নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন ব্লগার হিসাবে সামুর সাথে ২০১৩ সাল থেকে আছি কিন্তু ২০১৪ সালের শেষের দিক থেকে আমার লেখা প্রথম পাতায় যায় না (২০১৫ এর মাঝে ১ মাস বাদে)। আমি কিন্তু আবার একজন সেইফ ব্লগার!!!

রেজওয়ান26

প্রত্যেক মানুষকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে । সেটা যে কোন সময়ই হতে পারে ।

রেজওয়ান26 › বিস্তারিত পোস্টঃ

চিকিৎসায় অবহেলা- বিদ্যমান আইন ও বিচারহীনতার কারণ

১৩ ই মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৭

পাঠক নিশ্চয়ই পপসম্রাট মাইকেল জ্যাকসনের মৃত্যুর ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক কনরাড মারির করুণ পরিস্থিতির কথা মনে আছে। ছয় সপ্তাহ শুনানির পর যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস আদালত ৭ নভেম্বর, ২০১১ সালে রায় প্রদান করে। রায়ের পর ডা. কনরাড মারিকে (৫৮) হাতকড়া পরিয়ে আদালত থেকে কারাগারে নেয়া হয়। এ দৃশ্য দেখে বাইরে অপেক্ষমাণ জ্যাকসনভক্তরা তখন উল্লাসে ফেটে পড়েন। কেউ কেউ আবেগে কেঁদেও ফেলেন। যখন একজন চিকিৎসক কোনো রোগীর চিকিৎসার দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু সংঘটিত হলে চিকিৎসক ৩০৪ক ধারার দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। চিকিৎসায় অবহেলা বলতে শুধু ডাক্তারদের অবহেলা নয়, এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা তথা নার্স, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, টেকনিশিয়ান, ওষুধ সরবরাহকারীদের অবহেলা প্রভৃতিও বোঝানো হয়। ডাক্তারদের যেসব আচরণ অবহেলা হিসেবে গণ্য হয়, সেগুলোর মধ্যে রোগীকে ঠিকভাবে পরীক্ষা না করা, ভুল ওষুধ বা ইনজেকশন প্রয়োগ, ভুল অপারেশন করা, অস্ত্রোপচারের উপকরণ রোগীর শরীরের ভিতর রেখে দেয়া প্রভৃতি। এ ছাড়া রোগীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার, ফি নিয়ে দরকষাকষিও চিকিৎসায় অবহেলার মধ্যে পড়ে। অনেক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সরকারি হাসপাতালে কর্তব্য পালন অবস্থায় প্রাইভেট ক্লিনিকে কর্মরত থকেন, যা একটি অপরাধ। আবার অনেকেই নিজেদের উপার্জিত ডিগ্রির পাশে বিদেশি ভুয়া ডিগ্রি জুড়ে দেন, যা অন্যায় ও প্রতারণার শামিল। ডাক্তারি বা পোস্টমর্টেম রিপোর্টে ভুল উপায় সংযোজন করা, মনগড়া রিপোর্ট ও জালিয়াতি করা একটি অপরাধ। এ ছাড়া রোগীর মূল দলিল দিতে অবাধ্যতা, বারবার রোগীকে হেনস্তা করা, হাসপাতালের প্রয়োজনীয় সিট না বরাদ্দ দিয়ে অন্যত্র ব্যবস্থা করা প্রভৃতিও অবহেলাসংক্রান্ত অপরাধের শামিল। অপারেশনে নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত ফি দাবি করাও একটি অন্যায়মূলক কাজ। বাংলাদেশে চিকিৎসাসংক্রান্ত মামলা তেমন একটা হয় না বললেই চলে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে সুস্পষ্ট আইনের অভাব। এর পরও অপ্রতুল আইনি ব্যবস্থায় যা আছে, তাতে চিকিৎসায় অবহেলা একই সঙ্গে দেওয়ানি ও ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। টর্ট