নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাজু সিদ্দিকের মননভুবন

আমার অনুমতি ব্যতীত কেহ আমার গল্প বা গল্পের অংশ এবং নাটক বা নাটকের দৃশ্য বা সংলাপ বা সংলাপের অংশ কোখায়ও ছাপাতে বা ব্যবহার করতে পারবেন না। -- রাজু সিদ্দিক

রাজু সিদ্দিক

আমার অনুমতি ব্যতীত কেহ আমার গল্প বা গল্পের অংশ এবং নাটক বা নাটকের দৃশ্য বা সংলাপ বা সংলাপের অংশ কোখায়ও ছাপাতে বা ব্যবহার করতে পারবেন না। -- রাজু সিদ্দিক .

রাজু সিদ্দিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আনন্দযাত্রা ( রম্য ) ৮

২০ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৫

সাগরের ঘরের চার দেয়ালে চারটা ম্যাপ সাঁটানো। পশ্চিম দেয়ালে সৌরজগতের ম্যাপ, উত্তর দেয়ালে পৃথিবীর, পূর্ব দেয়ালে বাংলাদেশের ম্যাপ, আর দক্ষিণ দেয়ালে ঢাকা সিটির। বাংলাদেশের ম্যাপের উপরের এক মাথা খুলে ঝুলে আছে। সারা ঘরে বই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তোষকের নিচে বই বিছানো, বইয়ের জন্য তোষক জাজিমের মত উচু হয়ে আছে। বালিশের কভারের ভেতর তুলা নেই, আছে বই। রেলস্টেশনে শক্ত প্লাটফর্মে ইট মাথায় ঘুমানোর অনুভূতি নেয়ার জন্য এই ব্যবস্থা। তার ঘরে আরেকটা জিনিষ আছে, দক্ষিণ দেয়ালে ফ্লোর থেকে তিন ফুট উপরে একটা কল লাগালো আছে ! তার বাথরুমের বালতির কলটা নষ্ট হয়ে গেলে নতুন কল লাগানো হয়। কিন্তু এত দিনের ব্যবহার করা নষ্ট কলটা ফেলতে মায়া লাগে, তখন সে মিস্ত্রি ডেকে কলটা দেয়ালে লাগিয়ে রাখে। কলটার সাথে পানির লাইনের কোন সংযোগ নেই, শ্রেফ দেয়াল থেকে কলটা বেরিয়ে আছে, বাথরুমে যেমন থাকে। কলটা লাগনো শেষে মিস্ত্রি জিজ্ঞেস করে,‘ভাই এইখানে কলটা লাগাইলেন ক্যান ?’

সাগর উত্তর দেয়,‘আন্ডারপ্যান্ট শুকামু।’

মিস্ত্রি কিছুক্ষণ মাথা চুলকিয়ে বলে,‘আমারে টাকা দিয়া তাড়াতাড়ি বিদায় করেন !’

এখন অপরিচিত কেউ তার রুমে এলে যখন জিজ্ঞেস করে, তখন সাগর অবাক হয়ে বলে,‘ও এই কলটা ? রাতে ঘুম ভাঙলে এ কলে গোছল করে আবার ঘুমিয়ে পড়ি। কষ্ট করে বাথরুমে যেতে হয় না, ব্যবস্থাটা ভাল না ? আপনিও আপনার বেডরুমে এ রকম একটা কল লাগিয়ে নিবেন, দেখবেন অনেক সুবিধা, অনেক। যেমন ধরুন...,’ তার কথা শেষ হবার আগেই শ্রোতা ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

তবে দাদা দেখে বলেন,‘ব্যবস্থা ভালই, তুই এক কাজ কর, টেবিলের সামনের চেয়ারটা সরিয়ে সেখানে একটা পুরনো হাইকমোড এনে রাখ, আরো ভাল হবে।’

‘দাদুর পরামর্শ সাগরের মনে ধরে, কিছুদিন পর মা এক মাসের জন্য বাড়ি যায়, সে সুয়োগে একটা নতুন কমোড কিনে এনে সে চেয়ারের জায়গায় রাখে। কিন্তু মা বাসায় ফেরার এক ঘন্টার মাঝে কমোড বের করে ফেলে দেন। পরে কমোডটা ছাদে নিয়ে মাটি ভরাট করে পুঁইশাক লাগান। দেখতে দেখতে পুঁইশাক বড় হয়। কদিন পর পুঁইরে ডগা তোলে এনে রান্না করা হয়। সাগর সেই পুঁইশাক খায় না, তার নাকি ঘেন্না লাগে ?

