নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাজু সিদ্দিকের মননভুবন

আমার অনুমতি ব্যতীত কেহ আমার গল্প বা গল্পের অংশ এবং নাটক বা নাটকের দৃশ্য বা সংলাপ বা সংলাপের অংশ কোখায়ও ছাপাতে বা ব্যবহার করতে পারবেন না। -- রাজু সিদ্দিক

রাজু সিদ্দিক

আমার অনুমতি ব্যতীত কেহ আমার গল্প বা গল্পের অংশ এবং নাটক বা নাটকের দৃশ্য বা সংলাপ বা সংলাপের অংশ কোখায়ও ছাপাতে বা ব্যবহার করতে পারবেন না। -- রাজু সিদ্দিক .

রাজু সিদ্দিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

দ্যা বিউটি এন্ড দ্যা আগলি

১৬ ই জুন, ২০১৫ দুপুর ১:৪৬

অন্যান্য দিনের মত আজ ভোরেও বারান্দায় এসে দাঁড়াই। বারান্দায় এলে মন ভাল হয় যায়। আমাদের বাসার কোণের লাইটপোস্টে ইন্টারনেটওলাদের রাউটার বক্সে দোয়েল পাখি বাচ্চা তোলেছে।তার পর থেকে হয় ৬৯ নম্বর বাড়ির পাঁচতালার ছাদে, না হয় ৬৫ নম্বরের ছাদের পাইপের মাথায় বসে শিস দিতে থাকে, যেন বলে,‘দেখ আমাদের সন্তান হয়েছে, সন্তান।’ ভালই লাগে তাদের এই অহংকারী শিস শুনতে।এখনও শিস দিচ্ছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল - বাচ্চা যখন বড় হবে তখন বাবা-মাকে এই এলাকা বাচ্চাদের জন্য ছেড়ে দিয়ে অন্য কোথাও চলে যাতে হবে।আর ফিরে আসতে পারবে না।আবার এ সন্তানরা যখন বড় হয়ে বাবা-মা হবে, তখন তাদেরকেও এভাবে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হবে। এটাই দোয়েল সমাজের নিয়ম।দোয়েল সাম্রাজ্যবাদী পাখি, কমবেশী এক হাজার বর্গমিটার এলাকা নিয়ে তারা নিজেদের সম্রাজ্য ঘোষণা করে। এ রাজ্যে অন্য কোন দোয়েল এলে তাড়িয়ে দেয়, তার বাবা-মা এলেও। দোয়েল দিনে কমবেশী আট ঘন্টা গান গেয়ে কাটায়, গানের সুর চার হাজার বর্গমিটার জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।দোয়েলের লেজ যখন পিঠের দিকে খাড়া হয়ে থাকে, তখন বুঝতে হবে সে উত্তেজিত হয়ে আছে।জাতীয় পাখি হবার প্রতিযোগীতায় দোয়েলের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল শ্যামা।সবদিক দিয়ে শ্যামাই এগিয়েছিল, শুধু মাত্র একটা পয়েন্টে সে দোয়েলের কাছে হেরে যায়, তা হলো- দোয়েল লোকালয়ের পাখি, আর শ্যামা ঝোপঝাড়ের, বনবাদাড়ের পাখি।
বারান্দার সামনে একটা মেহেদী ও একটা দেবদারু গাছ আছে। দেবদারুর মগ ডালে বুলবুলি বাসা বেঁধেছে।ডিম-বাচ্চা হলে বুলবুলিরা লেজ মাথার উপর তুলে ঝুঁটি নাড়িয়ে ঘুরে ঘুরে নাচে।আমি প্রতিদিনই সে নাচ দেখার অপেক্ষায় থাকি, কিন্তু এখন পর্যন্ত দেখতে পাই নি। কি জানি, নগরের বুলবুলিরা মনে হয় নাচা ছেড়ে দিয়েছে ! তবে তাদের গান শুনি, এরা ভাল গায়।‘শাহ বুলবুল’ ইংরেজী নাম ‘মাসকিকাপিডির’ পরুষ পাখিটি পাখিদের দুনিয়ায় অন্যতম সুন্দর পাখি।বুলবুলি সাহসী, লড়াইবাজ পাখি। এরা কখনো-সখনো ময়দানে (মাটিতে) নেমে পরষ্পরের সাথে লাড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়। ইরাক, ইরান, আফগানিস্তানে আজও মোড়গ লড়াইয়ের মত বুলবুলির লড়াই হয়।আমি বুলবুলীর লড়াই দেখারও অপেক্ষায় আছি।
দুটো টুনটুনি দেবদারুর ডাল থেকে উড়ে গিয়ে মেহেদীর ডালে বসে ‘টুই টুই’ করে ডাকছে।দেবদারুতে বাসা বাঁধবে না কি ? কিন্তু একই গাছে দুই প্রজাতির পাখির বাসা বাঁধার কথাতো কখনো শুনি নি।কি জানি, নগর জীবনের ফ্লাট কালচারে পাখিরাও অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে কি না । টুনটুনিরি বাসা দেখে মুগ্ধ হতে হয়, তারা পাতা মুড়ে শেলাই করে বাসা বানায়, যেন শিল্পীর কাজ । টুনটুনির বাসা খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন, যদি না সে নিজে চিনিয়ে দেয়। কিভাবে চেনায় ? তার বাসার সামনে গেলে, অমনি সে বাসা ছেড়ে বেরিয়ে এসে তারস্বরে চিৎকার চেচামেচি শুরু করে, তখন সবাই বুঝে যায়, এখানে টুনটুনির বাসা আছে।কিন্তু সে যদি চুপচাপ থাকত, কারো সাধ্য ছিল না তার বাসার হদিস পাওয়া, এমনই ক্যামুফ্লাজ সে তৈরি করতে পারে। বাসা বানানো, ডিম পাড়া ও বাচ্চা ফোটার সময় টুনটুনি আনন্দে ,‘টিট টিট টিইট টিট টু-ই-ইট টিট টিট...,’ করে গেয়ে যায়। টুনটুনি দুটো এখনো ডাকছে, বোকাগুলো হয়তো ভেবেছে আমি তাদের বাসায় পিঠা খেতে এসেছি। শৈশবের টোনাটুনি ও বাঘের গল্পের কথা মনে পড়ল, আপন মনেই হাসলাম।
