নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাজু সিদ্দিকের মননভুবন

আমার অনুমতি ব্যতীত কেহ আমার গল্প বা গল্পের অংশ এবং নাটক বা নাটকের দৃশ্য বা সংলাপ বা সংলাপের অংশ কোখায়ও ছাপাতে বা ব্যবহার করতে পারবেন না। -- রাজু সিদ্দিক

রাজু সিদ্দিক

আমার অনুমতি ব্যতীত কেহ আমার গল্প বা গল্পের অংশ এবং নাটক বা নাটকের দৃশ্য বা সংলাপ বা সংলাপের অংশ কোখায়ও ছাপাতে বা ব্যবহার করতে পারবেন না। -- রাজু সিদ্দিক .

রাজু সিদ্দিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আনন্দযাত্রা ( রম্য উপন্যাস ) ১

২৫ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:৩১

সাগর ফিলসফিতে মাস্টার্স করে বেকার বসে আছে। না বসে আছে বলা ঠিক না প্রস্তুতি নিচ্ছে, হিমালয় যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। হিমালয় গিয়ে যোগ সাধনা করবে। ফিলসফিতে ভর্তি হাবার পরই তার মনে যোগী হবার বসনাটা জাগে, আর ডুবে নি। বরং দিনে দিনে তা বাড়ে। আর সেই থেকে তার যোগ সাধনার বই যোগাড় করা শুরু। দেশের এমন কোন জেলা নেই যেখানে সে যোগ সাধসার বইয়ের জন্য যায় নি। একবার কলকাতা থেকেও কিনে এনেছে। গত এক বছর ধরে আমাজন ডট কমের মাধ্যমে কিনছে। তার সংগ্রহে একশ তেত্রিশটা যোগ সাধনার বই আছে। যার প্রায় সবই তার পড়া হয়ে গেছে। এখন সে সব বই অনুসারে যোগ সাধনাও শুরু করেছে। তার এ কর্মকাণ্ডে একজন শিষ্যও জুটেছে। দূর সম্পর্কের ভাগ্নে, তলতা। তলতার ছোটচাচা দুবাই ফাইভস্টার হোটেলের সেফ। তিনি তলতাকে হোটেল ম্যানেজমেন্টের কোর্স করতে বলেছেন, কোর্স শেষে দুবাই নিয়ে যাবেন। তলতা সাগরদের বাসায় থেকে পর্যটনের এক বছরের কোর্স করছে। আজ তার ক্লাস ছিল, যায় নি। সাগরের সাথে ছাদে বসে যোগ সাধনা করছে। সাগর ছাদে আসন ধরে বসে বই থেকে যোগ ব্যায়ামের একটা মূদ্রা সম্পর্কে পড়ছে, ‘জালন্ধর মূদ্রা - সোজা হইয়া বসিয়া চিবুক কণ্ঠে লাগানোকেই জালন্ধর মূদ্রা বলে।’ সাগর বই বন্ধ করে,‘বুঝছিস, তোর থোতাটা গলায় লাগা।’ সাগর নিজের থোতা গলায় লাগিয়ে দেখায়। তলতা সাগরের দেখাদেখি থোতা গলার নিচে স্পর্শ করে। ‘হ্যাঁ এইতো হয়েছে বেশ, বেশ।’

‘তারপর কোন মূদ্রা মামা ?’ তলতা উৎসাহিত কণ্ঠে জানতে চায়।

‘এরপর -খেচরী মূদ্রা,’ সাগর বই দেখে বলে।

‘খিচুরি মূদ্রা !’

‘খিচুরি না মূর্খ, খেচরী, খেচরী মূদ্রা,’ সাগর বইয়ে চোখ বুলায়,‘জিভের আগাকে উপরের দিকে ঘুরাইয়া তালুমূলে লাগাইয়া থাকাকে খেচরী মূদ্রা বলে। খেচরী মূদ্রা ভাল ভাবে রপ্ত করিতে পারিলে দীর্ঘ দিন অনাহারে থাকা যায়।’ সাগর বই বন্ধ করে,‘হ্যাঁ এটাইতো খুঁজছিলাম।’ সে এবার খেচরী মূদ্রা করে দেখায়,‘এই ভাবে।’ সাগরের দেখানো মত তলতা করে। ‘হ্যাঁ ঠিক এভাবে। শোন আমার যখন হিমালয় গিয়ে যোগ সাধনা করব, তখনতো খাবার পাব না, তখন এই খেচরী মূদ্রা করে দিন পার করে দিব, বুঝলি না ?’

‘কিন্তু মামা আমিতো হোটেল ম্যানেজমেন্ট শিখতাছি দুবাই যাবার জন্য ?’

