নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আম জনতার একজন।

ইছামতির তী্রে

I have a dream.

ইছামতির তী্রে › বিস্তারিত পোস্টঃ

মহানবীর (সাঃ) মহাজীবনের স্বরূপ সন্ধানে অন্তহীন যাত্রা… (২য় পর্ব)।

২০ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:১১

১ পর্ব

আজকে এর ২য় পর্ব দেয়া হলো



একটি অবিস্মরণীয় অনুভূতিঃ

মহানবী (সাঃ) এর জীবন চরিত পড়তে গিয়ে মনের গহীন কোণে কত যে বিচিত্র অনুভুতির সৃষ্টি হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। কোনটা আনন্দের, কোনটা বিষাদের কোনটা বা মিশ্র। নবীজীর (সাঃ) জন্ম লগ্ন থেকে যে ভালোলাগার শুরু নবুয়ত প্রাপ্তির পর তা বিষাদে পরিণত হয়। দুঃখে, কস্টে, ব্যথা-বেদনায় মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। তাঁর স্বদেশী, আসলে বলতে হবে নিজের রক্তের আত্বীয়রাই তাঁকে যে পরিমাণ কস্ট দিয়েছিল তা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। নানা প্রকার শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, পারিবারিক আক্রমণে তাঁর প্রতিটি ক্ষণ তারা বিষিয়ে তোলে। হাঁটতে, চলতে, ফিরতে-সর্বক্ষণ তারা তাঁর পেছনে মৌমাছির মত লেগে থাকত। কিন্তু সেই চরম দুঃসময়েও তিনি নিজের পথ থেকে একচুল পরিমাণ সরে যাননি। তাঁর এই ইস্পাত কঠিন চারিত্রিক দৃঢ়তার প্রতি শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায় মাথা বার বার নুইয়ে আসত। হাজার অত্যাচার, কস্টের পরে যখন একজন মাত্র পৌত্তলিক মহানবীকে (সাঃ) বিশ্বাস করত তখন তিনি যেভাবে আনন্দ প্রকাশ করতেন তার বর্ণনা করা দুনিয়ার কোন লেখকের পক্ষে সম্ভব নয়।



যাইহোক, তাঁর মহান জীবনী পড়তে গিয়ে আমার সবচেয়ে কস্ট হয়েছে তিনি যখন ইন্তেকাল করেন। যতবার, যত বইতেই আমি এই ঘটনা পড়েছি ততবার চোখের পানিতে ঝাপসা হয়ে গেছে সব। ঐ হৃদয়বিদারক সময়ে তামাম সাহাবীকুলও গভীর বেদনায় একেবারে দিশেহারা ও হতবিহবল হয়ে পরেছিলেন। হযরত ওমর (রাঃ) এর ঘটনা এক্ষেত্রে স্মরণযোগ্য। তবে আমি আজ আপনাদের শেয়ার করবো সদ্যবিয়োগ-বিধুরা মা আয়েশা (রাঃ) মহানবীর (সাঃ) পরলোক গমনের পর যে শোকগাথা আবৃত্তি করেছিলেন তা নিয়ে। মাওলানা আকরম খাঁ রচিত ‘মোস্তফা চরিত’ বই থেকে হুবহু তুলে দিলাম। এ থেকে মহানবীর স্বরুপ কিছুটা হলে আঁচ করা যাবে।



‘হায়, সেই ধর্মের রক্ষক, যিনি মানবের কল্যাণ চিন্তায় পূর্ণ এক রাত্রিও বিছানায় শুইতে পারেন নাই-তিনি চলিয়া গিয়াছেন। মানবের জন্য যিনি সম্পদ ত্যাগ করিয়া দৈন্যকে অবলম্বন করিয়াছিলেন-তিনি চলিয়া গিয়াছেন! হায়, সেই প্রিয় নবী, যিনি ধর্মক্ষেত্রে শত্রুর প্রত্যেক অসঙ্গত আঘাতকেই ধৈর্যের সহিত সহ্য করিয়াছিলেন-তিনি চলিয়া গিয়াছেন!”

“কখনও যিনি কোন অন্যায় বা অধর্মের সংস্পর্শে গমন করেন নাই, সহস্র অত্যাচার-অনাচারেও যাঁহার পবিত্র হৃদয়ের কোন পার্শ্বে একটু মলিনতা স্পর্শ করিতে পারে নাই, কোন অভাবগ্রস্ত দীন-দুঃখীকে যিনি জীবনে কখনও ‘না’ বলিতে পারেন নাই-তিনি আমাদিগের নিকট হইতে বিদায় গ্রহণ করিয়াছেন!”



