নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাজু সিদ্দিকের মননভুবন

আমার অনুমতি ব্যতীত কেহ আমার গল্প বা গল্পের অংশ এবং নাটক বা নাটকের দৃশ্য বা সংলাপ বা সংলাপের অংশ কোখায়ও ছাপাতে বা ব্যবহার করতে পারবেন না। -- রাজু সিদ্দিক

রাজু সিদ্দিক

আমার অনুমতি ব্যতীত কেহ আমার গল্প বা গল্পের অংশ এবং নাটক বা নাটকের দৃশ্য বা সংলাপ বা সংলাপের অংশ কোখায়ও ছাপাতে বা ব্যবহার করতে পারবেন না। -- রাজু সিদ্দিক .

রাজু সিদ্দিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

গুপ্তধন

২৪ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:৪১

শাহগোদা গ্রামে হঠাৎ হৈচৈ পড়ে, গ্রামে এক অপরিচিত লোক ঘুরে বেড়াচ্ছে। লোকটা ডালিমগাছওলা বাড়ি খুঁজছে। কিন্তু শাহগোদা গ্রামে কোন বাড়িতে ডালিম গাছ নেই।
সালু তার স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করে খারাপ মেজাজ নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। পথে দেখা হয় অপরিচিত লোকের সাথে। অপরিচিত লোক নিজেকে জহির বলে পরিচয় দিয়ে সালুর কাছে ডালিমগাছওলা বাড়ির খোঁজ করে। উত্তরে সালু জানতে চায়, সে কি তার শালা না স্বমন্ধি, যে তার জন্য ডালিম গাছওলা বাড়ির ঠিকানা নিয়ে বসে থাকবে ?
তারপর জহিরের সাথে দেখা হয় গ্রামের বখাটেদের সাথে, বখাটেরা তাকে নানান রকম কথা বলে এক ফাঁকে তার মোবাইলটা নিয়ে যায়।
জহির হাঁটতে হাঁটতে এসে মজিদ মিয়ার বাড়ির সামনে দাঁড়ায়। মজিদ মিয়া তখন চাপকলে গোছল করতে আসে। জহির তাকে ডালিমগাছওলা বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করলে, মজিদ মিয়া তাকে দিয়ে চাপকল চাপিয়ে পানি তোলে গোছল করে, তারপর গা মোছতে মোছতে বলে, সে জানে না !
গ্রামের সবার এরকম ব্যবহারে জহিরের মন খারাপ হয়ে যায়। এবার চা স্টলে তার সাথে দেখা হয় দেলুর সাথে। দেলু ডালিমগাছওলা বাড়ির খোঁজ দিতে পারবে বলে জহিরের টাকায় চা নাস্তা খেয়ে এক ফাঁকে সটকে পড়ে।
জহির বুঝতে পারে সবাই তাকে নিয়ে মজা করছে। তার মন আরও খারাপ হয়। রাতে সে মন খারাপ করে স্কুলঘরের বারান্দায় শুয়ে থাকে। তখন মেম্বারের দুই লোক এসে তাকে জোর করে ধরে মেম্বারের কাছে নিয়ে যায়। মেম্বার জানতে চায় জহির কেন ডালিমগাছওলা বাড়ি খুঁজছে ?
উত্তরে জহির জানায়, গুপ্তধনের খোঁজে।
সাথে সাথে জহিরের প্রতি মেম্বারের আচরণ বদলে যায়। সে জহিরকে খুব সমাদর করে খাওয়াদাওয়া করায়। তার বাড়িতে রাত কাটাতে অনুরোধ করে। কিন্তু জহির রাজি হয় না, সে স্কুল ঘরে ঘুমাতে ফিরে আসে। তখন মেম্বার জহিরের নিরাপত্তার কথা বলে তার একজন লোক সাথে দিয়ে দেয়। জহির বুঝতে পারে নিরাপত্তা না, আসলে তাকে চোখে চোখে রাখার জন্যই এই ব্যবস্থা।
