নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিন্দুর মাঝে সিন্ধু দর্শনের আশায় পথ চলি...

রিদওয়ান হাসান

শুধু একদিন ভালোবাসা, মৃত্যু যে তারপর... যদি তা-ও পাই, আমি তা-ই চাই, চাই না বাঁচতে আমি প্রেমহীন হাজার বছর।

রিদওয়ান হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলা সাহিত্যের অবশ্যপাঠ্য কিছু বই (পঞ্চম পর্ব)

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৩

বাংলা সাহিত্যের অবশ্যপাঠ্য কিছু বই (চতুর্থ পর্ব) বইয়ের নাম : ‘খোয়াবনামা'
লেখক : আখতারুজ্জামান ইলিয়াস

পূর্ববাংলার আঞ্চলিক ভাষাকে অবলম্বন করে যে কি চমৎকার উপন্যাস লেখা যায় তার সার্থক উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস তার দীর্ঘ কলেবরের উপন্যাস খোয়াবনামার মাধ্যমে। আঞ্চলিক ভাষার অধিক ব্যবহার রয়েছে বইটিতে, রয়েছে কিছু খিস্তি-খেউরও। ১৯৪৭ এর দেশভাগ গুরুত্বপূর্ণ অংশ দখল করে আছে খোয়াবনামা।

খোয়াবনামা উপন্যাসটি মোট ৫৯টি অংশে ভাগ করা আছে। উপন্যাসের কাহিনীটা এগিয়ে গেছে অনেকটা নদীতে পানির একটা ফোটা পড়ার মতো করে। প্রথমে খুব ধীরে শুরু হবে এর কাহিনি। কিন্তু ভেতরে ঢুকলে দেখা যাবে ওই পানির ফোটা থেকে তৈরি হওয়া ঢেউ আস্তে আস্তে ছড়িয়ে যাচ্ছে চারদিকে। উপন্যাসের কাহিনিটা শুরু হবে তমিজের বাপ নামে একজনের ঘুমের ঘোরে হাটা আর ওই অবস্থাতেই স্বপ্ন দেখার ঘটনার মাধ্যমে। তাই উপন্যাসের প্রথমদিকে পাঠকের বিরক্তি লেগে যেতে পারে– বিশেষ করে প্রথম দুটি অংশে পাঠককে মনে করতে হতে পারে তিনি নিজেরই খোয়াব বা স্বপ্ন দেখছেন।

আসলে উপন্যাসটির ভাষা-গতিপ্রকৃতি এগিয়েছে নদীর বয়ে চলা জলের মতো। একেকজনের স্বপ্নের আকর ভেঙে পড়েছে উপন্যাসটির শরীরে। উপন্যাসের কুশীলবরা সবাই খোয়াব বা স্বপ্ন দেখে। শরাফত মণ্ডল খোয়াব দেখে আরো বেশি ভূ-সম্পত্তির মালিক হওয়ার, মণ্ডলের ছেলে আবদুল কাদের স্বপ্ন দেখে স্বাধীন পাকিস্তানের। তমিজ স্বপ্ন দেখে এক টুকরো ধানী জমির। স্বপ্ন ব্যাখ্যায় চেরাগ আলী ব্যবহার করে ছেঁড়াখোঁড়া বইটি। এই ছেঁড়াখোঁড়া বইটি যেন বাঙালি জাতির খোয়াবনামা। একটা জাতির প্রায় বারোশো বছরের বিশ্বাস, স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের বিবরণ, বৈচিত্রপূর্ণ শোলোক চমৎকারভাবে বর্ণিত হয়েছে। মুনশির শ্লোক গেয়ে ঘুরে বেড়াত চেরাগ আলী ফকির। তার বাপ-মা-নাতনি কুলসুমের হাত ধরে সে শ্লোক শুনিয়ে বেড়াত এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে। সে মানুষের স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে পারত। স্বপ্ন ব্যাখ্যার একটি কিতাব ছিল তার যা সবার কাছে অলৌকিক গ্রন্থ বলে মনে হতো।
তারপর একদিন নাতনি বিবাহযোগ্য হলে বুড়ো তমিজের বাপের সঙ্গে বিয়ে দেয়। চেরাগ আলীর মৃত্যুর পর সেই বইয়ের মালিক হয় তমিজের বাপ। এই শ্লোক কয়েকটি বেরিয়ে আসত কুলসুমের মুখ দিয়ে আবার কখনো বৈকুণ্ঠ গিরির মুখ থেকে। বৈকুণ্ঠ গিরিও বোহেমিয়ান স্বভাবের লোক। ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহে তার পূর্বপুরুষ অংশ নিয়েছিল। চেরাগ আলীর মুখের শ্লোক সে গাইতে পারত। চেরাগ আলীর গাওয়া সেই গান শোনা যায় তমিজের বাপের মুখেও। একদিন এই শ্লোক শুনে কেরামত মণ্ডল। কুলসুমের গলায় শ্লোক শুনে কেরামতের মনে হয় চেরাগ আলীর আত্মা ভর করেছে তার নাতনির ওপর। তার গলা থেকে পুরুষালি স্বরে দাদার গাওয়া গান বের হয়ে আসত।

