেন, জিঞ্জার চিকেন, গ্রীণ ভেজিটেবল.....

মামুন ঃ একটা, একটা ওডার দে।

টিপু ঃ না, এক সাথে দিব।

মামুন ঃ (এমন সময় মামুন পিউকে দেখতে পায়, সে মুগ্ধ কণ্ঠে বলে ) ফ্লাওয়ার অব হেভেন !

টিপু ঃ জ্বী না, পিউ খন্দকার ফ্রম বাংলাদেশ।

মামুন ঃ মানে ?

টিপু ঃ পিউ খন্দকার, খন্দকার গ্রুপ আব ইন্ড্রাস্টির মালিকের একমাত্র কন্যা। তিন মাস ধরে নেপালে আছে।

মামুন ঃ কেন ?

টিপু ঃ তিন মাস আগে সে তার বয়ফ্রেন্ড নিয়ে নেপাল বেড়াতে এসেছিল কিন্তু আসার তিন দিন পর হঠাৎ তার বয়ফ্রেন্ড উধাও হয়ে যায়। অনেক থানা পুলিশ করেছে কিন্তু কোন খোঁজই পায় নাই। তার বাবা এসেছিল তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে, সে যায় নাই। সাব্বিরের খোঁজ না নিয়ে সে নেপাল ছাড়বে না।

মামুন ঃ সাব্বির কে ?

টিপু ঃ তার বয়ফ্রেন্ড।

মামুন ঃ ও, কিন্তু তুই এতো কিছু জানলি কিভাবে ?

টিপু ঃ মানুষের গোপন কথা জানাই আমার কাজ, যেমন আমি জানি আগামী ক’দিনে আপনার কী হবে ?

মামুন ঃ কী হবে ?

টিপু ঃ হাড্ডি-মাংস এক হবে, এক।

মামুন ঃ ঠিক আছে, হাড্ডি-মাংস এক করে ভাগা দিস, পাঁচ’শ টাকা কেজি, কম দিস না কিন্তু। ( মামুন উঠে পিউর টেবিলে যায়। )

টিপু ঃ দেখো, কত বড় ইস্টুপিড ! আমি তার হাড্ডি-মাংস এক করার থ্রেট দেই, আর সে ভাগা দিতে বলে, পাঁচশ টাকা কেজি ! ( এদিকে পিউর টেবিলের দিকে হেঁটে যেতে থাকে। পিউ পত্রিকা পড়ছে। মামুন এসে পাশে দাঁড়ায়। পিউ কৌতূহলী চোখ তুলে তাকায়।)

মামুন ঃ এক্সকিউজ মি, (মামুন পরিচিত হওয়ার জন্য হাত বাড়ায়। পিউ হাত বাড়ায় না, নীরবে মামুনের দিকে তাকিয়ে থাকে।) আমি মামুন, মামুন সিকদার।

পিউ ঃ আপনি কি কিছু বলবেন ? ( মামুন হাত ফিরিয়ে নিয়ে আল্পক্ষণ পিউকে দেখে সামনের চেয়ারে বসে। )

মামুন ঃ আজ থেকে তিন বছর আগে, এমনি এক দিনে হঠাৎ করে মানুষটা হারিয়ে যায়। ( পিউ ভ্রু কুঁচকায় ) মোমেনা, মোমেনা খাতুন। (মামুন একটু থেমে দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে) কত খুঁজেছি ( সে মাথা এপাশ ওপাশ করে। ) পেলাম না, যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। প্রিয় মানুষ হারানো কী বেদনা, কী কষ্ঠ, তা আমি জানি। প্রতিনিয়ত স্মৃতি এসে মনের দরজায় কড়া নাড়ে, কিন্তু দরজা আর খুলে না। ( পিউর চোখ ভিজে আসে। ) তাই বলছিলাম, আমাকে একটিবার সুযোগ দিবেন, আপনার প্রিয় মানুষটাকে খুঁজে এনে আপনার হাতে তোলে দিতাম। ( পিউর চোখে পানি চলে আসে। সে বিস্মিত চোখে কিছুক্ষণ মামুনকে দেখে উঠে দাঁড়ায়। )

পিউ ঃ সরি।

মামুন ঃ প্লিজ, জাষ্ট এ চান্স। ( পিউ মুহূর্তখানেক দাঁড়িয়ে চলে যায়। মামুন একা একা কথা বলে ) ফ্লাওয়ার অব হেভেন তোমার মুখে বিষণ্নতা মানায় না, আমি তোমার বিষণ্নতা দূর করে দিব, প্রমিজ। ( এমন সময় টিপু এসে মামুনের পাশে বসে। )

টিপু ঃ তাকে কী বললি, উঠে গেল যে ?

মামুন ঃ বললাম, মেডাম মাংসের ভাগা কিনবেন ? হাড্ডিসহ বা হাড্ডি ছাড়া, পাঁচশ টাকা কেজি ।

টিপু ঃ চান্দু, আমি ঠিকই তোমার হাড্ডি-মাংসের ভাগা দিব। ( মামুন হেসে টিপুকে ঘুষি মাড়ে।)

মামুন ঃ ভাগা পড়ে দিস, এখন খাবার ওডার দে, অনেক ক্ষুধা পেয়েছে।

টিপু ঃ না, খাতির জমাবা না, খবরদার, আমাকে রাস্তায় রাখবা আবার খাতির জমাবা ? ( মামুন হাসতে থাকে। টিপু বক বক করতেই থাকে। )



দৃশ্য - ৫

দিন। কাঠমান্ডুর কোন মনোরম লোকেশন ।

( মামুন ও টিপু মনোরম লোকেশনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। টিপু বিভিন্ন ভঙ্গিতে দাঁড়াচ্ছে, মামুন ডিজিটাল ক্যামেরায় টিপুর ছবি তুলচ্ছে। ছবি তোলা শেষে টিপু এসে ক্যামেরায় ছবি দেখে। মামুনের তোলা একটা ছবিতেও টিপু ছবি নেই, সে মামুনের সাথে ঝগড়া করে। )

টিপু ঃ তুই এইটা কার ছবি তুললি ?