পরদিন সারা গ্রামে গুপ্তধনের কথা ছড়িয়ে পড়ে। সালু এসে তার আচরণের জন্য ক্ষমা চায়। মজিদ মিয়া এসে জহিরের গোছলের পানি, বাথরুমের পানি তোলে দেয়। দেলু ফ্লাক্সে ভরে চা, সাথে নাস্তা নিয়ে আসে। বখাটেরা তার মোবাইল ফেরত দিয়ে বলে, যে কোন সমস্যা হলে তাদেরকে একটা মিসকল দিতে।
সব দেখে শুনে জহির নীরবে হাসে।
পরদিন রাতে জহির স্কুল ঘরের বারান্দায় শুয়ে আছে। এমন সময় উত্তর পাড়ার সফুরা হারিকেন হাতে এসে জহিরকে তাদের বাড়ি নিয়ে গিয়ে উঠানের এক কোণা দেখিয়ে বলে এখনে একটা ডালিম গাছ ছিল। আজ থেকে ত্রিশ,বত্রিশ বছর আগে গাছটা মরে যায়।
সফুরার দেখানো জায়গায় জহির মাটি খুঁড়তে থাকে। ততক্ষণে গ্রামের সবাই সফুরার উঠানে এসে জড়ো হতে থাকে। জহির মাটি খুঁড়ে একটা পাত্র বের করে। সবাই উঁকি দিয়ে দেখতে চায় কী আছে এতে ? জহির কাঁপা কাঁপা হাতে পাত্রর ভেতর থেকে কতগুলো চিঠি বের করে বলে,“এগুলো তার মাকে লেখা বাবার চিঠি। ৭১ সালে তাদের পরিবার এই পথে ভারত যাচ্ছিল, মা ছিল খুবই অসুস্থ্য, পথে তিনি মারা যান। তখন এইখানে মাকে কবর দেয়া হয়। এই চিঠিগুলো মার কাছে খুব প্রিয় ছিল, তাই বাবা এগুলো মার কবরের রেখে দেয়। পরে তার বাবাও যুদ্ধে মারা যান। কিছু দিন আগে বাবার এক বন্ধুর কাছ থেকে এ গ্রামের কথা সে জানতে পারে। আর দশজনের কাছে এগুলো শুধুই চিঠি কিন্তু তার কাছে এগুলো গুপ্তধন । ”
তখন উপস্থিত দুএকজন জহিরের মার জন্য, জহিরের জন্য ব্যথিত হয়।
তবে অধিকিাংশই ক্ষেপে ওঠে, জহির গুপ্তধনের কথা বলে তাদেরকে ধোকা দিয়েছে। জহিরকে ধরে মাইর দেওন উচিত ।
মেম্বার কিছুক্ষণ গম্ভীর থেকে তাঁর দুজন লোককে জহিরের সাথে থাকতে বলে এবং পরদিন তাকে বাসে তোলে দিয়ে আসতে বলে, চলে যায়। মেম্বারের দেখা দেখি সবাই একে একে চলে যায়। মেম্বারের দুইজন লোক জহিরকে নিয়ে স্কুল ঘরে ফিরে আসে।
পরদিন গ্রাম ছাড়ার আগে জহির সফুরার সাথে দেখা করতে চায়, মেম্বারের লোকরা তার সাথে আসতে আগ্রহ দেখায় না। জহির নীরবে হেসে একা সফুরার বাড়ি আসে । তারপর সফুরাকে জানায়, "তার মার কবরটফ আরেকটু গর্ত করলে সে আরেকটা প্যাকেট পাবে, তাতে তার মার পঞ্চাশ ভরির উপর গহনা আছে, সফুরা ইচ্ছে করলে পুরোটাই নিতে পারে, তার কোনো দাবি নাই। এতদিন তার মার কবরটা যারা আগলে রেখেছে এটা তাদেরই প্যাপ্য।" তারপর জহির বেরি্যে যা্য।
তখন মা বাপ মরা অসহায বিধবা সফুরার দু চোখ বে্যে পানি গড়িয়ে নামতে থাকে। জল ভরা ঝাপসা চোখে সে বুঝতে পারে না, তার ঘর থেকে যে চলে যাচ্ছে সে কে, মানুষ না ফেরেস্তা ?

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:০৮

নাহিদ রুদ্রনীল বলেছেন: ভালোই লেগেছে। ভিন্নরকম :)

২| ২৪ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:৫০

সুমন রিশদ বলেছেন: ভালো লেগেচে।

৩| ২৫ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:০৮

রাজু সিদ্দিক বলেছেন: ধন্যবাদ @ সুমন & নাহিদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.