আইনে অবহেলা বলতে বোঝানো হয়েছে, কারো প্রতি যত্ন নেয়ার আইনগত দায়িত্ব পালনে অপরের ব্যর্থতা। টর্ট আইনে বা দেওয়ানি মামলায় ডাক্তারি অবহেলার বিরুদ্ধে হয়রানি, মানহানি, মিথ্যা প্রলোভনসহ ক্ষতিপূরণের মামলা করা যাবে। কিন্তু আমাদের দেশে দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে বেশ জটিলতা দেখা যায় এবং এর পরিচালনায় প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়, যা দরিদ্র লোকের পক্ষে জোগাড় করা দুরূহ। এ ছাড়া সাক্ষ্য গ্রহণেও দেখা দেয় জটিলতা। এ ধরনের মামলায় মূলত ডাক্তার বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষী করতে হয়। ফলে ঘটনার ব্যাপারে সত্যতা উদঘাটন অসম্ভব হয়ে যায় এবং প্রতিকার সম্ভব হয় না। চিকিৎসায় অবহেলায় ফৌজদারি মামলা করা যায়। দ-বিধি ৩০৪ক ধারায় উল্লেখ আছে, কোনো ব্যক্তির হঠকারিতা বা অবহেলার কারণে যদি মৃৃত্যু হয় তাহলে অপরাধী সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদ- বা জরিমানা বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন। এ অপরাধের ক্ষেত্রে হঠকারিতা, অসতর্কতা, অবহেলা বা বেপরোয়া কাজ প্রভৃতি শব্দ ব্যবহৃত হয়। 'রশিদুল্লাহ বনাম রাষ্ট্র ২১ ডিএলআর ৭০৯' মামলায় বলা হয়েছে, বেপরোয়া বা হঠকারী কাজ মানে হচ্ছে, কোনো বিপজ্জনক কাজের ঝুঁকি নেয়া এবং সতর্কতার সঙ্গে কাজটি সম্পাদন করা। ডাক্তারি অবহেলাও দ-বিধির এ ধারায় অন্তর্ভুক্ত হবে। এ ছাড়া ৩১৪ ধারায় গর্ভপাতসংক্রান্ত অপরাধ এবং ৩২৩ থেকে ৩২৬ ধারায় অবহেলাসংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধের শাস্তির আওতায় ডাক্তারি অবহেলার প্রতিকার পাওয়া সম্ভব। অন্যদিকে দ-বিধির ৩৩৬ ধারা অনুযায়ী, বেপরোয়া কাজ বা অবহেলার কারণে প্রাণনাশ বা নিরাপত্তা বিঘি্নত হলে সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদ- ও সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা জরিমানার কথা উল্লেখ আছে। দ-বিধির ৩৩৭ ধারায়ও অবহেলার কারণে আঘাত দিলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদ- এবং সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা পর্যন্ত শাস্তির বিধান আছে। তবে ৩৩৮ ধারাটি ডাক্তারি অবহেলাসংক্রান্ত অপরাধ প্রতিকারের ক্ষেত্রে বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ ধারায় উল্লেখ আছে, যে কোনো ধরনের বেপরোয়া কাজ বা অবহেলার কারণে আঘাত দিলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদ- বা সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা অর্থদ- অথবা দুটি একসঙ্গে দেয়া যাবে। এ ছাড়া বাংলাদেশে দ্য মেডিকেল প্রাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস্ অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ (রেজিস্ট্রেশন) অর্ডিন্যান্স, ১৯৮২ নামে একটি আইন আছে। যাতে ডাক্তারদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের ক্ষেত্রে এবং প্রাইভেট ক্লিনিক স্থাপন ও পরিচালনায় সুস্পষ্ট নিয়ম প্রণয়ন করা হয়েছে। এ আইন