নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইচ্ছাঘুড়ির অবাধ আকাশ www.facebook.com/RezwanaAliTanima

রেজওয়ানা আলী তনিমা

বনমুরগী পোষ মানে না.......

রেজওয়ানা আলী তনিমা › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: দ্বিতীয় সত্বা

২৮ শে জুন, ২০১৩ রাত ২:৪১

অধ্যাপক বজলুর রাহমান বরাবরই খ্যাতিমান ও কৃর্তীমান মানুষ ,বিশেষত জীন বিঞ্জানের উপর তাঁর সাম্প্রতিক আবিষ্কারটার পর তাঁর দর আরো বেড়েছে, এখন তিনি ইন্টারন্যাশন্যাল সেলিব্রেটি।



আজ এই প্রোগ্রাম, কাল তমুক টিভি চ্যানেল মহাব্যস্ত দিনকাল কাটছে তাঁর। এই তো মাত্রই একটা টিভি শো থেকে আসলেন তিনি , ঘরে ঢোকার আধঘন্টার ভেতর দৈনিক প্রতিবিম্ব থেকে লোক এসে হাজির তাঁর সাক্ষাৎকার নেবার জন্যে। মানুষের এখন তাঁর সবকিছুতেই আগ্রহ, এমনকি কোন টুথপেস্ট দিয়ে তিনি দাঁত মাজেন তাও জানতে চায়! হুজুগে বাঙালির নতুন খেলনা তিনি।তা সাংবাদিকের দল যে তাঁকে জ্বালিয়ে মারছে তাতে তিনি মাঝে সাঝে ক্লান্তি বোধ করেন বৈকি। কিন্ত আজ ও -সবসময়কার মতই ক্লান্তির ও রিরক্তির সাথে সথে অনেক খানি তৃপ্তিও বোধ করলেন। কত কষ্ট করেই না তাঁকে আজ এ অবস্হানে আসতে হয়েছে। খ্যাতি কার না ভালো লাগে ? শত অসুবিধাতেও তো মানুষ বিখ্যাত হতে চায়,শেষমেষ বিড়ম্বনা মুছে যায় সবসময়ই , রয়ে যায় শুধুই খ্যাতি । বা! মনে আসা জটিল দার্র্শনিক বাক্যটার জন্য মনে মনে নিজের তারিফ করলেন তিনি।



বসার ঘরে ঢুকতেই একগাল বিনয়ী হেসে উঠে দাঁড়ালো ফটোগ্রাফার আর রিপোর্টার ।আগত্যা বিরক্তিটা চেপে মুখে শুধু আনন্দের ভাবটা ফুটিয়ে তুললেন তিনি।

নানা ভঙ্গিতে ছবি তোলা হল , ফটোগ্রাফারের ধৈর্য ও আছে বটে।

"একটু হেলান দিয়ে বসুন স্যার, আরেকটু ডান দিকে মাথাটা ঝোঁকান স্যার, আরেকটু স্যার।"

ব্যাটা আগে মিলিটারীতে ছিল নাকি , যে হারে স্যার স্যার করছে!তার এক আর্মিতে থাকা গ্রাম সম্পর্কে ভাতিজাকে দেখেছেন তার উর্দ্ধতন কর্তাদের সাথে ফোনে কথা বলার সময়- কথার সারপদার্থ না যতটা তার থেকে বেশী অংশ জুড়ে ছিল স্যার স্যার সম্বোধন খানা।

কিছুতেই মনমত পজিশন না পেয়ে ফটোগ্রাফার নিজেই তাঁর থুতনিটা ধরে একটূ নামিয়ে ঠিক অ্যাঙ্গেলে নিয়ে আসে।

ছবি তোলার পর্ব শেষ।এবার প্রশ্নোত্তরের পালা আসে।

নানা গতবাঁধা আউল ফাউল প্রশ্ন যথারীতি।



"স্যার আপনার প্রিয় গান কোনটি?"



"রবীন্দ্রনাথের যে কোন গানই আমার অতিপ্রিয়, আলাদা করে কোনটাকেই কমবেশীর তুলনায় ফেলা যাবে না। কবিগুরুর সৃষ্টি এত বছর পরেও অমলিন, তার পাশে অন্য কেউ, অন্তত বাঙালির জীবনে ,দাঁড়াতেই পারে না।"



"প্রিয় বই?"



