নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাজু সিদ্দিকের মননভুবন

আমার অনুমতি ব্যতীত কেহ আমার গল্প বা গল্পের অংশ এবং নাটক বা নাটকের দৃশ্য বা সংলাপ বা সংলাপের অংশ কোখায়ও ছাপাতে বা ব্যবহার করতে পারবেন না। -- রাজু সিদ্দিক

রাজু সিদ্দিক

আমার অনুমতি ব্যতীত কেহ আমার গল্প বা গল্পের অংশ এবং নাটক বা নাটকের দৃশ্য বা সংলাপ বা সংলাপের অংশ কোখায়ও ছাপাতে বা ব্যবহার করতে পারবেন না। -- রাজু সিদ্দিক .

রাজু সিদ্দিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আনন্দযাত্রা ( রম্য ) ১০

৩১ শে মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৪

কণা রাগে কাঁপতে থাকে,‘আ-আ-আমি তোমার রিক্সা নিয়ে ভাগব ?’

‘আপনে নিবেন ক্যান ? আপনের দলের অরেকজন আইসা টাইনা নিব।’

বিটিভি বিতর্ক প্রতিযোগীতার শ্রেষ্ঠ তার্কিক কোন যুক্তি খোঁজে পায় না, কাঁদবে না হাসবে বুঝতে পারে না। কিছুড়্গণ ড্রাইভারকে মুখের দিকে তাকিয়ে রিক্সা থেকে নেমে পাদানী থেকে হ্যান্ডব্যাগ নিয়ে হাঁটতে থাকে। পেছন থেকে ড্রাইভার ডাকে,‘আমার ভাড়া দিয়া যান।’

কণা কঠিন কিছু বলতে গিয়ে থেমে যায়, মনে পড়ে হ্যান্ডব্যাগে টাকা আছে, সে টাকা বের করে রিক্সাওলাকে একটা একশ টাকার নোট ছুড়ে দিয়ে ঘুরে পা বাড়ায়। ড্রাইিভার আবার পেছন থেকে ডাকে,‘বাকি টাকা লইয়া যান।’ কলা ফিরেও তাকায় না, সে তার মত হাঁটতে থাকে, কিন্তু ক’পা বেড়েই থমকে দাঁড়ায়। মনে পড়ে তার বাসের টিকেটটা পার্সে ছিল !

‘আচ্ছা আপনার কী মনে হয়, ইন্টারভিউর জন্য আমার থেকে যাওয়া উচিৎ ?’ নয়ন দাদুকে জিজ্ঞেস করে।

‘থাকাইতো উচিৎ,’ দাদু বলে।

এমন সময় তলতা হনত্মদনত্ম হয়ে এসে বলে,‘বড় আব্বা লাস্ট নাইট বাসটাওতো অইসা পড়ছে, কই দাদা-দাদিতো আইল না ?’

‘শেষ বাসটাও চলে এসেছে ?’

‘হ বাসওলার কইল। আচ্ছা দাদা-দাদিরা বাস থিকা নাইমা বাসায় চইলা যায় নাইতো ?’

‘কি বলছিস, আমরা দেখব না ?’ বলে দাদু উঠে কাউন্টারে জিজ্ঞেস করে ঝিলের মোবাইলে রিং দেন,‘কিরে তোর বাবা-মা চলে আসছে ?’

ঝিল বলে,‘তারা আসবে না।’

‘কী ?’

‘আম্মু ফোন দিয়েছে, তারা কাল রওয়ানা দেয় নি,আজও দিবেও না।’

‘দিবে না ?’ দাদুর বিশ্বাস হয় না।

‘না, দিবে না, আমাদের সবাইকে বাড়ি চলে যেতে বলেছে। এবার সবাই বাড়িতে ঈদ করব। অনেক মজা। ’

‘অনেক মাজা ! বাসের টিকেট পাবি ?’ দাদু রেগে যান।

‘বাসে যাব কে বলেছে ?’

‘তাহলে ?’

‘আব্বু মাইক্রো ভাড়া করতে বলেছে।’

‘তোদের মাথা খারাপ হইছে ?’

‘ মাথা না আমাদের গাড়ি খারাপ হয়েছে।’

‘চুপ থাক !’ দাদু ধমকে লাইন কেটে দেয়, ‘উজবুক, সব উজবুক, মাঝে মাঝে আমার সন্দেহ হইত সাগরকে বুঝি তার বাপ-মা টোকায়ে আনছে। কিন্তু আজকে আমি নিশ্চিত, না সাগর তাদেরই সনত্মান। যেমন পোলা দেমন বাপ-মা, উজুবক ফ্যামিলী। বুঝছস, সুপারী গাছে সুপারীই ধরে, কইডা কাছে কইডা।’

‘কিন্তু বড় আব্বা নাইক্কেল গাছে যে ডাব ধরে, এইটা কী ?’

‘চুপ থাক উজবুকের বাচ্চা,’ দাদু এবার তলতাকে ধমকান।

দাদুর মোবাইলের কথা শোনে নয়ন ভাবে তারা বুঝি টিকেট পেয়েছে, সে এগিয়ে এসে জানতে চায়,‘আপনারা টিকেট পেয়েছেন ?’

‘কীসের টিকেট ?’ দাদু জোরে বলেন।

‘টিকেট পান নি, তাহলে এতক্ষণ কী বললেন ?’

‘আমরা যাই বলি তাতে তোমার কী দরকার ?’

‘আমার টিকেট দরকার, কেন আপনাকে বললাম না, কাল আমার ইন্টারভিউ।’

‘অ,’ দাদু বুঝতে পারেন তিনি অযথা নয়নের সাথে রাগ করছেন, তিনি চলে আসার জন্য পা বাড়িয়ে ফিরে আসেন,‘তোমার বাড়ি যেন কোথায় ?’

