নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আম জনতার একজন।

ইছামতির তী্রে

I have a dream.

ইছামতির তী্রে › বিস্তারিত পোস্টঃ

পবিত্র রমযান ও ঈদ আসলেই ফিরে যাই শৈশবে!

৩০ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:০১





একমাস রোজা রাখার পর আসে ঈদ-উল-ফিতর। ঈদ মানে আনন্দ। এই আনন্দের অধিকার ধনী-গরীব সবার। গরীবের আনন্দ নিহিত ধনীদের দানে। আল্লাহ ধনীদের সম্পদের মাঝেই গরীবের সম্পদ রেখেছেন। গরীবের আনন্দকে তাদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার মাঝেই ধনীদের প্রকৃত আনন্দ। যাক এই প্রসঙ্গে আলাপ না করে চলুন কিছু স্মৃতিচারণা করি। কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। দেখুন ত কয়টা জিনিষ মিলে যায় আপনাদের সাথে?



মজা করে ইফতারি খাওয়াঃ

খুবই আনন্দের সময় হলো ইফতার এর সময় । পবিত্র কুরআনেও ইফতারের সময়ের গুরুত্ব আলোচনা করা হয়েছে। রমযান মাসের অন্যতম আকর্ষণীয় অংশ হলো ইফতার। যখন ছোট ছিলাম তখন খুব মজা হত এই সময়ে। মনে পড়ে তখনও রোযা রাখার বয়স হয়নি। কিন্তু ইফতার এর সময় ঘনিয়ে আসার আগেই আমরা (অন্যান্য ভাই বোনেরা) ঠিক সময়ে বাড়ি এসে পরতাম। মা সবার জন্যই ইফতার বানাতেন। তিনি সবাইকে ইফতার পরিবেশন করতেন। বড়রা মানে রোযাদারগণ ঘরে পাটিতে বসে ইফতারি করতেন। তবে আমাদের বসার জায়গা হত একটু দূরে, বারান্দায় বা উঠোনে। তবে এটা কোন সমস্য হত না। আযান হওয়ামাত্র আমরা পরমানন্দে ইফতার সাবাড় করতাম। কি যে ভাল লাগত!!



একটা মজার ঘটনা এখানে শেয়ার না করে পারছি না। অনেকদিন আগের কথা। আমার ছোট ভাই রোযা রেখেছে। তার রোযা রাখার বয়স তখনো হয়নি। তবুও রেখেছে। বর্তমান সময়ের মত অনেক দীর্ঘ দিন তখন। প্রায় ৭টায় ইফতার। দুপুরের আগে মোটামুটি মুখটা হাসি-খুশিই ছিল। কিন্তু বেলা যতই গড়াতে লাগল ওর অবস্থা ততই কাহিল হতে লাগল। আসর নামাজের পর থেকে ওর কথাই বন্ধ হয়ে গেল। আমরা রোযা ‘ভাংতে’ বললে সে কোনমতেই রাজী হয় না। অগত্যা আমরাও আর পীড়াপীড়ি করলাম না। আব্বা তখন পাবনাতে চাকুরী করেন। উনার সেদিন আসার কথা ছিল। ইফতারের ৩০ মিনিটের মত আগে আব্বা এলেন। আব্বা সবসময় কিছু না কিছু খাবার হাতে করে আসেন। সেদিনও এর ব্যত্যায় ঘটেনি। তিনি অন্যান্য খাবারের সাথে ‘গজা’ (একধরনের মিস্টি জাতীয় খাবার) নিয়ে এসেছেন। তখন এটা খুব চলত আমাদের এলাকায়। এবং আমার আর ছোট ভাইয়ের অন্যতম প্রিয় খাবারও বটে। এটা দেখার পরে আমার ছোট ভাইকে আটকানো কঠিন হয়ে গেল। একে ত ক্ষিধায় অবস্থা খারাপ তার উপর ঐ খাবার। পুরা প্যাকেট হাতে নিয়ে এক নাগারে বলে যেতে লাগল, ‘আমি খাব’, আমি খাব’। এবার আমরা আটকানোর চেস্টা করলাম। কিন্তু ও কিছুতেই নিবৃত্ত হচ্ছে না। অনেক জোরাজুরি, বুঝাবুঝির ফলে কোনমতে থামানো গেল। পরে ইফতারের সময়ে ওর ‘গজা’ খাওয়ার দৃশ্য আজো স্মৃতিপটে অম্লান।



