নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাজু সিদ্দিকের মননভুবন

আমার অনুমতি ব্যতীত কেহ আমার গল্প বা গল্পের অংশ এবং নাটক বা নাটকের দৃশ্য বা সংলাপ বা সংলাপের অংশ কোখায়ও ছাপাতে বা ব্যবহার করতে পারবেন না। -- রাজু সিদ্দিক

রাজু সিদ্দিক

আমার অনুমতি ব্যতীত কেহ আমার গল্প বা গল্পের অংশ এবং নাটক বা নাটকের দৃশ্য বা সংলাপ বা সংলাপের অংশ কোখায়ও ছাপাতে বা ব্যবহার করতে পারবেন না। -- রাজু সিদ্দিক .

রাজু সিদ্দিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বারোটা ত্রিশের ভূত ( মূল নাম - ফাঁস টাইম )

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:২৩

আজ সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিঃ চ্যানেল আইতে প্রচারিত হবে।

রচনা- রাজু সিদ্দিক

পরিচালনা - রবিন খান



দৃশ্য - ১

( পুকুর পাড়ে ফাবিয়া ও তাদের বাড়ির রাখাল খোকন লুডু খেলছে। পুবুরের অন্য পাড় দিয়ে স্বপন হেঁটে যাচ্ছে। ফাবিয়াকে দেখে সে থমকে দাঁড়ায়। স্বপনের বাড়ি সিলেট । সে এই গ্রামের এক এনজিওতে ছয় মাস হয় চাকরি নিয়ে এসেছে। সে ফাবিয়ার প্রেমে পাগল। সে কিছুকগণণ ইতস্তত করে পুকুরের ঘাটে বাঁধা নৌকা নিয়ে পুকুরের মাঝে চলে আসে। এসে গান ধরে,“সব সখীরে পাড় করিতে নিব আনায় আনা / তোমার বেলায় নিব সখী তোমার কানের সোনা।” ফাবিয়া স্বপনকে পাত্তা দিচ্ছে না। খোকন একবার স্বপনকে আরেকবার ফাবিয়াকে দেখছে। ফাবিয়া লুডুর ছক্কা চালে। চার ওঠে। )

খোকন ঃ ছোড আপা কত ওঠছে ?

ফাবিয়া ঃ চার। ( খোকন ফাবিয়ার গুটি চার ঘর চালে দিয়ে ছক্কা নেবার জন্য হাত বাড়ায়। ফাবিয়া ছক্কা নেয়

তোলে নেয় )

খোকন ঃ আপনে আমারটাও মারবেন ?

ফাবিয়া ঃ হু।

খোকন ঃ তয় আমি কী করুম ?

ফাবিয়া ঃ তুই শুধু গুটি চালবি। ( ফাবিয়া ছক্কা মারে )

খোকন ঃ আচ্ছা সই, আমার কত ওঠছে ?

ফাবিয়া ঃ তিন।

খোকন ঃ ছয় যে দেখলাম !

ফাবিয়া ঃ আমি তিন বলছি না ?

খোকন ঃ আচ্ছা সই। ( এমন সময় স্বপনের হাত থেকে বৈঠা ফসকে পানিতে পড়ে যায়। সে ঝুঁকে বৈঠা ধরার

জন্য হাত বাড়ায়, অমনি পুকুরে পড়ে যায়। ফাবিয়া হেসে ওঠে। খোকন রাগী চোখে স্বপনকে দেখে। স্বপন

হাবুডুবু খেতে খেতে পাড়ে ওঠে আসে। )



( জব্বর মিয়া ঘরে ঢোকতে ঢোকতে তার দু বোন ফাবিয়া ও লামিসাকে ডাকে। )

জব্বর ঃ ফাবিয়া, লামিসা, ফাবু লামু, ও ফাবু লামু, আমার বুবুরা, ধুৎ কই গেল সব ? ( কেউ জবাব দেয় না।

জব্বর মিয়া ঘরে ঢোকলে তার স্ত্রী তাকে পান দেয় । )

ভাবি ঃ আপনের ফাবু লামু কী ঘরে থাকে যে ডাকেন ?

জব্বর ঃ কই থাকে ? ( পান মুখে দিয়ে জব্বর মিয়া বিছানায় বসে। )

ভাবি ঃ একজন দোলনায় থাকলে আরেকজন গাছে, একজন লুডু খেললে আরেকজন খেলে কুতকুত।

জব্বর ঃ বুঝছি, কিন্তু আজকে তোমারে যে সেই রকম লাগতাছে।

ভাবি ঃ আমারে সব সময় সেই রকম লাগে।

জব্বর ঃ হ, সব সময় সেই রকম লাগে, কিন্তু আজকে অই রকম লাগতাছে।

ভাবি ঃ সেই রকম না অই রকম ঠিক কইরা বলেন।

জব্বর ঃ সেই রকম আর অই রকমের মাঝে একটা কী রকম আছে না ? তা লাগতাছে।

ভাবি ঃ সেই রকম, অই রকম, কী রকম - আর কোন রকম বাকি আছে ?

জব্বর ঃ আছে মানে অবশ্যই আছে, আসলে, আসলে তোমারে বেবাক রকম লাগতাছে, বেবাক রকম। আমি

ঠিক বুঝাইতে পারতাছি না, ইয়া, ইয়া, আচ্ছা কাছে আও আমি তোমারে হাতেকলমে বুঝাই।

ভাবি ঃ জি আসলাম, বুঝান। বিয়ার পরতো কোন দিন বুঝাইতে পারেন নাই আমি কেমন। আজ আবার চেষ্টা

করেন। ( ভাবি এসে জব্বর মিয়ার সামনে বিছানায় বসে। জব্বর মিয়া বিছানায় আঙুল দিয়ে দেখায় )

জব্বর ঃ এই যে এইটা হইল সেই রকম, এইটা হইল অই রকম, আর এইটা, এইটা হইল কী রকম, এখন এই

সবগুলানরে যদি দেই ঘুটা, ( জব্বর মিয়া ঘুটা দেয়ার ভঙ্গি করে দেখায় ) তাইলে হইব বেবাক রকম।

ভাবি ঃ তিন পদে ঘুটা দিলে খাবার সেলাইন হয়, আমি না।

জব্বর ঃ খাবার সেলাইন ? ( জব্বর মিয়া মাথা চুলকায়। ) বুঝছ, লাস্টে আইয়াই আমার প্যাঁচটা লাগে, আসলে

আমি ঠিক, আমি ঠিক ( জব্বর মিয়া ভাবির হাত ধরে। এমন সময় বাইরে থেকে লিটন ডাক দেয়। )

লিটন ঃ ভাবি, ভাবি।

ভাবি ঃ ঐ যে আপনের জাগির মিয়া ডাকে।

জব্বর ঃ উ-হু, এই জাগিরের মিয়ার জন্য বৌয়ের সাথে একটু সুখ দুঃখের কথাও বলা যাবে না। ( ভাবি বেরিয়ে

যাবার আগে ফিরে তাকায়। )

ভাবি ঃ আপনে কিন্তু আজও কইতে পারলেন না। ( জব্বর মিয়া বিরক্তি মুখে লিটনকে বকতে থাকে। )



( লিটন উঠানে দাঁড়িয়ে ভাবিকে ডাকছে, জব্বর মিয়ার স্ত্রী আসে । )

লিটন ঃ ভাবি, ভাবি ঘরে বইয়া কী করেন ?

ভাবি ঃ তোমার কী দরকার তাই বলো ?

লিটন ঃ আমারে তাড়াতাড়ি ভাত দেন। অফিসে যাইতে হইব, আমি না গেলেতো স্যারের সব বেকার।

ভাবি ঃ কেন ?

