নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ এর ব্লগ

রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ

আমি অক্সিজেনকে ভালবাসি, তাই বলে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে ঘৃণা করতে পারিনা। কারণ আমি যার কাছ থেকে আমার ভালবাসাকে পাই সে তো কার্বন ডাই- অক্সাইডকেই ভালবাসে।

রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রুম নম্বর ৪০৬

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৬

কলকাতা পৌছে এসে হোটেলে ঢুকতেই হোটেল ম্যানেজার নিপেন বসু আমাকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে এলো। এমনভাবে দৌড়ে এলো যেনো সে এতক্ষন আমার জন্য অপেক্ষা করছিলো। আমি সাধারণত কলকাতায় আসলে এই হোটেলে উঠি। মোটামুটি ভালো মানের হোটেল। ভাড়া সাধ্যের ভেতর। তাছাড়া লেখালেখির জন্য হোটেলের ৪০৬ নম্বর ঘরটা চমৎকার বলা চলে। তবে আমি আজ কলকাতায় আসব এটা নিপেন বসুর জানার কথা নয়। বলতে গেলে এবার একদম হঠাৎ করে কলকাতায় চলে এসেছি। বেশ ক’দিন যাবত রাইটার্স ব্লকে ভুগছি। তাই ভাবলাম কলকাতা থেকে একবার ঘুরে আসি। হয়ত নতুন কোন গল্পের প্লট পেয়ে যেতে পারি।

যাহোক। নিপেন বসু আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললো,
‘স্যার আপনি এসেছেন। আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমি জানতাম আমার এই বিপদের সময় আপনি আসবেন। আমি অনেকবার আপনার আপনাকে কল করেছি। মোবাইল সুইচ স্টপ পেয়েছি।’
নিপেন বসু এক দমে কথাগুলো বলে গেলো। আমি তা বেশ মনযোগ দিয়ে শুনলাম। তারপর কিছুটা কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করলাম,
‘বিপদ! কিসের বিপদে পড়লে তুমি?’
‘সে অনেক কথা স্যার। আপনি ভিতরে আসুন। সব বলব।’
নিপেন আমাকে আলাদা একটি বসার ঘরে নিয়ে গেলো। বসতে বলে চা আনতে গেলো। আমি বোঝার চেষ্টা করলাম নিপেন কতোটা বিপদে আছে! বুঝলাম জটিল কোন সমস্যায় পড়েছে। কি সমস্যা সেটা জানতে চেয়ে বড় বোকামী করে ফেললাম মনে হয়। এখন তাকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করার ভার আমার উপর চেপে বসতে পারে। নিজেকে নিয়ে আর পারি না। এতো কৌতুহলপ্রিয়তার কারনে মাঝে মাঝে নিজের উপর খুব রাগ হয়। নিপেন চা নিয়ে ফেরত এলো। সাথে গোল্ড মারি বিস্কুট। আমি নিপেনকে বললাম,
‘কি ব্যাপার এখানে বসিয়ে রেখেছো কেনো? আমার ৪০৬ নম্বর ঘরটা খালি আছে তো?’
নিপেন কোন কথা বললো না। আমি চা নিলাম। সত্যি বলতে এই সময় চায়ের খুব দরকার ছিলো। চায়ে চুমুক দিয়ে নিপেনকে আবার বললাম,
‘নিপেন বাবু,৪০৬ নম্বর ঘরটা কি খালি আছে?’
নিপেন ‘না’ সূচক মাথা নাড়লো।
‘ আর কি করা? তাহলে দেশে ফিরে যাই কি বলো?
নিপেন আমার প্রশ্নের উত্তরে কম্পিত গলার বললো,
‘ঘরটা পুলিশ সিলগালা করে রেখেছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ঐ ঘরটা খোলা যাবে না।’
কথাটি শুনে আমি বিষ্মিত হয়ে নিপেনকে প্রশ্ন করলাম,
‘কি বলো! খুন! কবে-কিভাবে?
‘গত দুই দিন হলো। মেয়েটি বাংলাদেশী সিনেমার উঠতি নায়িকা। আর এই খুনের জন্য পুলিশ আমাকে সন্দেহ করছে।’

