নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিন্দুর মাঝে সিন্ধু দর্শনের আশায় পথ চলি...

রিদওয়ান হাসান

শুধু একদিন ভালোবাসা, মৃত্যু যে তারপর... যদি তা-ও পাই, আমি তা-ই চাই, চাই না বাঁচতে আমি প্রেমহীন হাজার বছর।

রিদওয়ান হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বেচ্ছায় রক্তদান : আবেগকে পুঁজি করে গড়ে উঠছে রক্তব্যবসা

২৫ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:৫৭

ঘটনাটি গতকালের। পল্টন গিয়েছিলাম এক কাজে। কাজ শেষ করতে করতে ঘড়ির কাটা ৮টা ছুঁই ছুঁই। ফিরছিলাম ক্লান্ত হয়ে। হাতে ছিল চল্লিশ কেজির মতো বোঝা। বাড়ির ফেরার জন্য কার্লভার্ট রোডে দাঁড়িয়ে রিকশা খুঁজছি। কাজের সময় কোনো কিছুই নাকি হাতের নাগালে থাকে না। তাই হলো। রিকশা পাচ্ছি না। অন্যদিন হলে রিকশারাই এসে লুটে পড়ত পায়ের কাছে। আজ যেন বামন হয়ে চাঁদের দিকে হাত বাড়ানোর মতো অপরাধ করে বসেছি করে রিকশা খুঁজতে। হাতে চল্লিশ কেজি বোঝা নিয়ে যে মোড়ে এসে পৌঁছবো, সেই শক্তি সারাদিনের ক্লান্তি আগেই গিলে খেয়েছে। তাই একটা দোকানের সামনে মালগুলো রেখে এগিয়ে গেলাম মোড়ে।
ঠিক কার্লভার্ট রোডের মোড়ে পল্টন প্লাজার সামনে একটা ভ্যানগাড়ি আর কিছু কর্মী এসেছে স্বেচ্ছায় রক্ত সংগ্রহ করতে। আসলে স্বেচ্ছায় রক্ত সংগ্রহ করতে এসেছে কিনা, তা আমি জানি না। তবে যারা রক্ত দিচ্ছে, তাদের রক্ত সংগ্রহ করছে এতটুকু জোর দিয়ে বলতে পারি। স্বেচ্ছায়ও হতে পারে, আবার হতে পারে এটা তাদের চাকরি। আমি যখন তাদের ভ্যান অতিক্রম করব, তখন একজন রক্তসংগ্রহকারী এগিয়ে এসে কোনোরকম ভাণভণিতা ছাড়াই বলল,ভাই! আপনার এক ফোঁটা রক্ত দিতে পারে একজনের জীবন। আপনি কি এর আগে কখনো রক্ত দিয়েছেন?
আমি আসলেই এর আগে কখনো রক্ত দেইনি। দেয়ার সাহস হয়নি কখনো। তাই কাঁচুমাচু করে ডিরেক্ট বলে দিলাম, হ্যাঁ, আমি প্রায়ই রক্ত দেই। স্বেচ্ছায় দেই। বলা লাগবে না। আমি জানি এ সম্পর্কে। আমি এখন ঘরমুখো। আমাকে দ্রুত যেতে হবে।
এসব বলার উদ্দেশ্য ছিল তাদের থেকে কেটে পড়া। কারণ, এমন অনেক কাউন্টারে আমি বিনে পয়সায় রক্ত পরীক্ষা করে নাম্বারসহ দিয়ে এসেছি। নতুন করে আর কোথাও রেজিস্টেশন হওয়ার মানসিকতা ছিল না।
তারপরও আমাকে অনেকটা অসহায়ের মতো করে বললেন, দেখেন! তিনটা মিনিট লাগবে, শুধু রেজিস্টার করে যান। পরে আমরা যোগাযোগ করব। আমি মনে মনে ভাবলাম, রিকশা খুঁজতে এসে কী বিপদেই না পড়লাম।
তাদের নির্ধারিত কাউন্টারে বসলে একজন মেয়ে আমার নাম জানতে চাইল। আমি তার হাতের ফরমটা নিয়ে বললাম, আমিই পূরণ করে দিচ্ছি।