“হায়! সেই রহমতের নবী, মানবের মঙ্গলার্থে সত্য প্রচারের অপরাধে প্রস্তরের আঘাতে যাঁহার দাঁতগুলি ভাঙ্গিয়া দেওয়া হইয়াছিল; যাঁহার সুন্দর, উজ্জ্বল ও প্রশস্ত ললাটকে রক্তরঞ্জিত করিয়া দেওয়া হইয়াছিল; এবং সেই অবস্থাতেও যিনি তাহাদিগকে আশীর্বাদ করিতে কুন্ঠিত হন নাই-সেই দয়ার সাগর আজ দুনিয়া ছাড়িয়া চলিয়া গিয়াছেন! সেই ধর্মের, ত্যাগের ও প্রেমের সাক্ষাত প্রতিমূর্তি-যিনি পরস্পর দুই সন্ধ্যা যবের রুটিও পেট পুরিয়া খাইতে পারেন না-তিনি চলিয়া গিয়াছেন!”



৫. আসহাবে রাসুলের জীবন কথাঃ

“আসহাবে রাসুলের জীবন কথা” বইটি লিখেছেন মুহাম্মদ আব্দুল মা’বুদ, আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়। প্রকাশকঃ বাংলাদেশ ইসলামী সেন্টার। ৬ খন্ডের বইতে মোট ১৯৮ জন সম্মানিত সাহাবীদের সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরা হয়েছে।



ইসলামী পরিভাষায় সাহাবা শব্দটি দ্বারা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর মহান সঙ্গী-সাথীদের বুঝায়। সাহাবীদের পরস্পরের মধ্যে মর্যাদার স্তর থাকতে পারে, কিন্ত পরবর্তী যুগের কোন মুসলমানই, তা তিনি যত বড় জ্ঞানী, গুনী ও সাধক হোন না কেন কেউই একজন সাধারন সাহাবীর মর্যাদাও লাভ করতে পারেন না। এ ব্যাপারে কোরআন, সুন্নাহ ও ইজমা একমত।

সাহাবীদের সমাজ ছিল একটি আদর্শ মানব সমাজ। তাঁদের কর্মকান্ড মানব জাতির জন্য উত্কৃষ্টতম নমুনা স্বরুপ। জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে তাঁদের সততা, বিশ্বস্ততা, ভদ্রতা, আত্বত্যাগ, ও সদাচারণ তুলনাবিহীন। তাঁরা ছিলেন একে অপরের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সহানুভুতিশীল। গরীব ও মুহতাজ শ্রেণির প্রয়োজন ও চাহিদাকে তাঁরা সবস্ময় অগ্রাধিকার দিতেন। বীরত্ব ও সাহসিকতায় তাঁরা ছিলেন নজীরবিহীন। রাসুলুল্লাহ সাঃ এর অনুসরণ ছিল তাঁদের জীবনের মূল লক্ষ্য। তাঁদের জীবন-মরণ উভয়ই ছিল ইসলামের জন্য।



হযরত রাসুলে করীম সাঃ যে সর্বোত্তম সমাজের ভিত্তি রেখেছিলেন, সাহাবায়ে কেরাম হচ্ছেন সেই সমাজের প্রথম নমুনা। রাসুলে পাকের (সাঃ) সুহবতে বরকতে তাঁরা মহান মানবতার বাস্তব রুপ ধারণ করেছিলেন। রাসুল সাঃ এর শিক্ষার পরশে জাহেলী যুগের সেই পথভ্রস্ট ও অন্ধকারের কিছু মানুষ কিভাবে বিশ্ব সভ্যতার সবচেয়ে আলোকিত মানুষ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তা সত্যি এক মিরাকল।



যাইহোক, তাঁদের মর্যাদা ও সর্বোত্তম চারিত্রিক বৈশিস্টের কথা বলে শেষ করা যাবে না। তার চেয়ে চলুন কয়েকটি উদাহরণ দেই।