আমার বিষ্ময়ের মাত্রা আরো বেড়ে গেলো। নিপেন বসুর মত গোবেচারা ধরনের মানুষ খুন করতে পারে বলে আমার বিশ্বাস হয়না। যদিও বিশ্বাস অবিশ্বাসের কথাটা নিপেনকে বুঝতে দেয়া যাবে না।

‘তা তোমাকে সন্দেহ করার কারন কি নিপেন?’ প্রশ্ন করলাম।
‘সিসিটিভি ফুটেজে মেয়েটির ঘর থেকে সবশেষ আমাকে বের হতে দেখা গিয়েছে। সে কারনে পুলিশ ভাবছে খুনটা আমি করেছি। এজন্য আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কয়েকদফা। বলেছে,প্রয়োজন হলে আবারো করবে। আমি খুন করিনি স্যার। আমাকে বাঁচান।’
কথা বলতে বলতে কান্নাকাটি করে আমার পা জড়িয়ে ধরলো। পা ধরায় আমি বিব্রতবোধ করতে লাগলাম। কোনরকম পা থেকে হাত ছাড়িয়ে তাকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম,
‘দেখো,আমি কলকাতায় এসেছি লিখতে। এসবে জড়িও না আমায়। তারচেয়ে বরং কলকাতার অনেক গোয়েন্দা আছে ওদের সাহায্য নাও। ফেলুদা,ব্যোমকেশ বা কিরিটী রায়ের মত কাউকে অবশ্যই পেয়ে যাবে।’
‘আমাকে দয়া করুন স্যার। আপনি ছাড়া আমাকে কেউ এই বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারবে না। স্বয়ং ভগবান আপনাকে পাঠিয়েছে। তাছাড়া গতবার শ্যামবাজারের কালীদাস চ্যাটার্জীর কেসটা যেভাবে সুরাহা করলেন,তাতে তো কলকাতায় হইচই পড়ে গিয়েছিলো। তাই আপনি শেষ ভরসা।’
আমি বেশ বিরক্ত নিয়ে বললাম,
‘কি সব ভুলভাল বকছো!’
‘ভুলভাল না স্যার। ধরে নিন এটা আপনার গল্পের প্লট।’

নিপেন কথাটা খারাপ বলেনি। ঘটনাটি নিয়ে কয়েখ খন্ড গোয়েন্দা গল্প লেখা যাবে। মুখবন্ধতে সত্য ঘটনার কথা উল্লেক করে দিলে পাঠক লুফে নেবে। সুযোগটা হাতছাড়া করা যাবেনা। প্রথমবারের মত আমার কৌতুহলপ্রিয় স্বভাবের প্রশংসা করতে ইচ্ছা করছে।
চায়ে মেষ চুমুক দিলাম। নিপেনের চোখমুখ এখনো স্বাভাবিক হয়নি। আমার সিদ্ধান্ত জানার অপেক্ষায় আছে। আমার মুখের দিকে করুনমুখে তাকিয়ে তাকিয়ে আছে। দেখে যে কারো মায়া হবে।

‘অমন করে তাকিয়ে আছো কেনো? কয় চুমুকে চা শেষ করলাম সেটা গুনলে নাকি? কয় চুমুক লাগলো বলো?
‘একুশ চুমুক স্যার’
‘বাহ। ট্যালেন্ট আছো। তোমাকে দিয়ে হবে। এবার অন্তত বলো কোন ঘরটায় থাকতে দেবে আমায়?’
‘৩০৬ নম্বর খালি আছে।’
‘৪০৬ আর ৩০৬! বেশ। ব্যাপারটা জমবে। কই দাঁড়িয়ে আছো কেনো? ঘরটা দেখিয়ে দাও। একটু বিশ্রাম করি গিয়ে। বিশ্রাম না করলে তো বাছা গোয়েন্দগিরি করতে পারব না।’

