নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাজু সিদ্দিকের মননভুবন

আমার অনুমতি ব্যতীত কেহ আমার গল্প বা গল্পের অংশ এবং নাটক বা নাটকের দৃশ্য বা সংলাপ বা সংলাপের অংশ কোখায়ও ছাপাতে বা ব্যবহার করতে পারবেন না। -- রাজু সিদ্দিক

রাজু সিদ্দিক

আমার অনুমতি ব্যতীত কেহ আমার গল্প বা গল্পের অংশ এবং নাটক বা নাটকের দৃশ্য বা সংলাপ বা সংলাপের অংশ কোখায়ও ছাপাতে বা ব্যবহার করতে পারবেন না। -- রাজু সিদ্দিক .

রাজু সিদ্দিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আনন্দযাত্রা ( রম্য ) ৬

১২ ই মে, ২০১৪ দুপুর ২:৪২

ঝিল ভার্সিটি থেকে ফিরে দেখে সাগর বাসায় নেই। সে ভাবে, ছেলে হয়ে জন্মানো কত মজার, যা ইচ্ছা তাই করা যাঘ। ভাইয়া অন্ধ সেজে কত মানুষকে না বোকা বানাচ্ছে ?

ঠিক তখন ধরাম করে দরজা খোলে সাগর ছিটকে ঘরে ঢোকে, মুখে বড় বড় শ্বাস নিতে থাকে, তার চোখ কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আছে। ঝিল ভয়ে জিজ্ঞেস করে,‘কী হয়েছে ভাইয়া ? কী হয়েছে ? এমন করছো কেন ?’

‘বা-বা-বাসায় পানি আছে ? খা-খা-খাবার পানি ?’ সাগর হাঁটুতে ভর দিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে।

ঝিল দ্রুত এক গ্লাস ঠান্ডা পানি এনে দিয়ে আবার জানতে চায়,‘কী হয়েছে ?’

সাগর ঢকঢক করে এক চুমুকে পুরো গ্লাস শেষ করে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,‘তো-তো-তোতলা সগীর ! কোপ মারতে নিয়েছিল,’ সে দায়ের কোপ মারার ভঙ্গি করে দেখায়,‘এ-এ-একটুর জন্য পা-পা-পারে .....’ সাগর কথা অসম্পূর্ণ রেখে স্থির চোখে ঝিলের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার মনে এক ভাবনা আসে। সে আস্তে আস্তে উঠে শরীর ঝাড়া দিয়ে হেসে তোত্‌লিয়ে বলে,‘তো-তো-তোরা কেমন আ-আ-আছিস ?’ যেন তার কিছুই হয় নি, যা হবার ঝিলের হয়েছে,‘বা-বা-বাসার সবাই ভা-ভা-ভালোতো ?’ ঝিল হাঁ হয়ে থাকে। সাগর হাসি মুখে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে ভেতরে যায়।

পরমুহূর্তে দাাদু আসে,‘কী হয়েছে রে ? এতো জোরে দরজা ধাক্কিয়ে কে আসছে ?’

‘কে আবার, ভাইয়া !’

‘সে আবার কী শুরু করেছে ?’

‘উনি বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন অন্ধ হয়ে, ফিরে এসেছেন তোত্‌লা হয়ে।’

‘উজবুক, উজবুকের এপিঠ ওপিঠ,’ দাদু বেরিয়ে যেতে যেতে আবার ফিরে আসে,‘তোর বাবা-মা কখন আসবে ?’

‘আজ না, কাল আসবে।’

‘কেন ? কাল কেন ?’

‘গাড়ি লালমনিরহাঁট গ্যারাজে, কাল ঠিক হলে গাড়ি নেয়ে আসবে, না হলে বাসেই চলে আসবে।’

‘আর গাড়ি ‘

‘গাড়ি ঠিক হলে ড্রাইভার নিয়ে আসবে।’

‘ভাল, খুবই ভাল, আরো একটা দিন উজবুকের সাথে বসবাস ?’ দাদু সাগরকে বকতে বকতে বেরিয়ে যান। কিন্তু দাদু তখনও জানেন আরো একটা দিন ও তারপর দিন তিনি এদের নিয়ে কী যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে যাবেন ?