একটা কাক এসে কারেন্টের তারে বসে ইতিউতি তাকাচ্ছে। কাক শিকারি পাখি।কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না, কাক গায়ক পাখিও ! কণ্ঠটা একটু কর্কষ, এই যা।অন্যদিকে কোকিল কিন্তু কোন গায়ক পাখি না, সে গান গেতে পারে না। আজব, তাই না ! পাতিকাক হচ্ছে নগরের কাক, আর দাঁড়কাক গ্রামের। কোন দাঁড়কাক কখনো শহরে এলে পাতিকাক তাড়িয়ে দেয়, আর পাতিকাক যদি গ্রামে যায়, তাহলে খবর আছে।কাকের ভ্রমনযাত্রা খুব মজার। কাক যদি মনস্থির করে সে ঢাকার পশ্চিমে কোন শহর, যেমন রাজশাহী যাবে, তাহলে সে প্রথম ঢাকার আকাশের বেশ উপরে উঠবে, ওঠে পশ্চিমে তাকাবে, পশ্চিমের দিগন্তে যে স্থানটা তার চোখে পড়বে, সোজা সেখানে যাবে, জিরোবে, দুএক দিন থাকবে। তারপর আবার আকাশে উঠবে, পশ্চিমের দিগন্তে তাকাবে, সোজা সেখানে গিয়ে নামবে। এভাবে ভেঙে ভেঙে সে রাজশাহী যাবে। আবার ফেরার সময় একইভাবে ভেঙে ভেঙে ফিরে আসবে।কাক আমাদের শেখায় কিভাবে একটা বৃহৎ কাজকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টার্গেটে ভাগ করে, তারপর সেই ক্ষুদ্র টার্গেটগুলোকে একে একে ছুঁয়ে এগোতে হয়।
এমন সময় দুটো ভাত-শালিক রাস্তায় নেমে একটা নারকেল পাতার শুকনো আঁশ, অন্যটা এক খণ্ড রশি নিয়ে ফুরুত করে বাসার পেছন উড়ে গেল, বুঝলাম তারাও বাসা বাঁধছে। এ যে সংসার বাঁধার ধুম লেগেছে ! শালিকরা স্বামী-স্ত্রী মিলে বাসা বানায়। বাসা নানানো, বাচ্চা তোলার সময় তাদের কি যে আনন্দ ! সারাক্ষণ গান গেয়ে যায়।সবাইকে জানান দেয়,“দাওয়াত দেই নি তো কি হয়েছে, দেখো আমরা ঘর বাঁধছি, বাবা-মা হচ্ছি।” ভাত-শালিকও গায়ক পাখি।শেখালে এরা কথাও বলতে পারে।শালিক সামাজিক পাখি, দলবদ্ধ হয়ে চলাচল করে। পরিষ্কার থাকতে পছন্দ করে, সুযোগ পেলেই গোছল করে।এরা সাহসী, পরিশ্রমী ও ফুর্তিবাজ পাখি।সারাক্ষণ কিচিরমিচির করে থাকে।তবে তারা আবাসদস্যুও বটে, সুযোগ পেলেই চড়ুই, কাঠঠোকরা, আবাবিল পাখিদের উচ্ছেদ করে তাদের বাসা দখল করে নেয়।
অনমনে ভাত-শালিকের কথা ভাবছিলাম, হঠাৎ দেখলাম তারে বসা কাকটা সা-ই করে দেবদারু গাছটার পাশের মেহেদী গাছের নিচ ছোঁ দিল। সঙ্গে সঙ্গে চারদিক থেকে ছয়,সাতটা চড়ুই উড়ে এসে তার স্বরে চিৎকার করতে করতে কাকটাকে তাড়া করল। কাকটা দেবদারুর ফাঁক গলে লাইটপোস্টটাকে এক চক্কর দিয়ে সামনের টিনের চালে গিয়ে বসল। চড়ুইগুলো কাকের পিছু পিছু টিনের চালে এসে চেচামেচি, হম্বিতম্বি করতে থাকে।
তখনই দেখলাম কাকটা মুখে একটা চড়ুই ! ছটফট করছে।চড়ুইটা সম্ভবত আহত বা অসুস্থ্য ছিল, না হলে কাকের পক্ষে এভাবে চড়ুইটাকে ধরতে পারার কথা না।চড়ুইগুলোর হাকডাক, হৈচৈ, চিৎকার, হম্বিতম্বি সব উপক্ষো করে কাক চড়ুইয়ের তুলতুলে দেহে ঠোঁকড় দিয়ে পালক তোলে নিল।অসহায় চড়ুইটা দুএক বার ‘চুই চুই’ স্বরে কাতর ধ্বনি করে থেমে গেল।অন্য চড়ুইগুলো এখনও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে, কাকটা পাত্তাই দিচ্ছে না।সে ঠোঁকড়ে ঠোঁকড়ে ছিঁড়েফিঁড়ে টড়ুইটাকে খেতে থাকল।
মনটা এত খারাপ হল। চলে এলাম ঘরে।অসুন্দর ঘটনাটা না কেন যে দেখলাম ?

রাজু সিদ্দিক
২১ জ্যৈষ্ঠ ২২

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.