নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ এর ব্লগ

রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ

আমি অক্সিজেনকে ভালবাসি, তাই বলে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে ঘৃণা করতে পারিনা। কারণ আমি যার কাছ থেকে আমার ভালবাসাকে পাই সে তো কার্বন ডাই- অক্সাইডকেই ভালবাসে।

রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ › বিস্তারিত পোস্টঃ

দেয়াল (পরবর্তী পর্ব)

২৪ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ৮:১৩



নীপেন কাকা চা নিয়ে এলো। অন্যান্য সময় দোকানের ছেলেটাকে দিয়ে পাঠিয়ে দেয়। আজ নিজেই নিয়ে আসলো।

‘হয়েছে হয়েছে। অনেক কান্নকাটি হয়েছে। এবার মেয়েটাকে ছাড়ো। চা খেয়ে একটু বিশ্রাম নিতে দাও’
‘কাকা, তুমি কষ্ট কর চা আনতে গেলে কেনো? কাউকে দিয়ে পাঠাতে।’— পিউ বললো।

নীপেন কাকার আদি বাড়ি বাংলাদেশ। খুলনায় ছোটবেলা কেটেছে। ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় পশ্চিমবঙ্গে চলে আসে।
নীপেন কাকার খুব ইচ্ছা মৃত্যুর আগে একবার হলেও জন্মভূমিতে যাবে। গত তিন বছর ধরে অনেকবার যাওয়ার চেষ্টা করেছে সে। সীমান্তে অবৈধ পথে কড়াকড়ি থাকায় তার আর হয়ে ওঠেনি।

‘হ্যাঁ রে মা, তুই খুলনা গিয়েছিলি নাকি?’
‘না কাকা। একদম সময় পাইনি।’— চা খেতে খেতে বললো পিউ।
‘আর মাটি! এনেছিস বাংলাদেশের মাটি?’
‘জানোই তো কাকা, আমি কোন পরিস্থিতিতে পড়ে দেশে ফিরেছি। এবার গেলে ঠিকই আনব। কথা দিলাম।’
‘সত্যি আনবি?’
‘তিন সত্যি’
‘ঠিকাছে তুই তাহলে বিশ্রাম কর। আমি আসছি তাহলে।’

নীপেন কাকা চলে গেলেন। বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়া মানুষটার অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলো পিউ। জন্মভূমির প্রতি মানুষের আমৃত্যু টান থেকে যায়। সেই টান কেউ আটকাতে পারেনি। নীপেন কাকার দেহ পড়ে আছে পশ্চিমবঙ্গের বনহুগলি নামক মফস্বলে। আর মন পড়ে আছে সেই বাংলাদেশে।

অথচ আমি….! পিউ নিজের কথা ভেবে জোরে একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। পাশে বসে থাকা মা সেই দীর্ঘশ্বাসের মানে বুঝতে পারে।
মেয়েকে না পারছে কিছু বলতে। না পারছে সইতে। পৃথিবীর সব মায়েদের এই একই সমস্যায় পড়তে হয়। সন্তানের দুঃখ সইবার ক্ষমতা তাদের থাকে না।

চার।

সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। মাঝে মাঝে দমকা হাওয়া ছাড়ছে। সরারাত ঘুমাতে পারেনি পিউ। এপাশ ওপাশ করে কেটেছে সারারাত।

রাহুলের কথা যে রাতে একবারও ভাবেনি পিউ, তা নয়। ভেবেছে। হিসেবে মেলাতে চেষ্টা করেছে—কার দোষ বেশি! এমনও তো হতে পারে আমাকে নিতে কলকাতা চলে এসেছে। এরকম আরও নানারকম কথা ভেবেছে রাতজুড়ে।

অনেক দিন কলকাতার বৃষ্টি দেখে না পিউ। বৃষ্টি ওর খুব প্রিয়। একটা সময় তো বৃষ্টি হলেই ছাদে উঠে ভিজত। এখন আর ভিজতে ইচ্ছে করে না। কিছু ইচ্ছে জীবনের টানাপোড়েনে পিষ্ট হয়ে মরে যায়।

ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে তাই অপলক বৃষ্টি দেখছে পিউ। সামনের ছাদে দু’হাত মেলে বৃষ্টিতে ভিজছে একটি মেয়ে। পাশে দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে একটি ছেলে। ওদের দেখতে অসহ্য লাগছে। আজকাল কারও সুখ দেখলে বিরক্তি লাগে। ভাবে, এই বুঝি দুঃখ নেমে এলো আচমকা। ব্যালকনি থেকে ঘরে চলে এলো পিউ।

