নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাজু সিদ্দিকের মননভুবন

আমার অনুমতি ব্যতীত কেহ আমার গল্প বা গল্পের অংশ এবং নাটক বা নাটকের দৃশ্য বা সংলাপ বা সংলাপের অংশ কোখায়ও ছাপাতে বা ব্যবহার করতে পারবেন না। -- রাজু সিদ্দিক

রাজু সিদ্দিক

আমার অনুমতি ব্যতীত কেহ আমার গল্প বা গল্পের অংশ এবং নাটক বা নাটকের দৃশ্য বা সংলাপ বা সংলাপের অংশ কোখায়ও ছাপাতে বা ব্যবহার করতে পারবেন না। -- রাজু সিদ্দিক .

রাজু সিদ্দিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আনন্দযাত্রা ( রম্য ) ৭

১৬ ই মে, ২০১৪ রাত ৯:৩২

ঝিল জানে পারিবারিক রেওয়াজ মত দাদু আব্বু-আম্মুকে আনতে কাল বাসস্টেশনে যাবে, আর যদি গাড়িতে আসেন তাহলে রাস্তা থেকে এগিয়ে আনবে। তাই সে কিছু বলে না, শুধু মাথা ঝাঁকিয়ে দাদুর কথায় সায় দিয়ে মুখে খাবার তোলে।

এমন সময় তলতা একটা ব্লেন্ডার নিয়ে এসে টেবিলে রাখে। তারপর টেবিলে রাখা সবকটা তরকারির বাটি একে একে এনে ব্লেন্ডারের পাশে লাইন ধরে রাখে। ঝিল অবাক চোখে দেখে। দাদু মাংস নেয়ার জন্যে চামচ হাতে নেন, তলতা মাংসর বাটিও এনে ব্লেন্ডারের পাশে রাখে। দাদু চামচ হাতে হাঁ হয়ে থাকেন।

“সল্পাহারে অধিক আয়ু” নামের একটা বই চোখের সামনে মেলে ধরে সাগর হেলেদুলে ঘরে ঢোকে। তার মাথায় এখনো তোত্‌লা সগীরের চায়ে গুলে সিঙ্গারা খাওয়া ঘুরছে। সে টেবিলের পাশে এসে বই থেকে মুখ সরিয়ে ইশারায় তলতাকে বিভিন্ন বাটি দেখায়, তলতা ইশারা মত প্রতি বাটি থেকে তরকারি তোলে ব্লেন্ডারে রাখে, আবার কোন তরকারি কত চামচ নিবে তা সাগর আঙুলের ইশারা দেখায়। যেমন, লতি আধা চামচ, ডাল দু চামচ, মাংস তিন চামচ ( মাংসতো তাই একটু বেশি )। সব শেষে সাগর আবার দু আঙুল ও তর্জনীর অর্ধেক দেখায়, তলতা আড়াই চামচ ভাত ব্লেন্ডারে দিয়ে সুইচ টিপে ব্লেন্ড করে। তারপর ব্লেন্ড করা ঘন মিশ্রণটা একটা মগে নিয়ে দুহাতে ধরে মগটা সাগরকে দেয়, যেন ভক্ত পুরোহিতকে অর্ঘ্য দিচ্ছে। সাগর এক ল-ম্বা চুমুকে সবটুকু তরল খেয়ে চোখ বুজে জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট চাটে। তলতা সাগরের দিকে তাকিয়ে নিজের শুকনো ঠোঁট চাটে। সাগর আস্তে আস্তে চোখ খুলে তোত্লিয়ে বলে,‘ডে-ডে-ডেলিসিয়াস ! ভেরী ডেলিসি-সি-সিয়াস !’ তারপর তলতার পিঠ চাপড়ে হসি মুখে ঝিল ও দাদুকে এক নজর দেখে,‘গু-গু-গুড ন-নাইট এভরী ব-ব-বডি,’ বলে আবার “সল্পাহারে অধিক আয়ু” পড়তে পড়তে চলে যায়।

দাদু এখনো মাংসর চামচ হাতে হাঁ হয়ে আছেন। তলতা অনন্দিত মুখে মাথা এপাশ ওপাশ করে অত্মতৃপ্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে সাগরের ঝুটা মগ হাতে নেয়। যেন জীবনের সবচেয়ে পুণ্যের কাজটা করেছে।

তলতার অত্মতৃপ্তির নিঃশ্বাসে দাদু ফিরে তাকান, তাকিয়ে দেন এক ধমক,‘হারামজাদা তলতা !’