লিটন ঃ ফাইল কোনটা কই থাকে এইটা আমি জানি, স্যারের জানে নি ? তারাতো ওডার দিয়াই খালাস।

ভাবি ঃ তাইলেতো তুম অনেক বড় অফিসার।

লিটন ঃ ও আল্লাহ আপনে জানেন না, আমি না গেলেতো স্যারগো খানাদানা সব বন্ধ।

ভাবি ঃ ক্যান ?

লিটন ঃ ক্যান আবার থালাবাসন সব তালা দেওয়া থাকে না, আর চাবি থাকে কার কাছে ? এই আমার কাছে।



( লামিসা গ্রামের ছোট মেয়েদের সাথে কুতকুত খেলছে। লিটন অফিসে যাবার পথে লামিসাকে দেখে এগিয়ে আসে। )

লামিসা ঃ জাগির মিয়া কই যান ?

লিটন ঃ আমার নাম জাহাঙ্গীর মিয়া লিটন, জাগির মিয়া না।

লামিসা ঃ অই হইল জাগির মিয়া লিটন আপনে কই যান ?

লিটন ঃ তোমারতো বেজায় সাহস, আমার গরু আকিকা দেওয়া নাম তুমি বিকৃত করো ?

লামিসা ঃ বিকৃত কই করলাম ? আমিতো আপনের গরু জবাই করা নাম উপরে তুইলা রাইখা সহজ নামে কাম

চালাইলাম।

লিটন ঃ আশ্চর্য ! তুমি আমার নাম কই তুইলা রাখছ ?

লামিসা ঃ কেন, ঘরের চালে।

লিটন ঃ চালে ? তোমারতো বেজায় সাহস, আমার নাম চালে তুইলা রাখছ ?

লামিসা ঃ ঠিক আছে চালে না, এই যে আমার ওড়নায় গিঁট্টু দিয়া রাখলাম, এইবার খুশি ? ( লামিসা ওড়নার মাথা

গিঁট দেয়। লিটন লাজুক হেসে দ্রুত মাথা ঝাঁকায় ) জাগির মিয়া, এইবার যে আমারে খুশি করতে হয়।

লিটন ঃ খালি একবার কও, দেহ আমি কেমনে খুশি করি।

লামিসা ঃ আমি খেলতে খেলতে হয়রান হইয়া গেছি, এইবার আমার হইয়া আপনে খেলবেন ।

লিটন ঃ ফাইলটা ধরো, দেহ কেমনে খেলি, ছোট বেলায় আমিতো এই দুইটাই কাম করছি, এক - কুতকুত

খেলছি আর দুই - আবার কুতকুত খেলছি।

লামিসা ঃ ঠিক আছে আপনে খেলতে থাকেন, আমি বাড়ি যাই, গিয়া গোছল কইরা, খাইয়া ঘুমাইয়া বিকালে

আইসা আপনের কাছ থিকা দান বুইঝা নিমু।

লিটন ঃ কও কী ! আমার অফিস ?

লামিসা ঃ বাদ।

লিটন ঃ না, আমার অফিস যাইতে হইব।

লামিসা ঃ যান, ওড়না থিকা আপনের নাম রাসত্মায় ফালাইয়া দিলাম। ( লামিসা ওড়নার গিঁট খুলতে নেয়। )

লিটন ঃ না, না ঠিক আছে। আমি খেলতাছি, খেলতাছি। ( লিটন মন খারাপ করে কুতকুত খেলতে শুরু করে।

লামিসা লিটনের ফাইল হাতে গ্রামের ছোট মেয়েদের সাথে চলে যায।)

লামিসা ঃ জাগির মিয়া, আমার লগে গরম দেখাইছ না, এইবার বিকাল পর্যনত্ম কুতকুত খেল।



( স্বপন ভেজা কাপড়ে চেঞ্জ করার জন্য বাসায় যাচ্ছে। গ্রামের বখাটে ছেলে ফরিদ ও তার বন্ধুরা পথে আটকায়। )

ফরিদ ঃ ঘটনা কী ভাইজানের শইল ভিজা ক্যান, চাকরি বাকরি থুইয়া মাছ ধরা শুরু করছেন নি ?

স্বপন ঃ না মানে, ভিজা, হা, হা, হা, ঠিক ধরেছেন, মানে, আসার পথে একজন বলল, কটা মাছ ধরে দিতে,

তাই পুকুরে নেমে কটা মাছ ধরে দিলাম আর কী, হা হা হা।

ফরিদ ঃ শুধু মাছই ধরছেন আর কিছু ধরেন নাই ?

স্বপন ঃ না আর কী ধরব, হা হা, হা হা, দাঁড়ান পকেটে কী যেন নড়তেছে। (স্বপন পেন্টের পকেটে হাত দিয়ে

একটা কেঁচো বের করে এেেন ঘৃণায় “রে রে রে রে” বলে ছুড়ে ফেলে দেয়।) কেঁউচ্চা, হা হা, হা হা, আর একটা

কেঁউচ্চা ধরছি।

ফরিদ ঃ ভালা। কেঁউচ্চা ধরা ভালা, তয় আপনে সিলেট যাইবেন কবে ?

স্বপন ঃ যাওয়ারতো সময় হইয়া আসল, তবে ভাবতেছি আর যাব না, গিয়ে কী লাভ ? মা বাবা কেউ নাই বরং

এখানেই মা বাবা বানায়ে ফেলি।

ডালিম ঃ মা বাবা বানাবেন মানে ?

ফরিদ ঃ ভাইঙা কনতো হুনি।

স্বপন ঃ ( লাজুক হেসে ) আপনাদের এলাকায় বিবাহ করিব ভাবতেছি।

ডালিম ঃ হালায় কয় কী, আমরার ভাত মারতে আইছে ?

স্বপন ঃ ব্যাকরণে ভুল করলেন, আমি শালা না দুলাভাই, শালা হবেন আপনারা।

ফরিদ ঃ হালারে ধরতো ব্যাকরণ ঠিক করি। ( সাথে সাথে ডালিম উঠে দাঁড়ায়। স্বপন ভয়ে দুপা পিছিয়ে আসে )

স্বপন ঃ বুঝতে পারেছি, আপনার দুলাভাইয়ের সাথে রসিকতা করতেছেন।

ফরিদ ঃ রসিকতার পুৎ আইজ তোরে খাইছি ( ফরিদ উঠে দাঁড়ায়। ডালিম স্বপনকে ধরতে এগোয়। স্বপন

দৌড়ে দূর গিয়ে দাঁড়ায়। )

স্বপনঃ দুলাভাইয়ের সাথে এলাকার শালারা এরকম একটু আধটু করে। আমি কিছু মনে করি নি, কিছুই মনে

করে নি।

ডালিম ঃ আবার ? ( এবার ডালিমরা সবাই স্বপনকে ধাওয়া করে। স্বপন দৌড়ে পালায়। )



( লিটন কুতকুত খেলছে। স্বপন দৌড়ে এসে লিটনের গায়ে পড়ে। )

লিটন ঃ অই মিয়া আমার দানতো মাইর দিলা।

স্বপন ঃ আপনের দান পরে বাঁচাইয়েন, আগে আমারে বাঁচান।

লিটন ঃ বাঁচামু ! ঘটনা কী ? কও দেখি।

স্বপন ঃ মাথা কামাইবার সময় নাই, সংক্ষেপে কই। গ্রামের বদ পোলাপানগুলা পিছে লাগছে।

লিটন ঃ ক্যান ?

স্বপন ঃ ক্যান আবার, দুলাভাইয়ের লগে রসিকতা করে।

লিটন ঃ দুলাভাই ? সেইটা আবার কে ?

স্বপন ঃ ( লাজুক হেসে ) আমি, আমি ঠিক করেছি এই গ্রামে বিবাহ করে বসবাস শুরু করব।

লিটন ঃ তাই না কি ? আমিওতো এই সিদ্ধান্ত নিছি।

স্বপন ঃ সত্যি ? কোন বাড়ি ?