মূল ঘটনায় যাওয়ার আগে শ্যামবাজারের সেই কেসটার কথা বলা যেতে পারে। ঐ খুনের কেসটাতে আমি গোয়েন্দা হিসেবে কলকাতায় বেশ নাম কামিয়েছিলাম। যদিও আমি আদোতে কোন পেশাদার গোয়েন্দা নই। টুকটাক যা করতাম শখের বসে।
সেবার আমার স্ত্রী তিথিকে নিয়ে এসেছিলাম কলকাতায়। বিয়ের পর মধুচন্দ্রিমা হয়নি। তাই তিথি বায়না ধরেছিল দেশের বাইরে যেতে। এদিকে আমার কলকাতা বইবেলায় একটি কাজ ছিলা ভাবলাম ওকে সাথে নিয়ে আসি। কলা বেঁচা হলো,রত দেখা হল। ভেবেছিলাম কলকাতা শুনে মোড়ামুড়ি করবে। ব্যাংকক বা সিঙ্গাপুর যাওয়ার জন্য গো ধরে বসে থাকবে। মেয়েটা যে অল্পতে তুষ্ট এটা আমি সেদিন প্রথম বুঝতে পেরেছিলাম।

হোটেল ঘরে বসে আনন্দ বাজার পত্রিকা পড়ছিলাম। হঠাৎ একটি খবরে চোখ আটকে গেল। লেখা দেখলাম শ্যামবাজারের শাড়ি ব্যবসায়ী কালিদাস চ্যাটার্জী ব্লু হোয়েল খেলে আত্মহত্যা করেছে। ব্লু হোয়েল আঁকা হাতের ছবিও ছেপেছিলো পত্রিকাটিতে। লোকটির বয় বলা হয়েছিলো পঞ্চাশ বছর। এই বয়সের একটি লোক এমন খেলার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করবে বিশ্বাসযোগ্য নয়। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম বিষয়টা ক্ষতিয়ে দেখব। আমি ঘটানস্থলে যাই। পুলিশ এটাকে আত্মহত্যা বলে ধরে নিয়ে অপমৃত্যুর মামলা করে ছেড়ে দিয়েছে। আমি তখন পুলিশের আপত্তি সত্বেও কালিদাসের মৃতদেহ পর্যবেক্ষন করি। হাতে আঁকা তিমি মাছের ছবিটি তার আঁকা নয় এটি আমি নিশ্চিত হই। কেউ তাকে ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হাতে তিমি মাছ এঁকে দিয়েছে। আমার আশংকাই সত্যি হয়েছিল। কালিদাসের সৎ ভাই ব্যবসার অংশীদারিত্ব একা ভোগ করার জন্য রাতে কৌশলে ভাইকে ছাদে ডেকে ছাদ থেকে ফেলে দেয়। কলকাতা পুলিশ কালিদাসের খুনের রহস্য উন্মোচন করায় বেশ প্রশংসা করেছিল। টেলিভিশন,পত্রিকা আমাকে লুফে নিয়েছিল। সেই থেকে গোয়েন্দা হিসেবে আমাকে চিনতে আরম্ভ করে মানুষ। আর লেখক পরিচয়টা ধীরে ধীরে ম্লান হতে থাকে। এই খুনের কালিদাসের খুনের রহস্যভেদ করতে গিয়ে তিথি আমার উপর বেজায় চটেছিল। তাকে কলকাতায় এনে একদম সময় দিতে পারিনি। রাগ তো হবেই। এজন্য সংসার ভাঙার উপক্রম হয়েছিল। অনেক কষ্টে বুঝিয়ে ঠান্ডা করেছি। ভাগ্যিস এবার তিথি নেই। তাহলে নির্ঘাত আমার রেহাই ছিল না।

