নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আম জনতার একজন।

ইছামতির তী্রে

I have a dream.

ইছামতির তী্রে › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশে বহু যুগ ধরে প্রচলিত ঐতিহ্যবাহী বাহন রিকশার ভবিষ্যত কি হুমকির মুখে????

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:০২

আমার বাসা থেকে কর্মস্থল একেবারে কাছে, ইংরেজীতে যাকে আমরা বলি Walking Distance মানে হাঁটা দুরত্ব। এজন্য প্রতিদিন আমি হেঁটেই অফিসে আসি। আমার অফিস শুরু হয় সকাল নয়টায়। ঘড়ির কাঁটা ৮ টা ৫০ ছুই ছুই হলেও ‘লেট হয়ে গেল রে...’ বলে আমার মাথায় বাজ পরে না। কারণ বাসা থেকে অফিসে আসতে সাকূল্যে মাত্র ৫-৬ মিনিট লাগে। আমি যে রাস্তা দিয়ে আসি সেই রাস্তা দিয়ে অহর্নিশ প্রাইভেটকার, বিভিন্ন অফিসের গাড়ি, রিকশা ইত্যাদি যাতায়াত করে। তো সেদিনও হেলেদুলে দুলকি চালে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছি। পেছনে থেকে ‘পিপ পিপ’ আওয়াজ শুনে ঘাড় না ঘুরিয়েই সাবধানতাবশতঃ ফুটপাতের দিকে আরো সরে গেলাম যাতে কোন দুর্ঘটনায় পরতে না হয়। যদিও গলির পথের রাস্তায় ফুটপাত বিশেষ থাকে না। পেছন থেকে একটা যানবাহন এসে সাঁই করে আমাকে অবাক করে সামনের দিকে ধেয়ে চলল। আমি ‘পিপ পিপ’ শুনে এটাকে প্রাইভেটকার বলে মনে করেছিলাম। কিন্তু অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখলাম এটা একটা রিকশা!:-* রিকশার এমন হর্ণ ও সাংঘাতিক গতি দেখে আমার চক্ষু চড়কগাছ। আমি বেশ কিছুক্ষণ রিকশার বেশধারী এক ভয়ংকর যান্ত্রিকবাহনের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম, ‘ক্যামনে কি?’X(X((



আমরা এতদিন যা জেনেছি তাহলো, রিকশা বা রিক্সা একপ্রকার মানবচালিত মনুষ্যবাহী ত্রিচক্রযান, যা বাংলাদেশের বহু যুগ ধরে প্রচলিত একটি ঐহিহ্যবাহী বাহন। বাংলাদেশে সাধারণ থেকে অসাধারণ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে রিকশা একটি বহুল ব্যবহৃত, অন্যতম প্রিয় যানবাহন। এটাকে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের ‘প্রাইভেটকার’ বললেও অতুক্তি হবে না। এদেশের আনাচে কানাচে রয়েছে লাখো রিকশা। ঢাকা বিশ্বের রিকশা রাজধানী নামেও পরিচিত বলা যায়। সকল বিপদে হাতের কাছে যা পাওয়া যায় তাই হলো রিকশা। রিকশা খুব নিরাপদ একটি যান। এজন্য সবাই এটাকে ব্যবহার করে। মাঝে আমরা এটাও পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারি যে বিদেশী অতিথিরা আমাদের এই ঐহিহ্যবাহী বাহনকে বিশেষ পছন্দ করে। আর গত ২০১১ বিশ্বকাপ ক্রিকেট রিকশা তো রীতিমত ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। রিকশার জনপ্রিয়তা কিংবা ঐতিহ্য তুলে ধরা এই বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে, যেখানে বাংলাদেশের রিকশায় করে মাঠে উপস্থিত হন অংশগ্রহণকারী দলগুলোর দলপতিরা।