লিটন ঃ জব্বর মিয়ার বাড়ি।

স্বপন ঃ আরে কন কী, আমিওতো জব্বর মিয়ার বাড়ি।

লিটন ঃ ছোটটা না বড়টা ?

স্বপনঃ ছোটটা। আপনে ?

লিটন ঃ বড়টা।

স্বপন ঃ আরে কন কী ? তাইলে আমারা দুইজন ভায়রাভাই।

লিটন ঃ ( হেসে ) হ, ।

স্বপন ঃ তাইলে চলেন, গ্রামের শালাগুলানরে একটু টাইট দিয়া আই, কত বড় সাহস আমারে দৌড়ানি দেয় ?

লিটন ঃ চলেন ( দু’পা বেড়ে ) না, এহন যাওয়া যাইব না ।

স্বপন ঃ ক্যান ?

লিটন ঃ আপনের আপা আমারে তার দানটা খেলতে কইয়া গেছে।

স্বপন ঃ কন কী, কুন সময় কইয়া গেছে ?

লিটন ঃ ঘন্টাখানেক ।

স্বপন ঃ সর্বনাশ !

লিটন ঃ সর্বনাশের কিছু নাই, এরা কুতকুত খেলার বংশ। তয় কুতকুত খেলা বংশ খুবই উচ্চ শ্রেণীর বংশ।

স্বপন ঃ উচ্চ শ্রেণীর বংস হইলে সমস্যা নাই, আমিতো আবার লন্ডনি বংশ বুঝলেন না, সিলেট থিকা আসলাম।

আচ্ছা আপনে আপার দান খেলেন, আমি যাই। ( স্বপন গান গেতে গেতে চলে যায়। লিটন আবার কুতকুত খেলা

শুরু করে। )



( স্বপন ভেজা শরীরে গান গেতে গেতে যাচ্ছে। পথে ফাবিয়ার সাথে দেখা। )

স্বপন ঃ সব সখীরে পাড় করিতে নিব আনায় আনা, তোমার বেলা নিব সখী তোমার কানে সোনা। সখীগো....

ফাবিয়া ঃ আপনের বিষয়টা কী, আমারে দেখলেই গান ধরেন ? হ্যাঁ, বিষয়টা কী ?

স্বপন ঃ আমি কাওরে দেখলে গান ধরব কেন ? আশ্চর্য ! আমি আমার মনের সুখে গান গাই। সুখে সুখে আমার

মন ছারখার হয়ে আছে।

ফাবিয়া ঃ আরে আমার সুখের বাদশা ! আর আমার কানে কি সোনা আছে ? যে সোনা নিবেন, সোনা নিবেন

বলেন ?

স্বপন ঃ কোন দরকার নাই, কোন দরকার নাই। সিলেটে আমার ঘরে চকির নিচে সোনায় সোনায় সায়লাব হয়ে

আছে।

ফাবিয়া ঃ চকির নিচে সোনা ?

স্বপন ঃ হু, সোনা ব্যাঙ। সারা রাত ডাকে - ঘেঙর ঘেঙ।

ফাবিয়া ঃ ভালইতো, যান ব্যাঙের লগে সংসার করেন গিয়া, আমার কাছে কী চান ?

স্বপন ঃ চাই গোখরা সাপ, একটা জাত গোখড়া সাপ, ব্যাঙ সব তাড়াইব ।

ফাবিয়া ঃ সাপুইড়ার কাছে যান, দিব। আমার কাছে কী ?

স্বপন ঃ সাপুইড়া ! আচ্ছা জব্বর ভাইয়ের কাছে যাব ?

ফাবিয়া ঃ জব্বর ভাই ! এইখানে জব্বর ভাই আসছে কই থিকা ?

স্বপন ঃ জাত গোখরা সাপ আনতে।

ফাবিয়া ঃ আরে আপনেতো বড় অভদ্র, আমার মত একজন মেয়েকে একা পেয়ে যাতা বলতাছেন, গোখরা সাপ

বলতাছেন ?

স্বপন ঃ মাথা খারাপ তোমারে আমি গোখরা সাপ বলব কেন ?

ফাবিয়া ঃ কান ধরেন, কান ধরে উঠবস করেন।

স্বপন ঃ শুধু কান ক্যান, লগে পা-ও ধরি। ( স্বপন ফাবিয়ার পা ধরার জন্য বসে। সাথে সাথে ফাবিয়া সরে

দাঁড়ায়। )

ফাবিয়া ঃ এই খবরদার, খবরদার পা ধরবেন না, পা ধরবেন না। আচ্ছা ঠিক আছে যান আপনের কিছুই ধরতে

হবে না। যান, যান সব মাপ।

স্বপনঃ জব্বর ভাইয়ের কাছে যাব ?

ফাবিয়া ঃ যার যেইখানে যাইতে মন চায় যাইব, তাতে আমার কী ? তবে যাবার সময় খালি পায়ে যেন যায়।

স্বপন ঃ ক্যান, খালি পায়ে ক্যান ?

ফাবিয়া ঃ দৌড় দিতে সুবিধা হইব, ভাইজান লাঠি নিলে তখন কেউ যেন আমারে দোষ না দেয়, আমি সাবধান

করি নাই। ( ফাবিয়া চলে যায়। স্বপন হাসি মুখে ফাবিয়ার চলে যাওয়া দেখে আপন মনে গান ধরে। হঠাৎ থমকে

দাঁড়ায়। )

স্বপনঃ এই পকেটে আবার লড়ে কী ? ( স্বপন এবার অন্য পকেটে হাত দিয়ে একটা কেঁচো বের করে, ) এ

ছেঃ ছেঃ ছেঃ ( স্বপন কেঁচোটা ছুড়ে ফেলে । )



( লিটন কুতকুত খেলার ঘরের পাশে গাছের নিচে চোখ বোজে শুয়ে আছে। ফাইল হাতে লামিসা আসে। সে কিছুক্ষণ লিটনকে দেখে আপন মনে হাসে। তার ওড়নার মাথা দেয়া গিঁটটা হাতে নিয়ে দেখে। হঠাৎ তার চোখে পড়ে সূর্যের আলো লিটনের মুখে পড়ছে।সে সরে এসে এমন জায়গায় দাঁড়ায়, যেখানে দাঁড়ালে তার ছায়াটা লিটনের মুখে পড়ে। লিটন এক চোখ খোলে তাকায়। লামিসা চমকে সরে গিয়ে কেসে গলা পরিষ্কার করে )

লামিসা ঃ কী ব্যাপার, আপনারে আমার দান খেলতে দিয়া গেছি, আপনে নাক ডাকতাছেন !

লিটন ঃ খেলতে খেলতে হয়রান হইয়া গেছি, এই জন্যে একটু ঘুম পাড়লাম।

লামিসা ঃ বেশ করেছেন, এই যে আপনের ফাইল, যান বাড়ি, যান।

লিটন ঃ ফাইল দিলা অইটা দিবা না ?

লামিসা ঃ কোনটা ?

লিটন ঃ ওড়নায় যে গিঁট্টু দিয়া রাখছ, অইটা ? ( লামিসা দ্রুরু ওড়নার মাথায় দেয় গিঁটটা আড়াল করে। )

লামিসা ঃ নাই, অইটা গিঁট্টু খুইলা পইড়া গেছে। যান, বাড়ি যান।

লিটন ঃ একটা কথা কই ?

লামিসা ঃ কী ?

লিটন ঃ আমি কিন্তু ঘুমাই নাই।

লামিসা ঃ আপনে ঘুমান নাইতো আমার কী ? ( লামিসা দ্রুত হেঁটে চলে যায়। লিটন আপন মনে হাসে। )

লিটন ঃ ধরা পইড়া গেছ তুমি কুতকুতেরই জালে, ধরা পইড়া গেছ তুমি কুতকুতেরই জালে ।



( জব্বর মিয়া উঠানে বসে খোকনের কাছ থেকে ফাবিয়া লামিসার খবর নিচ্ছেন। )

জব্বর ঃ রিপোর্ট ক’।

খোকন ঃ একজনে ওড়নায় নাম গিঁট্টু দিয়া রাখছে।

জব্বর ঃ কী গিঁট্টু দিয়া রাখছে ?