মা এসে পাশে বসলো। হাতের থালায় মাখানো ভাত। চিংড়ির মালাইকারি দিয়ে ভাত মাখিয়ে নিয়ে এসেছে।

‘খেয়ে নে মা। আমি তোকে খায়িয়ে দিচ্ছি। না খেয়ে থাকলে শরীর খারাপ করবে।’
‘আমি তো খাচ্ছি মা। হয়ত আগে যেমন খেতাম, এখন তেমনটা খেতে পারি না। বয়স বেড়েছে না!’
‘ওরে আমার বুড়ি রে…। নে খেয়ে নে। ফিরে যখন এসেছিস তখন বেশি বেশি খেতে হবে।’

মুখে খাবার পুরে দিলো মা। বিয়ের আগে পর্যন্ত মা খাইয়ে দিত। বিয়ের পর প্রথম কয়েক মাস রাহুল খাইয়ে দিত। তারপর ধীরে ধীরে তাদের সে ভালোবাসা কমতে থাকে। কমতে কমতে তলানিতে এসে ঠেকেছে।

‘মা, আমি চলে যাওয়ার পর বাবার কি আমার ওপর খুব রেগে ছিলো?’— খেতে খেতে প্রশ্ন করলো পিউ।
‘রাগের চেয়ে কষ্ট পেয়েছিল অনেক। ও কখনও ভাবেনি, তুই তাকে কষ্ট দিয়ে চলে যাবি। তুই যেদিন চলে গেলি সেদিন হন্যে হয়ে খুঁজেছে তোকে। সারাদিন কিছু খায়নি। সকালে বেরিয়ে ঘরে ফিরেছে রাত একটা নাগাদ। এসেই আমাকে বকা শুরু করতে লাগলো, আমি নাকি তোকে প্রশ্রয় দিকে মাথায় তুলেছি! তোর পালিয়ে যাওয়ার পেছনে নাকি আমারও হাত ছিল।’
‘তুমিও খুব কষ্ট পেয়েছিলে ,তাই না?’
‘আমার কথা ছাড়। তোর বাবার সেই দিনের কষ্ট আমি কখনও ভুলব না। তারপর যতদিন বেঁচে ছিল ততদিন কষ্ট বুকে নিয়ে বেঁচে ছিলো। জানিস, তোর বাবা প্রতিদিন সকালে নীপেন দা’র দোকানে বসে চা খেতো আর তোর জন্য অপেক্ষা করত। ভাবত, তুই ফিরে আসবি। বাবাকে জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চাইবি। বাবা ক্ষমা করে দেবে। কিন্তু তুই তখন আসিসনি! কেনো আসিসনি? তোর কি আসতে ইচ্ছা করেনি?’
‘সব প্রশ্নের উত্তর হয় না মা। আমি আমার অতীত পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। তুমি কি আমাকে সাহায্য করবে?’

থালার শেষ খাবারটুকু মুখে পুরে দিলে মা বললো,

‘মা সবসময় তোর সাথে আছে। মৃত্যুর আগে অব্দি থাকবে। মা যেদিন হবি বুঝবি, মায়েরা চাইলেও সন্তানকে দূরে ঠেলে দিতে পারে না। তা সে যত অপরাধই করুক।’

বৃষ্টি নেই এখন। একবার ছাদে যেতে মন চাইছে। মাকে বলে ছাদে গেলো পিউ। আকাশ এখনও মেঘাচ্ছন্ন। আবহাওয়া অফিস বলেছে, আরও তিন তিন এরকম মেঘাচ্ছন্ন থাকবে। তারপর শীত আসবে।

পাশের ছাদের ছেলে-মেয়ে দু’জন এখন নেই। আশেপাশের কোনো ছাদেই মানুষ দেখা যাচ্ছে না। পিউ একা কেবল মেঘাচ্ছন্ন আকাশ দেখছে।

এই মেঘ তো কেটে যাবে তিন দিন পর। কিন্তু মনের মেঘ কাটবে কবে? পিউ নিজেকে প্রশ্ন করে। উত্তর খুঁজে পায় না। উত্তর না পাওয়া প্রশ্নটি দমকা হাওয়ায় উড়ে যায়। হয়ত একটু পর মেঘের সাথে মিশে যাবে।

(চলবে....)


মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ৮:২৭

শায়মা বলেছেন: হুম এমনই হয়।

জীবনের গল্পগুলো কোথাও না কোথাও চেনা আর জানা....

২| ২৫ শে অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:৪১

রাজীব নুর বলেছেন: নীপেন কাকা, রাহুল, পিউ এবং মা--- সব চরিত্র গুলো পরিচিত লাগছে।

৩| ২৫ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ৮:৩৪

করুণাধারা বলেছেন: চলুক... অপেক্ষায় থাকলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.