যন্ত্রণা শুরু হয় রাতের খাবার সময় থেকে। ঝিল ও দাদু খাচ্ছেন। খেতে খেতে দাদু বলেন,‘কাল যদি তোর বাবা-মা বাসে ফেরে, তাহলে কাওকে বাস স্টেশন যেতে হবে।’

ঝিল এ বিষয়টা জানেন, দাদু এ কাজটা সব সময় করেন, তার আব্বুও করেন। আগমনকারীকে এগিয়ে আনেন। তাঁরা এটা সবার জন্যই করেন। এটা নাকি উনাদের পারিবারিক রেওয়াজ। কাওকে বিদায় বা স্বাগত জানাতে সামর্থের শেষ পর্যন্ত যাওয়া। অর্থাৎ বিদেশ গমনরত ব্যাক্তিকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত গিয়ে বিদায় জানানো। আর আগমনকারীকে এয়ারপোর্ট বা বাস অথবা ট্রেন স্টেশন থেকে এগিয়ে নিয়ে আসা। আর যে নিজের গাড়ি নিয়ে আসবে তাকে গেট থেকে সসম্মানে স্বাগত জানিয়ে এগিয়ে আনা।

একবার ঝিলের এক রহমত চাচা কুয়েত যাবেন, তাকে বিদায় জানাতে গ্রাম থেকে তেত্রিশজন ঢাকা এসেছিল। তারা সবাই ঝিলদের বাসায় উঠেছিল। বিদায়ের দিন একটা বাস ভাড়া করা হয় এয়ারপোর্ট যাবার জন্য। সেদিন ঝিলও এয়ারপোর্টে গিয়েছিল। না, রহমত চাচাকে বিদায় জানাতে না, সে গিয়েছিল তামাশা দেখতে, এই তেত্রিশজন মানুষ এয়ারপোর্ট গিয়ে কী করে, তা দেখতে।

সে এক মনমুগ্ধকর কারবার ! দলে মহিলা ছিল দশবারজন, বাস থেকে এয়ারপোর্টে নামার সাথে সাথে সবাই কাঁদতে শুরু করে। পুরুষরা অকারণে এদিকওদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। কেউ উদাস নয়নে সিগারেট টানতে থাকে। বাচ্চারা কোক, আইসক্রিম খাবার জন্য ঘেনর ঘেনর করতে থাকে। আর ছেলেগুলো ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন এয়ারলাইনসের এয়ারহোস্টেসদের হাঁ করে দেখতে থাকে। কেবল মাত্র রহমাত চাচী নীরবে এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। তার চোখে পানি নেই কিন্তু বুকটা যে ফেঁটে যাচ্ছে তা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এরই মাঝে কে একজন চাচীর হাতে একটা কোকের বোতল দিয়ে যায়, উনি সেটা ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন, একবারও চুমুক দেন নি। একজন ফুপু বোরখা পরা। বোরখার মুখের কাছে পর্দা দেয়া, চোখমুখ কিছুই দেখা যায় না। তিনি সেই পর্দার ফাঁক দিয়ে স্ট্রর সাহায্যে জুস খাচ্ছেন আর নাঁকি স্বরে কাঁদছেন। ঘন্টাআড়াই কান্নাকাটি করার পর হঠাৎ একজন খোঁজ করেন,‘রহমত কই, রহমত ?’

চাচী বলেন, আধাঘন্টা আগেই উনার প্লেন চলে গেছে।

মুহূর্তে কান্নাকাটি বন্ধ। সবাই এর ওর মুখের দিকে তাকায়। এক বয়স্ক ফুপু হঠাৎই রেগে যান,‘ফাইজলামি পাইছ, এ্যাঁ, আধাঘন্টা আগে রহমতের প্লেন উড়াল দিছে, আর তুমি এৎক্ষণে কও ? তোমার কান্ডজ্ঞান দেখি কোনকালেই হইব না, কৎক্ষণ ধইরা মানুষগুলান কানতাছে ? এমন বেত্তুমিজ্জা বউতো কোনকালে দেহি নাই ! চুক্ষে পানি নাই-ই, আবার দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া কুক খাইতাছে, কুক ?’

( চলবে )

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.