হোটেল কক্ষে ঢুকে সাদা ধবধবে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলাম। সন্ধ্যা হতে এখনো ঘন্টা দুই বাকি। এসির ঠান্ডা বাতাসে নিদ্রাদেবী ভর করেছে ঠিক এমন সময় ফোনটা বেজে উঠল। মেজাজটা সপ্তম আসমানে উঠে গেলো। নিশ্চয়ই নিপেনের কাজ। ছেলেটা জ্বালিয়ে মারবে দেখছি।
ফোন রিসিভ করতেই ভারী কন্ঠ ভেসে এলো অপরপ্রান্ত থেকে।

‘রিয়াজ মাহমুদ,ডিটেক্টিভ ফরম বাংলাদেশ।’
‘কে?’
‘আমার পরিচয় না জানলেও চলবে ডিটেক্টিভ সাহেব। দরজা খুলে দেখুন রাত ন’টার বাংলাদেশ বিমানের টিকিট রাখা আছে। সুবোধ বালকের মত দেশে ফিরে যান।’
শেষ শব্দটা উচ্চারণ করার সাথে সাথে লাইনটা কেটে গেলো। পুনরায় ডায়াল করেও কাজ হলো না। কে হতে পারে? কেসটা হাতে নেয়ার সাথে সাথে লোকটা জেনে গেলো! এটা কিভাবে সম্ভব? খুনী কি তাহলে এই হোটেলেই আছে নাকি চারপাশে নজর রাখছে? রহস্য ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। নানারকম প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খেতে খেতে ভাবলাম সিদ্ধান্ত নিলাম শিয়ালদহ থানায় একবার কেসটা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নেয়া প্রয়োজন।
ধীরে ধীরে দরজার দিকে এগোলাম। খালি হাতে দরজা খোলা বিপদ জনক হতে পারে। সাবধানতার মার নেই। পিস্তলটা হাতে করে দরজা খুলে কাউকে দেখলাম না। নীচে সাদা খাম পড়ে আছে। সম্ভবত টিকিট। আর ঘরের ভেতরে ঢুকলাম না। এখনই থানায় যেতে হবে। খামটি তুলে পিস্তল মাজায় গুজে সোজা রওয়ানা হলাম থানায়।

শিয়ালদহ থানায় পৌছাতেই ওসি দূর্গাচরণ তলাপাত্র আমাকে দেখেই চিনে ফেললেন। লোকটার বয়স চল্লিশ ছুঁই ছুঁই সম্ভবত। মোটা গোঁফ আর ভূড়িটা বেশ। পান খেয়ে দাঁত লাল করে রেখেছেন। এই ভদ্রলোক আমাকে চিনবেন বলে আশা করিনি। চিনে যখন ফেলেছেন তখন কেসটা নিয়ে বেশ সহযোগীতা পাবো বলে মনে হচ্ছে। দূর্গাচরণ বাবু আমাকে চেয়ারে বসতে দিয়ে বললেন,
‘প্রথমবার আপনাকে দেখলাম। কি সৌভাগ্য আমার! আমার স্ত্রী তো আপনার বিশাল ফ্যান’।
কথা বলার সময় দূর্গাচরণ বাবুর দাঁতের ফাঁকা থেকে থুতু ছিঁটে আসে। যা প্রচন্ড রকমের ঘৃণার আর বিরক্তিকর। আমি তাকে বিরক্তিভাব না বুঝিয়ে রুমাল বের করে মুখ মুছতে মুছতে বললাম,
‘তাই নাকি? বউদিকে আমার প্রণাম দিবেন। আমি এসেছি মূলত হোটেল আইকনের কেসটার বিষয়ে জানতে।’
‘সে আপনাকে দেখেই আমি বুঝতে পেরেছি। আপনি এমনিতে এখানে আসার লোক না।’
‘বুঝেই যখন ফেলেছেন তখন বিস্তারিত বলুন।’
‘বলছি। তার আগে বলুন কি খাবেন? ঠান্ডা না গরম?’
‘আপাতত কিছু খাবো না। আপনি বরং কাজের কথায় আসুন।’