"লিও তলস্তয়ের আন্না কারেনিনা, আর্নেস্ট হেমিংওয়ের দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দি সি , হারপার লির টু কিল আ মকিংবার্ড।"



"আপনার প্রিয় চলচ্চিত্র সম্পর্কে বলুন স্যার।"



"পথের পাঁচালী আমার দেখা সবচেয়ে প্রিয় ছবি, বিশেষ করে দূর্গার মৃত্যুদৃশ্যটা এখনও চোখে ভাসে।সত্যজিত রায়ের সুনিপুন দক্ষতায় বইয়ের ক্যারেকটার গুলো একেবারে জীবন্ত হয়ে উঠেছে।বাংলাভাষার শ্রেষ্ঠ পাঁচটি ছবির কথা বলতে গেলেও তার মধ্যে এইটা অবশ্যই আসবে।"



"অবসরে কি করে সময় কাটান?"



"অবসর বলতে আমার আর তেমন কিছু নেই । ব্যস্ত সময় কাটে ল্যাবে। তারপরও সময় পেলেই নতুন নতুন বইয়ের জগতে ডুব দেই।পাঠেই আমার যত আনন্দ।"



সাক্ষাৎকার পর্ব শেষ হতে হতে বেলা অনেক হল, ওদেরকে যা হোক কিছু নাস্তাপানি করে বিদায় তো দেওয়া গেছে কিন্তু নিজের পেটে ছুঁচো ডাকছে।

ময়নার মাকে জলদি জলদি টেবিলে খাবার লাগাতে বলে চট করে পাজামা পাঞ্জাবি বদলে কেবল লুঙ্গি পরে এলেন বজলুর সাহেব। এই গরমে এইসব পরে সং সেজে কতক্ষণ থাকা যায়!



খাবার দিতে কিছুক্ষণ সময় লাগবেই , কিছু করার নেই। মোমেনা থাকলে এতক্ষণ লাগতো না। কি আর করা। কাল রাতে ঝগড়ার একপর্যায়ে কষে একটা চড় মেরেছিলেন বজলুর সাহেব। তাতেই রেগেমেগে বাপের বাড়ি চলে গেছে মোমেনা। তাও তো অল্পের উপর দিয়েই গেছে। ইচ্ছে করছিল একটা লাথি কষাতে, নেহায়েত সম্মানী ভালো মানুষ বলেই না তিনি তা করেন নি।



আজকালকার মহিলাগুলো পারেও বটে! আগেরকার সময় হলে- এই তার নিজের মাকেই তো কত মার মেরেছেন বজলুর রাহমানের বাবা, কই মা তো টুঁ শব্দটাও করেননি, বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া তো কল্পনাতীত ব্যাপার।উল্টো তখনকার মহিলারা মনে করতেন স্বামীর হাতে মার খেলে যে অংশে ব্যাথা লাগবে তাও বেহেশতে যাবে। আর এখন...... স্বামীভক্তির কোন কারবারই নেই।

বউকে মনে মনে একটা বিশ্রী গাল দিলেন বজলুর সাহেব।

সময় পাস করা আর খাবার রেডী হতে হতে ক্ষুধার জ্বালা ভুলে থাকা দুই উদ্দেশ্য নিয়েই টিভিটা ছাড়লেন তিনি। চ্যানেল টিপে টিপে একটা চটুল হিন্দি গানের চ্যানেল আনলেন। আহ! হিন্দি গানের উপর আর কোন গানই হয় না।অবসর বলতে তাঁর জীবনে খুব বেশী কিছু নেই তবু ফাঁক পেলেই তিনি হিন্দি গান শোনেন।



নাহ ,পেটে দানাপানি না থাকলে কোনকিছুই ভালো লাগে না। জোরালে এক হাঁক দিয়ে ময়নার মাকে আবার তাগাদা দেবেন নাকি চিন্তা করছিলেন তিনি, এমন সময়ে সে এসে জানালো খাবার রেডী।