ক) মহানবী (সাঃ) এর সাথে তার মধ্যে যতখানি গভীর ও শক্ত সম্পর্ক ছিল তা খুব কম লোকের মধ্যেই ছিল। কিন্তু মহানবী (সাঃ) এর নবুয়্যত প্রাপ্তির পর তিনিই হয়ে গেলেন রাসুল তথা ইসলামের ভয়ানক শত্রু। এই শত্রুতা বজায় ছিল প্রায় ২০ বছর। মক্কা বিজয়ের পরে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণের পর তাঁর অতীত জাহিলী জীবনের কাজ ও আচরণ একেবারে পরিবর্তিত হয়ে গেল। এরপর থেকে অতীত আচরণের কথা মনে করে লজ্জা ও অনুশোচনায় রাসুলুল্লাহার (সাঃ) চেহারা মোবারকের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে সাহস পাননি তিনি। পরবর্তী জীবনে রাত-দিন তিনি ইবাদতে মশগুল থাকতেন। নিজের সকল সুখ-সম্পদ থেকে নিজেকে দূরে রাখেন। একদিন তিনি মসজিদে ঢুকছেন। রাসুল (সা)তাঁকে দেখিয়ে হযরত আয়িশাকে (রা) ডেকে বললেনঃ আয়িশা, এ লোকটি কে, তুমি চেন? আয়িশা বললেনঃ না, ইয়া রাসুলুল্লাহ। রাসুল (সা) বললেনঃ এ হচ্ছে আমার চাচাতো ভাই (…………) । দেখ, সে সবার আগে মসজিদে ঢোকে, আর সবার পরে মসজিদ থেকে বের হয়। তার জুতোর ফিতে থেকে তার দৃষ্টি কখনও অন্যদিকে যায় না।



তার জীবন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। তিনি নিজ হাতে একটি কবর খোঁড়েন। এর তিনদিন পর তিনি এই দুনিয়া থেকে চির বিদায় নেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি স্ত্রী, সন্তান ও পরিবারের লোকদের বলেনঃ ‘তোমরা আমার জন্য কেঁদোনা। আল্লাহর কসম, ইসলাম গ্রহণের পর আমি কোন পাপ কাজ করিনি’। এতটুকু বলার পর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।



এই মানুষটি কে জানেন? তিনি হলেন আবু সুফিয়ান ইবন হারেস (রাঃ) ।



খ) তাঁর পিতা ছিলেন রাসুল (সাঃ) এর মতে সেই যুগের ফেরাউন। ছেলেও কম যান না। তিনিও ছিলেন ইসালমের কট্টর দুশমন। তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্যই ছিল নবীজীর (সাঃ) তথা ইসালামের ধ্বংস সাধন করা। মক্কা বিজয়ের সময়ে তিনিই একমাত্র মানুষ ছিলেন যিনি মুসলিম বাহিনীকে বাঁধা দেয়ার চেস্টা করেছিলেন। এমনকি এতে কয়েকজন সাহাবী শহীদও হয়ে যান। মক্কা বিজয়ের পরে নবীজী (সাঃ) যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে হত্যার নির্দেশ দেন তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম। এহেন জানী দুশমন ছিলেন এই আমাদের আলোচনার দ্বিতীয় ব্যক্তি। যদিও পরে রাহমাতুল্লিল আলামীন (সাঃ) তাকে মাফ করে দেন।



ইয়ারমুকের ময়দানে রোমান বাহিনীর সাথে তুমুল যুদ্ধ চলছে। এই সময়ে একজন মুসলিম মুজাহিদ প্রবল বিক্রমে রোমানদের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে উদ্যত হলেন। মহাবীর খালিদ (রাঃ) গোটা বাহিনীর ক্ষতি হতে পারে ভেবে তাকে এ কাজ করতে বারণ করলেন। কিন্তু তিনি কোন পরোয়া করলেন না। বরং মুসলিম মুজাহিদদের কাছে আবেদন জানালেন, ‘মৃত্যুর ওপর বাইয়াত করতে চায় কে?’ তাঁর এ আহবানে অনেকেই সাড়া দিলেন। অবশেষে তুমুল লড়াই চালিয়ে ইয়ারমুকের ময়দানে বিশাল রোমান বাহিনীকে পরাস্ত করে বিরাট বিজয় ও সম্মান বয়ে আনলেন তাঁরা। এই ইয়ারমুকের ময়দানেই হারিস ইবন হিশাম, আয়য়াশ ইবন আবী রাবিয়া ও ‘কথিত মুজাহিদ’কে (রাঃ) ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেল। পিপাসায় কাতর হারিস ইবন হিশাম পানি চাইলেন। যখন তাঁকে পানি দেয়া হলো তখন ‘কথিত মুজাহিদ’ তাঁর দিকে তাকালেন। এ দেখে তিনি বললেন, ‘ঐ মুজাহিদ কে দাও’। পানির গ্লাসটি যখন ঐ মুজাহিদের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো তখন আয়য়াশ তাঁর দিকে তাকালেন।তা দেখে ঐ মুজাহিদ বললেন, ‘আয়য়াশকে দাও’। আয়য়াশের কাছে পানির গ্লাসটি নিয়ে যাওয়া হলে দেখা গেল, তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তারপর গ্লাসটি একে একে তার অপর দুই সাথীর কাছে গিয়ে দেখা গেল তাঁরাও তারই পথের পথিক হয়েছেন। আল্লাহতায়ালা তাঁদের সকলের প্রতি রাজী ও খুশি থাকুন। আমিন।