সাগর তলতার কাছ থেকে ফিরে একের পর এক বই হাতাতে থাকে, না কোথায় যোগীদের ঘুম নিয়ে বিশদ লেখা নেই। হঠাৎ তার মনে পড়ে, "যোগনিদ্রা" নামে তার একটা বই আছে, এবার সে যোগনিদ্রা বই খোঁজে। টেবিলের উপর-খাটের নিচে, তাকের উপর-তোষেকের নিচে সব জায়গায় খোঁজে, কোথায়ও নেই। সে অবাক, বইটা গেল বই ? আশ্চর্য ! সে বিড়বিড় করতে করতে বেরিয়ে যায়।

বড় আব্বা মানে দাদু শুয়ে পড়েছেন বুঝতে পেরে তলতা ওঠে রান্নাঘরে যায় রাতের খাবার খেতে। পরক্ষণে সাগর বসবার ঘরে এসে বই খোঁজে। টি-টেবিলে, সেন্টার টেবিলের নিচে, টিভির নিচে না কোথায়ও "যোগনিদ্রা" নেই। তলতা যে ঘরে নেই সাগর খেয়াল করে না, তার মাথায় যোগনিদ্রা ঘুরছে। সে বাবার ঘরে গিয়ে খোঁজে, সেখানেও নেই।

ইদানিং দাদুর তেমন ঘুম হয় না। একবার ঘুম ভাঙলে সহজে আসেও না। সারা রাত সজাগ থাকতে হয়। তাই শোবার সময় তিনি রুমের দরজা লাগিয়ে শোন যাতে বাইরের কোন শব্দ না আসে। তিনি শুয়েছেন পনের মিনিট হয়, মাত্র চোখটা লেগেছে। এমন সময় দরজার ধুপধাপ শব্দ হয়। দাদু ধরফরিয়ে ওঠে বসেন,‘কে-কে-কে ? আরে কে ?’

‘দা-দা-দাদু আ-আ-আমি।’

দাদু প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলেন,‘কী ? কী হয়েছে ?’

‘দাদু তো-তো-তোমার ঘরে কি আ-আ-আমার যোগীনিদ্রা ব-ব-বইটা আ-আ-আছে ?’

দাদু হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকেন,‘মাবুদ ! ও মাবুদ ! ঘুমের মানুষকে জাগায়ে বলে যোগীনিদ্রার বই আছে ?’ রাগে দাদুর শরীর কাঁপে, তিনি এক পাশে সরে বলেন,‘যা, দেখ আছে কি না, দেখ।’

সাগর হাসি মুখে ঘরে ঢোকে বই খোঁজে। দাদু চোখ মুখ কুঁচকে তাকিয়ে থাকেন। সাগর বই পায় না,‘নে-নে-নেই তো, দেখি ঝি-ঝি-ঝিলের ঘরে আ-আ-আছে কি না। স-স-সরি।’

‘যা, যা দেখ গিয়া, আর শোন আমার সাথে তো-তো-তোতলায়ে কথা বলবি না, খবরদার ! থাবড়ায়ে তোর সব দাঁত ফেলে দিব।’

সাগর স্বভাবিক কণ্ঠে,‘আচ্ছা বলব না,’ বলে বেরিযে যায়।

‘উজবুক ! উজবুক জানি কোনখানের ?’ দাদু দরজা লাগিয়ে বিছানায় গিয়ে শোন।

দাদুর ঘর থেকে এসে সাগর ঝিলের ঘরের দরজায় টোকা দেয়। ঝিল আয়নার সামনে বসে মাথা আঁচড়াচ্ছে। টোকার শব্দে ঝিল বিরক্ত মুখে তাকায়,‘ভাইয়া যাওতো বিরক্ত করো না।’

‘ঝি-ঝি-ঝিল, একটু আ-আ-আসি ?’

ঝিল রাবারবেন্ড মুখে বলে,‘না।’

‘আ-আ-আচ্ছা। তোর ঘ-ঘ-ঘরে আমার কো-কো-কোন বই আ-আ-আছেরে ?’

‘না।’

‘ও আ-আ-আচ্ছা,’ সাগর ঘুরে আবার ফিরে দাঁড়ায়,‘ইয়ে .....’

‘তুমি যাবে ?’

‘আ-আ-আচ্ছা,’ সাগর কিছুক্ষণ ইতঃস্তত করে আবার দাদুর ঘরে যায়।

দাদুর চোখ লেগে আসছে বলে, এমন সময় আবার দরজায় ধুপধাপ ! দাদু ধরফরিয়ে উঠেন,‘কে-কে-কে ? আরে কে ? কে ? কে ?’

‘দা-দা-দাদু আমি।’

‘মাবুদরে, ও মাবুদ, তুমি এরে হেদায়েত করো, নাইলে আমারে তুইলা নেও, এই জঙ্গল থিকা তুইলা নেও,’ দরজায় আবার শব্দ হয়, ‘আরে খুলি, খুলি,’ দাদু উঠে দরজা খুলেন।

‘স-স-সরি,’ সাগর সরি বলে।

‘তোরে না বলছি আমার সাথে তোতলায়ে কথা বলবি না ?’

‘তোমার বিছানার নিচটা খোঁজা হয়নি,’ সাগর হেসে স্বভাবিক কণ্ঠে বলে।

এবার দাদুর কান্না পায়, তিনি কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলেন,‘খোঁজ, ভাল করে খোঁজ।’ সাগর ঘরে ঢোকে, সাথে সাথে দাদু বের হয়ে বাহির থেকে দারজা লাগিয়ে দেন।

‘দাদু দ-দ-দরজা ল-লা-লাগাচ্ছ কে-কে-কেন ? দা-দা-দাদু ?’ সাগর দরজায় ধুপধাপ আঘাত করে,‘দা-দা-দাদু ?’

(চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.