নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন ব্লগার হিসাবে সামুর সাথে ২০১৩ সাল থেকে আছি কিন্তু ২০১৪ সালের শেষের দিক থেকে আমার লেখা প্রথম পাতায় যায় না (২০১৫ এর মাঝে ১ মাস বাদে)। আমি কিন্তু আবার একজন সেইফ ব্লগার!!!

রেজওয়ান26

প্রত্যেক মানুষকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে । সেটা যে কোন সময়ই হতে পারে ।

রেজওয়ান26 › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘মধ্য শাবানের রাতে আল্লাহ তাআলা রহমতের ভান্ডার নিয়ে তাঁর সব সৃষ্টির প্রতি এক বিশেষ ভূমিকায় আবির্ভূত হন এবং মুশরিক অথবা হিংসুক ব্যক্তি ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’- শবেবরাতের গুরুত্ব ও একটি পর্যালোচনা

১৩ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:৩৫

১. গুরুত্ব ও ২. পর্যালোচনা





‘শব’ শব্দটি ফারসি। যার অর্থ হচ্ছে রাত্রি। শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটি মুসলমানদের কাছে লাইলাতুল বরাত। ইসলাম ধর্মে এ রাত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চারটি রজনীর একটি হিসেবে বিবেচিত। লাইলাতুল বরাতের অর্থ মুক্তির বা নিষ্কৃতির রজনী। এ রাতে আল্লাহ পরবর্তী বছরের জন্য মানবজাতির রিজিক ও ভাগ্য নির্ধারণ করেন এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানের সব পাপ ক্ষমা করে দেন। এ রাতে মুসলমানরা আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করবেন আর রিজিক অনুসন্ধানকারীরা প্রার্থনা করবেন রিজিকের জন্য। বিপদগ্রস্ত মানুষেরা চাইবেন বিপদ থেকে মুক্তি৷ নিজের সারা জীবনের দোষ-ত্রুটি, পাপ ও অন্যায়ের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনার এ রাত মানুষের নৈতিক চরিত্র গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ করার রাতও।



ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে শাবানের মধ্যরজনীটি অত্যন্ত পুণ্যময় ও মহিমান্বিত বলে বিবেচিত। আল্লাহ তাআলা মানবজাতির জন্য তাঁর রহমতের দরজা এ রাতে খুলে দেন। রাত জেগে নফল ইবাদত করে নিজের গুনাহখাতা মাফ ও অপরাধের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করলে আল্লাহ তা কবুল করেন এবং অসংখ্য অনুতপ্ত বান্দাকে পাপমুক্ত করে দেন। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘মধ্য শাবানের রাতে আল্লাহ তাআলা রহমতের ভান্ডার নিয়ে তাঁর সব সৃষ্টির প্রতি এক বিশেষ ভূমিকায় আবির্ভূত হন এবং মুশরিক অথবা হিংসুক ব্যক্তি ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (তাবারানি) হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন মধ্য শাবানের রজনী আসে, তখন তোমরা রাত জেগে ইবাদত করো এবং পরের দিন রোজা রাখো। কেননা, প্রতি রাতে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে মহান আল্লাহ পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন, “কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। কোনো রিজিকপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে রিজিক প্রদান করব। কোনো বিপদগ্রস্ত আছে কি? আমি তাকে বিপদমুক্ত করব।” সুবহে সাদেক পর্যন্ত এ আহ্বান অব্যাহত থাকে।’ (ইবনে মাজা)

মাহে রমজানের প্রস্তুতির লক্ষ্যে শাবান মাসের অন্যতম ঐচ্ছিক ইবাদত রোজা পালন হিসেবে ‘নিস্ফে শাবান’ তথা শবে বরাতের আগে সোম ও বৃহস্পতিবার মিলিয়ে কমপক্ষে দুটি নফল রোজা পালন করা যেতে পারে। তা ছাড়া প্রতি চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে ‘আইয়ামে বিজের’ তিনটি নফল রোজা পালনের জন্য নবী করিম (সা.) অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করে বলেছেন, ‘যখন তুমি মাসে তিনটি রোজা রাখতে চাও, তখন ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখো।’ (তিরমিজি) হজরত কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) আমাদের ‘আইয়ামে বিজের’ রোজা রাখার হুকুম দিতেন, আর আইয়ামে বিজের দিনগুলো হচ্ছে চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ।’ (আবু দাউদ) রাসুলুল্লাহ (সা.) গৃহে অবস্থানকালে বা ভ্রমণরত অবস্থায় কখনো আইয়ামে বিজের রোজা ছাড়তেন না।’ (নাসাঈ) এ অবস্থায় কেউ যদি ‘নিস্ফে শাবান’ বা শবে বরাত পালন উপলক্ষে শাবান মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের তিনটি ঐচ্ছিক রোজা রাখেন, তাহলে এর সুবাদে ‘আইয়ামে বিজের’ নফল রোজা পালনের সওয়াব অর্জন করতে পারেন।