সুপরিচিত ও ঐতিহাসিক এই গল্পটির ঐ কথিত ‘মুসলিম মুজাহিদ’ কে শুনবেন? তিনিই ইকরিমা ইবন আবী জেহেল (রাঃ) ।



গ) মক্কার ধনী উমাইয়া। ধনে-মানে সব দিক দিয়েই কুরাইশদের একজন প্রধান ব্যক্তি সে। প্রাচুর্যের যেমন তাঁর শেষ নেই, ইসলাম বিদ্বেষেও তাঁর কোন জুড়ি নেই। শিশু ইসলামকে ধ্বংসের কোন চেষ্টারই সে কোন ত্রুটি করে না। এই ঘোরতর ইসলাম বৈরী উমাইয়ারই একজন ক্রীতদাস ইসলাম গ্রহণ করেছে। তা জানতে পারল উমাইয়া। জানতে পেরে ক্রোধে ফেটে পড়ল সে। অকথ্য নির্যাতন সে শুরু করল। প্রহারে জর্জরিত সঙ্গাহীন-প্রায় ক্রীতদাসকে সে নির্দেশ দেয়, "এখনও বলি, মুহাম্মদের ধর্ম ত্যাগ কর। নতুবা তোর রক্ষা নেই।"



কিন্তু তাঁর ক্রীতদাস বিশ্বাসে অটল। শত নির্যাতন করেও তাঁর বিশ্বাসে ফাটল ধরানো গেলনা। ক্রোধে উন্মাদ হয়ে পড়ল উমাইয়া। শাস্তির আরো কঠোরতর পথ অনুসরণ করল সে।



একদিনের ঘটনা। আরব মরুভুমির মধ্যাহ্ন। আগুনের মত রোদ নামছে আকাশ থেকে। মরুভূমির বালু যেন টগবগিয়ে ফুটছে। উমাইয়া তাঁর ক্রীতদাসকে নির্দয়ভাবে প্রহার করল। তারপর তাঁকে সূর্যমুখী করে শুইয়ে দেয়া হল। ভারি পাথর চাপিয়ে দেয়া হলো তার বুকে। ক্রীতদাসের মুখে কোন অনুনয়-বিনয় নেই। মনে নেই কোন শঙ্কা। চোখে অশ্রু নেই, মুখে আর্তনাদ নেই। ঊর্ধ্বমুখী তাঁর প্রসন্ন মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে আল্লাহর প্রশংসা ধনি- ‘আহাদ’, ‘আহাদ’।



এ দাসটিই ছিলেন বিশ্ব বিশ্রুত বিলাল। ইসলামের প্রথম মুয়াযযিন হযরত বিলাল (রাঃ) ।



কোন শিক্ষায়, কোন নৈতিকতা বলে একদা অন্ধকারের যাত্রীরা এমন নুরের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠলেন? কোন সে শক্তি যার বলে বলিয়ান হয়ে ক্ষুদ্র মানুষও অসীম শক্তির অধিকারী হয়ে উঠল? সে আর কিছু নয়। আমাদের প্রাণপ্রিয় রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর শিক্ষা।





দুনিয়ার তামাম শিক্ষা, নৈতিকতা সম্মিলিত হয়ে কি একজন বিলাল, একজন ইকরিমা বা একজন আবু সুফিয়ান (রাঃ) তৈরী করতে পারবে??? পারবে কি একজন আবু বকর, একজন ওমর (রাঃ) এর মত মানুষ তৈরী করতে??? আপনাদের সকলের কাছে এর জবাব প্রত্যাশা করি।