মামুন ঃ কেন তোর।

টিপু ঃ আমি কই ? সবতো অন্যের ছবি। ( মামুন ক্যামেরার মনিটরে দেখায় )

মামুন ঃ কী বলিস অন্যের ! এই যে তোর ছায়া।

টিপু ঃ আমার ছায়া ! আমি তোকে ছায়ার ছবি তুলতে বলেছি ? ( মামুন হাসে ) দে, আমার ক্যামেরা দে, তোর ছবি তুলতে হবে না ( টিপু মামুনের হাত থেকে ক্যামেরা কেড়ে নেয় ) আমার ছায়ার ছবি তুলছে, ফাজিল !

মামুন ঃ দে এবার ঠিক মত তুলবো।

টিপু ঃ এবার যদি উল্টাপাল্টা হয় না ?

মামুন ঃ হবে না, দে। ( টিপু মামুনকে ক্যামেরা দিয়ে দূরে গিয়ে অদ্ভুত ভঙ্গিতে দাঁড়ায়। মামুন ক্যামেরা তুলে ফ্রেমে টিপুকে আনে। এমনি সময় তার ফ্রেমে পিউ এসে দাঁড়ায়। সাথে সাথে মামুন ক্যামেরা সরিয়ে পিউর দিকে তাকায়। পিউ হাত বাড়ায়। )

পিউ ঃ আমি পিউ খন্দকার।

মামুন ঃ (মামুন একটুক্ষণ থমকে থেকে হেসে হাত মিলায় ) আমি মামুন, মামুন সিকদার, ফ্রিল্যান্স ভেগাবন্ড।

পিউ ঃ ফ্রিল্যান্স ভেগাবন্ড ?

মামুন ঃ মানে, ভাড়ায় খাটা ভবঘুরে। আমি ভাড়ায় খাটি, এই যেমন এখন আপনার বয়ফ্রেন্ডকে খুঁজে বের করার কাজ নিলাম।

পিউ ঃ সত্যিই পারবেন খুঁজে দিতে ?

মামুন ঃ যদি হারিয়ে গিয়ে থাকে, পারব। কিন্তু যদি পালিয়ে গিয়ে থাকে ? ( পিউ চমকে তাকায় )

পিউ ঃ ( দৃঢ় কণ্ঠে ) না, পালায় নি।

মামুন ঃ তাহলে তিনটা দিন সময় দিন, জাষ্ট সেভেন্টি টু আওয়ার। ( টিপু এসে পশে দাঁড়ায়। ) ও, আসুন পরিচয় করিয়ে দেই, এ হলো ভারতবর্সের সর্বশেষ সুলতান, টিপু সুলতান, আমার বন্ধু। ( পিউ হেসে টিপুর সাথে হাত মিলায়। )

পিউ ঃ তাই ? টিপু সুলতানের বিখ্যাত ছিল তার তলোয়ার, সোর্ড অব টিপু সুলতান। আপনার বিখ্যাত কী ? ( টিপু কিছু বলতে গিয়ে বলতে পারে না, মুখ হাঁ করে, বন্ধ করে। )

মামুন ঃ ওর বিখ্যাত হলো ওর মন, সৌল অব টিপু সুলতান। ( মামুনের কথায় টিপু বিগলিত ভাব করে। পিউ হাসে । )

পিউ ঃ ও মা, আপনি দেখি গলে যাচ্ছেন।

টিপু ঃ না, না কী যে বলেন। ( টিপু মাথা নিচু করে আরো বিগলিত ভাব করে। )

মামুন ঃ তুমি গলতে থাকো বন্ধু. গলে গলে কাই হয়ে যাও, আমরা যাই। ( টিপুর হাতে ক্যামেরা দিয়ে মামুন পিউকে নিয়ে চলে যায়। টিপু মাথা তুলে দেখে তারা নেই। )



দৃশ্য - ৬

দিন। কাঠমান্ডুর অন্যকোন মনোরম লোকেশন।

( মামুন ও পিউ অন্যকোন মনোরম লোকেশনে বসে কথা বলছে। )

পিউ ঃ আগে একটা কথা বলুনতো।

মামুন ঃ কী ?

পিউ ঃ আমার ঘটনাটা জানলেন কীভাবে ? কোথা থেকে ?

মামুন ঃ হোটেলের কে না জানে ? তিন মাস ধরে এই হোটেলে আছেন, সবাই জানে। বয়, ম্যানেজার এভরী বডি জানে। ( পিউ মাথা ঝাঁকায় ) আচ্ছা এবার প্রথম থেকে ঘটনাটা বলুনতো, মানে নেপাল আসার পর ঠিক কী কী ঘটেছিল ?

পিউ ঃ আমরা নেপাল আসি জুনের পাঁচ তারিখ..... ( পিউ ঘটনা বলে যায়, মামুন এক মনে শোনে যায়, মাঝে মাঝে প্রশ্ন করে। পিউ উত্তর দেয়। )

মামুন ঃ আচ্ছা সাব্বির কী কখনো বলেছে, নেপালের এ জায়গাটা তার প্রিয় বা ওই জায়গা দেখতে ইচ্ছা করে ?

পিউ ঃ না।

মামুন ঃ নেপালের কোন বন্ধুর কথা বলেছে কখনো ?

পিউ ঃ ( একটু ভেবে ) না, তেমন কারো নাম বলে নি।

মামুন ঃ আচ্ছা যেদিন সে নিখোঁজ হয়েছে, সেদিনের ঘটনাগুলো আবার বলুনতো, ধীরে ধীরে বলুন।

পিউ ঃ সকালে ঘুম থেকে উঠলাম, নাস্তা সেরে ঘরে আসলাম, সেদিন আমাদের পোখরা লেক দেখতে যাওয়ার কথা ছিল। এক মিনিট, ( পিউ কিছু মনে করে ) সেদিন তার মোবাইলে একটা ফোন এসেছিল, ফোনটা পেয়ে সে চমকে উঠেছিল। আমি কে করেছে জানতে চাইলে সে এড়িয়ে যায়।

মামুন ঃ তার মোবাইলটা কোথায় ?