খোকন ঃ নাম, প্রত্থমে চালে রাখছিল, পড়ে চালের থিকা নামাইয়া ওড়নায় গিঁট্টু দিছে।

জব্বর ঃ সর্বনাশ ! কী কছ্ ?

খোকন ঃ আরেকজনরে নৌকা পাড় কইরা দেওনের প্রস্তাব দিছে। কানের সোনা দিলে নৌকা পাড় কইরা দিব।

জব্বর ঃ ডাবল সর্বনাশ ! তুই যা, যা কামে যা।

১০

( ফাবিয়া লামিসা তাদের ঘরে বসে আছে। ফাবিয়া বই পড়ছে । লামিসা হেডফোন কানে লাগিয়ে গান শুনছে। জব্বর মিয়া আসে।)

জব্বর ঃ বুবুজানরা কী করতাছেন ?

ফাবিয়া ঃ কিছু না ভাইজান, আসেন।

জব্বর ঃ কেমন আছেন আপনারা ? ( লামিসা কান থেকে হেডফোন খুলে, ফাবিয়া ওঠে বসে পরষ্পরের দিকে

তাকায় )

লামিসা ঃ ভাল, কেন ভাইজান ?

জব্বর ঃ না, সকাল থিকা আপনাদের দেখি না, তাই জানতে চাইলাম। আচ্ছা আপনারা কি এই বারও পরীক্ষা না

দেওনের সিদ্ধান্ত নিছেন ?

ফাবিয়া ঃ ভাইজান এইটাতো ক্ষেমা দিছি।

জব্বর ঃ পরীক্ষা দেওন ক্ষেমা দিছেন ?

লামিসা ঃ না, পরীক্ষা দিমু কি দিমু না এই বিষয়টা চিন্তাভাবনা করা ক্ষেমা দিসি। ( ফাবিয়া মাথা ঝাঁকায়। )

জব্বর ঃ আচ্ছা ভাল, তবু একটা বিষয়ে আপনার দুইজন এক মত হইলেন, এইটাওবা কম কী ? জীবনে আর

কোন বিষয়েতো এক মত হইতে পারলেন না। তো এখন কী করবেন ঠিক করছেন ? না কি এইটা ভাবাও ক্ষেমা

দিছেন ?

ফাবিয়া ঃ একটা হাই স্কুল খুলব ভাবতাছি ভাইজান । ( স্কুলের কথা শোনে জব্বর মিয়া কাসেন )

জব্বর ঃ বুবুজানরা আপনার এখনো মেট্রিক পাশ দিতে পারেন নাই, হাই স্কুল দিবেন ! বিষয়টা কেমন হইয়া

গেল না ?

লামিসা ঃ শোনেন ভাইজান, স্কুলে পড়াইতে পরীড়্গা পাশ দেওন লাগে। স্কুল দিতে লাগে না। ( ফাবিয়া আবার

মাথা ঝাঁকায় ) জব্বর মিয়া হাই স্কুল। ( জব্বর মিয়া আবার কাসেন ) স্কুলের গেটের দুই পাশে দুইটা বাঁশ দিয়া

জব্বর মিয়ারে খাড়া কইরা দিব । ( জব্বর মিয়া এবার আরও জোরে কাশেন )

জব্বর ঃ বুবুজানরা, এইবার আমারে বঁশের উপর থিকা নামাইয়া দেন আমি যাই। ( লামিসা জিহ্বায় কামড়

দেয়। )

লামিসা ঃ ছিঃ ছিঃ আপনারে বাঁশের উপর রাখব কেন, অইটা স্কুলের সাইনবোর্ড । জব্বর মিয়া হাই স্কুল। নামটা

কেমন ভাইজান ?

জব্বর ঃ ভাল, খুবই ভাল নাম। তয় একটা কথা কই, আপনারা যাই করেন, নৌকায় পাড় হইয়েন না, আর

চালের উপর থিকা কোন কিছু ঘরে আইনেন না। চালের জিনিষ চালেই থাকা ভাল। ( লামিসা ও ফাবিয়া ভ্রূ কুঁচকে

পরষ্পরের দিকে তাকায়। জব্বর মিয়া বেরিয়ে যান। )

লামিসা ঃ খোকন্নার কাম ।

ফাবিয়া ঃ ঠিক।

১১

( জব্বর মিয়া কাসতে কাসতে ফাবিয়াদের ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। তার স্ত্রী এসে সামনে দাঁড়ায় )

ভাবি ঃ কি ভাইবোনের কথা শেষ ?

জব্বর ঃ কথা আর কইতে দিল কই, তার আগেইতো বাঁশের আগায় চড়াইয়া দিছে।

ভাবি ঃ খুব ভাল হইছে, আদর দিয়া মাথা তুলছেন, এইবার তারা আপনারে বাঁশের আগায় তুলছে। খুব ভাল

হইছে। না কিছু কইও না, মা-বাপ মরা বোইন, একটা আধটু এমন হইবই, এখন ?

জব্বর ঃ আদর কি আমি একা করছি, তুমি করো নাই ?

ভাবি ঃ আমি ভাবি, আমিতো আদর করবই। আপনে ক্যান শুধু আদর করবেন ? আপনে করবেন শাসন,

করছেন কোন দিন ?

১২

( খোকন দুই হাতে দুই বালতি নিয়ে গান গেতে গেতে আসছে। হঠাৎ থমকে দাঁড়ায়। সামনে লামিসা ও ফাবিয়া দাঁড়িয়ে আছে। ফাবিয়ার হাতে লাঠি। খোকন ভীত চোখে তাকায়। লামিসা, ফাবিয়া এগিয়ে আসে। খোকন বিড়বিড় করে দোয়া পড়ে, তার চোখে মুখে কান্নার অভিব্যক্তি। )

খোকন ঃ আল্লাহর কিড়া আমার দোষ নাই। ভাইয়ে জোর কইরা ধরছে, আমার পেটে লাডি দিয়া গুঁতা দিছে।

(লামিসা ও ফাবিয়া ভ্রূ কুঁচকে আরেকটু এগোয়। ) আর কমু না, আপাগো আর কমু না, কোন দিন কমু না।

(লামিসা একটা ছোট চাড়াভাঙা খোকনকে দেখায়। )

লামিসা ঃ উপরে তাকা।

খোকন ঃ ক্যান, উপরে তাকামু ক্যান ? ( ফাবিয়া খোকনকে লাঠির বাড়ি মারে । )

ফাবিয়া ঃ তাকা। ( সাথে সাথে খোকন ঘার কাঁত করে উপরে তাকায় । )

লামিসা ঃ এই চাড়াটা তোর কপালে দিলাম। ( লামিসা চাড়া ভাঙাটা খোকনের কপালে জাতা দিয়ে লাগিয়ে আস্তে

তোলে নেয়। খোকন বিষয়টা বুঝতে পারে না। তার কপালে কোন চাড়া ভাঙা নেই কিন্তু সে অনুভন করে আছে।)

এই চাড়াটা যদি কপাল থিকা পড়ে ? তাইলে তোর কপালে খারবি আছে। অনেক খারাবি।

খোকন ঃ পড়ব না, এই জীবন থাকতে পড়ব না।

ফাবিয়া ঃ যা এইবার পুকুরে নাম।

খোকন ঃ কী ? (ফাবিয়া লাঠি তোলে মারার জন্য )

লামিসা ঃ নাম তাড়াতাড়ি।

খোকন ঃ নামতাছি, নামতাছি ( খোকন উপরের দিকে তাকিয়ে এমন ভাবে পুকুরে নামে যেন তার কপালে চাড়া

ভাঙা আছে। )

লামিসা ঃ আমরা না আসা পর্যন্ত অইখানে দাঁড়াইয়া থাকবি। আর যদি কপাল থিকা চাড়াটা পড়েরে..! ( ফাবিয়া

লামিসা চলে যায়। খোকন ঘার কাত করে উপরের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণের মাঝে পুকুর পাড়ে গ্রামের

ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা জমে যায়। খোকন ঘার কাত করা অবস্থায়ই হাত ইশারা তাদেরকে চলে যেতে বলে। )

খোকন ঃ অই পোলাপান যা, যা কইতাছি, যা । ( এমন সময় পাশের বাড়ির বিলকিস আসে। )

বিলকিস ঃ কী করেন খোকন ভাই ?