‘আসহাবে রাসুলের জীবনকথা’ বইটি পড়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর স্বরুপ অনেকাংশে অনুধাবন যায়। তবু আরো পড়া থেকে বিরত হলাম না। কারণ এসব এর শুরু ছিল মাত্র। কিন্তু এর স্পিরিট কতটুকু গভীর তা বোঝার জন্য আরো বই পড়া জরুরী।



৬. দ্য স্পিরিট অব ইসলামঃ

লেখকঃ স্যার সৈয়দ আমীর আলী; অনুবাদকঃ ড. রশীদুল আলম; প্রকাশকঃ আয়েশা কিতাব ঘর; বইটির পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৫২৪; দামঃ ২০০ টাকার মতো।



হযরত মুহম্মদ (সাঃ)-এর জীবনী এবং ইসলামের ক্রমবিকাশ ও আদর্শ নিয়ে স্যার সৈয়দ আমীর আলী’র জগদ্বিখ্যাত গ্রন্থ ‘The Spirit of Islam’. বিশ্বজনীন ধর্ম হিসেবে ইসলামের বিবর্তনের ইসিহাস, এর দ্রুত বিস্তৃতি এবং স্বল্পকালের মধ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষের মন-মগজ-বিবেকের উপর এর যে অসাধারণ প্রভাব পড়েছিল, লেখক এই গ্রন্থে সে-সব বিষয়ে আলোচনার প্রয়াস পেয়েছেন। মনুষ্যত্বের উন্নয়নে এর মহান ভূমিকার কথাও এই বইতে সুচারূভাবে তুলে ধরা হয়েছে।



‘দ্য স্পিরিট অব ইসলাম’ বইটি স্যার সৈয়দ আমীর আলী’র অমরকীর্তি এবং তাঁর দার্শনিক মনীষা ও অপূর্ব বিশ্লেষণ দক্ষতার পরিচায়ক। সুদীর্ঘ ভূমিকা সম্বলিত, পরিশিস্ট ও গ্রন্থপঞ্জীসহ দুটি পর্বে গ্রন্থখানি বিভক্ত। প্রথম পর্বে হযরত (সাঃ)-এর জীবন-কথা ও নবুয়তের কার্যকাল এবং দ্বিতীয় পর্বে ইসলামের বিভিন্ন দিকের বিশ্লেষণ সন্নিবেশিত হয়েছে।

প্রথম পর্বে ৯টি অধ্যায়ে হযরত (সাঃ)-এর জীবনী, কর্মধারা ও সাফল্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। হযরত (সাঃ)-এর মক্কী ও মাদানী জীবনের বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তিনি যে সত্য দ্রস্টার নিরপেক্ষতা, ঐতিহাসিক বিশ্লেষনণের বৈজ্ঞানিকতা ও মানবমনের গভীর ব্যবচ্ছেদের পারঙ্গমতা দেখিয়েছেন তার জুড়ি মেলা ভার। দ্বিতীয় পর্বে ইসলামের আদর্শগত, তার ধর্মীয় মর্মবাণী, পারলৌকিক জীবনবোধ, ইসলামের সমর বৈশিস্ট্য ইসলামে নারীর মর্যাদা দাসপ্রথার নির্মূলকরণে ইসলামের ভূমিকা, ইসলামে রাজনৈতিক মর্মবাণী, ইসলামের রাজনৈতিক বিভেদ, ইসলামের সাহিত্যিক ও বৈজ্ঞানিক মর্মবাণী, বুদ্ধিবাদী ও দার্শনিক মর্মবাণী এবং এবং ভাববাদী ও মরমীবাদী মর্মবাণী শীর্ষক আলোচনার মাধ্যমে লেখক ইসলামের প্রাণ-শক্তি সুস্পস্ট্রুপে ফুটিয়ে তুলেছেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি অন্যান্য ধর্ম ও দার্শনিক তত্ত্বের প্রাসঙ্গিক আলোচনারও অবতারণা করেছেন। এতে ইসলামের প্রাণধর্মের পরিচয়টা মানুষের চিন্তার আলোকে প্রতিফলিত হয়েছে।



এ গ্রন্থ রচনার পশ্চাতে বিশ্বমানবের কাছে ইসলামের সুস্পস্ট পরিচয় তুলে ধরা যেমন লেখকের উদ্দেশ্য ছিল, তেমনি মুসলমানদের পশ্চাদমুখিতার কারণ নিরুপণ করে আত্বসমীক্ষার পথে তাদের উদ্বুদ্ধ করাও তাঁর উদ্দেশ্য ছিল বলে মনে হয়।