মনুষ্যবাহী ত্রিচক্রযানের যান্ত্রিক হয়ে উঠাঃ



সময়ের স্রোতে অনেক কিছুরই পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। বাংলার ঐহিহ্যবাহী বাহন রিকশাও এর বাইরে থাকতে পারেনি। সাম্প্রতিককালে(২০১১) রিকশায় বৈদ্যুতিক মোটর সংযোজন করার মাধ্যমে একে যন্ত্রচালিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং ঢাকার বিভিন্ন স্থানে এজাতীয় রিকশার প্রচলন দেখা যায়। প্রথমদিকে এ ধরণের রিকশার পরিমাণ কম ছিল। কিন্তু ইদানিং খুবই চোখে পড়ছে। আমি যে রিকশা দেখে চমকে উঠেছিলাম এটা সেই ‘যন্রচালিত রিকশা’। এই রিকশাকে জাস্ট একটি মটর লাগিয়েই যান্ত্রিক বানানো হয়েছে। সাধারণ রিকশার মতই গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আছে ব্রেক, যেটি একটি তারের সাহায্যে সংযোগ স্থাপন করেছে মোটরের সাথে। আমার জানামতে এটি ৩০-৪০ কিঃমিঃ বেগে চলতে পারে। এরকম একটা রিকশা তৈরী করতে ৬০-৭০ হাজার টাকার মত লাগে।



এর হয়ত সামান্য কিছু সুবিধা আছে, তাহলো এর গতি সাধারণ মনুষ্যচালিত রিকশার চেয়ে কিছুটা বেশী। কম সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছানো যায়। আর এটা মোটরচালিত বিধায় ড্রাইভার (রিকশাওয়ালা বলে ওদের অপমান করবেন না) :) পরিশ্রান্ত হয় না।



এটা কি ঝুঁকিমুক্তঃ



আমি বিজ্ঞানের ছাত্র না। তাই আমার পক্ষে এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলা বেশ কঠিন। তবে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে যে কমনসেন্স সৃষ্টিকর্তা আমাকে দিয়েছেন সেই বলে আমি বলতে পারি এটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ একটি ‘যান্ত্রিক যানবাহন’। কেন? চলুন কয়েকটি ব্যাপার নিয়ে আমরা আলোচনা করি।



ক) যন্ত্রচালিত যেকোন যানবাহনের চাকা পরিমাণ মত মোটা বা প্রশস্ত হবে। যেমন দূরপাল্লার বড় যাত্রীবাহী গাড়ি, ট্রাক, প্রাইভেটকারের সিএনজি অটোরিকশা, এমনকি মোটর সাইকেলের চাকাগুলোর দিকে লক্ষ্য করুন। গতির মাত্রা, গাড়ির আকার বা ওজন অনুসারে এগুলো ছোট বা বড় করে চাকা তৈরী করা হয়েছে। তাই গতি নিয়ন্ত্রণে এখানে ঝুঁকি অনেক কম সাথে সাথে ভারসাম্য রক্ষায় এগুলো কার্যকর।



কিন্তু এই অদ্ভুত রিকশার(?) দিকে তাকান। এর চাকা অন্যান্য সাধারণ রিকশার মতই। খুব চিকন বা সংকীর্ণ চাকার গাড়িতে মটর বসিয়ে গতিময় করে এটাকে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ করা হয়েছে। একবার ভাবুন এবোড়-থেবোড় রাস্তায় এই হাওয়াই রিকশা ৩০ কিঃ মিঃ বেগে চলছে। আর পেছনে যাত্রী ভয়ে কম্পমান।



খ) এই রিকশার চাকার উচ্চতা অনেক বেশী। ফলে গতি ৩০ কিঃমিঃ এর কাছাকাছি হলে যেকোন সময় বিপদ ঘটতে পারে।

গ) এটার ওজন সাধারণ যান্ত্রিক যানের চেয়ে অনেক কম। গতি বাড়ার সাথে সাথে যেটি হয়ে উঠতে পারে আপনার আমার বিপদের কারণ।

গ) এর ব্রেকের দিকে একবার খেয়াল করুন। এমন ব্রেক দিয়ে গতি নিয়ন্ত্রণ কিভাবে সম্ভব তাই ভাবতে পারি না।

