নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাজু সিদ্দিকের মননভুবন

আমার অনুমতি ব্যতীত কেহ আমার গল্প বা গল্পের অংশ এবং নাটক বা নাটকের দৃশ্য বা সংলাপ বা সংলাপের অংশ কোখায়ও ছাপাতে বা ব্যবহার করতে পারবেন না। -- রাজু সিদ্দিক

রাজু সিদ্দিক

আমার অনুমতি ব্যতীত কেহ আমার গল্প বা গল্পের অংশ এবং নাটক বা নাটকের দৃশ্য বা সংলাপ বা সংলাপের অংশ কোখায়ও ছাপাতে বা ব্যবহার করতে পারবেন না। -- রাজু সিদ্দিক .

রাজু সিদ্দিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক নায়ে স্বদেশ

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৫

মফিজ সাধাসিধে মানুষ, জ্বালানী তেলের কারবার করে, গঞ্জে তার দোকান। স্ত্রী, রাহেলা ও আট বছরের ছেলে হাসেমকে নিয়ে তার সুখী পরিবার। মফিজের বাড়িতে দুধ দেয় নিতাই গোয়ালা। নিতাইয়ের একটা চোখ ছোট, তবে তার মুখে সব সময় হাসি লেগে আছে। প্রতিদিন সকালে নিতাই দুধের পাত্র রাহেলার হাতে দিয়ে হাসেমের সাথে খেলায় মেতে ওঠে। রোজ সকালে যতক্ষণ পর্যন্ত নিতাই না আসে ততক্ষণ হাসেম বারান্দার মোড়ায় বসে থাকে ।
সময়টা ৭১ সাল। শুরু হয় যুদ্ধ। যুদ্ধের ছাঁট মফিজের গ্রামেও এসে লাগে। গঞ্জে পাকিস্তানী আর্মি ক্যাম্প করে। গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু মফিজের মনে সামান্য রেখাপাত নাই, তার এক কথা - যুদ্ধ রাজা রাজদের ব্যাপার, সে প্রজা। মুক্তিবাহিনী জিতলে তার তেলের কারবার সোনার কারবার হবে না, পাকিস্তানী আর্মি জিতলেও হবে না, অতএব এই যুদ্ধে সে নাই।
মফিজকে প্রতিদিন নদী পার হয়ে গঞ্জে যেতে হয়। একদিন নদী পার হবার সময় মফিজ পাকিস্তানী আর্মির কেপ্টেনকে নৌকায় উঠতে সাহায্য করে। সেই থেকে কেপ্টেনের আথে মফিজের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কেপ্টেন মাঝে মাঝে মফিজের দোকানে এসে গল্প করে।
রাহেলার ভাই রসুল একজন মুক্তিযোদ্ধা। সে গঞ্জের আর্মি ক্যাম্পে আক্রমন করার পরিকল্পনা করে। সে মফিজকে অনুরোধ করে কেপ্টেনের কাছ থেকে কিছু খবর এনে দিতে।
মফিজ পকেট থেকে গোল টুপিটা বের করে মাথায় পরে মাথা এপাশওপাশ করতে করতে বলে,‘না।’
রসুল রেগে চলে যায়।
আন্যদিকে কেপ্টেনও মফিজের দোকানে বসে গল্পে গল্পে মুক্তিযোদ্ধাদের কথা জানতে চায়, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রসুলের কথা জানতে চায়।
মফিজ কেপ্টেনকে কিছু বলতে অসম্মতি জানায়। সে পকেট থেকে টুপিটা বের করে মাথায় দিয়ে বলে, ‘আমি যুদ্ধের পক্ষেও নাই বিপক্ষেও নাই, আমি সাধাসিধে মানুষ।.
শুনে কেপ্টেন কিছুক্ষণ মফিজের মাথার টুপিটার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসে, শুধুই হাসে ।
গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের আনাগোনার খবরে পাকিস্তানী আর্মি তৎপর হয়ে ওঠে। তারা ক্যাম্পের চারিদিকে হ্যাজাক বাতি দিয়ে আলোকিত করতে চায়। পাকিস্তানী আর্মির ক্যাপ্টেন তেল লাগবে বলে মফিজকে রাতে দোকানে থাকতে বলে। মফিজ সারা রাত দোক্না খুলে বসে থাকে কিন্তু কেও আসে না।
সে রাত রাহেলার কাটে দুঃশ্চিন্তায়, নির্ঘুমে । পরদিন সকালে নিতাই দুধ দিতে এসে জানায়, সে আর দুধ দিতে পারবে না, আজ রাতে সে পরিবার নিয়ে ভারত চলে যাবে, তার ছেলেকে আর্মি ধরে নিয়ে গেছে। এ কথা শুনে রাহেলা কেঁদে ফেলে। কেঁদে বলে বলে হাসেমের বাবাও রাতে ফেরে নি। রাহেলাকে শান্ত হতে বলে নিতাই নৌকা নিয়ে মফিজের খোঁজে গঞ্জে মফিজের দোকানে আসে আসে।
নিতাইকে দেখে মফিজ দোকান বন্ধ করে বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। নিতাই গিয়ে নৌকার গলুইয়ে বসে মফিজের অপেক্ষা করে। মফিজের দোকান বন্ধ করার আয়োজন করে। এমন সময় কেপ্টেন দু’জন সিপাই নিয়ে তেল নিতে আসে। কেপ্টেন ও মফিজ দোকানের ভেতরে বসে আলাপ করছে আর সেপাই দু’জন বাহিরে দাঁড়িয়ে হাসি মুখে আলাপ করতে থাকে।
হঠাৎ একজন সেপাই নৌকার গলুইয়ে বসা ধুতি পরা নিতাইকে দেখিয়ে বলে, তার কপালে সই করতে পারবে কিনা ? অন্য সেপাই কাঁধ থেকে রাইফেল নামিয়ে হাসতে হাসতে নিতাইকে গুলি করে। গুলির শব্দে কেপ্টেন ও মফিজ বেরিয়ে আসে। নৌকায় নিতাইকে কাঁত হয়ে পড়ে থাকতে দেখে মফিজ দ্রুত নিচে নেমে যায়। কেপ্টেন সেপাইদের প্রশ্ন করলে, এক সেপাই বলে, ‘ওজকো ধুতি পরতা হায়, ধুতি মুক্তিকা দালাল হায়।’
মফিজ নিতাইয়ের মৃতদেহ দেখে ফিরে এসে জানতে চায়, কেন নিতাইকে মেরেছে ?
কেপ্টেন বলে, ‘ধুতি আদমী দালাল, মুক্তিকা দালাল।’
শোনে মফিজের শরীর রাগে কাঁপতে থাকে। সে পকেট থেকে তার গোল টুপি বের করে মাথায় দিয়ে সোজা গিয়ে নৌকায় বসে। কেপ্টেন মফিজকে ডেকে তেল দিতে বলে। মফিজ ফিরেও তাকায় না, সে বৈঠা হাতে নেয়।
‘সব দালাল, দালালকা বাচ্চা,’ বলে কেপ্টেন গুলির আদেশ দেয়। সিপাইরা রাইফেল তুলে মুহূর্তে গুলি করে।
নদী দিয়ে একটা নৌকা ভেসে যাচ্ছে। নৌকায় দুটি মৃতদেহ । একজনের পরনে ধুতি, অন্যজনের মাথায় টুপি ।
( সত্য ঘটনা অবলম্বনে )

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.