পিউ ঃ সেটা তার সাথেই ছিল।

মামুন ঃ সিমটা কোন দেশের ?

পিউ ঃ এখানকার একটা কোম্পানীর, এখানে এসে আমরা দু’টা সিম কিনেছিলাম, একটা ওর আরেকটা আমার মোবাইলে ব্যবহার করি।

মামুন ঃ চলেন, কল লিস্টটা যোগাড় করা যায় কি না দেখি।

পিউ ঃ কীভাবে ?

মামুন ঃ টিপু সুলতান।

পিউ ঃ মানে ? ( মামুন হাসে )



দৃশ্য - ৭

দিন। মামুনদের হোটেল রুম।

( টিপু ক্যামেরায় তোলা তার নিজের ছবি দেখছে। মামুন আসে। )

মামুন ঃ বন্ধু কী করো ? ( টিপু চোখ-মুখ খিঁচে তাকিয়ে থাকে ) কী হলো, মন ভাল নাই ?

টিপু ঃ ভাইরাস।

মামুন ঃ ভাইরাস ?

টিপু ঃ হু, তোমার কথায় ভাইরাস, তুমি দূরে থাকো। ( মামুন এসে টিপুকে জড়িয়ে ধরে। )

মামুন ঃ আশ্চর্য তুই আমার বন্ধু না, আমরা এক সাথে নেপালে এসেছি না ?

টিপু ঃ খাতির জমায়ে লাভ নাই। আমি যখন রাস্তায় গলে গলে কাই হলাম, তখনতো আমি নেপাল আসি নাই, তুমি আর পিউ শুধু আসছো। এখন খাতির জমায় ? তোর খাতিরও ভাইরাস, সর দূর যা।

মামুন ঃ যাচ্ছি কিন্তু তোকে যে একটু সার্ভারে ঢুকতে হয়।

টিপু ঃ এই যে, এই যে ভাইরাস ছড়ানো শুরু হইছে, না অসম্ভব।

মামুন ঃ নেপালের মোবাইল কোম্পানী সার্ভারে ঢুকে সাব্বিরের কল লিষ্টটা.....( টিপু মামুনের কথা না শোনে আপন মনে গান গেতে গেতে রুমের এমাথাওমাথা হাঁটে, টিপুর পেছন পেছন মামুন রিকোয়েস্ট করতে থাকে। )



দৃশ্য - ৮

রাত। রেস্তরা ।

( মামুন ও পিউ রাতের খাবার খেতে খেতে কথা বলে। )

পিউ ঃ কললিষ্ট যোগাড় করেছেন ?

মামুন ঃ হ্যাঁ, এই যে । ( মামুন পকেট থেকে কল লিষ্ট বের করে পিউর হাতে দেয়। ) ঐ দিন আপনার বয়ফ্রেন্ড কোন নাম্বারে ফোন করে নাই, শুধু দু’টা কল বংলাদেশ থেকে এসেছে।

পিউ ঃ বাংলাদেশ থেকে ?

মামুন ঃ হু, তবে দু’টা নাম্বারই বন্ধ এবং আনরেজিস্ট্রার নাম্বার ।

পিউ ঃ ( পিউ কললিষ্ট দেখে প্রশ্ন করে ) আপনি এই কল লিষ্ট পেলেন কীভাবে ?

মামুন ঃ টিপু মোবাইল কোম্পানীর সার্ভারে ঢুকে বের করেছে, মানে হ্যাক করেছে।

পিউ ঃ বিষয়টাতো ই-লিগ্যান, তাছাড়া কাজটা সহজও না। ( মামুন হাসে। )

মামুন ঃ সে দিন বলেছিলেন না আমাদের টিপু সুলতানের বিখ্যাত কী ? আমি সত্যটা বলি নি, তার বিখ্যাত তার হাতের আঙুল। তার হাতে নেট লাইনসহ একটা ল্যাপটপ দিন, তারপর দেখুন সে কী অসাধ্য সাধন করে। পেন্টাগনের সার্ভারে ঢুকতে তার তিন মিনিট লাগবে।

পিউ ঃ কী বলেন ? হি ইজ এ জিনিয়াস !

মামুন ঃ এ অদম একটা বাণী দিচ্ছে, শোনে রাখুন-ভাল কাজ বোকা বা জিনিয়স সবাই করতে পারে, কিন্তু ই-লিগ্যাল কাজ করতে হলে, বিশেষ করে নির্ভুল ভাবে ই-লিগ্যাল কাজ করতে হলে আপনাকে অবশ্যই জিনিয়াস হতেই হবে।

পিউ ঃ ( পিউ মাথা ঝাঁকায় ) হু-উ, বুঝলাম কিন্তু এখন আমরা এগবো কীভাবে ? কল লিষ্টেতো কিছু নেই।

মামুন ঃ হু, ( মামুন একটু ভাবে ) আচ্ছা এক কাজ করি চলুন, উল্টো পথে হাঁটি।

পিউ ঃ উল্টো পথে মানে ?

মামুন ঃ মানে, আপনার সবার শেষে যেখানে গিয়েছিলেন, আমরা সেখান থেকে শুরু করে পিছন দিকে যাব। আপনারা সবার প্রথম যেখানে গিয়েছিলেন, আমরা সেখানে যাব সবার শেষে। এবার বলুন আপনারা দু’জন সব শেষ কোথায় গিয়েছিলেন ?

পিউ ঃ রাজ দরবারে।

মামুন ঃ ওকে, কাল আমরা রাজ দরবার যাচ্ছি।



দৃশ্য - ৯

দিন। রাজ দরবার।

( মামুন ও পিউ কাঠমান্ডু রাজ দরবারে ঘুরে বেরাচ্ছে। মাঝে মাঝে দু’এক জনকে কিছু জিজ্ঞেস করছে। কিন্তু সবাই মাথা এপাশ ওপাশ করে। হঠাৎ পিউ মামুনের সার্ট খাঁমচে ধরে। মামুন চমকে তাকায় )

পিউ ঃ মামুন, সাব্বির !