ঘ) যান্ত্রিক যান চলাচলের জন্য প্রশিক্ষণ নিতে হয়। আমি জানি না এগুলোর লাইসেন্স নেয়ার সময় প্রশিক্ষণ জাতীয় কিছু লাগে কিনা।



ব্যক্তিগতভাবে আমি এই রিকশায় চড়লে ড্রাইভারকে আমার প্রথম নির্দেশনা হলো, ‘আস্তে চালাইয়েন ভাই’। গত কয়েকদিন আগে আমি আমার এক বয়স্ক এক আত্বীয়াকে এই রিকশায় চড়িয়ে ভীষণ বিপদে পরেছিলাম। পরে ড্রাইভারকে আস্তে চালানোর কথা বলে রক্ষা পেয়েছি। এমন অনেক ঘটনাই আছে। আমি যাদের সাথে কথা বলেছি তাদের বেশিরভাগ মানুষ একে সবাই ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন বলে মত প্রকাশ করেছেন।



আমাদের দেশে যেকোন কিছু করার আগে তেমন একটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় বলে আমার মনে হয় না। ভাবখানা এমন ‘কয়টা মরুক আগে, তারপরে দেখা যাইবনে’ /:) বলে এটা অনুমতি দেয়া হয়। এখানেও বোধহয় এই মতবাদই কাজ করেছে।



আমার সুপারিশঃ



ধরেই নেয়া যায় ঢাকার রাস্তায় যখন এটা নেমে গেছে তখন আর থামায় কে? আর একটা কথা হলো এটা মোটামুটি জনপ্রিয়তা পেয়ে গেছে! তাই উঠিয়ে দেয়ার চিন্তা না করে একে আরো সুন্দর করাই হতে পারে উত্তম পন্থা। আমার সুপারিশ হলোঃ



• বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী নতুন পরিকল্পনায় নতুনভাবে এটিকে রাস্তায় নামানো হোক।

• আকার, আয়তন আর একটু বড়ো করে যাতে করে তিনজন লোক বসতে পারে এমন করে তৈরী করা হোক।

• গতি বেশী বিধায় একে লাইসেন্স দেয়ার সময় এর চলাচলের পরিধি বাড়ানো হোক।



সবাইকে ধন্যবাদ।



মন্তব্য ১২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:১৯

হেডস্যার বলেছেন:
+ দিলাম।
অবশেষে এটা নিয়ে কেউ একটা পোষ্ট দিল। :)

এটার অনুমোদন কোন ভাবেই দেয়া উচিত না। এগুলা নিষিদ্ধ করে অবিলম্বে আটক করে ডাম্পিং করা হোক।

এটা যেহেতু গায়ের শক্তি দিয়ে টানা হয় না সুতরাং প্রাইভেট কারের মত এটা রাস্তায় নামাতে ও লাইসেন্সের ব্যবস্থা করা হোক।
প্রাইভেট কার বা অন্যান্য হালকা যানের জন্য যে সকল নিয়ম কানুন প্রযোজ্য হয় এটার ক্ষেত্রে ও ঠিক একই নিয়ম করা হোক।

হেডলাইট, হর্ণ, ইন্ডিকেটর, হেলমেট পরিধান বাধ্যতামূলক করা, স্পীড সীমিত করে দেয়া, চালকের লাইসেন্স সব কিছু কঠোর ভাবে দেখা হোক।



তবে সবার আগে উচিত এটাকে কোনভাবেই অনুমোদন না দিয়েঅবৈধ ঘোষনা করা।

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৬

ইছামতির তী্রে বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ।
আসলে আমাদের দেশে নিয়ম ছাড়াই সবকিছু চলে।
কে করবে এগুলো?

২| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:২৮

মদন বলেছেন: আমি একদিন চড়েছি এবং মোটেও নিরাপদ মনে হয়নি :(

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৭

ইছামতির তী্রে বলেছেন: ধন্যবাদ।
আমিও চড়েছি। সত্যি খুব বিপজ্জনক।

৩| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৪১

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: ভাই ব্যাটারী চালিত এই রিক্সা খুবই ভয়ঙ্কর। আমি নিজেই একদিন এই রিক্সায় উঠে ডাইরেক্ট গাড়ীর ঢুকে যাচ্ছিলাম। আল্লাহর অশেষ রহমতে বেঁচে গিয়াছি।

এই মৃত্যুফাদের যে গতি সেই তুলনায় এর ব্রেক একেবারেই নগণ্য।


তাই সকলেরই উচিৎ এই যান বন্ধ করার জন্য সার্বিক ব্যবস্থা করা।

ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৯

ইছামতির তী্রে বলেছেন: আপনার মত করেই বলি, 'সকলেরই উচিৎ এই যান বন্ধ করার জন্য সার্বিক ব্যবস্থা করা'।

আপনিও ভাল থাকবেন। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৪| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:০৭

শফিক১৯৪৮ বলেছেন: উপরে একজন চমৎকার বলেছেন এগুলো চালাতে লাইসেন্সের ব্যাবস্হা করা হোক ইত্যাদি। এখন প্রশ্ন হলো যে দেশে মন্ত্রীর ইচ্ছায় গরু ছাগল চিনলেই ৩০ টনী ট্রাকের বা সত্তর জন মানুষ নিয়ে চলা বাসচালকদের পানির মত লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে আর সেই লাইসেন্স নিয়ে গাড়ী চালাচ্ছে ১০- ১২ লাখ চালক!! সেখানে রিক্সা চালাতে লাইসেন্সটা কে কিভাবে দিবে! বিশ্বাস করুন বিআরটিএতে জিজ্ঞেস করেছিলুম, সহকারী পরিচালক সাহেব জানেনইনা কি থেকে কি করতে হবে, ঐ রিক্সা খায় না মাথায় দেয়!! আর এগুলো বন্ধ করা এদেশের পুলিশ তথা সরকারের দ্বারা শ্রেফ অসম্ভব!!

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:০১

ইছামতির তী্রে বলেছেন: আপনি ত ভাই, জায়গা মত হাত দিয়েছেন। আমাদের দেশের সিস্টেম বড়ই অদ্ভুত। কে কি করছে, কি বলছে, কি করছে তার কোন জবাবদিহিতা নেই। মগের মুল্লুক একটা।
তবু বলছি, সবাই যদি একদিন জেগে উঠে তবে দুস্টুদের পালানোর পথ থাকবে না।

৫| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:২৯

বাংলার আকাশ বলেছেন: জনাব হেডস্যার, আপনি + দিলেন,অবশেষে এটা নিয়ে কেউ একটা পোষ্ট দিল ! আবার একটা প্যাচাল শুরু হইলো , সবাই সবার দু:খ , কষ্ট , অভিগ্জতা শ্যায়ার করতে শুরু করলো !! এভাবে চলছে , এভাবেই চলবে । ডাম্পিং আর হবে না !

সত্যিকরা অর্থে ডাম্পিং করতে হলে রাস্তায় নামতে হবে , এর কোন বিকল্প নাই। আসেন আমারা সবাই মিলে ব্যাটারী রিক্সা সহ
অসত , ব্যবসায়ি রাজনিতীবিদ দের দুর সাগরে ডাম্পিং করে আসি । পারবেন ?

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:০৪

ইছামতির তী্রে বলেছেন: আমাদের দেশে কবে সেই ছেলে হবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।

আমরা সবাই বলেই খালাস। কাজের বেলায় লবডঙ্কা। তবু আমি বিশ্বাস করি, সামু যদি কোন ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয় তবে অনেক কিছুই হয়। এর প্রমাণ আমরা আগেও পেয়েছি।
চলুন সবাই সোচ্চার হই।

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

৬| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৩

হেডস্যার বলেছেন:
@বাংলার আকাশ :| :|

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:০৫

ইছামতির তী্রে বলেছেন: :| :|

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.