খোকন ঃ ঘুমাই। আমিতো সূর্যমুখি ফুল, এই জন্যে সূর্যের দিক চাইয়া চাইয়া ঘুমাই, তোমার কোন সমস্যা ?

বিলকিস ঃ আমার কী সমস্যা ঘুমান, ঘুম থিকা ওঠলে আমার ডাইকেন এক কাপ চা দিমুনে। ( বিলকিস হাসতে

হাসতে চলে যায়। )

১৩

( স্বপন বাড়ি থেকে কাপড় পাল্টিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে চলছে। পথে জব্বর মিয়ার সাথে দেখা। )

জব্বর ঃ কিও মিয়া, আইজকাল বলে এনজিওর কাম থুইয়া নৌকা বাওয়া ধরছেন ? তো সখী সব পাড় করা

শেষ, না আরও বাকি আছে ?

স্বপন ঃ সালামুলাইকুম ভাই, না ভাই, নৌকা বাওয়া ছাইড়া দিসি ভাই।

জব্বর ঃ ক্যান, ভালইতো সখীটখী পাড় করতে ছিলেন ।

স্বপন ঃ কি যে বলেন ভাই, সখী পামু কই ?

জব্বর ঃ ভাল হইয়া গেছেন ?

স্বপন ঃ জি ভাই।

জব্বর ঃ ভাল, শুইনা খুশি হইলাম।

স্বপন ঃ জি ভাই, আমিতো সব সময় আপনারে খুশি করতে চাই। সব সময় চাই, আপনিও আমারে বুঝলেন

না। তো ভাই বলেন আর কী করলে আপনি খুশি হইবেন?

জব্বর ঃ আপনে আমার থিকা দূরে থাকলেই আমি খুশি, ঠিক আছে ?

স্বপন ঃ কি যে বন দূরে থাকলে কি কেউ খুশি হয় ? বুঝতে পাড়ছি আপনে লজ্জায় বলতে পারতেছেন না, কোন

অসুবিধা নাই, কোন অসুবিধা নাই আমি আপনার বাড়িতে গিয়ে দেখব আর কী করার আছে ?

জব্বর ঃ না, না, খবরদার, যাইয়েন না।

স্বপন ঃ বুঝতে পারছি, বুঝতে পারছি, এই সবই আপনার বিনয়। আপনারে আর কিছু বলতে হইব না। কিছুই

না। আমি এখন যাই। সালামুলাইকুম, আল্লাহ হাফেজ।

জব্বর ঃ এত চীনা জোঁক, ছাড়তেই চায় না। বুঝছি এরে শুধু লবন দিলে হইব না, সাথে ডলাও দিতে হইব।

আসো, বাড়িতে আসো, এমন ডলা দিমু না, ভেটকাইয়া থাকবা।

১৪

( পুকুরের পানিতে খোকন ঘার কাত করে উপরের তাকিয়ে আছে। পুকুর পাড়ে গ্রামের ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা

বসে মজা দেখছে। খোকন হাত ইশারায় তাদের চলে যেতে বলছে। লিটন আজ আর অফিসে যায় না। সে বাড়ি

ফরে পুকুরে হাতমুখ ধোতে আসে। )

লিটন ঃ কিও আর কতক্ষণ থাকবা ?

খোকন ঃ উপরওলা জানে। আমার লগে কথা কইয়েন না ভাই, কপালের চাড়াডা পড়ইরা গেলে কপালে খারাবি

আছে।

লিটন ঃ তোমার কপালে চাড়া থকলে না পড়ব, চাড়াইত নাই।

খোকন ঃ কী কন চাড়া নাই ?

লিটন ঃ আও বেকুব, কপালে হাত দিয়া দেখো। ( খোকন ভয়ে ভয়ে কপালে হাত দেয়। )

খোকন ঃ আয় হায় ! চাড়া পড়লো কোন সময় ?

লিটন ঃ দূর বেকুব, তোমার কপালে চাড়া আছিলই না, খালি কপালে দাঁড়াইয়া ছিলা এতক্ষণ।

খোকন ঃ এ্যাঁ, কন কী ? ( খোকন মাথা সামনে সোজা করতে চায় কিন্তু সোজা হয় না। মাথা পেছনে কাত হয়ে

থাকে। ) আয় হায় ! আমার মাথাদি সোজা হয় না। ও আল্লাহ এ কী সর্বনাশের কথা ! ( পাড়ের সবাই হেসে

ওঠে। ) হায় হায় এখন ? এখন কী হইব ? ( খোকন ঘার পেছনে কাত অবস্থায় দ্রুত পুকুর থেকে উঠে আসে। )

১৫

( লিটন হাতমুখ ধোয়ে উঠানে গামছা নিতে এসে দেখে লামিসা কাপড় তোলছে। সে একটা শাড়ি ধরে টানে, শাড়ি তার থেকে আসছে না। )

লামিসা ঃ কিরে, আসে না ক্যান ? ( লামিসা শাড়ি সরিয়ে দেখে লিটন অন্য পাশে শাড়ি ধরে দাঁড়িয়ে আছে। )

আপনে ?

লিটন ঃ হ, ক্যান তুমি অন্য কাওরে মনে করছো ?

লামিসা ঃ করলে আপনের কী ?

লিটন ঃ আমরইতো সব, কলম দিবা আমারে আর মুখা দিবা অন্যরে তা কি হয় ?

লামিসা ঃ কলম, মুখা ?

লিটন ঃ বুঝলা না, কলম হইল ভাব আর মুখা হইল ভাবনা। তুমি আমার লগে ভাব করবা আর ভাববা অন্যরে,

এইডা কোন কথা ?

লামিসা ঃ মাখা কামাইন্না কথা । আইছে আমার ভাবের মানুষ ! ছাড়েন, শাড়ি ছাড়েন, আশ্চর্য আপনে শাড়ি ধইরা

আছেন ক্যান ?

লিটন ঃ গিঁট্টু খুঁজি ।

লামিসা ঃ খোঁজেন, খোঁজেন, ভাল মত খোঁজেন, ভাবির শাড়িতে গিঁট্টু খোঁজেন। ( সাথে সাথে লিটন শাড়ি ছেড়ে

দেয়। )

লিটন ঃ আগে কইবা না ? ( লামিসা শাড়ি টেনে নেয়। )

লামিসা ঃ এইটা আমারই শাড়ি। ( সাথে সাথে লিটন এগিয়ে এসে লামিসার হাত ধরে। ) ঐ যে ভাই আসতেছে।

( লিটন লামিসার হাত ছেড়ে ফিরে তাকায়। খোকন আকাশের দিকে তাকিয়ে হেঁটে আসে। লামিসা হেসে দৌড়ে

ঘরে চলে যায় )

লিটন ঃ কিও মিয়া আওনোর আর সময় পাও না ?

খোকন ঃ ভাই আমিতো বুঝি না, আইতাছি না যাইতাছি।

লিটন ঃ ভাল, খুবই ভাল, কিন্তু তুমি এহনো আসমানের দিকে চাইয়া রইছে যে ?