সেহরির আনন্দঃ

আরো মজার ঘটনা ঘটত সেহরির সময়ে। রাতে সাধারণত মূল ঘরেই খাওয়া-দাওয়া হত। আর আমরা শুতাম ঐ ঘরেই। মা অনেক আগেই উঠে যেতেন। রান্না-বান্না শেষে যখন সবাই খেতে বসত তখন হত মজা। আমরা ছোট বিধায় স্বভাবতই মা আমাদের ডাকতেন না। সবাই যখন একসাথে খেতে বসত তখনকার দৃশ্য ছিল দেখার মত। বিশেষ করে আমি খুব আকর্ষণ অনুভব করতাম। আমি পুরোপুরি জেগে থাকতাম। কিন্তু উঠতে বিব্রত বোধ করতাম। আমার একটা দাম আছে না! আমি মনে প্রাণে চাইতাম মা বা যে কেউ অন্তত আস্তে করে হলেও একবার ডাকুক, ‘কিরে খাবি নাকি? উঠে পর’। কিন্তু সত্যি বলতে কি বেশীরভাগ সময়েই কেউ ডাকত না। তবে আমিও দমে যাবার পাত্র নই। বিছানায় শুয়ে অযথা এপাশ-ওপাশ করতাম যাতে কেউ আমাকে খেয়াল করে ডাক দেয়। এটাও যখন কাজ করত না তখন অন্য কৌশল নিতাম। তখন আমি একটু জোড়েই ‘হাই’ তুলতাম যাতে অন্যের কানে যায়। এটাতেও যখন কাজ হত না তখন ব্যবহার করতাম শেষ অস্ত্র। হঠাৎ করেই বিছানা ছেড়ে উঠে বলতাম, ‘মা আমি প্রস্রাব করতে যাব’।;) এটাতেই কাজ হত। আমার বড় ভাই ছিল খুব মজার। সে বুঝতে পেরে বলত, ‘নে, আর মোচরা-মুচরি করা লাগবে না। হাত-মুখ ধুয়ে এসে ভাত খা’;)। ভাইয়ের কথা শুনে সবাই হেসে উঠত। আমি খুব লজ্জায় পড়ে যেতাম। তবে আমি দ্রুত হাত-মুখ ধুয়ে এসে টুপ করে অন্যদের পাশে খেতে বসে যেতাম। খাবার মেন্যু যাইহোক না কেন খেতে অমৃতের মত লাগত।



এখনো ইফতার করি। ‘ঘড়ির/মোবাইলের ডাকে’ সেহরি খেতে উঠি। অনেকটা অভ্যাসবশতই এটা করি। আজও স্মৃতিপটে পুরনো দিনের কথা হানা দিলে বড়ই আনন্দ পাই। আর মনের মাঝে একটা দীর্ঘশ্বাস উঠে, ‘আর কোনদিন ফিরে আসবে না ওই সোনামাখা দিনগুলি’। /:)



নতুন জামা-কাপড় পাওয়াঃ

ঈদের সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে নতুন পোশাক উপহার পাওয়া। এখনকার বাচ্চা পোলাপানের মত আজ থেকে ২০ বছর আগে মাসে মাসে নতুন জামা-কাপড় কেনার প্রচলন কম ছিল। খুব ধনী পরিবারের ছেলে-মেয়েরা হয়ত বেশী পেত। তবে মধ্যবিত্ত বা গরীব পরিবারে উপলক্ষ ছাড়া নতুন পোশাক কপালে জুটত না। আমার বাবা চাকুরী করতেন। খুব সীমিত বেতন দিয়ে তার পক্ষে মাসে মাসে ত দুরের কথা ৬ মাসেও আমাদের সবার কাপড় দেয়া সম্ভব হত না। কাজেই আমাদের চোখ থাকত দুই ঈদের প্রতি। একবার আব্বা আমাদের সবার জন্য কাপড় নিয়ে আসলেন। কাপড় গুলো বন্টন করার দায়িত্ব পড়ল বড় আপার উপরে। আমরা পড়িমড়ি করে তার কাছে ছুটলাম। আমাদের এমন লাগাম ছাড়া পাগলামো দেখে আপা কড়া ঝাড়ি দিল। কিছুক্ষন কস্ট করে চুপ করে থাকলেও হাতে নতুন পোশাক আশা মাত্র আবার শুরু হলো উদ্দাম আনন্দ। পোষাক হাতে পেয়ে দেখলাম সাথে একটা গেঞ্জিও আছে। সেই ম্যারাডোনার ছবি সংবলিত গেঞ্জি। তখন এটা সুপারহিট ছিল। তখন আমরা ভাল করে জানিও না কে এই লোক। তবে সেই থেকেই ম্যারাডোনার ফ্যান হয়ে গেলাম।