খাবার টেবিলা এসে মন ভালো হয়ে গেল বজলুর সাহেবের। তাঁর প্রিয় ইলিশ মাছের ভাজি আছে আজকে। আয়েশ করে কিছুক্ষণ চিবানোর পর ময়নার মাকে বললেন টুনিকে নিয়ে আসতে। যখনই মাছ বিশেষত ইলিশ মাছ পাতে থাকবে তখন টুনিরও এর ভাগ অবশ্যপ্রাপ্য।

দুমিনিটের মাথায় টুনিসহ ময়নার মা ফিরে এলে বাম হাতে ওকে কোলের উপর বসালেন তিনি।

মাছসহ হাত একেবারে ওর মুখে ঠেকালেন তিনি, না হলে অন্ধ টুনি হয়ত ঠিকমত বুঝতেই পারবে না যে কোথায় আছে তার প্রিয় মাছভাজা।

মিউ মিউ শব্দ করে একটু লেজ নেড়ে খাওয়ায় ব্যস্ত হয়ে গেল সে আর তাকিয়ে তাকিয়ে ওর খাওয়া দেখতে লাগলেন বজলুর রাহমান, দুই চোখ ভরা মমতা নিয়ে।



বছর দুয়েকআগে সামনের রাস্তাটায় একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে মাথায় বেজায় আঘাত পেয়েছিল টুনি, চোখদুটোও তখনই গেছে, যদিও বজলুর সাহেবের অতিযত্নে প্রাণটা এযাত্রা টিকে গেছে। এখন বাইরে বাধাহীন চড়ে বেড়ানো অবশ্যই বন্ধ হয়ে গেছে , বসে বসে কেবল খাওয়া আর ঘুমানো।সেজন্যই মেদবহুল হয়ে উঠেছে টুনি , আগেকার সেই সৌন্দর্যের আর কিছুই চেহারায় বাকি নেই।আহা বেচারা!ঘরও প্রচন্ড নোংরা করায় টুনির প্রতি সিমপ্যাথি দেখাবার জন্য এই দুনিয়ায় একমাত্র বজলুর সাহেব ছাড়া আর কেউ নেই।মোমেনা, আর ছেলেমেয়ে-রাইদ,তমা সবাই রাগে ও বিরক্ত হয়-বিড়াল নিয়ে এতো আদিক্ষ্যেতা!





কিন্তু যত যাই হোক , ওকে মোমেনার পরামর্শমত কোথাও ফেলে দিয়ে আসবার কথা বজলুর সাহেব ভাবতেও পারেন না।

বছর দশেক আগে দেখা একট দৃশ্যই এখনও জীবন্ত হয়ে তাঁর চোখে ভাসে।রাস্তা পার হতেই বুঝি গিয়েছিল কুকুরছানাটা, গাড়ির চাপায় এমনকি পেটের সবকিছু বের হয়ে এসেছে আর রক্তের একটা ধারা -তখনও তাজা -গড়িয়ে চলেছে.... । তার প্রিয় অতি আদরের টুনিও যদি .......।আহা ,ও তো চোখেও দেখেনা, হয়তো কিছু বোঝার আগেই সব শেষ। না ,আর ভাবতে পারেন না তিনি।

টুনির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বজলুর সাহেব আবিষ্কার করলেন সর সর করে কোন একটা তরল পদার্থ তাঁর লুঙ্গি ভিজিয়ে দিচ্ছে। কাম সারছে টুনি! তড়িঘরি করে কিন্তু আলতো ভাবে টুনিকে মেঝেতে নামিয়ে রাখলেন বজলুর সাহেব,উনাকে আবার পোষাক বদলাতে হবে যেতে হবে।









মন্তব্য ১৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জুন, ২০১৩ রাত ৩:০০

খেয়া ঘাট বলেছেন: গল্পটা মনে হয় অন্যভাবেও লিখা যেতো।
শুরুটা বেশ ভালো লেগেছে।

২৮ শে জুন, ২০১৩ রাত ৩:১১

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ খেয়া ঘাট।গল্পটার অনেক সম্ভাবনা বা পরিণতির মাঝে একটা তুলে এনেছি মাত্র , শুরুটা ভালো লাগাছে শুনে ভালো লাগলো।

২| ২৮ শে জুন, ২০১৩ রাত ৩:৩৩

বৃতি বলেছেন: ভাল লাগলো গল্পটা । তবে আরও কিছু কনট্রাস্ট দেখানোর সুযোগ ছিল মনে হচ্ছে ।