একসময় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পবিত্র এ রাতে পটকা ও আতশবাজি পোড়ানো হতো৷ আশার কথা যে তা থেকে এখন আমাদের সমাজ সরে এসেছে৷ বিচ্ছিন্নভাবেও যাতে কেউ তা এখন করতে না পারে, সে জন্য সবার সচেতন থাকা জরুরি৷ এ রাতে পটকা বা আতশবাজি পোড়ানো একদিকে যেমন রাতটির পবিত্রতা ও ভাবগাম্ভীর্য ক্ষুণ্ন করে, তেমনি যাঁরা রাতব্যাপী প্রার্থনায় মগ্ন থাকেন, তাঁদের ইবাদত বন্দেগিতে ব্যাঘাত ঘটায়। শিশু-কিশোরদের অভিভাবক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সজাগ থাকলে এটা এখন আর তেমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়৷



একটি পর্যালোচনা



করে ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের দেখতে পাই যে, তারা এ রাতে মসজিদে মসজিদে সমবেত হন। নফল নামাজ পড়ে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেন। বাসায় বাসায় হালুয়া-রুটির বন্যা বয়। একটু দেরিতে মার্কেটে গেলে গোশত পাওয়া কঠিন। জীবনে যারা ফরজ নামাজ পর্যন্ত আদায় করে না, তারা সমবেত হয় বরাতের নামাজ পড়তে। মনে হয় ফরজ নামাজের চেয়েও এ রাতের গুরুত্ব অধিক।



শুধু এখানেই শেষ নয়। এখান থেকে একদল মানুষের মধ্যে আল্লাহ সম্পর্কে কুধারণাও তৈরি হয়। সারা রাত ইবাদত আর দোয়া করার পর যখন পরবর্তীকালে তার ভাগ্যে ভালো খাবার না জোটে তখন বলে, শবেবরাতে আল্লাহ তায়ালা প্রথম দিকে বড় লোকদের জন্য লিখেছেন পরে আমাদের জন্য লেখার সময় এলে কলমের কালি ফুরিয়ে যায়। ফলে সংক্ষেপে আমাদের জন্য লিখেছেন, ‘সাবেক হুকুম বহাল।’ (নাউজুবিল্লাহ) ফলে আমাদের ভাগ্য বদলায় না।



কোত্থেকে এ ধারণার জন্ম : এ ধারণার জন্মের পেছনে মূলত কিছু দুর্বল ও মিথ্যা হাদিস কাজ করেছে। একপর্যায়ে কিছুসংখ্যক অদূরদর্শী আলেম এসব হাদিসকে পুঁজি করে রঙচঙ লাগিয়ে আলোচনা করায় সমাজে এর প্রচলন হয়ে গেছে। ফলে ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোর ওপরে এর অবস্থান দেখা যাচ্ছে।



শবেবরাতের অস্তিত্ব : সাধারণ মানুষের কাছে যে অর্থে শবেবরাত পরিচিত ইসলামি শরিয়তে এ অর্থে মূলত কোনো রাত আছে বলে কোনো মুহাককিক আলেম বলেন না। একটু চিন্তা করলে দেখব যে মূলতই ইসলামি শরিয়তে বর্ণিত অর্থে এ রাতের কোনো অস্তিত্ব নেই। তা বিভিন্ন কারণে, যেমনÑ ১. ইসলামি জীবনবিধানের মূলনীতি বর্ণিত হয়েছে আল কুরআন ও হাদিসে রাসূলে। এ দুটোই আরবি ভাষায়। ফলে শরিয়তের যেসব ইবাদত ইসলাম-স্বীকৃত তার আরবি পরিভাষা গোটা পৃথিবীতে ব্যাপৃত। পরবর্তীকালে সেগুলোর অনুবাদ হলেও আরবি পরিভাষা বিলোপ হয়নি। যেমন- সালাত, সাওম, হজ প্রভৃতি। ‘শবেবরাত’ যেমন আরবি শব্দ নয়, তেমনি এটি ইসলামি পরিভাষাও নয়; ২. ইসলামি শরিয়তে কতগুলো ইবাদত অনুষ্ঠান বা মর্যাদাসম্পন্ন দিন রয়েছে তার একটিও বছরে দু’বার একই অর্থে উদযাপিত হয় না। অনেকে ‘লাইলাতুল কদর’ অর্থ শবেবরাত করেন। তাদের মনে রাখা দরকার, লাইলাতুল কদর রমজান মাসে, শাবান মাসে নয়। সুতরাং শবেবরাত আর লাইলাতুল কদর একই অর্থ নয়; ৩. কোনো সময়ের মর্যাদা কতটুকু তা বর্ণনা করার অধিকারী একমাত্র আল্লাহ তায়ালা এবং হজরত মুহাম্মদ সা: ছাড়া অন্য কেউ নয়। এমন একটি সহিহ হাদিসের কিংবা কুরআন পাকের উদ্ধৃতি পাওয়া যাবে না, যাতে শবেবরাতের বর্ণিত মর্যাদার কথা বলা হয়েছে; যা বেশির ভাগ মুসলমান মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন। এসব যুক্তির নিরিখে বলা যায়, শবেবরাত নামে ইসলামে কোনো মর্যাদার রাতের অস্তিত্ব নেই।