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস শুধু বাংলাদেশের কথাসাহিত্যেই নয়, সমগ্র বাংলাসাহিত্যেরই একজন অগ্রগণ্য কথাসাহিত্যিক৷ তিনি কখনোই লেখার সংখ্যা বৃদ্ধিতে মনোযোগী ছিলেন না৷ ভিন্ন আঙ্গিক ও প্রকরণে মনোযোগী এ লেখক তাই খুব বেশি লেখেননি জীবনে৷ কিন্তু যা লিখেছেন শিল্প-বিচারে তা এখনও বিশ্বমানের, এমনটিই মনে করেন সাহিত্যের বিদগ্ধ সমালোচকেরা৷ জীবনের গভীরতম শাঁস পর্যন্ত অশেষ কৌতূহল নিয়ে পর্যবেক্ষণ করে শিল্পকর্মে তা দ্বিধাহীন প্রকাশ করার বিরল ক্ষমতা যাঁর লেখায় পাওয়া যায় তিনিই কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস৷ যদিও প্রকৃতি তাঁকে এই বিশ্ব পর্যবেক্ষণ ও উপলব্ধির জন্য বেশি সময় দেয়নি৷ হয়ত সেজন্যই এই নাজুক ও স্বল্পায়ু সময়ে তিনি মর্মভেদী দৃষ্টিকে শাণিত করে দেখেছেন তাঁর চেনা বিশ্বকে৷ যাপিতজীবনের বাহিরেও যে আরো কিছু দেখবার ও বুঝবার দিক আছে তা আমরা ইলিয়াসের গল্প ও উপন্যাস পড়ে আবিষ্কার করতে পারি৷ তাঁর লেখায় আমরা পাই গভীর জীবনবোধ ও তীক্ষ্ণ হাস্যকৌতুকের সাক্ষাত৷ সাধারণ নিম্নবর্ণের মানুষের মুখের ভাষাও তাঁর রচনায় মর্যাদা পায়৷ লেখায় তিনি শুধু গল্প বলেন না, পাঠককে ভেতর থেকে নাড়া দেন, ঝাঁকুনি দিয়ে জাগিয়েও রাখেন৷

১৯৯৪ সালে দৈনিক জনকন্ঠ-এর সাহিত্যপাতায় ইলিয়াসের উপন্যাস খোয়াবনামা ধারাবাহিকভাবে ছাপা হতে শুরু হয়৷ যদিও পুরো উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার আগে জনকন্ঠ কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক কারণে খোয়াবনামা ছাপা বন্ধ করে দেয়৷ পরে ১৯৯৬ সালে উপন্যাসটি বই আকারে প্রকাশিত হয়। কিছু দিন যেতে না যেতেই খোয়াবনামা কালজয়ী উপন্যাস হিসেবে আখ্যা পায়। তাই তো ১৯৭৭ সাল ছিল ইলিয়াসের জন্য স্মরণীয়৷ কারণ, জীবনের প্রথম পুরস্কার হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি৷ এরপর ১৯৮৩ সালেইলিয়াস বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন৷ ১৯৮৭ সালে তিনি আলাওল সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেন৷ ১৯৯৬ সালের এপ্রিল মাসে খোয়াবনামার জন্য পান প্রফুল্ল কুমার সরকার স্মৃতি আনন্দ পুরস্কার এবং সাদাত আলী আকন্দ পুরস্কার৷ এবছর কাজী মাহবুবউল্লাহ স্বর্ণপদক নামে আরেকটি পুরষ্কার পান তিনি৷

বইটি পড়লে ভালো লাগায় ডুবে থাকবেন। এ ভালো লাগা মনে ধরার মতো।

পিডিএফ ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন : খোয়াবনামা

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৮

রাজীব নুর বলেছেন: দারুন একটা বই এই খোয়াবনামা।
এই লেখাটি চলতে থাকুক।

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৬

রিদওয়ান হাসান বলেছেন: শুধু দারুণ বলেই এর প্রতি কৃতজ্ঞতা একপ্রকার আদিখ্যেতা মনে হয়। খোয়াবনামা আসলেই একটি মাস্টারপিস।

২| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:০৬

সৈয়দ ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয়।

৩| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:০৯

মনিরা সুলতানা বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ চমৎকার লেখায় ।

৪| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:২২

মরুচারী বেদুঈন বলেছেন: আপনাকে একখানি ধন্যবাদ প্রদান করা হইল(কুঁড়ের বাদশা স্টাইল ;))

৫| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৮

অাব্দুল্লাহ অাল কাফি বলেছেন: যা হোক খোয়াবনামা সম্পর্কে একটা ধারনা পাওয়া গেল।

৬| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:০৯

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: ডাউনলোড দিলাম-------

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৬

রিদওয়ান হাসান বলেছেন: আচ্ছা ঠিক আছে। অনুমতি দিলাম :)

৭| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৬

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: পোস্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ। খোয়াব নামা বিদেশে বসে পড়ার সুযোগ পেলাম।

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৭

রিদওয়ান হাসান বলেছেন: পড়তে থাকুন। পড়াশেষে একটি পাঠপ্রতিক্রিয়া জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।

৮| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১১

একটি বালুকণা বলেছেন: না পড়ে এতদিন ছিলাম।আর পারা যাবে না।অন্তত ব‌ইটা সম্পর্কে এতকিছু জানার পর।

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৮

রিদওয়ান হাসান বলেছেন: আপনাদের ভালোলাগার অভিব্যক্তিই আমার শ্রমের সার্থকতা। ভালোবাসা জানবেন।

৯| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:২৪

শামচুল হক বলেছেন: আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের জন্ম আমার পাশের গ্রামে। তাকে নিয়ে আমি গর্ব করি।

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৯

রিদওয়ান হাসান বলেছেন: গর্ব করার মতো পুরোধা ব্যক্তি আখতারু্জ্জামান ইলিয়াস। লেখকের প্রতি শ্রদ্ধা রইলো। এবং তার প্রতিবেশীর প্রতিও।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.