খোকন ঃ সবই আমার কপাল ভাই, আচ্ছা আপনেই কন, আমারে শাস্তি দিব দিক কিন্তু মিছা কথা কইয়া বেকুব

বানাইব এইটা কী ঠিক ? মাইনষের বাড়ি কাম করি বইলা আমার মান সম্মান নাই ? কপালে চাড়া না দিয়াই কয়

চাড়া দিছি, পড়লে খবর আছে। আমি দুই ঘন্টা পুস্কুনির মাইঝখানে গর্দান কাইত কইরা দাঁড়াই থাইকা এহন ঘার

ব্যাঁকা হইয়া আছে, সোজা হইতাছে না। আমি আর এই বাড়িত নাই। ( কথার মাঝে লিটন খোকনের মাথার

পেছনে এক থাপ্পর মারে। খোকনের মাথা সোজা হয়ে যায়। ) আপনেও মারলেন ! মারেন, মারেন।

লিটন ঃ তোমার মাথা দেখো। ( খোকন মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে। )

খোকন ঃ আচানক কারবার ! ভাই শুধু আপনের জন্যই এই বাড়ি পইড়া আছি, শুধু আপনের জন্য, আপনে

যাতদিন এই বাড়িতে আছেন মনে রাইখেন আমিও ততদিন আছি।

লিটন ঃ হইছে হইছে যাও, কামে যাও, আর শুনো যখন তখন যেইখানে সেইখানে ঢুইকা পইড় না।

১৬

( রাতে লিটন তার ঘরে বসে রেডিও শুনছে। জব্বর মিয়া আসে। )

জব্বর ঃ লিটন ঘরে আছো, লিটন ?

লিটন ঃ জি ভাই, আসেন আসেন ? ( লিটন রেডিও বন্ধ করে। )

জব্বর ঃ কেমন আছো তুমি ?

লিটন ঃ জি, ভাল আছি। ( জব্বর মিয়া ইতস্তত করে। ) কিছু কইবেন ?

জব্বর ঃ আসলে আমি আসছি, মানে কেমনে যে কই ?

লিটন ঃ আপনে নিশ্চিন্তে কন।

জব্বর ঃ না মানে, তোমার ভাবি দেখতে কেমন ? না মানে, সব মিলাইয়া সে কি রকম সেইটাই আজ পর্যন্ত তারে কইতে পারলাম না, কইতে গেলেই কেমন যানি বেড়াছেড়া লাইগা যায়।

লিটন ঃ ও এই কথা ? আপনে ভাবিরে কইবেন, তুমি জব্বর মিয়ার স্ত্রীর মত।

জব্বর ঃ জব্বর মিয়া কেডা ?

লিটন ঃ আপনে।

জব্বর ঃ দূর, এইটাতো সহজ কথা।

লিটন ঃ মেয়ে মানুষ সহজ আর সোজা কথাই পছন্দ করে। আপনে ভাবিরে সোজা কইবেন, আকাশে যেমন চাঁদ

একটা, সেইরকম সারা দুনিয়াকে একজনই জব্বর মিয়ার স্ত্রী - সেইটা তুমি। দেখবেন এতেই কাজ হইব।

জব্বর ঃ ভাল কইলাতো, দাঁড়াও আজই কমু। ও আরেকটা কথা, আজকাল তোমার নাম বলে চালে থাকে ?

আবার গিঁট্টু দিয়া রাখে ? ( লিটন কেসে নড়েচড়ে বসে। ) সাবধানে নাম রাইখ, নাইলে নাম হারাইয়া যাইতে

পারে, লগে তুমিও। ( লিটন আবার কাসে ) আচ্ছা তুমি ঘুমাও, আমি যাই। ( জব্বর মিয়া বেরিয়ে যায়।)

লিটন ঃ সর্বনাশ ! এই কথা হে জানল কেমনে ?

১৭

( জব্বর মিয়া শুয়ে আছে। ভাবি আসে। জব্বর মিয়া গান ধরে )

জব্বর ঃ অসো অসো আমার ঘরে অসো...

ভাবি ঃ আজ খুব ভাবে আছেন ?

জব্বর ঃ আইজ দুইটা সিদ্ধানত্ম নিলাম এই জন্যে।

ভাবি ঃ কী সিদ্ধান্ত ?

জব্বর ঃ এক, ফাবু লামুর বিয়া আমার বন্ধুর ভাইয়ের লগে ঠিক করালাম। দুই, আমি এহন জানি তুমি কী

রকম। (আবার গান ধরে ) বাইর হইয়া অসো।

ভাবি ঃ আসলাম, বলেন।

জব্বর ঃ আকাশের চাঁদ যেমন, শাহজাহানের মমতাজ যেমন, জব্বর মিয়ার ঠিক তুমি তেমন। তুমি যেমন

তেমনই জব্বর মিয়ার।

ভাবি ঃ ( হাসি মুখে ফিস্‌ফিস্ করে ) শেষ পর্যন্ত পারলেন।

জব্বর ঃ পারলাম । ( হঠাৎ জব্বর মিয়া লাফ দিয়ে গান ধরে।) আকাশেতে লক্ষ তারা, চাঁদ কিন্তু একটারে, ই

ই-য়া ।

১৮

( পরদিন সকালে লামিসা গাছের ডালে বাঁধা দোলনায় দোল খাচ্ছে। আর ফাবিয়া ডালে বসে তেঁতুল আচার খাচ্ছে। )

১৯

( এদিকে স্বপন লোক মারফত খবর পায়, জব্বর মিয়া তার দুই বোনের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। শোনে সে হন্তদন্ত লিটনের কাছে আসে। )

স্বপন ঃ ভাই, ভাই, ও ভায়রা ভাই। ( লিটন ঘর থেকে বাইরে আসে )

লিটন ঃ কী ও এতো সকাল সকাল, ঘটনা কী ?

স্বপন ঃ আপনে বইসা বইসা মাথা কামান অই দিকে যে সর্বনাশ হইতে চলল।

লিটন ঃ কী ?

স্বপন ঃ জব্বর মিয়ার দুই বোনের বিয়া ঠিক। শুক্রুবার বিয়া।

লিটন ঃ কও কী ?

স্বপন ঃ জি। আমারতো গলায় ফাঁস দিতে মন চাইতাছে।

লিটন ঃ চলো জব্বর ভাইয়ের কাছে যাই।

স্বপন ঃ আপনে যান আমি না, আপনের শ্যালিকা সাবধান করছে, গেলে মাইর খাইতে হইতে পারে।

লিটন ঃ ও, তারা দুইজন কই ?

স্বপন ঃ আপনের জন দোলনায় দোল খাইতাছে, আমার জন ডালে বইসা তেঁতুল খাইতাছে আর বিচি

ফালাইতাছে, পুঁত পুঁত ( মুখ থেকে তেঁতুলের বিচি ফেলের ভঙ্গি করে দেখায়। লিটন গম্ভীর হয়ে বসে থাকে )

ছোটবেলা এক কথায় প্রকাশ শিখছি, জানিবার ইচ্ছা - জিজ্ঞাসা। আর বুড়া বয়েসে শিখলাম বিবাহ করিবার ইচ্ছা

- বিকিকিচ্ছা। কী দুঃখে যে হেইতের প্রেমে পড়ছি আর বিয়া করনের ইচ্ছা করছি ! এহন গলায় ফাঁস দেওনের

ইচ্ছা করতাছে। কী হইল, একটা কিছু করেন।

লিটন ঃ ভাবতাছি, ভাবতাছি।

স্বপন ঃ ভাবেন, না কামাইয়া ভাবেন, একটা কিছু করেন, না হইলে আমি চললাম ফাঁস দিতে। ( স্বপন

বিরহের গান গেতে গেতে চলে যায়। লিটন স্বপনের চলে যাওয়া দেখছে। হঠাৎ সে মুচকি হাসি দেয়। )