২৮ শে জুন, ২০১৩ ভোর ৪:০২

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: ভালো লাগার জন্য ধন্যবাদ বৃতি, ভবিষ্যতে আরও ভালো করার ইচ্ছে রইলো।

৩| ২৮ শে জুন, ২০১৩ রাত ৩:৫৭

শ্রাবণধারা বলেছেন: চমৎকার টানটান লেখা, কিন্তু হঠাৎ করেই শেষ হয়ে গেল কেন বুঝলাম না........।

২৮ শে জুন, ২০১৩ ভোর ৪:০২

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: :P :P :P

৪| ২৮ শে জুন, ২০১৩ রাত ৩:৫৮

ইমরাজ কবির মুন বলেছেন:
স্টার্টিং চমৎকার ছিল।
পুরা গল্পটা ওভারঅল আরো স্ট্রং করতে পারতেন।
শুভরাত্রি ||

২৮ শে জুন, ২০১৩ ভোর ৪:০৪

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: শুভরাত্রি ইমরাজ কবির মুন, ভবিষ্যতে আরও ভালো করার ইচ্ছে রইলো।

৫| ২৮ শে জুন, ২০১৩ ভোর ৬:৪০

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: বিঞ্জানের> (ফোনেটিক- bigganer)

৬| ২৮ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:০৪

অচিন তারা বলেছেন: যে ব্যক্তি বিড়ালের প্রতি এতো ভালোবাসা... অথচ স্ত্রীর প্রতি কতই না নির্দয়... আমাদের সমাজে এমন অনেক বুদ্ধিজীবি আমি দেখেছি... ভালো লেগেছে...

২৮ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১০

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: অ-নেক অ-নেক ধন্যবাদ আপনাকে অচিন তারা।

৭| ২৮ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:১৪

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: দ্বিতীয় সত্তা বা দ্বৈত সত্তা ভালো লাগলো।
রবীন্দ্র সঙ্গীত এর সাথে হিন্দি চটুল গান , স্ত্রীকে মারধর আবার সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি , পশু প্রেম সব মিলিয়ে ভালো লেগেছে। গল্পটা হুট করেই শেষ হয়ে গেলো যেন।

শুভকামনা থাকলো ।

২৮ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৬

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: ধন্যবাদ অপর্ণা মম্ময় আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য, ভালো লেগেছে শুনে ভালো লাগলো।বোধহয় হুট করেই শেষ করা হয়েছে , আমি টের পাইনি , পেলে আরেকটু প্রলম্বিত করতাম।

৮| ২৮ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৭

মাক্স বলেছেন: ভালো লাগলো।

২৮ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৭

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: অ-নেক ধন্যবাদ মাক্স।

৯| ২৯ শে জুন, ২০১৩ সকাল ১১:২০

মাসুম আহমদ ১৪ বলেছেন: গপ তেমন ভাল লাগেনি - দ্বিতীয় সত্বাটা তেমন একটা ফুটে উঠেনি - রবীন্দ্র সঙ্গীত আর হিন্দি গানের অংশ ছাড়া!

৩০ শে জুন, ২০১৩ রাত ১:৩৭

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: :(
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ,
পরের বার ভালো কিছু লেখার ইচ্ছে রইলো।
ভালো থাকবেন মাসুম ভাই।

১০| ০২ রা জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৭

joos বলেছেন: "শেষ হইয়াও হইলো না শেষ" যদি ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্য হয় তাহলে "শুরু হওয়ার আগেই ধুম কইরা শেষ" কোন ধারার গল্পের বৈশিষ্ট্য?!?! :-* :-* :-*

ভালই তো চলছিল। গল্পের ফ্লো এর মধ্যে এভাবে হঠাৎ অফ কইরা দিলেন কি বুইঝা? মেজাজটাই বিলা হইয়া গেল... X(( X(( X((

বাই দা ওয়ে, গল্পে ++ !:#P

১৩ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৩:০৩

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: :(

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

আশাকরি আমার নতুন গল্পটা আপনার ভালো লাগবে।

বাই দা ওয়ে ,+ এর জন্য থাঙ্কস। :) :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.