মামুন ঃ কোথায় ?

পিউ ঃ ওই যে, ওই দিকে মাত্র গেলো। ( সাথে সাথে মামুন দৌড় দেয়, পিউ পিছু নেয় কিন্তু ওই দিকে গিয়ে দেখে কেউ নেই। )

মামুন ঃ আপনি সিওর দেখেছেন ?

পিউ ঃ হ্যাঁ, না মানে আমার ও রকমই মনে হয়েছে।

মামুন ঃ ও, কিন্তু সাব্বির হোক বা না হোক, কাউকে না কাউকেতো আপনি দেখেছেন, (পিউ মাথা ঝাঁকায়) সেই বা গেলে কোথায় ? আচ্ছা এ দিকটায় চলেনতো। ( মামুন পিউকে নিয়ে নির্দিষ্ট দিকে যায়, অনেক খোঁজে কিন্তু সন্দেহ করার মত কাউকে পায় না। )



দৃশ্য - ১০

দিন। কাঠমান্ডুর রাস্তার পাশে।

( মামুন ও পিউ রাস্তার পাশে কোথায়ও বসে চা খেতে খেতে কথা বলে। )

পিউ ঃ আপনি মোমেনাকে কি নামে ডাকতেন ? ( মামুন কিছুক্ষণ নীরবে পিউকে দেখে )

মামুন ঃ ভুলে গেছি।

পিউ ঃ গেছেন না ভান করছেন ?

মামুন ঃ কী জানি, বুঝি না। আচ্ছা সাব্বির আপনাকে কী নামে ডাকতো ?

পিউ ঃ কাঠালপাতা ।

মামুন ঃ কাঠালপাতা ?

পিউ ঃ ঝরে পড়ার আগে কাঠাল পাতা সোনা রং ধারণ করে, বৃষ্টিস্নাত সেই সোনা রং কাঠাল পাতার মত নাকি আমি দেখতে।

মামুন ঃ ( মামুন কিছুক্ষণ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পিউকে দেখে।) উপমাটা সুন্দর এবং যথার্থ। কিন্তু সে কি এটা বিশ্বাস করতো ?

পিউ ঃ কোন সন্দেহ ?

মামুন ঃ হ্যাঁ। যদি জিজ্ঞেস করেন, কেন ? বলতে পরব না।

পিউ ঃ কিছু মনে করবেন না, আপনার মনে হওয়াতে বা না হওয়াতে আমার ধারণা কিন্তু পাল্টাবে না।

মামুন ঃ জানি। তবে একটা কথা কী জানেন, আমি স্মৃতি ধরে রাখতে রাজি না। এমনতো না, আমরা আবার পৃথিবীতে ফিরে আসব, এই জীবনে এক্সিপেরিমেন্ট করলাম, পরের বার না হয় পরিশুদ্ধ জীবন কাটাবো। জীবন একটাই। সো, যতটুকু পারো জীবনের পাওনাটা বুঝে নেও। ( পিউ কিছুক্ষণ মামুনকে দেখে নীরবে উঠে চলে যায়। মামুন পিউর চলে যাওয়া দেখে নীরবে হাসে।)



দৃশ্য - ১১

দিন। কাঠমান্ডর রাস্তা।

পাত্র-পাত্রী - মামুন ও পিউ।

( পিউ রাস্তায় দু’একজনকে কিছু জিজ্ঞেস করে, সবাই মাথা এপাশওপাশ করে। এক সময় পিউ মোবাইলে সেভ করা সাব্বিরের একটা ফটো বের করে পথচারীদের দেখায়। )

মামুন ঃ কার ছবি ?

পিউ ঃ সাব্বিরের।

মামুন ঃ সাব্বিরের ! আপনার বয়ফ্রেন্ড ? আগে দেখান নি কেন ? আর আমিও কেমন বোকা, তার ছবি আছে কী না এ কথাটা একবারও আমার মনে আসে নি ? আশ্চর্য ! দেখি ছবিটা । ( পিউ মোবাইলটা মামুনের হাতে দেয়। মামুন ছবিটা দেখেই চমকে উঠে। )

পিউ ঃ কী হলো ?

মামুন ঃ কিছু না।

পিউ ঃ আমি দেখেছি আপনি ছবিটা দেখে চমকে উঠেছেন।

মামুন ঃ না মনে, একে চেনা চেনা লাগছে, মনে হচ্ছে কিছু দিন আগে কোথায়ও দেখেছি। ( মামুন মনে করতে চেষ্টা করে। )

পিউ ঃ দেখেছেন ! কোথায় ?

মামুন ঃ দাঁড়ান ভাবতে দিন, (হঠাৎ ফিরে তাকিয়ে) আচ্ছা তার পুরো নাম কি রেজা-বিন-সাব্বির ?

পিউ ঃ হ্যাঁ।

মামুন ঃ সর্বনাশ ! এর ছবিতো মাস খানেক আগে বাংলাদেশের কয়েকটা পত্রিকায় ছাপা হয়েছে ।

পিউ ঃ কী বলছেন, কেন ?

মামুন ঃ আমাকে একটা দিন সময় দিন, আমি সিওর হয়ে আপনাকে জানাচ্ছি।

পিউ ঃ কিন্তু আপনি সর্বনাশ বললেন কেন ? কী খবর ছাপা হয়েছিলো ?

মামুন ঃ এতোদিন অপেক্ষা করেছেন, আর একটা দিন অপেক্ষা করুন, একটা দিন। তাছাড়া.....

পিউ ঃ তাছাড়া ?