দূর্গাচরণ বাবু একটা ফাইল বের করে আমার কাছে দিলেন। ফাইল খুলে পড়তেই জানতে পারলাম মেয়েটির বাড়ি বাংলাদেশের ঢাকায়। বয়স বিশের আশেপাশে পা দোলাচ্ছে। বাংলাদেশের জনপ্রিয় পরিচালক আদনান ফারুকের সাথে কলকাতায় আসে। একই কক্ষে উঠেছিলো ওরা।

‘পোস্টমর্টেম রিপোর্ট কি বলছে?’
‘কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। হার্ট অ্যাটাক বা অন্য কোন কারন পাওয়া যায়নি। আত্মহত্যাও করেনি।’
‘তাহলে মেয়েটি খুন হয়েছে কিভাবে নিশ্চিত হলেন?’
‘সিসিটিভি ফুটেজে সবশেষ হোটেল ম্যানেজারকে হোটেল কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে দেখা গিয়েছে। প্রাথমিক সন্দেহটা ওর দিকে।’
‘এটা কিন্তু প্রমাণ করেনা হোটেল ম্যানেজার নিপেন বসুই মেয়েটির মৃত্যুর কারন।’
দূর্গাচরন বাবু কৌটা থেকে পান বের করে মুখে দিলেন। বেশ আয়েশ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে পান চিবোতে চিবোতে বললেন,
‘এ কারনেই নিপেনকে আমরা আমাদের হেফাজতে নিয়ে আসিনি। তবে নজরদারিতে রেখেছি।’
‘বাংলাদেশের যে পরিচালকের সাথে সে এখানে এসেছিলো সে কোথায়?’
‘তাকে আমরা খুঁজে পাইনি। ইমিগ্রেশন অফিসে খোঁজ নিয়ে জেনেছি মেয়েটি খুন হওয়ার আগের রাতে বাংলাদেশে ফিরে গিয়েছে।’
‘তাকেও তো জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে। তাই নয় কি?’
‘চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ পুলিশের সাথে যোগযোগ করছি। এখনো তেমন কোন অগ্রগতি নেই।’
‘মেয়েটির খুনের ঠিক আগের রাতে আদনান ফারুক দেশ ছাড়লেন। হঠাৎ কেনো তিনি বান্ধবীকে কলকাতায় রেখে দেশ ছাড়বেন? তাহলে এটা কি পরিকল্পিত হত্যা? কিন্তু পোস্টমর্টেম রিপোর্ট তো স্বাভাবিক কিংবা অস্বাভাকি মৃত্যু-কোনটার কথা বলছে না। তাহলে?’
‘আমার এতো বছরের চাকরী জীবনে এমন কেস পাইনি। বয়স হয়েছে। এতো কিছু এখন আর মাথায় নিতে পারিনা। তাই কেসটা সিবিআই দপ্তরে দিয়ে দেয়া হয়েছে। আপনি যেহেতু কেসটা হাতে নিয়েছেন,সিবিআই দপ্তর আপনাকে সাহায্য করবে। ’

আমি দূর্গাচরণ বাবুকে ধন্যবাদ জানিয়ে বের হয়ে এলাম। দূর্গাচরণ বাবু তখনও পান চিবিয়ে চলেছেন। কিছু মানুষ আছে পৃথিবীতে যারা সবরকম পরিস্থিতিতে নিজেকে নিশ্চিন্ত রাখতে পানের উপর ভরসা রাখেন। দূর্গারচণ বাবু তাদেরই একজন।

