নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইচ্ছাঘুড়ির অবাধ আকাশ www.facebook.com/RezwanaAliTanima

রেজওয়ানা আলী তনিমা

বনমুরগী পোষ মানে না.......

রেজওয়ানা আলী তনিমা › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: নক্ষত্রের পতন

২৯ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১:৫৬

শরৎচন্দ্রের 'দত্তা' উপন্যাসের তিন বন্ধুর মতোই আমাদের ক্লাসেও কয়েকটি ছেলেমেয়ে ছিল যাদের সম্পর্কে আমাদের শিক্ষকবৃন্দের অত্যন্ত উচ্চ ধারণা ছিলো। তাদের মাঝে উজ্জ্বলতম ছিলো খসরু। শুধু পড়শোনাতেই নয় ,চলনে বলনে ,আচার আচরনে তার আর একটি জোড়া আমাদের ও তল্লাটে ছিল না। আমি ওকে রীতিমত ঈর্ষা করতাম অন্য এক কারণে।কিছু কিছু শিক্ষক তাদের বাগ্মীতায়, ব্যাক্ত্বিতের ছটায়, নিজ যোগ্যতায় স্রেফ সাধারন একজন শিক্ষক থাকেন না, তার চেয়েও অনেক উপরের আসনে চলে যান তাঁর ছাত্রছাত্রীদের মাঝে, আমাদের অতিপ্রিয় আশরাফ স্যারও ছিলেন এইরকম একজন। স্যারের একটু বেশি নজরে পড়ার জন্য সে কি তীব্র প্রচেষ্টা থাকতো আমাদের! ক্লাসের চরম ডানপিটে ছেলে ইদ্রিস ,যাকে ক্লাসে দেখতে পাওয়া দূর্লভ রাজদর্শনের মত এক ব্যাপার ছিল সেও এই স্যারটির ক্লাস মিস দিত না। তাঁর ক্লাসগুলোও এমনই এক উপভোগ্য ব্যাপার ছিল! এই স্যারের সর্বাপেক্ষা পিয় ছাত্রটির স্থান খসরুই দখল করেছিল, আর তাই শুধু আমি কেন প্রত্যেকেই ঈর্ষা করত ওকে। স্যার যখন ওকে দেখিয়ে ক্লাসে বলতেন, আমাদের দেশে এখন এইরকম ছেলেই দরকার, তখন আমি প্রবল হিংসানলে দদ্ধিভূত হতে থাকতাম।



মাঝে বহুদিন পার হয়ে গেছে , কে কোথায় ভেসে গেছে প্রবলজীবন স্রোতে -তার কোন খবর নেই, আচমকাই আমার খসরুর সাথে দেখা হয়ে গেল, সত্যই পৃথিবী গোলাকারই বটে!

সাতসকালে গিন্নীর সাথে বাজার ,সংসার ইত্যাদি ইত্যদি যে সব বিষয়ে বাংলার প্রতিটি ঘরে কর্তা- গিন্নীর র মাঝে যে নিত্য বিবাদ বাঁধে ,একই কারণহেতু সেইরকমই একটা খন্ডযুদ্ধ হয়ে গেছে আমদের মধ্যে। তিতিবিরক্ত মেজাজে রাস্তার মোড়ের দোকানটায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছি, এমন সময় এক বিশাল গাড়ি ব্রেক কষে পাশে দাঁড়াল, '১৬০/৬ বাড়িটা কোনদিকে ভাই?'

বলে একটি কন্ঠের হাঁক ডাকে তাকালাম, দুজনেরই দুজনকে চিনতে অসুবিধে হলনা বিশেষ।গাড়ি থেকে নেমে একেবারে জড়িয়ে ধরলো খসরু। অনেক দিন পরে স্কুলবেলার পুরনো কোন বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে যাওয়ার মত আনন্দের ব্যাপার কমই আছে ।রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েই তুমুল আলাপ জমে উঠলো আমাদের। পরস্পরের চাকরি বাকরি , সংসারের হালচাল জিজ্ঞাসার ফাঁকে জানতে পারলাম,পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশনের যুগ্ম সচিব সে এখন ।

'বাহ, সুখেই আছিস তুই তাহলে!মনে আছে, আশরাফ স্যার তোকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখতেন,- তুই পেরেছিস। '



