নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিন্দুর মাঝে সিন্ধু দর্শনের আশায় পথ চলি...

রিদওয়ান হাসান

শুধু একদিন ভালোবাসা, মৃত্যু যে তারপর... যদি তা-ও পাই, আমি তা-ই চাই, চাই না বাঁচতে আমি প্রেমহীন হাজার বছর।

রিদওয়ান হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলা সাহিত্যের অবশ্যপাঠ্য কিছু বই (সপ্তম পর্ব)

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:২২

বাংলা সাহিত্যের অবশ্যপাঠ্য কিছু বই (ষষ্ঠ পর্ব) বইয়ের নাম : ‘কবি'
লেখক : তারাশঙ্কর বন্দোপধ্যায়

‘কবি’ উপন্যাসটি তারাশংকর বন্দোপাধ্যায় রচিত কালজয়ী সাহিত্য। উপন্যাসটির মূল বিষয় তৎকালীন সমাজের রূপ ও আচার, প্রেম, জীবনসংগ্রাম, মনের বিভিন্ন দিক ইত্যাদি। মূলত একটি মানুষকে ঘিরেই উপন্যাসটি আবর্তিত। সে মানুষটি হলো উপন্যাসের নায়ক একজন কবি। তবে কবি বলতে আমরা সাধারণত যা বুঝি তিনি সে কবি নন,উপন্যাসের নায়ক নিতাইচরণ একজন কবিয়াল। নিতাই খুব নিচ বংশের ছেলে, পুর্বপুরুষের পাপে সে অতিষ্ট। চোর-ডাকাত, খুনিদের বংশে জন্মেও সে চায়, ‘জন্মের চেয়ে কর্মকে বড় করে দেখতে’। তাই বিধাতাপ্রদত্ত সুমিষ্ট কণ্ঠ দিয়ে সে জগতকে জয় করতে চায়, চায় বংশের পাপ লোচন করতে। কিন্তু চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী...

একবার এক মেলাতে এক বিখ্যাত কবিয়াল না থাকাতে নিতাইকে মঞ্চে তুলে দেয়া হয়,তারপরে নিতাই তার প্রতিদ্বন্দ্বী কবিয়ালকে প্রায় ঘায়েল করে ফেলে শেষে তার প্রতিপক্ষ কবিয়াল নিতাইয়ের পরিবার নিয়ে অশ্লীল আক্রমণ করে লড়াইয়ে জিতে যায়,কিন্তু ওই মঞ্চেই নিতাই জয় করে নেই হাজারো মানুষের মন।
তারাশংকর এ উপন্যাসে বুঝাতে চেয়েছেন, নিতাইয়ের মতো স্বল্পশিক্ষিত আর নিচু বংশের লোকের দ্বারা কি আসলে বড় কবিয়াল হওয়া সম্ভব? লেখক বুঝিয়ে দিয়েছেন, উপযুক্ত পরিবেশে তা সম্ভব। অনেক কষ্টে, অনেক সাধনায় সাধারণ নিতাইচরণ হয়ে উঠে একজন নামকরা বিখ্যাত কবিয়াল। সেই কবিয়াল হয়ে ওঠার নানা কাহিনী নিয়েই মেদযুক্ত উপন্যাসের শরীর।
উপন্যাসে দেখানো হয়েছে, নিতাইয়ের জীবন একজন কবিয়ালের জীবন। সে পড়তে ভালোবাসে, গাইতে ভালোবাসে। বাপ দাদার পেশা চালিয়ে যেতে রাজি নয় সে। এ কারণে বাপের বাড়ির ভাত হারাম হয়ে যায় তার। বাধ্য হয়ে মাকে ছেড়ে, বাবার ভিটে ছেড়ে মুটের কাজ করতে হয় রেল ষ্টেশনে। এখানেই তার সাথে বন্ধুত্ব হয় রাজার, যে স্টেশনে কাজ করে। সে কবিয়াল মানুষ। বিভিন্ন স্থানে গিয়ে সে কবিগান করেছে। এদিকে রাজারই এক আত্মীয়কে ঠাকুরঝি বলে ডাকত সে। বিবাহিত ঠাকুরঝি রোজ এসে দুধ বিক্রি করে যেত। এখানেই সে প্রেমে পড়ে ঠাকুরঝি’র। প্রেমের বিভিন্ন পর্যায়ে কবি মনের আকুলতা, অনুভূতিগুলো যেন স্পষ্ট ধরা দিয়েছে প্রত্যেক কবিতায়।
একদিন রাজা দুধবিক্রেতা এই ঠাকুরঝিকে কালো-কুচ্ছিত বলে বকাঝকা করলে নিতাই তার রাগ ভাঙ্গাতে সবার অগোচরে বলে ওঠে,
"কালো যদি মন্দ হবে কেশ পাকিলে কাঁদ কেনে?
কালো চুলে রাঙা কুসুম হেরেছ কি নয়নে?"