খুবসম্ভবত দেড় মিনিটে ফরমটা পূরণ করে দিলাম। তারপর যেই আমি উঠবো, ওমনি লোকটা আবার অসহায়ের মতো বলল, আমরা তো খুব কাছে থেকে রক্তপ্রার্থীদের দেখেছি, চোখের সামনে মারা যেতেও দেখেছি। আপনার মূল্যবান রক্তটুকু হয়ত পেলে এ দৃশ্য আর দেখতে হবে না। আর এতে আপনার কোনো ক্ষতিও হবে না। তিন মাস অন্তর অন্তর রক্তকণিকা পাল্টে যায়। রক্ত আরো সতেজ হয়। হার্টএ্যাটাকসহ নানাবিধ রোগ থেকেও আপনি থাকবেন সুস্থ। মাত্র দশ মিনিট লাগবে আপনার এক ব্যাগ রক্ত নিতে। প্লিজ না করবেন না।
আমি বললাম, ওদিকে আমি মাল রেখে এসেছি, এখানে এসেছি রিকশা খুঁজতে। আমার তাড়া আছে। আজ হবে না ভাই। অন্য কোনো দিন দিব।
বেশি সময় লাগবে না। মাত্র দশমিনিটে হয়ে যাবে স্যার। প্লিজ স্যার। আমরা কাছ থেকে মানুষের দুর্গতি সইতে না পেরে পথে নেমেছি। আপনার সাহায্যে পেতে পারে একটি জীবন।
আমি ধন্ধে পড়ে গেলাম। মানবিক বোধ চারা দিয়ে উঠল। কিন্তু ওদিকে দোকানের সামনে মাল রেখে এসেছি। না জানি জায়গামতো আছে, নাকি কেউ নিজের মনে করে নিয়ে গেছে—কে জানে? আবার ভাবছি, কখনো তো রক্ত দেইনি। দিলে তো কোনো প্রবলেমও নাই। দেই, যা হবার হবে। বুকে দম নিয়ে থতমত করে একপ্রকার রাজিই হয়ে গেলাম।
দেখলাম, লোকটার নিভু নিভু ম্রিয়মান আলোর মতো মুখখানা সহসা মেঘগলানো চাঁদের মতো ফুটি ফুটি করে উঠল। হাসি ছড়ালো। আর সে হাসি এসে আঁছড়ে পড়লো আমার চোখে। আমাকে তাদের ভ্যানগাড়িতে ওঠানো হলো। তাতে দুজন মানুষ আগে থেকেই ছিল। দুটো বেড পাতা হয়েছে। একজন আমাকে বসতে বলল, আমি ভয়ে ভয়ে অথচ মুখে পাকা খেলোয়ারের আভা ছড়িয়ে বসলাম। একজন ওয়ানটাইম গ্লাসে গ্লুকোজ দিল। সারাদিনের ঠাটানো রোদে ঘুরে ঘুরে গলা শুকিয়ে কাঠপ্রায়। ঢক ঢক করে গিলে নিলাম পুরোটা গ্লুকোজ।
এবার আরেকজন বলল, এদিকে মাথা করে শুয়ে পড়ুন। আমি তাকে বললাম, ভাই একটু তাড়াতাড়ি করতে হবে। আমি ওদিকে মাল রেখে এসেছি। অনেক তাড়া আছে আমার। কী যে করেন আপনারা, রাস্তায় এভাবে পথচারীদের রক্ত দিতে অপারগ করলে তো আপনাদের এই সাহায্যের প্রতি মানুষের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এটা অনুচিত। এতে মানুষ সাহায্য করতে অনুৎসাহিত হয়। তার উত্তরও ছিল ঠিক আগের ব্যক্তির মতো। অনেকটা তোতাপাখির বুলি। আমি আবারও মানবিক বোধে আক্রান্ত হলাম। তাই দ্রুত করতে বলে শুয়ে পড়লাম।
শুয়ে শুয়ে দশটা মিনিট মাথার মধ্যে অনেক কিছু খেলে গেল। ভাবলাম, রক্তদান একটি মহৎ কাজ। আর্থিক মূল্য দিয়ে এই দানের হিসাব কষা যায় না। এর সঙ্গে সম্পর্ক জীবনের। এটি একান্তই মানবিক গুণ। অনেক মুমূর্ষু রোগীর জীবন বাঁচানোর অন্যতম উপকরণ হচ্ছে রক্ত। জীবন বাঁচানোর গুরুত্বপূর্ণ এ উপকরণটি যেমন সব মানুষ দিতে পারে না, তেমনি সব স্থান থেকে এটি সংগ্রহও করা যায় না। তাছাড়া যার তার রক্ত বিনা পরীক্ষায় নেয়াটাও একটা গর্হিত অপরাধ। তারা তো আমার রক্তের কোনো পরীক্ষা নিলো না। হতাশা জেগে উঠলো মনে।