হোটলে ফিরতেই দেখি নিপেন আমার কক্ষের দরজার সামনে বসে মশা মারছে। এক একটি মশা ধরে এমনভাবে দুই হাতের তালুবন্দি করে এমনভাবে মারছে যেনো মশার উপর তার জন্মান্তরের ক্ষোভ রয়েছে। আমি বেশ কিছু সময় নিপেনের মশা মারার দৃশ্য বাধ্যগত দর্শকের মত দেখতে লাগলাম। নিপেন আমাকে খেয়াল করেনি। বেশীক্ষন এই দৃশ্য দেখতে ভালো লাগছিলো না। পিষে মারা ব্যাপারটির মধ্যে কেমন যেনো হিংস্রতা জড়িয়ে আছে। ধীর পায়ে নিপেনের পাশে গিয়ে পিছন দিক থেকে বললাম,
‘হোটেল ব্যবসায় মন্দাভাব চলছে নাকি নিপেন বাবু?’
আমাকে দেখে ঘাবড়ে গিয়ে পেছন ফিরে তাকিয়ে বললো,
‘স্যার আপনি! অনেক্ষন ধরে আপনার জন্য অপেক্ষা কলছিলাম। রাত হয়ে গিয়েছে। ফিরতে না দেখে দুঃশ্চিন্তা হচ্ছিলো। ভাবলাম.....!’
‘কেউ মেরে দিলো কিনা তাই? ভয় পেও না। কিচ্ছু হবে না আমার। তা এভাবে হিংস্রভাবে মশা মারছিলে কেনো বলো?’
‘আমি যেভাবে মশাকে পিষে মারছি স্যার। এই জীবনটা আমাকে ঠিক একইভাবে পিষে মারছে।’
‘তাই নিরীহ এক প্রাণীর উপরে রাগের রহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছ? যাও ঘুমাতে যাও। সকালে দেখা হবে।’
‘কিছু লাগবে স্যার? বিয়ার বা অন্যকিছু?’
‘বিয়ার হলে মন্দ হয় না।’
‘আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি ।’
নিপেন সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামতে গিয়ে আবার পিছন ফিরে জিজ্ঞেস করলো,
‘রাতে খেয়েছেন? নাকি পাঠিয়ে দেবো?’

আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে দরজা খুলে ভেতরে ঠুকে গেলাম। বিশ্রাম প্রয়োজন। রাতে কেসটা নিয়ে স্টাডি করতে হবে। প্লেনের টিকিট কে পাঠালো? কেইবা ফোন করে চলে যেতে বললো? বের করা প্রয়োজন। তার আগে একবার সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে ৪০৬ নম্বর কক্ষটার চারপাশটা ঘুরে আসা দরকার। তারপর সকালে পুলিশের অনুমতি নিয়ে ঘরটায় ঢোকা যাবে। আমার যতোটা মনে হয় তাতে খুনী এই হোটেলে নজর রাখছে। আর এতে হোটেলের কোন কর্মী সাহায্য করছে। কিন্তু কে?

রাত দেড়টা। কেউ বিয়ার দিয়ে গেলো না। সবাই ঘুমিয়ে গিয়েছে। এখন কেউ বিয়ার নিয়ে আসবে বলে মনে হয়না। সম্ভবত নিপেন ভুলে গিয়েছে। যা মানসিক অবস্থার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে ছেলেটা! মনে না থাকাই স্বভাবিক। আবার এটাও ঠিক নিপেন আমাকে বিয়ার দিতে ভুলে যাবে সেটা তো সম্ভব না। যাহোক। পা বাড়ালাম চার তলায়।

চলবে...........................

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন।
চলুক ---

২| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৪১

রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ বলেছেন: প্রথমে ধন্যবাদ জানাতে চাই। দ্বিতীয়ত,আমি একটি গোয়েন্দা গল্পের বই বের করতে চাইছি। কিন্তু এটি লেখার সময় কেমন যেন ভালো লাগছিলো না। তাই পোস্ট করলাম পাঠক মন্তব্য নেয়ার জন্য। যদি ভালো লাগে তাহলে চলবে,নতুবা থেমে যাবে।

৩| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:০২

আলফা ২ বলেছেন: ভালো লেগেছে,সাহস করে বের করে ফেলুন,।

৪| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:০৮

রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ বলেছেন: ধন্যবাদ আলফা ২

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.