মামুন ঃ আমার দেখায় ভুলও হতে পারে, আমি যাকে দেখেছি সে এ নাও হতে পারে। ( পিউ বোকার মত তাকিয়ে থাকে।)



দৃশ্য - ১২

রাত। মামুনদের রুম।

( টিপু বসে টিভি দেখছে। মামুন ঢুকে। )

মামুন ঃ বন্ধু কী করো ? ( সাথে সাথে টিপু ভ্রূ কুঁচকে ফেলে )

টিপু ঃ খাতির জমাবা না, সরো।

মামুন ঃ তুমি আমার বন্ধু, তোমার খোঁজখবর নিবো না ? আশ্চর্য !

টিপু ঃ না, মানুষের সর্দি-কাশিতে ভাইরাস থাকে, তোমার জানার মধ্যে ভাইরাস আছে, জটিল ভাইসার।

মামুন ঃ ঠিক আছে কিছু জানব না, তুই শুধু কাল একটা কাজ করে দে।

টিপু ঃ এই যে, এই যে ভাইরাস বাইর হওয়া শুরু করছে।

মামুন ঃ বাংলাদেশ এ্যাম্বেসির সামনে যাবি, সেখানে একজন তোকে একটা ফাইল দিবে, তুই ফাইলটা নিয়ে আসবি, ব্যস !

টিপু ঃ না, তোর এই ভাইরাস অনেক জটিল, অ্যান্টিবাইঅটিকেও কাজ হবে না। না, আমি যাব না।

মামুন ঃ কাজটা পিউর।

টিপু ঃ এইতো ডাবল ভাইরাস, ডাবল। অসম্ভব, আমি এ সবে নাই। ( মামুন অনুরোধ করেই যাচ্ছে। টিপু মানে না।)



দৃশ্য - ১৩

দিন। হোটেল লাউঞ্জ।

( পিউ বসে মামুনের অপেক্ষা করছে। মামুন একটা খাম হাতে এসে পাশে বসে। )

পিউ ঃ কি কোন খবর পেলেন ?

মামুন ঃ নাস্তা করেছেন ?

পিউ ঃ হ্যাঁ, আজ আমাকে খবর জানাবেন বলেছিলেন।

মামুন ঃ চলেন, আজ অন্যদিকে খোঁজ করব।

পিউ ঃ পেপারে কী খবর বেরিয়েছিল ?

মামুন ঃ কই, কোন খবরই বের হয় নি, আমি ভুল দেখেছিলাম।

পিউ ঃ আমি সেই ভুল খবরটাই জানতে চাই।

মামুন ঃ বান দেন, চলেন বের হই।

পিউ ঃ ( পিউ মামুন হাত ধরে। ) মামুন আমি জানতে চাই।

মামুন ঃ ( মামুন কতক্ষণ পিউকে দেখে ) আপনার ভাল লাগবে না।

পিউ ঃ না লাগুক।

মামুন ঃ কষ্ট পাবেন।

পিউ ঃ তবুও।

মামুন ঃ বাদ দেন না, যে হারিয়ে গেছে সে হারানোই থাক। ( এবার পিউ মামুনের চোখের দিকে তাকিয়ে মামুনের হাতের খামটা ধরে। মামুন খাম ছাড়ে না, পিউ খাম ধরে রাখে। এক সময় হতাশ হয়ে মামুন খাম ছেড়ে দেয়। পিউ খাম থেকে দ্রুত একটা পেপার কাটিং বের করে চোখের সামনে ধরে। পোপার কাটিংয়ের খবরটা পিউ পড়ে। )

পিউ ঃ প্রতারক প্রেমিক গণপিটুনিতে নিহত। গত ২২ তারিখ মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় রেজা-বিন-সাব্বির নামে এক প্রতারক প্রেমিক তৃতীয় বিয়ে করতে গিয়ে গণপিটুনিতে নিহত হয়। উল্লেখ্য, এই রেজা-বিন-সাব্বির মাস খানেক আগে তার এক প্রেমিকাসহ মালয়েশিয়া বেড়াতে নিয়ে গিয়ে প্রেমিকার সব চুরি করে একা পালিয়ে আসে। পরে তার প্রেমিকা ধার দেনা করে দেশে ফিরে আসে। ( খবর পড়ে পিউর চোখ-মুখ লাল হয়ে যায়। অবিশ্বাস্য চোখে পেপার কাটিংয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। সেখানে সাব্বিরের একটা ছবি ছাপানো। পিউর চোখে পানি আসে। হঠাৎ সে পেপার কাটিংটা ফেলে দৌড়ে তার রুমে চলে যায়। মামুন কিছুক্ষণ পিউর চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে পেপার কাটিংটা ছিঁড়ে কুঁটিকুঁটি করে খামে ভরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ায়। )



দৃশ্য - ১৪

দিন। হোটেলের সামনে।

( টিপু হোটেলের সামনে ক্যামেরায় আশেপাশের ছবি তুলছে। মামুন এসে পাশে দাঁড়ায়। )

টিপু ঃ কী পিউ খেদায়ে দিছে ? ( মামুন মাথা ঝাঁকায় ) আমি কিন্তু আজকে তোমারে সময় দিতে পারব না, আমার অনেক কাজ।

মামুন ঃ ( মামুন হেসে টিপুর গলা জড়িয়ে ধরে। ) তুই দিবি না তোর বাপ দিবে।

টিপু ঃ ( টিপু কাশতে কাশতে কথা বলে। ) দিব, দিব ছাড়, ছাড়।

মামুল ঃ ( মামুন ছেড়ে দেয়। ) চল আজ আমি আর তুই সারাদিন ঘুরে বেড়াব।

টিপু ঃ না, তোমার এই কথায়ও ভাইরাস আছে, অবশ্যই আছে। আচ্ছা তুমিতো বন্ধু কাজ ছাড়া কোথায়ও যাও না, নেপাল কী কাজ নিয়া আসছো বলতো শুনি ?

মামুন ঃ পাখি শিকার করতে।

টিপু ঃ পাখি ! নেপালে পাখি কই ?