আবার ভাবতে লাগলাম, বাংলাদেশে প্রতিবছর পাঁচ লাখ ব্যাগ রক্তের দরকার হয়। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ রিপ্লেসমেন্ট ডোনার বা আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতজনের মাধ্যমে আসে বাকি ২৫ শতাংশ পেশাদার রক্তদাতা এবং ২৫ শতাংশ স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতার মাধ্যমে আসে। তো, আমার এই রক্তদান সেচ্ছাসেবীর মধ্যেই পড়ে। আমি এত ভাবছি কেন! আমি দেয়ার দেই। তারপর তারা যা করবে—এর জবাবদিহিতা তাদের।
আমি মাঝখানে একবার বললাম, ভাই আর কতক্ষণ। আমার কথা শুনে ভ্যানের নিচ থেকে একজন বলল, ভাইয়ের তাড়া আছে অল্প রক্ত নিয়ে ছেড়ে দাও। একটু পর রক্ত নেয়া শেষ হলো। যাক, প্রথমবার রক্ত দিয়ে নিজেকে একটু সৌভাগ্যই মনে হলো। তারা আমাকে আবার ওয়ানটাইম গ্লাসে করে একগ্লাস গ্লুকোজ দিল। আমি পুরোটা পান করলাম। এরপর তারা আমাকে আগামী একঘণ্টা কোনো ভারী কাজ করা এবং ভারী খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়ে একখানা কার্ড ধরিয়ে বিদায় দিল। আর এটা সংগ্রহে রাখতে বলল। তখন মনে মনে ভাবলাম, একটু পরেই তো আমাকে চল্লিশ কেজির মালটা নিয়ে রিকশায় তুলতে হবে।
আমি তড়িঘড়ি করে একখানা রিকশা নিয়ে দোকানের সামনে গিয়ে মালগুলো তুললাম। কোনোমতে দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত পেরুতেই আমার শীরা-উপশীরাগুলো কেমন জানি টগবগ টগবগ করতে লাগল। মুখ ভরে বমি আসতে চাইল। চোখের আলো নিমিষেই কালো হতে লাগলো। আমি রিকশাওলাকে কিছু বলছি, সে শুনছে না। তারপর জোর করে রিকশাওলার পিঠে হাত দিয়ে বললাম, রিকশা থামাও। আমার কেমন যেন করছে। সে একটা আখের রস বিক্রেতার সামনে দাঁড়ালো। আমার গলাও ততক্ষণে শুকিয়ে গরম দিনের ছাতাফাটা অবস্থা হয়ে আছে। আমি দ্রুত একগ্লাস আখের রস অর্ডার দিলাম। রিকশাওলা নিজেই নিয়ে এসে আমাকে পান করালো। আমি কলিজায় শীতল অনুভব করলাম তখন।
এরপর চোখের কালো আলো ধীরে ধীরে রঙ্গিন পৃথিবী দেখতে লাগলো। কিছুক্ষণ আগের ঘটে যাওয়া ঘটনা যেন কিছুই মনে হয়। আমি যেন হঠাৎ সম্বিৎ ফিরে পেয়েছি। অনেক কিছু মনে করতে চেষ্টা করলাম, হঠাৎ পকেটে থাকা কার্ডের কথা মনে পড়লো। হাতে নিয়ে পড়লাম। তাতে আমার নাম লেখা। একব্যাগ রক্ত দিয়েছি তা স্বাক্ষরিত। তখন সবকিছু বাংলাসিনেমার আঘাত পেয়ে জ্ঞান ফিরে পাওয়ার মতো মনে হলো।