শাবানের মধ্যরাতের মর্যাদা : শবেবরাতের অস্তিত্ব শরয়িভাবে স্বীকৃত না থাকলেও ইসলামি শরিয়তে শাবান মাসের মধ্য রাতের (লাইলাতুল নিসফুশ শাবান) যে মর্যাদা নেই, তা নয়। রাসূল সা: থেকে আমাদের পর্যন্ত বেশ কিছু হাদিস পৌঁছেছে, যাতে শাবান মাসের মধ্যরাত্রির মর্যাদা সাব্যস্ত হয়। ওই সব হাদিসের বেশির ভাগ দুর্বল হলেও দু-একটি সহিহ বিশুদ্ধ হাদিসও রয়েছে।



১. হজরত আলী রা: রাসূলুল্লাহ সা: থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, ‘যখন শাবান মাসের রাত আসবে, তখন সে রাত ইবাদতে কাটাবে আর দিন কাটাবে রোজা রাখার মাধ্যমে; কেননা আল্লাহ তায়ালা ওই দিন সূর্যাস্তের সাথে সাথে প্রথম আকাশে অবতরণ করে বলেন, ‘কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছো কি, যাকে আমি ক্ষমা করব; কোনো রিজিক অন্বেষণকারী আছো কি যাকে আমি রিজিক দেবো; কোনো বিপদগ্রস্ত আছো কি যাকে আমি বিপদ থেকে ম্ক্তু করব।’ এভাবে ফজর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।



পর্যালোচনা : হাদিসটি ইবনে মাজাহ তার সুনানে বর্ণনা করেছেন। এর সনদে আবু বকর ইবন আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মদ বিন আবু সামিরাহ দুর্বল (জইফ) রাবি। ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল এবং ইবনে মুঈন বলেন, ‘এ লোক মিথ্যা হাদিস রটাতেন। সুতরাং হাদিসটি সহিহ নয়।’



২. হজরত আয়েশা রা: থেকে এক দীর্ঘ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তাতে তিনি বলেন, ‘আমি একদা রাসূলুল্লাহ রা:-কে রাতে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তখন আমি তাঁকে খুঁজতে বেরিয়ে দেখি যে তিনি বাকিতে আকাশের দিকে হাত উত্তোলন করে দোয়া করছেন। আয়েশাকে দেখে তিনি বললেন, তুমি কি মনে করেছ যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার ওপর কোনো জুলুম করেছেন!’ হজরত আয়েশা বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ধারণা করেছিলাম, আপনি আপনার অন্য কোনো স্ত্রীর কাছে পদার্পণ করেছেন। তখন রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘শাবান মাসের মধ্যরাতে আল্লাহ তায়ালা প্রথম আকাশে অবতীর্ণ হন, অতঃপর বিশালসংখ্যক মানুষকে তিনি ক্ষমা করেন দেন।’



পর্যালোচনা : হাদিসটি ইমাম আহমদ, তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিজি বুখারির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, তিনি এ হাদিসটি দুর্বল বলেছেন।



৩. হজরত আবু মুসা নবী করিম সা: থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা শাবান মাসের মধ্যরাতে এক বিশেষ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এবং মুশরিক ও হিংসুক ব্যতিরেকে সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’



পর্যালোচনা : এ হাদিসখানা সহিহ। বর্তমান যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস নাসির উদ্দিন আলবানি হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।



৪. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা: রাসূলুল্লাহ সা: থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা শাবান মাসের মধ্যরাতে এক বিশেষ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। অতঃপর তিনি হিংসুক ও হত্যাকারী ব্যক্তি ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’