মামুন ঃ চল তোকে দেখাই, নাক বোঁচা বোঁচা পাখি দেখাই।

টিপু ঃ নাক বোঁচা পাখি ! ওরে আমার চান্দু, নাক খাঁড়া পিউ পাপিয়া দেইখা শখ মিটে নাই, এখন নাক বোঁচা পাখি দেখবা ? ( মামুন টিপুকে ঘুষি মারে। ) খবরদার ! গায়ে হাত দিবি না, হাড্ডি মাংস এক করে ফেলবো। ( মামুন হেসে আবার টিপুকে জড়িয়ে ধরে। )



দৃশ্য - ১৫

রাত। পিউর হোটেল রুম।

( পিউ ঘর অন্ধকার করে বসে আছে। তার চোখ ফোলা, দেখেই বুঝা যায় সারাদিন কেঁদেছে। এমন সময় তার দরজায় টোকা পড়ে। সে বাতি জ্বালিয়ে দরজা খুলে। মামুন ঢোকে। )

মামুন ঃ আপনার জীবনের কালো মেঘ কেটে যখন আলোর দেখা মিলছে তখন ঘর অন্ধকার করে বসে আছেন ?

পিউ ঃ ( পিউ নাক টানে ) ভুলতে পারছি না।

মামুন ঃ মাঝে মাঝে আমাদের জীবনে এমন কিছু ঘটে যেগুলো আমাদের হাতে থাকে না, থাকে অন্য কোথায়ও, অন্যকারো হাতে।

পিউ ঃ তাকে যদি আমি নিজ হাতে খুন করতে পারতাম। ( পিউ রাগে দাঁত কিড়মিড় করে )

মামুন ঃ সেটা আপনার হয়ে অন্যেরা করে দিয়েছে।

পিউ ঃ বাপ্পিকে কীভাবে মুখ দেখাব ? দু’দুবার এসেছিলেন আমাকে নিতে, ছিঃ !

মামুন ঃ বাদ দিন, আসুন ডিনার করব।

পিউ ঃ আচ্ছা খবরটা কবে প্রকাশ হয়েছে ?

মামুন ঃ গত মাসের পঁচিশ তারিখ।

পিউ ঃ মনে হয় বাপ্পির চোখে পড়ে নাই, পড়লে আমাকে জানাতো।

মামুন ঃ বাদ দেনতো, রেডি হয়ে আসুন, আমি নিচে আছি, এক সাথে ডিনার করব।

পিউ ঃ আপনি যান, আমি আসছি। আর থ্যাঙ্কস্, থ্যাঙ্কস্ ফর এভরী থিংস। বিশেষ করে আজ সারাদিন আমাকে একা থাকতে দিয়েছেন, তাই। ( মামুন হেসে পিউর দিকে তাকায় দু’জোড়া চোখ কিছুক্ষণ এক হয়ে থাকে। এক সময় মামুন চোখ সরিয়ে নেয় )

মামুন ঃ আসুন । ( মামুন হেসে বেরিয়ে যায়। )



দৃশ্য - ১৬

দিন। কাঠমান্ডুর বিভিন্ন মনোরম লোকেশন।

( মামুন ও পিউ নেপালের বিভিন্ন মনোরম লোকেশনে ঘুরে বেড়ায়। প্রথম দিকে পিউর মুখে বিষণ্নতার ছাপ থাকে, আস্তে আস্তে তা কেটে যায়। দিন শেষে ফিরে তারা হোটেলে লাউঞ্জে বসে কথা বলে। পিউর তার চোখে মুখে আনন্দ আর আনন্দ। )

পিউ ঃ আপনি জানেন আজ কতদিন পরে আমি প্রাণ খুলে হাসলাম, গত তিনটা মাস আমি যেন একটা গুহায় ছিলাম, একটা অন্ধকার গুহা।

মামুন ঃ আমি নিজে প্রাউড ফিল করছি, আপনাকে আলোতে আনতে পেরে। আচ্ছা আপনি আর ক’দিন এখানে থাকবেন ? আমরা কাল দেশে ফিরব।

পিউ ঃ এখানে থেকে আর লাভ কী, আমিও চলে যাব।

মামুন ঃ তাহলে তিনজনের টিকেটই কাল ওকে করি ?

পিউ ঃ ( একটু ভেবে ) হ্যাঁ করুন।

মামুন ঃ আপনি বসুন, আমি টিকিট ওকে করি গিয়ে। ( মামুন পা বাড়ায়। )

পিউ ঃ ( পিউ ডাক দেয় ) মামুন ? ( পিউর মামুন ডাকে কি যেন ছিল, মামুন চমকে ফিরে তাকায় ) ঢাকায় আমাদের দেখা হতে পারে না ?

মামুন ঃ ( হেসে ) আপনি চাইলে হবে, শতবার হবে। ( মামুন হেসে চলে যায়। পিউ একা বসে আপন মনে হাসে, নানা কথা ভবে। এমন সময় টিপু এসে পিউর পাশে বসে। )

টিপু ঃ আপনি এখানে কী করছেন ?

পিউ ঃ আপনার কথাই ভাবছিলাম।

টিপু ঃ আ-আ-আমার ! কেন ?

পিউ ঃ আপনি নাকি হ্যাকার ?

টিপু ঃ কোন শালা বলে, মামুন ? আমি তার হাড্ডি-মাংস যদি এক না করছি ? আচ্ছা বলেন, এ সব খবর যদি মার্কেটে ছড়ায়, আমি বিয়ের মেয়ে পাব ?

পিউ ঃ ( পিউ হাসে ) চিন্তা করবেন না, আমি আপনার মেয়ে খোঁজে দিব।

টিপু ঃ আল্লাহর কিড়া ?

পিউ ঃ ( হেসে) আল্লাহর কিড়া।

টিপু ঃ ( টিপু আশপাশ দেখে পিউ কানের কাছে মুখ এনে বলে ) তাহলে নেট কানেকশনসহ একটা ল্যাপটপ এনে দিন, তারপর দেখুন আমার দশ আঙুলের যাদু, সকালে নাস্তায় ওবামার মেনু কী ছিল, তিন মিনিটে বের করে দিব।

পিউ ঃ বলেন কী ? ( টিপু মাথা ঝাঁকায় ) বুঝলাম, আচ্ছা এবার বলুন আপনার বন্ধুটা কেমন, খুব ঝগড়াটে ?