কার্ডটা এদিক-সেদিক পড়তে লাগলাম। হঠাৎ চোখ গেলো একটা লেখায়। যার সারমর্ম হলো, আমার এই রক্ত কেউ বিনে পয়সায় পাচ্ছে না। তাকে প্রসেসিং চার্জ দিয়ে সেই রক্ত সংগ্রহ করতে হবে। পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেলো লেখাটা। মানুষের উপকারে রক্তদান করলাম, সেটা মানুষে কিনে ব্যবহার করবে—ভাবতেই রাগ লাগল। এরচেয়ে ভালো, যার রক্ত লাগবে, তাকে গিয়ে নিজেই রক্ত দিয়ে আসা। এতে যাকে রক্ত দিলেন তাকে দেখেও আপনার ভালো লাগবে।
যাই হোক, রিকশা দিয়ে বাড়ি অবধি আসতে আরো অনেক ঘটনা ঘটেছে, তা মূলবিষয় নয়। কোনোমতে এসে রাতে শরীরটা এলিয়ে দিয়েছি বিছানায় আর রাত যথারীতি পার। সকালে জ্বলে উঠলো চোখের আলোর বিন্দু। বেঁচে আছি। মনে হয়েছিল, মরে যাব। আল্লাহর শোকর, তিনি বাঁচিয়ে রেখেছেন।
আজ সে ব্লাডব্যাংক থেকে ফোন এসেছিল। আমি তাকে সব জানালাম। সে দুঃখিত বলল। আমি শুধু তাকে বললাম, আপনারা যা করছেন তা ভালো কাজ। কিন্তু এভাবে পথচারীদের আবেগকে পুঁজি করে রক্ত সংগ্রহ করাটা ফ্লপ আইডিয়া। আপনার বাড়ি বাড়ি গিয়ে কিংবা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক একাজ চালাতে পারেন। এতে আমার মতো আর কাউকে কষ্ট পোহাতে হবে না।
সে বলল, আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। তো, আপনি এখন সুস্থ আছেন তো?
আমি বললাম, হ্যাঁ। সুস্থ আছি। আলহামদুলিল্লাহ।
সে বলল, তাহলে তিনমাস অন্তর অন্তর ফোন করলে আপনি আমাদেরকে রক্ত দিতে পারবেন?
আমি প্রথমে ভেবেছিলাম, আমি সুস্থ আছি কিনা, সেটা জানতে ফোন দিয়েছে। কিন্তু এখন ‍বুঝলাম তিনমাস পর পর রক্তদাতার ফিরিস্তিতে আমার নাম যোগ করাতে তারা এই খোঁজ নেয়ার ছল ধরেছে। আমি তাকে বললাম, ছোটকালে আমি গাছ থেকে পুকুরে লাফ দিতে পারতাম না। খুব ভয় লাগত। তারপর একদিন বড় ভাই জোর করে গাছ থেকে পুকুরে ফেলে দিল। আমি পুকুরে পড়লাম কিন্তু কিছুই হলো না। ভয় তো কেটে গেল তার উপর আনন্দও পেলাম প্রচুর। নতুন আবিস্কারের আনন্দই আলাদা। তারপর থেকে আমি নিজ থেকেই গাছে উঠে লাফিয়ে পরেছি বহুবার।
ওপাশ থেকে লোকটা কণ্ঠটা ক্ষীণ হয়ে আসলো। কি যেন বলতে নিয়েছিল তার আগেই আমি বললাম, প্রথমবার রক্ত দেয়ার অভিজ্ঞতা এতটাই বাজে ছিল যে, নিতান্ত কোনো কারণ ছাড়া আমি আর কোনো দিন কাউকে রক্ত দিবো বলে মনে হয় না।
ঘটনার রেশটা সারাদিন দাপিয়ে বেড়ালো আমাকে। একবার কী যেন কী ভেবে কার্ডের উপরে লেখাটা নাম্বারটিতে ফোন দিতে মন চাইল। যেই ভাবা সেই কাজ। ফোন দিয়ে বললাম, আমার একব্যাগ এ পজেটিভ রক্ত লাগবে। আমার করণীয় কি?
ওপাশ থেকে বলল, ডাক্তারের স্বাক্ষরসহ রিকুইজেশন নিয়ে আসতে হবে। এর জন্য প্রসেসিং চার্জ দেয়া লাগবে ব্যাগ প্রতি ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা।
আমি বললাম, বিনামূল্যে পাওয়ার কোনো সুবিধা আছে কিনা? আমি তো জানতাম, শুধু ব্যাগের খরচটা নেয়া হয়।
সে বলল, সরি স্যার...