সাথে সাথে তলতা হাতের মগ ছেড়ে দেয়, মগ ফ্লোরে পড়ে ঝন্ ঝন্ ঝন্।

দাদু ব্লেন্ডার দেখিয়ে বলেন,‘আরেক বার যদি এটা দিয়ে আমার সামনে ঘর্‌ঘর্, ঘর্‌ঘর্ করিস, তুই ব্যাক টু দ্যা গ্রাম। তোর বাবা ঢাকা পাঠিয়েছে হোটেল ম্যানেজমেন্ট শেখার জন্য, উজবুকের সাগরেদ হয়ে ঘর্‌ঘর্, ঘর্‌ঘর্ করার জন্য না।’ তারপর দাদু ঝিলকে বলে,‘শোন, ঐ উজবুকটা যখন খেতে আসবে তখন আমাকে খেতে ডাকবি না, কক্ষণো না।’ তলতা মাংসার বাটি নিয়ে টেবিল ঘুরে দাদুর কাছে আসতে থাকে। দাদু এবার তলতাকে দেখিয়ে বলে,‘আর উজবুকের এই সাগরেদের রাতের খাবার বন্ধ।’

সাথে সাথে তলতা মাংসর বাটি ছেড়ে দেয়। দাদু চমকে ওঠেন। বাটির পড়ে টুকরা টুকরা, আর মাংস সারা ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। তলতা এবার ব্লেন্ডার হাতে নেয়। দাদু চিবিয়ে চিবিয়ে বলেন,‘এই রাখ, রাখ ব্লেন্ডার, রাখ,’ দাদু ধমক দেয়ার রিক্স নেন না, যদি ব্লেন্ডার ফেলে দেয় ? তলতা ব্লেন্ডার টেবিলে রাখে। দাদু এবার তলতার শান্তি বাড়ান,‘এই বদের তিন দিনের খাবার বন্ধ।’

তলতা মন খারাপ করে চলে। দাদু বড় বড় নলা তোলে খেতে থাকেন। ঠিক তখন রান্নাঘরে একটা গ্লাস ভাঙার শব্দ হয়। দাদু আবার চমকে ওঠেন,‘হারামজাদাটা আবার ভাঙছে, এর সারা মাসের খাবার বন্ধ।’

ঝিল আর থাকতে পারে না, ওড়না চেপে হাসতে হাসতে উঠে যায়।

দাদু তখন ঝিলের আব্বু-আম্মুকে নিয়ে পড়েন,‘একটা পোলারে মানুষ বানাইতে পারল না, বাপ মা হইছে, বাপ মা ! এখন পোলাই সংসারটারে জঙ্গল বানাইয়া ফালাইছে, আর আমারে সেই জঙ্গল পাহারা দিতে রাইখা গেছে ! আমি জঙ্গলের পাহারাদার, আর হে হইল গিয়া জঙ্গলের রাজা, টারজান !’ ঝিল ঘর মোছার ন্যাকড়া এনে ছড়িয়ে থাকা মাংস জড়ো করে ঘর মোছে, দাদু বলেন,‘তুই মুছছিস কেন, বুয়া কই ?’

‘বুয়াকে না ভাইয়া বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে।’

‘কেন ? বুয়াতে আবার তার কী সমস্যা ?’

‘বুয়াকে মান্দাল গাছের কাঁটা আনতে পাঠিয়েছে, যোগ সাধনায় না কি লাগবে।’

‘যোগ সাধনা ! দাদু রাগে উঠে দাঁড়ান,‘শ’খানেক মান্দালের কাঁটা যদি তার পেছনে গাঁথতে পারতাম ? একটা উজবুক দুনিয়ার সবাইকে উজবুক বানাচ্ছে।’

‘দাদু, ভাইয়াকে বিয়ে দিয়ে দেও।’

‘এ উজবুকের সাথে বিয়ে বসবে কে ?’