পর্যালোচনা : হাদিসটি সহিহ হওয়ার ব্যাপারে মুহাদ্দিসদের দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া যায়। ইবনে হিব্বান তার ‘সহিহ’ কিতাবে এটিকে উল্লেখ করেছেন। তাতে বোঝা যায়, তার কাছে হাদিসটি সহিহ। আবার ইমাম হাইসামি হাদিসটিকে ‘দুর্বল’ বলেছেন; কেননা এর সনদে ইবনে লিহইয়া রয়েছে। সে মিথ্যা হাদিস রটনার অভিযোগে অভিযুক্ত।



৫. হজরত উসমান ইবনে আবিল আস রাসূলুল্লাহ সা: থেকে বর্ণনা করে বলেন, ‘যখন শাবান মাসের মধ্য রাত উপস্থিত হয়, তখন আহ্বানকারী (আল্লাহ তায়ালা) ডেকে ডেকে বলেন, কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছো কি, যাকে আমি আজ ক্ষমা করে দেবো, কোনো সাহায্য প্রার্থনাকারী আছো কি যাকে আমি আজ তার প্রার্থনা অনুযায়ী দান করব। সেই দিন যে চাবে সেই পাবে। কিন্তু ব্যভিচারী ও মুশরিক ব্যক্তি ছাড়া।



পর্যালোচনা : হাদিসটিকে কেউ কেউ ‘মুনকাতে’ বলেছেন। যদি তাই হয় তবে হাদিসটি ‘দুর্বল’ হাদিসের পর্যায়ভুক্ত। অবশ্য অনেকে মুত্তাসিল সনদের কথা বলেছেন। সে কথার আলোকে হাদিসটি সহিহ।

এ মর্মে আরো বেশ ক’টি হাদিস বর্ণিত আছে। সেসব হাদিস সম্পর্কে ইবনে রজব হাম্বলি (একজন প্রখ্যাত মুহাদ্দিস) বলেন, ‘এ মর্মে বর্ণিত অন্য সব হাদিস দুর্বল।’



নিসফে শাবানের মর্যাদার ব্যাপারে আলেমদের অভিমত : শাবান মাসের মধ্যরাতের মর্যাদা সত্যিই আছে কি না, এ ব্যাপারে আলেমরা দুই ভাগে বিভক্ত : যথা- ১. বর্ণিত রয়েছে সাহাবাদের মধ্যে হজরত আলী রা: এ রাতের মর্যাদা দিতেন এবং তাবেয়িদের মধ্যে খালিদ বিন মা’দাল, মাকহুল, লোকমান বিন আমের প্রমুখ এ রাতের মর্যাদা দিতেন এবং ইবাদতে মনোনিবেশ করতেন। বাসরা ও শামের অনেকে এ মত অবলম্বন করেন। ২. আর মক্কা ও মদিনার অনেক আলেম, যেমনÑ আতা, ইবনু আবি মুলাইকা, আবদুর রহমান বিন জায়েদ এবং মালেকি মাজহাবের বেশির ভাগ ফকিহগণ মনে করেন, শাবান মাসের মধ্যরাতের মর্যাদাদান করা বিদআত কাজের মধ্যে শামিল। তারা মনে করেন, এ ধারণা মূলত ইসরাইলি রেওয়ায়েত থেকে মানুষের মনে জন্মলাভ করেছে এবং ক্রমান্বয়ে সমাজে বিস্তৃতি লাভ করেছে।



নিরপেক্ষ মত : রাসূলুল্লাহ সা: থেকে বর্ণিত। শাবান মাসের মধ্যরাতের ফজিলত সম্পর্কিত হাদিসগুলোর পর্যালোচনার পর নিরপেক্ষভাবে এ কথা বলা যায়, ১. হাদিসগুলোর বেশির ভাগ দুর্বল হাদিস। ২. ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানি একটা হাদিসকে সহিহ বলেছেন। সুতরাং কম হলেও এ রাতের ফজিলত সম্পর্কিত সহিহ হাদিস রয়েছে। ৩. বেশ ক’টি হাদিস এমন রয়েছে, যাকে কেউ কেউ দুর্বল বলেছেন আবার কেউ কেউ সহিহ বলেছেন।