পুনশ্চ : এই লেখার দ্বারা রক্তদানকে খারাপ ভাবা কিংবা ভাবানো উদ্দেশ্য নয়। বরং রাজধানীর বড় বড় হাসপাতালের আশপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে বেআইনি রক্ত ব্যবসা কেন্দ্র। বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আড়ালে এ ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ৪৫টি রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্রের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বাদ বাকিদের ব্যাপারে জনসচেতন গড়ে তোলাই এই পোস্টের উদ্দেশ্য। তাই অনুমোদন ছাড়া রক্ত সংগ্রহকারীদের রক্ত দেবেন না, বিনা পরীক্ষায় রক্ত দেবেন না কিংবা রাস্তাঘাটেও রক্ত দেয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ, আপনি সুস্থ থাকলেই রক্ত দিয়ে আরেকজনকে সুস্থ করতে পারবেন। নয়ত একজনের জীবন বাঁচাতে আপনি নিজেই কেন জীবন হারাতে বসবেন?

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১:৩২

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: এই একটা দেশ প্রতিটা সেক্টরে ভেজাল আর ভেজাল। এভাবে পথচারিদের বিরক্ত করার অধিকার তাদের কে দিয়েছে?

২৫ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৪:৫২

রিদওয়ান হাসান বলেছেন: সরকারি অনুমোদন আছে কিনা, কে জানে? থাকলেও হয়ত সেটা কেন্দ্র পরিসঞ্চালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু তারা যে এভাবে রাস্তায় নেমে পথচারীদের সাথে এসব করছে, তাতে সাহায্য করতে মানুষ অনুৎসাহিতই হবে।
আর অধিকারের প্রশ্ন এলে রাস্তার ফুটপাত দখল করায় মানসিক ভোগান্তিও চরমে। সব মিলিয়ে এটা একটা ফ্লপ আইডিয়া।

২| ২৫ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১:৫৫

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: আমি সন্ধানীর প্রথমদিককার রেজিষ্টার্ড ডোনার।।
আপনার অভিজ্ঞতা হয়তো প্রথম বলেই মানসিক।।
বাকীটাতে একমত।। আজকাল ব্যাবসাই হচ্ছে।। আবার সংরক্ষনের খরচও কিন্তু গের মত নেই।। এটাও ভাবতে হবে।।

২৫ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৫:০৬

রিদওয়ান হাসান বলেছেন: আমিও বাঁধনে রেজিস্টার্ড হয়েছিলাম কিন্তু সাহসের অভাবে কখনো রক্ত দেয়া হয়ে ওঠেনি, এটা আমার চরম দুর্ভাগ্য। আর আমি জানি, বাঁধন শুধুমাত্র ব্যাগের খরচটাই রাখে।
আমার মতে, মানুষের রক্ত তাদের শরীর থেকে না খসালে তা আলাদাভাবে সংরক্ষণেরও প্রয়োজন হয় না। এভাবে খরচের প্রবলেমটা সলভ্ হতে পারে। যদিও এতে সুবিধা-অসুবিধা দুটোই আছে, অসুবিধার চেয়ে সুবিধার হারটাই বেশি মনে হচ্ছে।
সুবিধার দিকগুলো হলো, রক্তদাতা রক্তগ্রহীতাকে দেখতে পেল, নিশ্চয় এটি একটি শান্তির দৃশ্য। এজন্য করণীয় হলো, প্রত্যেক মানুষকে জোনাল করে এলাকাভিত্তিক তৈরি থাকতে বলা। বিশেষ কারণ না থাকলে তারা যেন সব সময় রক্ত দিতে প্রস্তুত থাকে। আর এটা একটা জীবন-মরণের প্রশ্ন হওয়ায় তাতে মানুষ বিরক্তবোধও করবে না। দ্বিতীয়ত, মানুষের রক্ত কৃত্রিম সংরক্ষণ করা লাগল না। মানুষের দেহেই তা প্রাকৃতিকভাবে সংরক্ষিত থাকলো।
আর অসুবিধার ব্যাপারটা হলো, কখন কোন্ মানুষের ডাক পড়বে, তা বলা মুশকিল। তখন দেখা যাবে, এক এলাকায় একজন মানুষকে মাসে দু দু বার ডাকা হতে পারে, আবার অন্য এলাকায় দেখা যাবে, তাকে ছয়মাসেও একবার রক্ত দেয়া লাগেনি। তবে এ অসুবিধারও নিরসন করা যেতে পারে।