তবে এই বইটিতে সম্মানিত লেখক সাহেব মহানবী সাঃ এর মিরাজের ঘটনাকে দৈহিক ভ্রমণ নয় বরং ধ্যানযোগে হয়েছে বলে মনে করেন। আর একটা ব্যাপার হলো, গোটা বইতে তিনি অতিমাত্রায় বিদেশী লেখক নির্ভর থেকেছেন। আসলে ঐ সময়ে বিদেশী বিশেষত ইংরেজ লেখকগণ ইসলাম তথা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে নিয়ে নানা মুখরোচক ও কাল্পনিক গল্প বলে তাঁর মহান চরিত্রে কালিমা লেপনের অপপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছিল। সৈয়দ আমীর আলী মূলত তাদের এই অপপ্রচারের জবাবেই এই বইটি লিখেছিলেন। যাইহোক, ‘The Spirit of Islam’ বইটি সত্যি অসাধারণ। এই বইটি পড়ে ইসলামের অন্তর্নিহিত শক্তি ও সৌন্দর্যের সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যায়।



তবু জানার তৃষ্ণা রয়েই গেল। তবে আবারো ভিন্নধারায় প্রবাহিত হল আমার চিন্তাধারা।সেই কথাই বলছি।



৭. হাদিস শরিফঃ

উপরের বইগুলো পড়ে আমরা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর অনেক কিছু জানা গেলেও তাঁর দৈনন্দিন জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন সম্পর্কে পুরোপুরি জানা সম্ভব নয়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সুন্নাত যথাযথভাবে জানা ও বোঝা এবং তদনুয়ায়ী আমল করা একজন প্রকৃত মুসলিমের অন্যতম বৈশিস্ট্য।আর সেগুলো জানার জন্য আপনাকে হাদিস পড়তে হবে। তাই আমিও সিদ্ধান্ত নিলাম হাদিস শরিফ পড়বার।

বাজারে অনেক হাদিসের বই আছে। তবে আমার প্রথম সিদ্ধান্ত হলো সিহাহ সিত্তাহ আগে পড়া। কাজেই সিহাহ সিত্তাহ সংগ্রহ করে ফেললাম। প্রথমেই সহীহ মুসলিম পড়া শুরু করলাম। এখানে ৮ খন্ডে মোট ৭৩৩৭টি হাদিস আছে। মাত্র ৬ খন্ডে আছি। যদিও পড়ছি আর ভুলছি। তবু কিছুটা স্মরণ তো থাকবেই। উল্লেখ্য সমগ্র সিহাহ সিত্তাহ-তে সর্বমোট হাদিস আছে ৩১২৮৬টি।



হযরত মুহাম্মদ (স.) ছিলেন মহান আল্লাহ তাআলার প্রেরিত সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ রাসূল। সর্বকালের সমগ্র মানুষের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ, শ্রেষ্ঠতম পথপ্রদর্শক। মহান আল্লাহ তাআলা রাসূল (স.) কে ভূষিত করেছিলেন ‘জাওয়ামিউল কালিম’ বা ‘স্বল্পতম শব্দে ব্যাপক অর্থ বোঝানোর ক্ষমতা’। হাদিস পড়ার পর থেকে এর ভুড়ি ভুড়ি প্রমাণ দেখে আমি বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গেলাম।



মহান রাব্বুল আলামীনের দেয়া ‘জাওয়ামিউল কালিম’ যে কত সার্থক তার প্রমাণ প্রতি হাদিসেই পাচ্ছি। এখানে আরো দেখতে পাচ্ছি সম্মানিত সাহাবীগণ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে কি পরিমাণ সম্মান ও শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন। সাহাবীগণ তাঁকে প্রশ্ন করতে সংকোচ বোধ করতেন। রাসুলুল্লাহ সাঃ যখন তাঁদের প্রশ্ন করতে বলতেন শুধু তখনোই তাঁরা কথা বলতেন। আবার কোন কিছু বলার আগে রাসুলুল্লাহ সাঃ যখন বলতেন, “তোমরা কি অমুক বিষয়ে জানো”? সাহাবীরা জানার পরেও অতীব শ্রদ্ধার সাথে বলতেন, “আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভালো/অধিক জানেন”। আবার কোন কোন জায়গায় রাসুলুল্লাহ সাঃ কসম করে বলতেন, “সেই মহান সত্তার কসম যাঁর মুহম্মদের প্রাণ”। কি অদ্ভুত সুন্দর কসম!! আর খুবই অল্প ভাষায়, অসাধারণ সুন্দর, প্রাঞ্জল ও সহজবোধ্য ভাষায় সম্মানিত সাহাবীদের যেকোন সমস্যার এত সুন্দর সমাধান দিতেন যে কি আর বলব। এগুলো না পড়লে অনুধাবন করা যাবে না।