‘কেন ? আরেকটা মহিলা উজবুক।’

‘মহিলা উজবু.... ! হু ! তাহলেই হলো, সারা ঘরে উজবুকের আন্ডাবাচ্চা কিলবিল করবে।’ দাদু বকতে বকতে চলে যান।

তলতার রাতের খাবার এখনো খাওয়া হয় নি, দাদু ঘুমালে খাবে। ঝিল খালা রান্নাঘরে তার খাবার ঢেকে রেখেছে। সে বসবার ঘরের ডিভানে চাদর গায়ে শুয়ে সিদ্ধান্ত নেয়, সে আর সাগর মামার সাথে নাই। মামা হিমালয় যাক বা হরিরামপুর যাক সে নাই। সে মনে মনে কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়। এমন সময় সাগর আসে। পায়ের শব্দে তলতা চোখ বন্ধ করে ফেলে।

‘তলতা, এই ত-ত-তলতা, শুয়ে প-প-পড়েছিস, ত-ত-তলতা ?’ তলতা মিথ্যা নাক ডাকে। ‘ত-ত-তলতা, এই তলতা,’ সাগর একটু ভেবে চলে যায়। তলতা বিরক্ত মুখে উঠে বসে সাগরের দিকে কিছুক্ষণ কপাল কুঁচকে তাকিয়ে ঘুরে পার দিকে মাথা আর মাথার দিকে পা দিয়ে চাদর মুড়ে শোয়। সাগর এক গ্লাস পানি এনে তলতার পার কাছে বসে, যেখানে কিছুক্ষণ আগে তার মাথা ছিল। ‘ত-ত-ত-লতা, এ-এ-এই তলতা,’সাগর তলতার পায়ে ধাক্কা দেয়, তলতা ওঠে না। সাগর তলতার পা থেকে থেকে আস্তে আস্তে চাদরা সরায়। আর থাকতে না পেরে তলতা চাদর মুড়া অবস্থায় উঠে বসে। চাদর মুড়া তলতাকে দেখে সাগর চমকে ওঠে,‘ও মাগো ! আপনে কেডা ?’

‘মামা আমি তলতা,’ তলতা মুখ থেকে চাদর সরায়।

‘ত-ত-তলতা ? তোর মা-মা-মাথা না এদিকে ছি-ছি-ছিল ! ঐ দি-দি-দিকে গেল কি-কিভাবে ?’

‘কইতে পারি না মামা, আমি কিচ্ছু কাইতে পারি না। আমি খালি ঘুরি।’

‘খালি ঘুরি ?’ সাগর অবাক।

‘হ মামা খালি ঘুরি, ঘুমের মইধ্যে খালি ঘুরি, এদিক ওদিক ঘুরি ।

‘আ-আ-আশ্চর্য !’

‘আচ্ছা মামা যোগীরাও কি ঘুমের মধ্যে ঘুরে ?’

‘তা-তা-তাইতো ! যোগীরা ঘু-ঘু-ঘুমের মাঝে অ-অ-অলেীকিক অনেক কি-কি-কিছু করতে পারে পেয়েছি, ঘু-ঘু-ঘুরার কথাতো কোথায়ও পাই নি। দাঁ-দাঁ-দাঁড়া আমি এ-এ-এক্ষুণি যোগীদের ব-ব-বই দেখে আ-আ-আসছি, তু-তু-তুই ঘুমাস না, দাঁ-দাঁ-দাঁড়া আসছি।’

‘জ্বে আচ্ছা ঘুমামু না, আপনে যান।’ সাগর দ্রুত উঠে যায়, সাথে সাথে তলতা আবার ঘুরে পার দিকে মাথা ও মাথার দিকে পা দিয়ে চাদর মুড়ে আগের অবস্থায় শোয়।

( চলবে )

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.