৩| ২৫ শে মার্চ, ২০১৭ ভোর ৬:৪৫

সিলেক্টিভলি সোশ্যাল বলেছেন: এই মানবিকতার গ্যাঁড়াকলে পরে তিন বা চার বার রক্ত দিয়েছি স্বেচ্ছায়। একবার অনেকটা আপনার মতই অভিজ্ঞতা হয়েছিল। চোখের সামনে হঠাৎ করেই জগৎ কালা! তারপর যখন জানলাম এভাবে লোক ঠকানোর একটা ব্যাপারও থাকতে পারে তখন থেকে বন্ধ। পরে আরো তিনবার রক্ত দিয়েছি রোগীকে সরাসরি দেখে। সেটার আনন্দ অন্যরকম।

২৫ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৫:০৮

রিদওয়ান হাসান বলেছেন: সম্পূর্ণ সহমত। রোগীকে দেখে রক্ত দেয়ার আনন্দই আলাদা। ধন্যবাদ অগ্রজ।

৪| ২৫ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ৮:৫৭

রিফাত হোসেন বলেছেন: আমি ইউরোপরের যে দেশে থাকি সেই দেশে রক্ত নেয় না আমার । :( ম্যালেরিয়া ট্যাগের দেশে জন্ম সে কারনে। এটা তাদের অভ্যন্তরীণ নিয়ম। যদিও তাদের ডাটাবেস এ আপডেট এ ঢাকাকে মুক্ত করেছে। কিন্তু বাকি অংশে রেখেছে তবে ওভারঅল বিডি ম্যালেরিয়া ট্যাগেই রয়েছে।
আরেকবার ঢাকা মেডিকেল এ চেষ্টা করেছিলাম। গাউট রোগের কারনে রক্ত নিল না। মানে ইউরিক এসিড বেশী থাকায়!
মানুষ রক্ত পায় না আবার ইউরিক এসিড! :-&

এরপর বছর কয়েক পর কি মনে করে বিডিপুলিশ এর প‌্যাভিলয়নে(বাণিজ্য মেলা) রক্ত দান ও সংগ্রহ কর্মসূচি ছিল। গিয়ে দিয়ে আসলাম। শান্তি লাগল। বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ জেনে নিতে পারলাম। রক্ত দিতে পেরে ভাল লাগল।আমার তো ভালই নিল তবে লাল কাল কোন কিছু বুঝি নাই। পানি ও জুস দিয়েছিল। পান করেছি।
একটা কার্ড ধরিয়ে দিল। বাসায় চলে আসলাম।

রক্ত দেওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভাল।

২৫ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৫:১৪

রিদওয়ান হাসান বলেছেন: রক্ত দেওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। এতে দ্বিমত নেই। আপনি চাইলে সরাসরি রোগীকে রক্ত দিতে পারেন। অথবা অনুমোদিত রক্তদান কেন্দ্র পরিসঞ্চালনে দিতে পারেন। অথবা এলাকাভিত্তিক জোন করে বাড়ি বাড়ি অথবা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এ রক্তসংগ্রহের কাজ চালানো সম্ভব।
রাস্তাঘাটে একাজ আমার কাছে ভালো মনে হলো না। কারণ, পথচারীরা তো কোনো না কাজেই বাইরে বের হয়। হতে পারে, তার ভারি কোনো কাজও আছে। আর যারা রক্ত সংগ্রহ করছে, তারা তো বিনে পরীক্ষায় রক্ত নিচ্ছে, এতে রক্তগ্রহীতার রোগ আরো প্রকোট হতে পারে। জীবন-মরণের বয়ান দিয়ে মানুষের জীবনকে আরো অনিশ্চয়তার দিকেই ঠেলা দেয়া হচ্ছে- ব্যাপারটা চিন্তার।