এরই মধ্যে ঠাকুরঝিও তার ভালোবাসার আচ পায়। কিন্তু ভালোবাসা আর ভয় একসাথে একাকার হয় তখন। এজন্য সে বলে ওঠে,
"চাঁদ দেখে কলঙ্ক হবে বলে কে দেখে না চাঁদ?
তার চেয়ে চোখ যাওয়াই ভালো, ঘুচুক আমার দেখার সাধ।"


ঠাকুরঝি যখন কবিয়ালের প্রেমে সারা দেয়, তখন ঘোরে গল্পের মোড়। বিষয়টা সবার জানাজানি হয় ঠাকুরঝির এক ভুল বোঝাবোঝির কারণে। এ কারণে নিতাইকে ছাড়তে হয় গ্রাম। পরে সে ঝুমুরদলের সাথে যুক্ত হয়, যেই দল অশ্লীল গান-বাজনা করে এবং নারীরা গানের সাথে নাচ করলেও তারা মূলত দেহোপজীবিনী। সে ক্রমশ তার নিজের ভেতরকার কবিয়ালের সত্তাকে চেপে রেখে এই দলের মতো করেই গান রচনা করে। এখানে সে বেশ জনপ্রিয় হয়ে যায়। সেখানে তার সাথে পরিচয় হয় বাসন্তি বা বসনের সাথে। বসনের মধ্যে সে ঠাকুরঝির ছায়া দেখতে পায়। দুজনের মাঝে সখ্যতা গড়ে ওঠে। বাসন্তির সাথে প্রেম জমে উঠে নিতাইয়ের। হয়ে উঠে একজন পরিপুর্ণ কবিয়াল। নামডাক ছড়িয়ে পড়ে সব জায়গায়। ঝুমুর দলের নর্তকী হয়ে উঠে সত্যিকারের একজন প্রেমিকা।
উপন্যাসের শেষ দিকে বাসন্তি দৈহিক রোগে মারা যায়, তার আগমুহুর্ত পর্যন্ত নিতাই যে সেবা করেছে তা সত্যিই লক্ষ্যণীয়। আর এতেই বাসন্তির প্রেম আরো শতগুণ বেড়ে যায়। কবিয়াল নিতাই বাসন্তির প্রেমে চিরজীবন বাঁচার আশা করে বাসন্তিকে শুনিয়েছিল,
"এই খেদ মোর মনে,ভালোবেসে মিটল না আশ, কুলাল না এ জীবনে। হায় জীবন এত ছোট কেনে,এ ভুবনে?"

বাসন্তি তো কবিয়ালকে ছেড়ে পরজীবনে চলে গিয়েছিল। তাই শোকে-দুঃখে পাগলপ্রায় নিতাই ঝুমুর দল ছেড়ে বৈরাগী হয়ে বিশ্বনাথের মন্দিরে চলে যায়। সেখানেও যে তার মন বসে না। ভিন্নদেশে ভিন্নভাষী তার আর ভালো লাগে না। দেশের প্রতি মন আনচান করে। লেখক তারাশংকর এখানে দেশপ্রেমের খুব চমৎকার একটি চিত্র এঁকেছেন। নিতাই দেশে ফিরবে। কিন্তু সে চায় না ঠাকুরঝির সাথে দেখা হোক তার ঘর ভাঙ্গুক। সে সবসময় ঠাকুরঝির মঙ্গল চায়। অবশেষে ট্রেনে চেপে দেশে ফিরল নিতাইচরণ। ততদিনে সে মস্তকবি। ফিরেই যে খবরটি পেল তা সত্যিই কষ্টের আর হৃদয়বিদারক। ঠাকুরঝিও মারা গেছে। তাই নিতাইচরণের শেষ ইচ্ছা প্রতিভাত হয় রাজার সাথে মায়ের দরবারে গিয়ে শুধানো... " জীবন এত ছোট কেনে? "

তারাশঙ্কর কবি সৃষ্টির প্রেরণা নিয়ে কিছু প্রচলিত মত রয়েছে। কবিয়াল নিতাইয়ের আছে কথা ও সুরের ভাষা। ঠাকুরঝির স্বামী আছে, সংসার আছে অথচ নিতাইচরনে সে নিবেদিত মন ও প্রাণ। রবীন্দ্রনাথের ‘শেষের কবিতা’ উপন্যাসের সাথে তারাশঙ্করের কবি’র হয়ত মিল আছে কোথাও। অমিত লাবণ্য দাশ ও কেটি মিত্রের মতো আধুনিক ব্যক্তি-সত্তার ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনী সেই সময়ের সমাজ বাস্তবতায় সমাজের উঁচু শ্রেণীর সম্পর্কের দ্বন্দ্ব ও টানাপোড়নের গল্প। অপরদিকে, কবি আরও একটু আগে অথবা কাছাকাছি সময়ের সমাজের নিম্নবিত্ত ও সর্বহারা ভাসমান শ্রেণীর সম্পর্কের মানবিক দ্বন্দ্ব ও টানাপোড়ানের তথা চরম দুঃখ ও বিচ্ছেদে জরাজীর্ণ কাহিনী।

পিডিএফ ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন : কবি

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৩৮

প্রামানিক বলেছেন: চমৎকার একটি বই, পুরোটাই পড়েছি।

২| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:১২

মনিরা সুলতানা বলেছেন: পছন্দের একটা বই !!!
ভালো হয়েছে রিভিউ !!
লিঙ্ক এর জন্য ধন্যবাদ ,যখন তখন পড়া যাবে ।

৩| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১:২৫

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: মনে হচ্ছে পড়েছি।। গল্প মনে না এলেও স্মৃতি বলছে।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.