নতুন কাপড় নিয়ে আর একটি মজার ব্যাপার কান্ড হত। আমাদেরকে যে পোশাকই দেয়া হত ঈদের দিনের আগে কোনভাবেই এটা কাউকে জানাতাম না, দেখানো ত পরের কথা। বন্ধু-বান্ধবদের জিজ্ঞাসা করতাম তাদের কাপড়ের ব্যাপারে। ওরাও বলত না। মনে হত বললেই সেটা পুরাতন হয়ে যাবে!!! ঈদের দিন গোসল করে নতুন পোশাক পড়ে গায়ে আতর মেখে নামাজ পড়ে এসে খেয়ে-দেয়ে বন্ধুদের সাথে খেলা করতে যেতাম। এটাই হত সারপ্রাইজ!!! তখন আবার প্রতিযোগিতা চলত কার জামা সুন্দর এটা নিয়ে। এটা অধিকাংশ সময়ে ঝগড়ায় রুপ নিত। :P:P



অন্য একটা ঈদের কথা মনে পড়ে গেল। আব্বা আমাদের সবাইকে ডাকলেন। আমরা বেজায় খুশি। কারণ আব্বা কার কি লাগবে এটা ঠিক করার জন্যই সাধারণত আমাদের ডাকেন। আমরা মহানন্দে আব্বার ঘরে হাজির হলাম। আব্বা আমাদের সবার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বললেন, ‘বাবারা, এবার ত তোমাদের ঈদে নতুন কাপড় দিতে পারছি না। গত ঈদের গুলো দিয়ে চালিয়ে নাও। তোমরা মন খারাপ করো না’। আব্বার কথা শুনে আমাদের আমাদের সকলের মুখ অন্ধকারে ছেয়ে গেল। কিন্তু তবু আমরা সবাই ঘাড় নেড়ে সম্মতি দিলাম। খেয়াল করে দেখলাম আব্বা অলক্ষ্যে চোখটা মুছছেন, সাথে মা। /:)



আর এখন? প্রয়োজন পড়লেই কেনা হয়, উপলক্ষ্য এলেও কেনা হয়। কিন্তু ঐ Feelings টা পাই না। এবারের কথাই ধরুন। অফিস থেকে বাড়ি গিয়ে শুনলাম আমার বড় মামা ঈদ উপলক্ষে একটা শার্ট দিয়েছেন। গিন্নি আলমারিতে রেখে দিয়েছেন। ঐ শার্ট দেখেছি এক সপ্তাহ পরে! আসলে ঐ বিজ্ঞাপনটার মত বলতে হয়, ‘স্বাদ পাই না’। :)



ঈদের বখশিশঃ

অতি আনন্দের একটা পর্ব। আমার মনে হয় এমন কোন মুসলিম নেই যে বা যিনি ঈদের বখশিশ বা সেলামি পান নি। আমিও পেয়েছি ছোটবেলায়। মনে পড়ে আব্বা ঈদ উপলক্ষে ১০০ বা ২০০ টাকা খুচরা করে আনতেন আমাদের মাঝে বিলি করার জন্য। আমাদের ছোটদের প্রত্যেককে ৫ থেকে ১০ টাকা করে দেয়া হত! প্রিয় ব্লগারগণ, আপনাদের যাদের বয়স কম তারা হয়ত টাকার অংক দেখে হাসছেন। কিন্তু এটা একদম সত্যি। মনে রাখবেন, আমি আজ থেকে ২০/২২ বছর আগের কথা বলছি। তখন ৫ বা ১০ টাকা একদম খারাপ ছিল না। আসলে আমার প্রচন্ড অনেস্ট বাবার পক্ষে এর বেশী দেয়া আদৌ সম্ভব ছিল না। তাছাড়া আমাদের পরিবারে সদস্য সংখ্য বেশী। তাই এটা নিয়েই সন্তুস্ট থাকতাম। আমরা একটু দমে যেতাম (তবে তা কোনদিন হতাশায় পরিণত হয়নি) যখন দেখতাম আমার ফুফাত ভাইয়েরা তখনি ঈদের সেলামি পেত ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা। যাইহোক অনেককেই দেখতাম তাদের চাচা, মামা, দুলাভাই বা অন্য কোন আত্বীয়র কাছ থেকে ঈদ সেলামি পেত। কেউ স্বইচ্ছায় দিলে নিতাম কিন্তু ‘পায়ে সালাম করে টাকা নেয়া’ আমাদের খুব একটা টানত না। আব্বা-মা খুব Strong Principle এর মানুষ ছিলেন। তারা আমাদের ‘নিজের যেটুকু আছে তাই নিয়ে খুশি থাকতে’ শিখিয়েছিলেন।