টিপু ঃ আরে ঝগড়াতো সে করে না, আমি করি, বিশ বছর ধরে করি। তার সম্পর্কে শুধু এতটুকুই বলব, সোনায়ও খাদ আছে, তার নেই। ( হঠাৎ পিউর দিকে ফিরে তাকায় ) কেন, কেন এ কথা জানতে চাইলেন, কোন বিশেষ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন ?

পিউ ঃ এখনো জানি না, ( বলে হেসে পিউ উঠে দাঁড়ায় ) যাই গুছগাছ করি, কাল আমরা দেশে যাচ্ছি।



দৃশ্য - ১৭

রাত। হোটেল কাউন্টার।

( মামুন হোটেল কাউন্টারে দাঁড়িয়ে ফোনে ঢাকায় পিউর বাবার সাথে কথা বলছে। এমন সময় পিউ এসে আড়াল থেকে মামুনের কথা শোনে ফেলে। )

মামুন ঃ হ্যালো সালামুলাইকুম স্যার, জ্বী স্যার, আপনার মেয়েকে নিয়ে কাল দেশে ফিরছি, জি স্যার, আমার পেমেন্টা ? থ্যাঙ্কিউ স্যার, বাই স্যার। ( মামুন কথা শেষে রিসিভার রেখে হাসি মুখে গুন গুন করে গান গেতে গেতে চলে যায়। পিউ আড়ালে থমকে থাকে। তার চোখে মুখে অবিশ্বাস। হঠাৎ সে দ্রুত টিপুর কাছে যায়। )



দৃশ্য - ১৮

রাত। হোটেল লাইঞ্জ।

( টিপু একা বসে আছে। পিউ ছুটে এসে টিপুর সামনে দাঁড়ায়, তার চোখে মুখে রাগের ছাপ। টিপু পিউর দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ায়। )

টিপু ঃ কী হয়েছে ?

পিউ ঃ সার্ভার থেকে সাব্বিরের কল লিষ্ট আপনি বের করেছিলেন ?

টিপু ঃ সার্ভারে ঢুকেছিলাম কিন্তু কল লিষ্ট পাই নি, তিন মাস আগের কল লিষ্ট থাকে না।

পিউ ঃ মামুনের এক্স-গার্ল ফ্রেন্ডের কী হয়েছিলো ?

টিপু ঃ সে তো একটা ভেগাবন্ড, ফ্রিল্যান্স ভেগাবন্ড, তার গার্লফ্রেন্ড কে হবে ? তার কোন কালেই কোন গার্লফ্রেন্ড ছিল না।

পিউ ঃ তাহলে মোমেনা খাতুন কে ?

টিপু ঃ মোমেনা খাতুন মামুনের মা, তিন বছর আগে লঞ্চ ডুবিতে নিখোঁজ হন। ( পিউ রাগে কাঁপতে থাকে ) কেন কী হয়েছে ?

পিউ ঃ সোনায়ও খাদ থাকে, তার নেই, না ? চিট্, সব চিট্, সব । ( পিউ দ্রুত চলে যায়। )



দৃশ্য - ১৯

রাত। পিউর রুম।

( পিউ ছুটে তার রুমে এসে ল্যাপটপ ওপেন করে ইন্টারনেট ঘেঁটে গত মাসের পঁচিশ তারিখের পত্রিকার নেট সংখ্যা বের করে দেখে। কোথায়ও রেজা-বিন-সাব্বির নামে কোন খবর ছাপা হয় নি। সে রেগে ল্যাপটপ বন্ধ না করে ছুটে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। )



দৃশ্য - ২০

রাত। হোটেল করিডোর।

( পিউ মামুনকে খোঁজে, হঠাৎ করিডোরে পেয়ে যায়। পিউ দৌড়ে গিয়ে মামুনের গালে এক চর মাড়ে। মামুন থমকে তাকায়। )

পিউ ঃ চিট্ ! আমার ইমোশন নিয়ে খেলার সাহস আপনাকে কে দিয়েছে ? কে ? সাব্বিরের খবর পত্রিকায় বেরিয়েছিল ? আমি গত মাসে পঁচিশ তারিখের প্রতিটা পত্রিকা নেটে দেখেছি। আমার আগেই দেখা উচিত ছিল, ছিট্। ( পিউ মামুনের জামা খাঁমচে ধরে।) কেন এটা করলেন ? কেন ? টাকার জন্য ? ফ্রিল্যান্স ভেগাবন্ড, টাকার বিনিময়ে কাজ করেন ! কত টাকায় ? কত টাকায় আমার বাপ্পির সাথে রফা করেছেন ? কত টাকায় ? ( মামুন জামা থেকে পিউর হাত ছাড়িয়ে নেয়। )

মামুন ঃ হ্যাঁ, আমি ফ্রিল্যান্স ভেগাবন্ড, টাকার বিনিময়ে ভাড়া খাটি। যে ভাড়া করে তার জন্যই কাজ করি। স্বীকার করছি পেপার কাটিং, কল লিষ্ট সব ফেইক ছিল, সব ছিল আমার সাজানো। আর আমি এসব করেছি আপনাকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আপনার বাপ্পি এ কাজের জন্য আমাকে ভাড়া করেছেন। আমার সাথে আপনার বাপ্পির কত টাকায় রফা হয়েছে তা আপনার না জানলেও চলবে, তবে এটা আপনার জানা উচিত, সাব্বিরের সাথে আপনার বাপ্পির কত টাকায় রফা করেছিলেন ?

পিউ ঃ কী ?