সুতরাং বলতে পারি, শাবান মাসের মধ্যরাতের মর্যাদা সাব্যস্ত হয়েছে। তবে কয়েকটি কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে : ১. ‘শবেবরাত’ পরিভাষাটি ইসলামি পরিভাষা নয়। ২. প্রচলিত ধারণা ‘এ রাতে গোটা বছরের ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়’ এ মর্মে কোনো সহিহ হাদিস নেই। সুতরাং এ ধারণা পোষণ করা যাবে না। ৩. শাবান মাসের মধ্যরাত দোয়া কবুলের রাত। যেমন প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ দোয়া কবুলের জন্য বিশেষিত। ৪. এ রাতে ইবাদত করতে চাইলে একাকী বা পরিবারকে সাথে নিয়ে নিরিবিলি ইবাদত করার পদ্ধতিই অপেক্ষাকৃত উত্তম।



কিভাবে কাটাবেন শাবানের মধ্যরাত : যেসব আলেম শাবান মাসের মধ্যরাতের মর্যাদাকে স্বীকার করেন তারা এ রাতটি কাজে লাগানোর পদ্ধতির ব্যাপারে দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছেন।



(ক) একদল আলেমের মতে, এ রাতে সুরমা, সুগন্ধি ও ভালো পোশাক ব্যবহার করে মসজিদে গিয়ে সারা রাত নফল ইবাদতে এবং জামাতের সাথে নামাজ আদায়ে কাটিয়ে দেয়া মুস্তাহাব। এ মতের পক্ষে রয়েছে খালিদ বিন মাদান, লোকমান বিন আমের, ইসহাক বিন রাহওয়াইহ প্রমুখ।



(খ) আর অন্য একদল আলেমের মতে, এ রাতে নফল ইবাদত, বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা ও দোয়া করার জন্য মসজিদে জড়ো হওয়া মাকরুহ। তবে নিজস্ব পরিবেশে নফল নামাজ পড়ে দোয়া করে এ রাত কাটানো মাকরুহ নয়, বরং মুস্তাহাব। এ মত পোষণ করেছেন ইমাম আওজায়িসহ অনেকে।



কোনটি সঠিক : একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে বোঝা যায়, দ্বিতীয় মতটিই সঠিক; কারণ রাসূল সা: ও সাহাবায়ে কিরাম হচ্ছেন ইবাদত পালনের ধরন শিক্ষায় আমাদের জন্য বাস্তব নমুনা। তাদের কারো কারো থেকে এ রাতের মর্যাদা সম্পর্কিত বক্তব্যের কথা জানতে পাই। কিন্তু তারা জামাতের সাথে মসজিদে মসজিদে নফল ইবাদতে রাত কাটিয়েছেন এমন কোনো নজির পাওয়া যায় না।



আল্লাহ আমাদের রাসূল সা:-এর দেখানো পদ্ধতিতে সর্বপ্রকার ইবাদত পালন করার তৌফিক দিন।



আমীন।





(রেফারেন্স:প্রথম আলো ও নয়া দিগন্ত)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জুন, ২০১৪ রাত ১২:৫৬

saamok বলেছেন: সুরা ইয়াসীনে আল্লাহ্ যেমন বলেছেন (৬০ ও ৬১): আমি কি তোমাদের নির্দেশ দেইনি যে, তোমরা শয়তানের ইবাদাত করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। আর আমারই ইবাদত কর, এটাই সরল পথ।

এই আয়াতদ্বয় দ্বারা এটা প্রমানীত হয় যে, ইবাদত দু'রকম। এক ও একক আল্লাহর জন্য এবং শয়তানের জন্য। আমাদের সমাজে এবং বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতে বেশ অনেক ইবাদত আছে যে গুলি সত্যিকার অর্থে ইবাদত নয় বিদাত। শয়তানের অনুসরন।

বর্তমান সময়ে জ্ঞান অর্জনের সকল মাধ্যম মানুষের হাতের নাগালে। ইচ্ছা হলেই তা অর্জন করা সম্ভব। কিন্তু সমস্যা হল যাহেলিয়াত যুগের মত মানুষ তার পৈত্রিক ভাবে প্রাপ্ত ধর্মের উপরই আছে। নিজ প্রচেষ্টার মাধ্যমে সত্য এবং মিথ্যার পার্থক্য নির্ণয় করে না। আর তাই আজকের মুসলমান তার ধর্ম থেকে খুব দ্রুত সরে দুরে যাচ্ছে। এবাদত করছে শয়তানের।

অতএব সকলে সাবধান। এবাদত করার পূর্বে জেনে নিন। আপনার পরিশ্রম যেন আল্লাহর কাছে আল্লাহর এবাদত হিসাবে পৌছায়।

২| ১৪ ই জুন, ২০১৪ রাত ১২:৫৭

saamok বলেছেন: লেখককে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.