হাদিসগুলো পড়ে প্রাণপ্রিয় রাসুলুল্লাহ সাঃ কে আরো ঘনিস্ট বলে মনে হচ্ছে। একেকটা হাদিস পড়ি আর মনে হয় “আরে! এটাই তো আমি খুঁজছি”। একই মানুষ। কিন্তু এক সময় তিনি সমাজপতি, এক সময় অমায়িক প্রতিবেশী, একসময় ধর্মগুরু, একসময় বিচারক, কোন সময় বা অর্থনীতিবিদ। মানে আপনি নির্দিস্ট কোন এক বিষয়ে মহানবী (সাঃ) কে বেঁধে ফেলতে পারবেন না। তিনি ছিলেন সকল বিষয়ের একমাত্র সমাধান। সম্মানিত সাহাবীগণ যখনই কোন সমস্যায় পতিত হতেন তাঁরা সাথে সাথেই তা তাঁর কাছে নিয়ে আসতেন। আর মহানবী (সাঃ) অনায়াসে অসাধারণ সব সমাধান বাতলে দিতেন। আহারে! কি সৌভাগ্য ঐ সব মহাসম্মানিত সাহাবীগণের যাঁরা মহানবী (সাঃ) সাহচর্য পেয়ে নিজেদের জীবনকে চিরধন্য করেছেন। ‘হে আল্লাহ! তোমার প্রিয় হাবিবের চেহারা মোবারক না দেখিয়ে কবরে নিও না’। আমিন।।



যাইহোক, আমরা সবাই জানি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কথা, কাজ বা সম্মতি তথা হাদিস হলো সমগ্র কোরআন শরিকের ব্যাখ্যাস্বরুপ। কোরআনের কঠিন কঠিন বিষয়গুলোকে খুব সহজবোধ্যভাবে তিনি তুলে ধরেছেন। আর ভবিষ্যতের জন্য এটা ইসলামিক আইনের অন্যতম উৎস করে রেখে গেছেন। এর একটা চমৎকার উদাহরণ দেয়া যেতে পারে।



রাসূল (সাঃ) যখন প্রখ্যাত সাহাবী মুয়াজ বিন জাবাল (রাঃ) কে ইয়ামানে পাঠাতে মনস্ত করলেন তখন মুয়াজ রাঃ কে জিজ্ঞেস করলেন-“যখন তোমার কাছে বিচারের ভার ন্যস্ত হবে তখন তুমি কিভাবে ফায়সাল করবে?”

তিনি বললেন-“আমি ফায়সালা করব কিতাবুল্লাহ দ্বারা”।

রাসূল সাঃ বললেন-“যদি কিতাবুল্লায় না পাও?”

তিনি বললেন-“তাহলে রাসূলুল্লাহ সাঃ এর সুন্নাত দ্বারা ফায়সালা করব”।

রাসূল সাঃ বললেন-“যদি রাসূলুল্লাহ এর সুন্নাতে না পাও?”

তখন তিনি বললেন-“তাহলে আমি ইজতিহাদ তথা উদ্ভাবন করার চেষ্টা করব”।

তখন রাসূল সাঃ তাঁর বুকে চাপড় মেরে বললেন-“যাবতীয় প্রশংসা ঐ আল্লাহর যিনি তাঁর রাসূলের প্রতিনিধিকে সেই তৌফিক দিয়েছেন যে ব্যাপারে তাঁর রাসূল সন্তুষ্ট”।

{সূনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৩৫৯৪, সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং-১৩২৭, সুনানে দারেমী, হাদিস নং-১৬৮, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২২০৬১}