নয়ন বলে,‘দিনাজপুর, হাকিমপুর উপজেলা, হাকিমপুর।’

‘শোন, কাল আমার মাইক্রো ভাড়া করে বাড়ি যাব, লালমনিরহাট। তুমি চাইলে আমাদের সাথে যেতে পারো। পথে কোন সুবিধামত জায়গায় নেমে যাবে, সেখান থেকে তুমি লোকাল বাস বা কিছু একটা ধরে বাড়ি চলে যেতে পারবে, যাবে ?’

‘যাব মানে, অবশ্যই যাব, কিন্তু আপনি আমাকে নেবেতো ?’

‘কেন নেব না, বলেলামতো নেবার জন্যই,’ দাদু হাসেন। দাদুর হাসি দেখে নয়নও হাসে, হাসির মাঝেই টুপ করে দাদুর পা ধরে ছালাম করে,‘আরে কী করো ? কী করো ?’

‘আপনার দোয়া নিলাম, কাল আমি ইন্টারভিউটা দিতে পারব, শুধু মাত্র আপনার জন্যই দিতে পারব। আপনি দোয়া করবেন।’

‘ফিআমানলিস্নলাহ ! ফিআমানলিস্নলাহ !, এখন তোমার টিকেটটা কী করবে ? যাও ফেরত দিয়ে এসো।’

‘হ্যাঁ, ভাল কথা বলেছেন, ফেরত দেই গিয়ে।’

‘আরে না, কাউন্টারে ফেরত দিবেন ক্যান ?’ তলতা নয়নকে আটকায়।

‘তাহলে ?’ নয়ন জানতে চায়।

‘চলেন, বাইরে গিয়া বেইচা দেই, বেশি দাম পাইবেন।’

‘তাই নাকি ?’

‘হ, চলেন, চলেন।’

‘কিন্তু ?’

‘কিয়ের কিন্তু, আপনের টিকেট আপনে বেচবেন, কোন কিন্তু নাই, আসেন।’

‘হ্যাঁ তাইতো, আমার টিকেট আমি বিক্রি করব, সমস্যা কী ? আপনি একটু বসেন আমরা আসছি,’ নয়ন দাদুকে বসতে বলে তলতার সাথে বেরিয়ে যায়। তলতা নয়নকে কাউন্টার থেকে একটু দূরে আড়ালে নিয়ে আসে। ‘এখানে কেন আসলে ?’

‘কাউন্টারের সামনে টিকেট বেচলে কন্ডাক্টাররা হাউকাউ শুরু করব না।’

‘ও তাইতো।’

‘এইখানে দাঁড়ান দুই মিনিটে বেচা দিতাছি, খালি দেখেন। টিকেটটা কই দেন।’ নয়ন পকেট থেকে টিকেন বের করে তলতাকে দেয়। তলতা টিকেটা দোলিয়ে দোলিয়ে পেসেঞ্জার ডাকে,‘এই যে ভাই টিকেট, দিনাজপুরের টিকে, দিনাজপুরের। আজকের টিকেট, শেষ হইয়া গেলে ফুরাইয়া যাইব। জীবনের শেষ টিকেট, দিনাজপুরের টিকেট।’

কালুগুন্ডা দাঁত খোঁচাতে খোঁচাতে এসে তাদের সামনে দাঁড়ায়,‘কত ?’

নয়ন দাম বলতে যায় তলতা বাঁধা দিয়ে নিজে বলে,‘সাড়ে চারশ।’

দাম শোনে নয়ন চোখ বড় করে তলতার দিকে তাকায়।

কালুগুন্ডা মাথা ঝাঁকায়,‘অনেক বেশি।’

‘ঈদের আগে এই রেইটেই চলতাছে, নিলে নেন, না নিলে ফুটেন,’ তলতা বলে।

কালুগুন্ডা দুইটা একশ টাকার নোট বের করে,‘টিকেটের লগে ফ্রি কী ?’

নয়ন অবাক,‘ফ্রি !’

‘ফ্রি নিলে পাঁচশ টাকা লাগব,’তলতা বলে।

কালুগুন্ডা আরো তিনটা একশ টাকার নোট বের করে,‘কী ফ্রি ?’

তলতা এদিক ওদিক তাকিয়ে নয়নের মাথার ক্যাপটা নিয়ে টিকেট সহ কালুগুন্ডাকে দেয়। নয়ন হতভম্ব হয়ে যায়। কালুগুন্ডা ক্যাপ ঘুরিযে ফিরিয়ে দেখে মাথায় দেয়, তারপর টিকেট ও টাকা নিজের পকেটে ভরে হাঁটা দেয়।

‘আরে এতো টাকা না দিয়েই চলে যাচ্ছে !’ নয়ন অবাক।

নয়ন গিয়ে কালুগুন্ডার হাত ধরে,‘ওই মিয়া, ওই, টাকা না দিয়া যাও কই ?’

কালুগুন্ডা ঘুরে নয়ন ও তলতার মুখে দুই ঘুষি মারে। দুজন ছিটকে ফুটপাতে পড়ে। সাথে সাথে একজনের চোখের উপর আরেকজনের গাল ফুলে যায়। কালুগুন্ডা এগিয়ে আসে,‘টিকেট ব্লাক করো, তোত্‌লা সগীররে কইলে ....,’ কালুগুন্ডা কথা অসমাপ্ত রেখে হাত দিয়ে গলায় ছুরি চালানোর ভঙি কার দেখায়। নয়ন ও তলতা ভয়ে হাত তোলে গলা আড়াল করে পিছিয়ে যায়। কালুগুন্ডা হেলেদুলে চলে যায়।

( চলবে )

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.