২০

( স্বপন রশি নিয়ে গাছের নিচে আসে আত্মহত্যা করতে। সে গাছের ডালে রশি ছুড়ে মারে। )

স্বপন ঃ খোদা যেই দেশে ভালবাসার দাম নাই, সেই দেশে আমি নাই, নাই খোদা। ( ফাবিয়া গ্রামের ছোট ছোট

ছেলে মেয়েদের নিয়ে এসে গাছের নিচে দাঁড়ায়। )

ফাবিয়া ঃ এই তোরা লাইন ধইরা বয়, বয়। ( ফাবিয়া সবাইকে লাইন ধরে বসায় । স্বপন হা হয়ে থাকে।)

শুনলাম আপনে ফাঁস দিবেন, তাই এগোরে নিয়া আইলাম, ফাঁস দেখব। হ্যাঁ এইবার শুরম্ন করেন, বিসমিল্লাহ বইলা ঝুইলা পড়েন।

স্বপন ঃ খোদা তুমি সাড়্গী, কারে ভালবাসছি। এত নিষ্ঠুর, এত দয়াহীন, মায়াহীন। ( স্বপন রশি গাছের ডালে

আবার ছুড়ে মারে। )

ফাবিয়া ঃ এই, এক মিনিট, এক মিনিট দাঁড়ান। ( ফাবিয়া স্বপনকে থামিয়ে ছোট ছেলে মেয়েদের কাছ থেকে পাঁচ

টাকা করে তোলে। ) আপনে ফাঁস দিবেন, ফ্রি দেখব না কি ? তাই টিকিট ছাড়ছি, পাঁচ টাকা কইরা। দামটা কি

কম হইছে, দশ টাকা করুম ?

স্বপনঃ খোদা, খোদারে এও কি আমারে দেখতে হইল রে খোদা ? ও খোদা একটু যে শান্তিতে ফাঁস দিব তারও

উপায় নাইরে খোদা। ( স্বপন রশি টেনে নামায় ) যাই খোদা, জঙ্গলে যাই, নিরিবিলি ফাঁস দিব, খোদা খোদা

দুনিয়া এত নিঠুর কেনরে খোদা ( স্বপন রশি নিয়ে চলে যায়। )

ফাবিয়া ঃ যা চইলা গেল, ফাঁস দেওয়া দেখতে পারলাম না ! অই চল চল বাড়ি যাই গিয়া।

২১

( স্বপন রশি নিয়ে বিষণ্ন মনে হাঁটছে। ফরিদ ডামিদের সাথে দেখা। )

ফরিদ ঃ ভাই কি সিলেট চললেন ?

স্বপন ঃ নারে ভাই ফাঁস দিতে চললাম, এ নিঠুর দুনিয়ায় আমি আর নাইরে ভাই।

ফরিদ ঃ ফাঁস দিবেন আমরারে কইবেন না, দেখেন কত সুন্দর কইরা ফাঁস দিয়া দেই।

স্বপন ঃ তাইলেতো ভালই হয়রে ভাই। ( সাথে সাথে ফরিদ, ডালিমরা স্বপনকে ধরে গলায় রশি পরাতে থাকে।

হঠাৎ স্বপনের হুশ হয় ) এ ভাই কী করেন ভাই ? এ ভাই আমারে ছাড়েন ভাই।

ফরিদ ঃ না আজকে আপনারে ফাঁস দিয়াই দিব।

স্বপনঃ এ কি কয় ? আশ্চর্য ! আমি ফাঁস দিব না ভাই, ভাই ছাড়েন ভাই, আরে কী আশ্চর্য ! আল্লাহর দোহাই

লাগে ভাই, ছাইড়া দেন ভাই। আমি ফাঁস দিব না ভাই। ( স্বপন ধস্তাধস্তি করতে থাকে আর ফরিদরা জোর করে

ফাঁস দিতে চেষ্টা করে। এক সময় ফরিদদের হাত থেকে ফসকে বেরিয়ে স্বপন দৌড়ে পালায়।)

২২

( লিটন বসে রেডিও শোনছে। লামিসা বিষণ্ন মনে । )

লামিসা ঃ কী করেন ?

লিটন ঃ আরে তুমি ? আও, আও এইখানে বও।

লামিসা ঃ আপনে আরেকবার যদি আমার লগে কন ?

লিটন ঃ ঠিক আছে অর কমু না, এখন বও, বইয়া কও কী বিষয় ?

লামিসা ঃ বিষয় আপনে জানেন না ?

লিটন ঃ জানি ।

লামিসা ঃ আরেকজন যে ফাঁস দিতাছে তা জানেন ?

লিটন ঃ তাও জানি।

লামিসা ঃ আর আপনে ?

লিটন ঃ আরে বোকা, আমি ফাঁস দিব কেন, ফাঁসতো দিবা তোমরা।

লামিসা ঃ আমরা ?

লিটন ঃ হ, তার আগে কও, তুমি সত্যি আমারে চাও ? ( লামিসা একটুক্ষণ চুপ থেকে মাথা ঝাঁকায় ) তাইলে

যাও গলায় ফাঁস দিয়া দাও।

২৩

( পুবুর পাড়ের হিজল গাছের ডালে লামিসা রশি বেঁধে দুহাতে ঝুলে দেখছে রশি শক্ত কিনা। দূর থেকে দেখে জব্বর মিয়া ছুটে আসে।)

জব্বর ঃ লামিসা, লামিসা ?

লামিসা ঃ এখনো ফাঁস দেই নাই ভাইজান, তবে দিব। রশিটা টাইট কিনা দেখলাম।

জব্বর ঃ ক-ক-কও কী তুমি ?

লামিসা ঃ হ ভাইজান, আচ্ছা আপনে একবার ঝুইলা দেখবেন শক্ত কি না ? আপনে ছিঁড়া না পড়লে আমিও পড়ুম

না। সময়তো বেশি নাই, সাড়ে বারটায় ফাঁস টাইম।

জব্বর ঃ ফাঁস টাইম ! কি কয় ? ওগো, কইগো তুমি ? ( জব্বর মিয়া উতলা হয়ে দ্রুত বাড়ির ভেতরে যায়। )

২৪

( জব্বর মিয়া স্ত্রীকে ডাকতে ডাকতে ছুটে উঠানে এসে দেখে ফাবিয়া এক শিশি বিষ নিয়ে বসে আছে। সে শিশির মুখ খুলে গন্ধ শোঁকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। )

জব্বর ঃ আরে কই গেলা তু...? ফাবিয়া, ফাবিয়া তোমার হাতে কী ?

ফাবিয়া ঃ বিষ ভাইজান, ঠিক সারে বারটায় খাব, না হইলে আগামী সাপ্তাহে খাইতে হইব। এ সপ্তাছে বিষ

খাওনের টাইম এই একটাই, ঠিক সাড়ে বারটা।

জব্বর ঃ আরে, আশ্চর্য তুমি বিষ খাইবা ক্যান ?

ফাবিয়া ঃ এই জীবন আর ভাল লাগতাছে না ভাইজান, একটু জিহ্বায় নিয়া দেখবেন বিষটা খাঁটি কি না ?

জব্বর ঃ আরে তুমি কই গেলা ? কই ? ( জব্বর মিয়া দ্রুত ঘরে যায়। )

২৫

( জব্বর মিয়ার স্ত্রী কাপড় ভাঁজ করছে। জব্বর মিয়া দ্রুত ঢোকে। )

জব্বর ঃ তুমি এইখানে ঐ দিকে যে ফাবু লামু বিষ খাইতে যাইতাছে জানো ?