মামুন ঃ হ্যাঁ, সাব্বিরের সাথে আপনার বাপ্পি দেড় কোটি টাকায় রফা করেছেন, সে আপনাকে ত্যাগ করবে, তার বিনিময়ে দেড় কোটি টাকা পাবে। সাব্বির এখন আমেরিকায়, হয়তো বিয়ে করে ফেলেছে। আপনাদের বাপ্পিরা সব পারে, সব। সন্তানের ভালবাসাও তারা হাটে বিকাতে পারেন, আবার কিনেও দিতে পারেন। আমাকে যে চরটা আঘাতটা করেছেন, পারলে সেটা আপনার বাপ্পিকে গিয়ে করুন। ( মামুন হেঁটে চলে যায়। পিউর দু’চোখ ভরে কান্না আসে। সে দেয়ালে হেলান দিয়ে দু’হতে মুখ ঢেকে ডুকরে উঠে। )



দৃশ্য - ২১

রাত। পিউর হোটেল রুম।

( পিউ বিছানায় শুয়ে নীরবে কাঁদছে। মামুনের কিছু কথা একে একে তার মনে পড়ে। )

২১/ক

পিউ ঃ তখন বলেছিলেন, তাকে আঁচলে বেঁধে দিবেন, পারবেনতো ?

মামুন ঃ যদি হারিয়ে গিয়ে থাকে আঁচলে বেঁধে দিব, প্রমিজ। কিন্তু যদি পালিয়ে যায় ? (পিউ চমকে তাকায়)

পিউ ঃ ( দৃঢ় কণ্ঠে ) না, পালায় নি।

২১/খ

পিউ ঃ ঝরে পড়ার আগে কাঠাল পাতা সোনা রং ধারণ করে, বৃষ্টিস্নাত সেই সোনা রং কাঠাল পাতার মত নাকি আমি দেখতে।

মামুন ঃ উপমাটা সুন্দর এবং যথার্থ। কিন্তু সে কি এটা বিশ্বাস করতো ?

পিউ ঃ কোন সন্দেহ ?

মামুন ঃ হ্যাঁ।

২১/গ

মামুন ঃ হ্যাঁ, সাব্বিরের সাথে আপনার বাপ্পি দেড় কোটি টাকায় রফা করেছেন, সে আপনাকে ত্যাগ করবে, তার বিনিময়ে দেড় কোটি টাকা পাবে। সাব্বির এখন আমেরিকায়, হয়তো বিয়ে করে ফেলেছে। আপনাদের বাপ্পিরা সব পারে, সব। সন্তানের ভালবাসাও তারা হাটে বিকাতে পারেন। আমাকে যে আঘাতটা করেছেন, পারলে সে আঘাতটা আপনার বাপ্পিকে গিয়ে করুন।

( এক সময় পিউ বিছানায় উঠে বসে। কিছু ভেবে মেরুদন্ড সোজা করে চোখ মুছে। তারপর বিছানা থেকে নেমে চুল, জামা ঠিক করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। )



দৃশ্য - ২২

রাত। হোটেল করিডোর।

( মামুন ও টিপু করিডোরে বসে আছে। মামুনের মুখে বিষণ্নতার ছাপ। )

টিপু ঃ তুই যখন যেখানে যাস, আমাকে নিয়ে যাস। সব সময় এক সাথে থাকি। অযথা ঝগড়া করি, ছেলেমানুষী করি, ফান করি। কখনো তোর কাজে ইন্টার্ফিআর করি না। তুই তোর মত কাজ করিস, আমি আমার মত থাকি। কিন্তু এখন কেন যেন মনে হচ্ছে ইন্টার্ফিআর করা বুঝি উচিতই ছিল। ( মামুন ফিরে তাকায় ) মানুষের মন ভাঙে এমন কাজ করা ঠিক না। জীবনে টাকার প্রয়োজন আছে। তবুও, কি দরকার যে কাজে মানুষের মন ভাঙে সে কাজ নেয়ার। আমি জানলে কখনোই তোকে পিউর বাপ্পির এই কাজটা নিতে দিতাম না। ( মামুন মুখ ঘুরিয়ে দূরে তাকায়। টিপু আস্তে উঠে চলে যায়। মামুন দূরে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর পিউ এসে টিপুর খালি চেয়ারটায় বসে। মামুন ফিরে তাকায়। )

পিউ ঃ আমি ভনিতা পছন্দ করি না, করতেও পারি না। তাই সরাসরি বলছি, আমাকে বিয়ে করবেন ?

মামুন ঃ মানে ?

পিউ ঃ আপনি রাজি থাকলে আমরা বিয়ে করবো, আজ রাতেই।

মামুন ঃ আপনার বাপ্পির উপর প্রতিশোধ নিতে ?

পিউ ঃ যদি বলি হ্যাঁ।

মামুন ঃ আমি রাজি না।

পিউ ঃ কেন ?

মামুন ঃ আমি দাবার গুটি হই না। তাছাড়া আপনার বাপ্পি আমার ক্লায়েন্ট, যতক্ষণ উনি আমার ক্লায়েন্ট ততক্ষণ আমি উনার স্বার্থ দেখব। তবে...

পিউ ঃ তবে ?

মামুন ঃ আপনি যদি সত্যি আমাকে চান ? দেশে ফিরে ছয় মাস পর অফারটা দিবেন, ভেবে-চিন্তে দিবেন। তখন না হয় ...। ( পিউ কিছুক্ষণ মামুনকে দেখে একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে উঠে চলে যায়। )



দৃশ্য - ২৩

দিন। ছয় মাস পরে বাংলাদেশের কোথায়ও।

( মামুন তার গাড়িতে বা কোথায় বসে নতুন কোন পার্টির জন্য অপেক্ষা করছে। এমন সময় তার মোবাইল বেজে উঠে। মামুন কল রিসিভ করে। মোবাইলের অন্যপ্রান্তে পিউ কথা বলে। )

মামুন ঃ হ্যালো।

পিউ ঃ মিস্টার ফ্রিল্যান্স ভেগাবন্ড কি ফ্রি আছেন ? একটা জব অফার ছিল।

মামুন ঃ ( হেসে ) আ’ম লিসেনিং .......



............................................ফ্রিজ..............................................



রাজু সিদ্দিক

১ আশ্বিন ১৪২০

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.