৫| ২৫ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৪

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: খুব ভাল ব্যাপার তুলে ধরেছেন।
তবে আমি রক্ত দিয়েছি। আমার তো এমন লাগেনি। সুস্থই ছিলাম। রক্ত দিলে প্রবলেম তো হওয়ার কথা নয়।
আপনি সুস্থ আছেন তো?
তবে বিক্রি করুক আর যাই করুক, রক্ত দেয়াই যায়। কারণ রক্ত কিনতেও পারে না অনেকে, টাকা থেকেও।
কারণ রক্তই থাকে না

২৫ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৫:২৫

রিদওয়ান হাসান বলেছেন: প্রথমবার রক্ত দিয়ে যা অভিজ্ঞতা হলো সেটা একটা দুর্ঘটনা। কারণ, আমি ছিলাম পথচারী। রক্তদানের পর চল্লিশ কেজি মাল বহন করতে হয়েছিল আমাকে। অথচ রক্ত দেয়ার পর বিশ্রাম নেয়া উচিত। অন্তত একঘন্টা কোনো ভারি কাজ করা যেত না। কিন্তু অপারগ হয়ে আমাকে তা করতে হয়েছে। এ কারণেই আমার প্রবলেম হয়েছে।

রক্ত দিলে প্রবলেম তো হওয়ার কথা নয়।
বাংলাদেশের মানুষ রক্তদানের পর সুস্থ-স্বাভাবিক থাকার মেজরিটি অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। তাই অনেকের ক্ষেত্রে বিশেষত পথচারীদের ক্ষেত্রে এটা অস্বাস্থ্যকর। আর এখানে বিনে পরীক্ষায় রক্তগ্রহণের ব্যাপারটা বিবেচ্য।

তবে বিক্রি করুক আর যাই করুক, রক্ত দেয়াই যায়। কারণ রক্ত কিনতেও পারে না অনেকে, টাকা থেকেও। কারণ রক্তই থাকে না
সহমত। কারণ, রক্তের সেন্ডিকেট ও বাণিজ্যিকরণ হওয়াটা নতুন কোনো খবর নয়। সেসব রক্তদালালদের কাছে রক্তের মূল্য মানুষের জীবনের চেয়েও অনেক বেশি। বিপদে পড়লে ব্যাগ প্রতি ৫০০০ টাকা দিয়েও কিনতে হয় অনেককে। তাই, অনুমোদনহীন কোনো ব্লাডব্যাংকে রক্ত দেয়া আর দালালদের সাথে ব্লাডসিন্ডিকেটে শরিক হওয়া- সমান কথা।

ধন্যবাদ ভাই। আপনার মূল্যবান মতামতের জন্য। শুভকামনা +++

৬| ২৫ শে মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৪

টারজান০০০০৭ বলেছেন: প্রত্যেকের উচিত নিজের পরিচিতদের মধ্যেই ছোট ছোট ব্লাড ব্যাংক তৈরী করা। আমি এবং আমার পরিচিতরা যেটা করি কারো ব্লাড দরকার হলে দেই, কোনো প্রতিষ্ঠানকে দেই না। তবে ব্যাপক চাহিদার কারণে জাতীয় পর্যায়ে ব্লাড ব্যাংকের প্রয়োজন আছে। ব্যাবসায় পরিণত হওয়ার কারণে বিকল্পটা অবলম্বন করা যেতে পারে।

২৫ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ৮:৩৯

রিদওয়ান হাসান বলেছেন: এটা একটা ভালো আইডিয়া। পরিচিতদের মধ্যে ব্লাডডোনার সার্কেল তৈরি করা। এতে শরীরের রক্ত শরীরে রেখে প্রাকৃতিক উপায়ে তা সংরক্ষণও হলো (বাড়তি কোনো খরচ লাগল না) আবার প্রয়োজনে অন্যের পাশে দাঁড়ানো হলো একদম বিনে পয়সায়। ধন্যবাদ ভাই +++

ব্যাপক চাহিদার কারণে জাতীয় পর্যায়ে ব্লাড ব্যাংকের প্রয়োজন আছে
এতেও সহমত। তবে সেটা সরকারিভাবে আদমশুমারির মতো বাড়ি বাড়ি অথবা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক করা যেতে পারে। এতে রক্তদাতাও রক্ত দিয়ে সুস্থ থাকবে। আবার সরকারও রাজকোষ থেকে তা সংরক্ষণের দায়ভার নেবে। তখন জনগণ শুধু রক্তের ব্যাগের খরচ দিয়েই পেতে পারে একব্যাগ রক্ত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.