ভাবি ঃ জানি। আপনে জোর কইরা বিয়া দিবেন, তাগোতো বিষই খাওয়া উচিত।

জব্বর ঃ কী কও, বিষ খাওয়া উচিত ? তাগো আটকাও, আটকাও ।

ভাবি ঃ ক্যান আটকাব, আমিও তাগো দলে, তারা খাক, রেজাল্ট দেখি, পর আমিও খাব।

জব্বর ঃ এ কী কয় অলক্ষ্মুইন্না কথা ! আমি এখন কী করি কী করি ? ( জব্বর মিয়া ঘরের বাইরে যায়, আবার

ভেতরে আসে। আবার যায়, আবার আসে। ) কী করি ? আচ্ছা ফাবু লামুরে কও, আমি এক মাসের মধ্যে তাদের

পছন্দমত বিয়া দিমু।

ভাবি ঃ এক মাস ! সারে বারটায় ফাঁস টাইম।

জব্বর ঃ আরে কি কয় সাড়ে বারটায় ! ( জব্বর মিয়া মাথা চুলকায়। ) বুঝছি, ঐ বদগুলান কই ? বদগুলান ?

( জব্বর মিয়া দ্রুত বেরিয়ে যায় ) খোকন, অই খোকইন্না, কই গেলিরে ?

২৬

( লিটন একটা ব্যাগ নিয়ে ঘর থেকে বের হয়। জব্বর মিয়া ও খোকন এসে পথ আগলে দাঁড়ায়।)

জব্বর ঃ লিটন, লিটন বাপ তুমি কই..., আরে দূর বাপ না ভাই তুমি কই যাও ?

লিটন ঃ আপনের বাড়িতে আর থাকুম না, গঞ্জে অফিসের কাছে ঘর নিছি, অইখানে থাকুম।

জব্বর ঃ কিসের গঞ্জে, তুমি এইখানেই থাকবা।

লিটন ঃ না, তাইলে আবার কেউ আমার নাম ওড়নায় গিঁট্টু দিতে পারে।

জব্বর ঃ দিক, গিঁট্টু দিক, শুধু নাম ক্যান, তোমারে শুদ্ধা গিঁট্টু দিক, আমার কোন আপত্তি নাই। আমি রাজি,রাজি।

লিটন ঃ আল্লাহ কিড়া ?

জব্বর ঃ আল্লাহ কিড়া, দেও, ব্যাগটা দেও। ( জব্বর মিয়া লিটনের হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে অবাক হয়। ) এত

হালকা ক্যান, ব্যাগে কিছু নাই ?

লিটন ঃ না, এমনি এমনি খালি ব্যাগ নিয়া বাইর হইছি, আপনেরে ডর দেখাইতে ।

জব্বর ঃ ডার দেখাইতে !

খোকন ঃ আমি আগেই বুঝছিলাম। ( জব্বর মিয়া খোকনকে ধাক্কা দেন। খোকন ছিটকে দূরে গিয়ে পড়ে। তারপর উঠে হাতপা ঝাড়ে।)

জব্বর ঃ ফাঁস নেওনের বুদ্ধিটা কি তাইলে তুমিই দিছো ?

লিটন ঃ জি ভাইজান, দিসি। ঠিক সারে বারটায় - ফাঁস টাইম ।

জব্বর ঃ ফাঁস টাইমের বাচ্চা যা বিয়া বন্ধ।

লিটন ঃ ঠিক আছে, আমি গঞ্জে চললাম। আমার কাপড়চোপড় লাগবে না নতুন কিনা লমু। ( লিটন পা বাড়ায়। জব্বর মিয়া বুঝতে পারছে বোনের প্রতি তার ভালবাসার সুযোগটা লিটন নিচ্ছে। সে রাগে দুঃখে দাঁত কিড়মিড় দিয়ে জাগায় লাফাতে থাকে)

জব্বর ঃ অই অই, আয় আয়, আমি রাজি, রাজি। ( লিটন দাঁত বের করে ফিরে আসে। ) বিয়াডা হোক তারপর দেখ আমি তোমার কি অবস্তোথা করি ?

লিটন ঃ আপনের বোইনরে কইয়া দিমু।

জব্বর ঃ উ-উ, ( জব্বর মিয়া লিটনের থোতায় গুঁতো দেয়। ) বোইনরে কইয়া দিমু। অই বদটা কই, সিলেটি

বদটা ?

লিটন ঃ হে আইব না, আপনাগো গ্রামের ফরিদ ডালিমরা তার লগে বেয়াদবি করছে, তারা মাপ না চাইলে হে আইব না।

জব্বর ঃ ফরিদ্দা....। ( জব্বর মিয়া ফরিদদের ডাকতে ডাকতে বেরিয়ে যায়। )

২৭

( গ্রামের চা-স্টলে জব্বর মিয়া ফরিদ ডালিমদের খুঁজে পায়। )

জব্বর ঃ অই তোরা সিলেটিরে কী কইছস ?

ডালিম ঃ না, কুন সময় কইলাম ? কিছুই না।

জব্বর ঃ তার লগে ফাবিয়ার বিয়া, যা তারে তোরা নিয়া আয়।

ফরিদ ঃ আস্তা মুরগীর রোস্ট দিবেন ?

খোকন ঃ এ্যাঁ আস্তা রোস্ট ? ( জব্বর মিয়া খোকনকে ধাক্কা দেন। খোকন ছিটকে দূরে গিয়ে পড়ে, উঠে এসে

হাতপা ঝাড়ে।)

জব্বর ঃ দুইটা কইরা পাবি, যা নিয়া আয়। ( ফরিদরা হৈ হৈ করে চলে যায়, খোকনও তাদের সাথে যায় )

২৮

( স্বপন বিষণ্ন মনে বিচ্ছেদের গান গেতে গেতে যাচ্ছে। দূর থেকে খোকন, ফরিদরা দুলাভাই দুলাভাই ডাকতে ডাকতে আসছে। হঠাৎ স্বপন থমকে দাঁড়ায়। ভয়ার্ত চোখে ফরিদদের দেখে। চারদিক তাকিয়ে দেখে ফরিদরা কাকে ডাকছে। খোকন,ফরিদরা আরেকটু কাছে এলে স্বপন দৌড় দেয়। খোকন,ফরিদরা দৌড়ে স্বপনকে ধরে দুলাভাই দুলাভাই করে মাথায় তোলে নেয়।)

স্বপনঃ ভাই শোনেন, আমি জীবনে বিয়া করুম না, আমি করুম না আমার বাবায়ও করব না। আল্লাহর দোহাই

ছাড়েন সিলেট যাই গা। (খোকন,ফরিদরা তার কথা শোনে না, সবাই দুলাভাই দুলাভাই শ্লোগান দিতে দিতে নিয়ে

চলে। স্বপন ছোটার জন্য হাত-পা ছুড়তে থাকে। )

শ্লোগান ঃ দুলাভাই দুলাভাই, ক্ষমা চাই, ক্ষমা চাই। আর কোন দুলাভাই আছে ? নাই। দুলাভাইয়ের দুই গালে

চুমা মারো তালে তালে। দুলাভাই, দুলাভাই, ক্ষমা চাই, ক্ষমা চাই। দুলাভাইয়ের চামড়া, গোছল দিব আমরা।

দুলাভাই দুলাভাই, ক্ষমা চাই, ক্ষমা চাই।

২৯

( সেদিনই লিটন-লামিসা এবং স্বপন-ফাবিয়ার বিয়ে হয়। )



...... * ......





রাজু সিদ্দিক

২০ আষাঢ় ১৪২১

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:০৪

সুমন কর বলেছেন: শুভকামনা রইলো। পুরো গল্পটাই তো তুলে দিলেন

২| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১:২১

রাজু সিদ্দিক বলেছেন: ধন্যবাদ, শুভ কামনা রইল। আর হ্যাঁ, পুরো নাটকটাই তোলে দিলাম, কেউ যদি নাটক লিখতে আগ্রহী হয়, তার জন্য সহায়ক হবে। ভাল থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.