প্রখ্যাত ঐতিহাসিক পি.কে হিট্ট্রি তার সুবিখ্যাত “The History of Arabs”- বইতে একে ‘ইসলামিক ম্যাগনা কার্টা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। মাত্র একটা হাদিসের মাধ্যমে ইজমা, কিয়াসের দুয়ার তিনি অবারিত করে দিয়েছেন। আসলে মহানবীর (সাঃ) এর এক একটি হাদিস একটি একটি সমস্যার সমাধান; আমাদের চলার পথের অবলম্বন।



হাদিস শরিফ পড়ে আমার জিজ্ঞাসার জবাব পরিপূর্ণভাবে পেয়ে যাচ্ছি। মনটা বেশ প্রফুল্ল। তবু একেবারে শেষ অপশনে না গিয়ে উপায় কি



আগামীকাল এর শেষ পর্ব দেব ইনশাল্লাহ।



উৎসর্গঃ

সদ্যপ্রয়াত আমার প্রাণপ্রিয় ‘মা’ কে।



কৃতজ্ঞতায়ঃ

এটি মূলতঃ একটি সংকলনমূলক পোস্ট। লেখাটি তৈরী করতে সংশ্লিস্ট বইগুলো ছাড়াও পি.কে হিট্ট্রি তার সুবিখ্যাত “The History of Arabs”, উইকিপিডিয়া, অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বেশ কয়েকটি লেখা, ‘কুরআনের আলো’ নামের একটি ওয়েবসাইট এর সাহায্য নিয়েছি। আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।



মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: সুন্দর। ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন।

এতো সেই অমূল জ।হানের পথ সন্ধানে যেখানে সকল জাহানের মুক্তি নিহিত।

কিন্তু কি অদ্ভুত.. আমরা মিলিয়মান জ্ঞানের জন্য কতইনা কঠোর সাধান করছি-- অথচ এ মুক্তা যেন দেখেও এড়িয়ে যাচ্ছি। আমাদের মুর্খতারই কি এক অকাট্য প্রমাণ রেখে!!!

আল্লাহ সকলকে সত্য সঠিক জ্ঞান আহরণের তৌফিক দিন।।

লাকাদ জ্বাআকুম রাসুলুম মিন আনফুসিকুম..... রাসুল সা: কে খুজে নিন
তিনিতো অপেক্ষায়- কে তার সন্ধানে রত... তাকে তিনি এগিয়ে দেন সাক্ষাতে.. আপন দয়া আর রহমতে।

২২ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:৩৭

ইছামতির তী্রে বলেছেন: অসাধারণ মন্তব্য!!

আপনি ২য় পর্বও পড়েছেন জেনে ভাল লাগলো। শেষ পর্বও দিযেছি। অনেক চেস্টা থাকা সত্ত্বেও লেখাটি আরো সুন্দর করতে পারলাম না। এ আমার লেখণির অক্ষমতা। আসলে এমন এক জীবন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে যাঁর প্রকৃত গুণগান একমাত্র মহান রাব্বুল আলামীনই করতে পারেন; যেটা তিনি করেছেন মহাগ্রন্থ আল- কোরআনে। আমার চেস্টা ছিল তাঁকে বোঝার। অনেকদিন এর পেছনে লেগে থাকার ফলে আমার মনে হয়েছেঃ নবীজীর (সাঃ) এর স্বরূপ জানতে যতটা না জ্ঞানের দরকার তার চেয়ে বেশী প্রয়োজন হৃদয়ের।

তাঁকে বুঝতে হৃদয়ের সকল বন্ধ জানালা খুলে দিতে হবে; ভালোবাসার সকল তন্ত্রী এক করতে হবে-তবেই যদি 'কিছুটা' জানা যায় তাঁরে!!!

লাকাদ জ্বাআকুম রাসুলুম মিন আনফুসিকুম..... রাসুল সা: কে খুজে নিন
তিনিতো অপেক্ষায়- কে তার সন্ধানে রত... তাকে তিনি এগিয়ে দেন সাক্ষাতে.. আপন দয়া আর রহমতে।

২| ০৭ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:১৫

মুদ্‌দাকির বলেছেন:

পড়ে ভালো লাগল!! সৈয়দ আমীর আলী মিরাজকে দৌহিক ভাবতেন না, এই ব্যাপারটা জানতাম না। মিরাজ নিয়ে আমার একটা লেখা আছে, এই অধমের লেখাটা পড়ার অনুরোধ থাকল। ( মুসলমানের পৌরাণিক মিরাজ )

০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:১৫

ইছামতির তী্রে বলেছেন: আপনার লেখাটি পড়ার ইচ্ছে প্রকাশ করলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.