এক লহমায় বুঝি বা একটু বিষাদ নামে খসরুর চোখেমুখে।বড় একটা পদবী আছে আমার সত্যি কিন্তু আসলেই কি স্যার শুধু এটুকুই চাইতেন?সততা বলে আর কিছু নেই এখন আমার মধ্যে।অবলীলায় ঘুষ চাই, ঘুষ খাই ।খেতে হয় আসলে,বুঝেছিস।

অবাক ও মর্মাহত হলাম আমি, আমাদের এককালের আদর্শ এখন দুনম্বরী পয়সায় চলে, -তার চেয়েও বড় কথা একথা স্বীকারও করে বিন্দুমাত্র চক্ষুলজা ছাড়াই।



খসরু বলে চলে,'কি করবো দোস্ত, এছাড়া ভালোমত চলা আজকাল মুশকিল,সংসার আছে, তারপর মনে কর ড্রিংকস করার একটা অভ্যাস আছে,ক্লাবটাবে যাই...., এসব এফোর্ড করতেও ত টাকা চাই।

জানিস ,.... মজার ব্যাপার, যেদিন প্রথম ঘুস নিয়েছিলাম, ঐদিন পুরো রাত আমি একফোঁটাও ঘুমাতে পারিনি, আজকাল যদি ব্যাডলাকের কারণে কোনদিন ঘুষ না পাই ঐরাত আমার ঘুম হয় না ।' এই বলে সে এই হা হা করে হাসতে লাগল।

'সৎপথে থেকে আর কদিন চলে , সততার দিন শেষ, বুঝলি?'



খসরু তার ঝা চকচকে গাড়ি উড়িয়ে এইমাত্র চলে গেছে। বাসায় আসতে বলেছিলাম,কিন্তু ১৬০/৬ -এক নিকটাত্নীয়ের বাসায় তার এক জরুরী কাজ আছে বলে সে বিদায় নিয়েছে, 'তোদের এখনে বাড়ি নম্বরের কোন আগামাথা নেই,১১০ এর পরে দেখি ১২১, আরেকদিন আসবো , আজ অনেক টাইম নষ্ট হয়ে গেছে।'



ওর চলে যাবার পর আমি কেন যেন একটু হালকা বোধ করলাম।পুরনো ঈর্ষার কাঁটার আর কোন অস্তিত্ব অনুভব করলাম না আজ।নিজে এক ছাপোষা এক শিক্ষক হয়েছি আমি, ঠিক আশরাফ স্যারের মতই, খসরুর সাথে অতুলনীয় ব্যাবধান থাকলেও ওটাতে এখন আমায় কোন বেদনা বোধ হল না অতীতের মত।

জোরে পা চালালাম বাড়ির দিকে, গিন্নির সাথে ঝগড়াটা জলদি মিচটমাট কর নিতে হবে।



মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৩:৪২

অলওয়েজ ড্রিম বলেছেন: সাহিত্য সমালোচনার ক্ষেত্রে সত্য বলাই নিয়ম। আপনার গল্প আমার ভাল লাগেনি। না প্রকাশভঙ্গি, না ভাববস্তু। আর বানান ভুলের কথা ? ওটা না হয় বাদই দিলাম।

বেশি মন খারাপ করবেন না। চেষ্টা চালিয়ে যান। লেগে থাকলে অনেক কিছুই হয়। পাঠক হিসাবে আমি তো আমার ভাল লাগা খারাপ লাগা আপনাকে জানাতেই পারি, তাই না?
আর যা না বললেই নয়ঃ আমি যদি লেখক হতাম তাহলে কোনো সন্দেহ নেই আমি 'ক' লিখতে দশটি কলম ভাঙতাম। অর্থাৎ আপনি তো লিখতে পারেন আমি 'ক-অক্ষর গো-মাংস'।

আপনার জন্য আন্তরিক শুভেচ্ছা।

০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ ভোর ৫:৩০

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: মতামতের জন্য ধন্যবাদ।ভবিষ্যতে আরো সচেতন থাকার চেষ্টা করব।

২| ২৯ শে মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:১৩

আরজু পনি বলেছেন:

শুভকামনা রইল।।

০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ ভোর ৫:৩৫

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: ধন্যবাদ আরজুপনি।

৩| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৩ ভোর ৪:০১

খেয়া ঘাট বলেছেন: সৎ মানুষেরাই সবসময় সুখী হয়।
গল্প ভালো লেগেছে।

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৫

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: ধন্যবাদ , খেয়া ঘাট।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.