এখন বখশিশ পাওয়ার দিন শেষ। এবার দেয়ার পালা...



ঈদের দিন মোলাকাতঃ

খুব মজার একটা ব্যাপার। পরিচিত অপরিচিত সবার সাথে মোলাকাত করতাম। খুব শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করত। মনের মধ্যে অনাবিল আনন্দ অনুভব করতাম। এটা এখনো করা হয়।



ঈদের খাওয়া-দাওয়াঃ

ঈদের আনন্দ বহুগুণে বেড়ে যেত মা এবং আপারা যখন মজার মজার রান্নার আয়োজন করতেন। সেমাই, পায়েস, খিচুরি, মাংশ, পোলাও। আহা! জিভে জল এসে গেল! যখন মনে হত তখনই খেতাম। ‘আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে’। নিজের বাড়ি পেট পুরে ত খেতামই। পরে বন্ধু-বান্ধবদের বাড়ি গিয়েও উদরপূর্তি করা হত। তাদেরদেও দাওয়াত করতাম। সত্যিই সে ছিল এক মজার অভিজ্ঞতা।



দাওয়াত দিয়ে এখনো খাওয়াই তবে গিয়ে খাওয়া হয় খুব কমই।



মাইকে ডাকাডাকিঃ

রোযার সময়ের একটা কমন বিষয় হল স্থানীয় মসজিদ থেকে সেহরি খেতে উঠার জন্য সবাইকে ডাকাডাকি করা। রাত ২ টা থেকে ডাকাডাকি শুরু হয়। পাশাপাশি চলে তেলওয়াত ও হামদ-নাত পরিবেশনা। ঘুমিয়ে থাকার কোন উপায় নেই। কোন কোন জায়গাতে আবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেকে তোলা হয়। যখন হলে থাকতাম তখন দেখতাম মেসের বা ক্যান্টিনের ছেলেরা প্লেটে বাড়ি দিয়ে সবাই কে জাগানোর চেস্টা করছে! খুবই পীড়াদায়ক অভিজ্ঞতা!!! অনেকে অবশ্য কিছুটা বিরক্ত হন। তবে আমার মনে হয় একটা মুসলিম প্রধান দেশে এটা অমূলক নয়। বরং রোযার মাসের একটা অভ্যাস এটা। যদি কোন মসজিদ থেকে মাইকে ডাকাডাকি না হয় তবে বেশীরভাগ মানুষের খারাপই লাগবে।



ঈদের নামাজ পড়তে যেতাম একপথে আর আসতাম অন্যপথেঃ

এটা সুন্নাতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)। মহানবী (সাঃ) পথ পরিবর্তন করতেন কোন অভাগা মানুষের খোঁজে, যাদের জন্য ঈদ কোন আনন্দ বয়ে আনত না। পথে এরকম কাউকে পেলে তিনি সাথে করে বাড়ি নিয়ে আসতেন। পাশে বসিয়ে পরম মমতায় তিনি তাকে খাওয়াতেন। পালকপুত্র হযরত যায়েদ (রাঃ) কে তিনি এভাবেই পেয়েছিলেন। তবে আমি আজ অবধি কোন হতভাগ্য ব্যক্তিকে বাড়িতে নিয়ে আসিনি। হয়ত কিছু দান করেই দায়িত্ব শেষ করেছি। আমরা আসলে নামে মুসলমান।



এটা এখনো করা হয়।



এমনি আরো অনেক আনন্দের ব্যাপার ঘটেছে ঈদ বা রোযার সময়ে। স্মৃতিগুলো মনের মধ্যে মাঝে মাঝেই আকুলি-বিকুলি করে। ফিরে পেতে ইচ্ছে করে সেসব দিনরাত্রি। কিন্তু কখনো আর ফিরে পাব কী???/:)/:)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.