‘রাখ তোর দুবাই, আমি হব যোগীবাবা, জগতের একমাত্র যোগীবাবা। যার কাছে এ যাবত যোগীদের উপর লেখা প্রায় সব বই আছে এবং যেগুলো যার পড়া হয়ে গেছে। আর তুই হবি সে রকম এক মহাজ্ঞানী যোগীবাবার শিষ্য। ঈদের পরে আমরা হিমালয় যাব, হিমালয়।’

তলতা একটু ভাবে,‘ঠিক আছে হিমালয়ই সই, সেইখানে গিয়া একটা হোটেল দিয়া দিমু, খানাখাদ্যওতো করতে হইব, না কি কন ?’

সাগর তলতার মাথায় চাটি মারে,‘মূর্খ খানাখাদ্য করার জন্য কি খেচরী মুদ্রা করছি ?’

তলতা মাথা ডলতে ডলতে থাকে,‘ও তাইতো, ভুল হইয়া গেছে, হোটেল বাদ। কিন্তু মামা আপনে যে এই মানুষের কষ্ট নেন, এইটাতো বুঝি না।’

‘আরে বেকুব, একজন যোগীকে কষ্টসহিষ্ণু হতে হয়, সব ধরনের কষ্ট। যেমন ধর, অন্ধের কষ্ট, বোবার কষ্ট, খোঁড়া লোকের কষ্ট। সব ধরনের কষ্ট সইবার ক্ষমতা থাকতে হয়। কিন্তু তুই কষ্টসহিষ্ণু হবি কিভাবে, যদি তুই কষ্টের ধরণটাই না বুঝিছ ? ব্যথিত মানুষের মনের অনুভূতিটা অনুভব করতে না পারিস ? এই জন্যই আমি ব্যথিত মানুষের ব্যথাটা আমার নিজের মাঝে নেই, তার কষ্টের অনূভূতি অনুভব করতে চেষ্টা করি।’

তলতা ঠোঁট বাঁকা করে মাথা চুলকায়।

‘আরে মূর্খ এই সহজ কথাটা বুঝতে পারছিস না ? দাঁড়া তোকে বুঝাচ্ছি,’ তলতা কিছু বুঝার আগেই সাগর পাশ থেকে একটা অর্ধেক ইট তোলে তলতার পায়ে ফেলে দেয়।

তলতা সাথে সাথে,‘ওরে বাবারে, মারে,’ বলে পা ধরে গড়াগড়ি খেতে থাকে। সাগর তলতার মুখে যোগ সাধনার বই গুঁজে দেয়, তলতা বই কামড়ে ব্যথা সহ্য করে।

‘তোর এই যে ব্যথা, এখন তা আমি আমার মাঝে নিব। আমি জানব, তোর কষ্টটা কতটুকু ছিল। মার, ইটটা আমার পায়ে মার।’ সাগর পা বাড়িয়ে তলতাকে পায়ে ইট মারতে বলে। তলতা অর্ধেক ইটটা না নিয়ে পাশ থেকে একটা আস্তো ইট তোলে সাগরের পায়ে মারে। সাথে সাথে সাগর দাঁত কিড়মিড় দিয়ে শরীর মোঁচড়াতে মোঁচড়াতে চিঁ চিঁ করে বলে,‘আস্তা ইট মারলি কেন ?’

তলতা মুখ থেকে বই সরিয়ে বলে,‘আপনে যোগী-বাবা, এইজন্যে এই শিষ্য ইট থুইয়া বাবা ইট দিয়া মারলাম।’

‘হারামজাদা বাবা ইটের বাচ্চা ভাগ, যা ভাগ,’ সাগর তলতাকে আরেক চাটি মারে।

তলতা খোঁড়িয়ে খোঁড়িয়ে নেমে যায়। সাগর এক পা ধরে ছাদময় লাফাতে থাকে, আর তলতাকে বকতে থাকে। লাফাতে লাফাতে ছাদের কিনারে চেয়ারে এসে বসে পায়ে ফুঁ দিতে থাকে। ফুঁ দিতে দিতে হঠাৎ সে দেখে সামনের রাস্তায় এ পাড়ার অন্ধ ভিক্ষুকটা লাঠি ঠুকে ঠুকে পথচারীদের কাছে ভিক্ষা করতে করতে হেঁটে যাচ্ছে। সাগর পায়ের ব্যথা ভুলে অন্ধ ভিক্ষুককে দেখতে থাকে। এ ভিক্ষুককে আগে বহুবার দেখেছে, কিন্তু আজ সে দেখছে অন্য দৃষ্টিতে। দেখতে দেখতে তার ঠোঁটের কোণে হাসি উঁকি দেয়।

(চলবে )

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.