অনুযায়ী কোনো সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত আছেন, এমন কোনো রেজিস্টার্ড চিকিৎসক অফিস চলাকালে কোনো হাসপাতাল, ক্লিনিক বা নার্সিং হোমে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারবেন না এবং করলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। কিন্তু দেশের যত্রতত্র ক্লিনিক গড়ে উঠেছে এবং এর জন্য যথাযথ লাইসেন্স গ্রহণ করা হচ্ছে না। এসব ক্লিনিকে সংঘটিত অপরাধেরও বিচার হচ্ছে না। অপারেশনের ফিসহ বিভিন্ন কারণে ভর্তি হওয়া রোগীদের কাছ থেকে কী পরিমাণ ফি নির্ধারণ করা হবে, তা এ আইনে উল্লেখ আছে, যা সচরাচর মানা হয় না। যেমন আইনে সিজারিয়ান অপারেশনের ক্ষেত্রে ৪০০ টাকা ফি নির্ধারণ করা থাকলেও বাস্তবে বহু গুণ বেশি আদায় করা হচ্ছে। এ আইনের ১৩ ধারায় বলা হয়েছে, এ অধ্যাদেশের বিধান লঙ্ঘন করা হলে ছয় মাস পর্যন্ত কারাদ- বা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা। আইনে শাস্তির বিধান থাকলেও এর কোনো প্রয়োগ নেই বললেই চলে। আমাদের দেশে রোগীরা প্রতিনিয়তই চিকিৎসক দ্বারা আর্থিকভাবে প্রতারিত হচ্ছেন। কোনো রোগী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলে প্রথমেই তাকে অযৌক্তিকভাবে অতিরিক্ত অর্থ ফি প্রদান করতে হয়। রোগীর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতেই চিকিৎসক অনেক টেস্ট করাতে পরামর্শ প্রদান করেন এবং টেস্ট শেষে দেখা যায় বেশির ভাগ টেস্টের ফলাফল থাকে নরমাল (স্বাভাবিক)। অর্থাৎ টেস্টে রোগীর কোনো অস্বাভাবিকতা নেই। এতে সাধারণ মানুষের বদ্ধমূল ধারণা হয় যে চিকিৎসকরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত টেস্ট করাতে পরামর্শ দেন এবং এসব টেস্ট থেকে তারা বড় রকমের কমিশন পান। এটা কি রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসকদের প্রতারণা বা দুর্নীতি নয়? সরকার চিকিৎসকদের পরামর্শ দিলে বা সতর্ক করলে এ অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব। সরকার কয়েক বছর আগে বিভিন্ন টেস্টের সর্বোচ্চ চার্জ নির্ধারণ করে দিয়েছিল। সে হারে পুনর্বিবেচনা করে বর্তমানে প্রচলিত চার্জ অর্ধেক হ্রাস করা প্রয়োজন। এতে টেস্ট করার পর চিকিৎসকদের প্রদান করার মতো অতিরিক্ত অর্থ ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর কাছে থাকবে না। একজন রোগাক্রান্ত ব্যক্তি তার আশ্রয়ের সর্বশেষ স্থান হিসেবে একজন চিকিৎসকের কাছে যান এ আশায় যে তার চিকিৎসক প্রাণনাশী রোগের আক্রমণের বিরুদ্ধে সম্ভব সব ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাকে সারিয়ে তুলবেন এবং বাঁচিয়ে রাখবেন। একজন চিকিৎসককে রোগীর এ আস্থাকে গভীর মমত্ববোধের সঙ্গে উপলব্ধি করতে এবং সেই মোতাবেক চিকিৎসা সেবাদানে ব্রতী হতে হবে। রোগীর জীবন রক্ষার ও সেবাদানে চিকিৎসকের পবিত্র দায়িত্ব এবং এ দায়িত্বের পবিত্রতা রক্ষার দায়দায়িত্ব কেবল চিকিৎসককেই পালন করতে হবে কর্তব্যপরায়ণতার মাধ্যমে, অবহেলার মাধ্যমে নয়।





- See more at: Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.