নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আম জনতার একজন।

ইছামতির তী্রে

I have a dream.

ইছামতির তী্রে › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক মিনেটের একটি ভিডিও আমাকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে।

০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:২৭

৮ মে ২০১৪। এইদিনের সূর্যদয় কার জন্য কি সৌভাগ্য বয়ে এনেছিল তা বলতে পারব না। তবে আমাদের পরিবারের জন্য তা এক ভয়াবহ কস্টের এক দুঃসংবাদ নিয়ে হাজির হয়েছিল। সেটা হলো, আমাদের প্রাণপ্রিয় ‘মা’ আমাদেরকে চিরবিদায় জানিয়ে ‘কেয়ামতের যাত্রী’ হয়ে এক অন্তহীন পথের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিলেন। সেইদিন থেকেই আমার মনের মধ্যে ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’র আনাগোনা চলছে। কোন কাজে মন বসে না। মাঝে মাঝে মনের গহীণে আলোর রেখা দেখা দেয় কিন্তু পরক্ষণেই মনে পরে ‘আমরা তো মা’হারা’। আবার বিষাদে ছেয়ে যায় মন। ‘মা’-হীনা এই জীবন বড়ই দুঃসহ, বড়ই বেদনার, বড়ই কস্টের।



৪ আগস্ট ২০১৪। এদিনের সূর্যদয়ও প্রায় দুই শতাধিক মানুষের জীবনে ‘কাল’ হয়ে এসেছে। শোক সাগরে ভাসিয়েছে গোটা দেশের মানুষকে। সম্প্রতি প্রায় ১মিনিটের একটি ভিডিও ক্লিপ সবার দৃষ্টিগোচর হয়েছে আশা করা যায়। ভিডিওটির মূল প্রতিপাদ্য হলো, এমএল পিনাক-৬ নামের একটি লঞ্চের ডুবে যাওয়ার দৃশ্য। কোন এক হতভাগ্য ব্যক্তি তার মোবাইল ফোনে ভিডিওটি ধারণ করে রেখেছেন। তার কল্যাণে দেশের মানুষ স্তব্ধ হয়ে দেখছে সেই রোমহর্ষক ভিডিওটি। উল্লেখ্য, গত সোমবার সকাল ১১টার দিকে কাওড়াকান্দি থেকে মাওয়া যাওয়ার পথে দুই শতাধিক যাত্রী নিয়ে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে পদ্মায় এমএল পিনাক-৬ লঞ্চটি ডুবে যায়।









আমিও সাহস করে ভিডিওটি দেখলাম। দেখার পরে কৃত্রিম কিছু অভিব্যক্তি যেমন, ‘আহারে! ইস! ও আল্লাহ!’ ইত্যাদি প্রকাশ করেই বেশ স্বাভাবিকই থাকলাম। নিজের এই অমানুষিক, হীন আচরণে নিজেই স্তম্বিত হয়ে গেলাম! নিজেকে প্রবোধ দেয়ার চেস্টা করলাম, ‘আরে এটা কোন সিনেমার দৃশ্য নয়। বাস্তব ঘটনা। ‘নাহ, মন কিছুতেই টলল না। সে আগের মতই স্বাভাবিক আচরণ করতে থাকল। পরে স্তম্বিত হওয়াই বাদ দিয়ে দিলাম! ভাবলাম ২০০ শত মানুষ নিয়ে লঞ্চটি ডুবে যাচ্ছে। সো হোয়াট!! আমার তো কেউ নেই সেখানে! আমি ব্যক্তিগতভাবে খুবই সংবেদনশীল ও অতি সাধারণ একজন মানুষ। আমার নিজের প্রতিক্রিয়াই যেমন এমন অনুভূতিহীন পাথরের মত সেখানে আমি কি করে ঐসব লঞ্চ মালিক, লঞ্চের ডিজাইনার, কিংবা মন্ত্রি মহোদয়ের মত ‘মহামানব’দের দোষারোপ করি। আমি তা করলামও না।



রাতে খেয়ে দেয়ে ঘুমাতে গেলাম। আমার ঘুম বড্ড তাড়াতাড়িই চলে আসে। কিন্তু আজ আসছে না। কি হলো আজ? আচমকা সেই ভিডিও এসে বারে বারে হানা দিচ্ছে। ১মিনিটের সেই ভয়াবহ ভিডিওটি তার কাজ শুরু করে দিয়েছে। সে ‘অটো রিপ্লাই’ মোডে একেবারে ফিক্সড হয়ে আছে। কিছুতেই এটি বন্ধ হচ্ছে না। বারে বারে চোখে ভেসে আসছে এটি। কি দুঃসহ যন্ত্রণা! কি ভয়াবহ ব্যাপার! আমি দেখছি একটি লঞ্চ একপাশ কাত হয়ে আস্তে আস্তে ডুবে যাচ্ছে। ডুবে যাচ্ছে…ডুবে যাচ্ছে…ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে…। একসময় দুই শতাধিক যাত্রী সহকারে আস্ত একটি লঞ্চকে সর্বনাশা পদ্মা নদী গিলে ফেলল!! তারপর… নাহ আর দেখতে পারছি না। রাত ক্রমেই গভীর হতে লাগল। কিন্তু ভয়াবহ ভিডিও থেকে মন কিছুতেই সরাতে পারছি না। চোখ বুজলেই লঞ্চডুবির সেই দৃশ্য অটোমেটিক্যালি চালু হয়ে যাচ্ছে। যখন সেটি পুরো ডুবে গেল তখন যাত্রীদের ভাগ্যে কি ঘটেছিল সেটা ভাবতেই ভয়ে, আতঙ্কে চোখ খুলে ফেলছি। শ্বাস-প্রশ্বাস অস্বাভাবিক দ্রুতলয়ে চলছে। মনে হচ্ছিল ঐ দুইশয়ের মধ্যে আমিও একজন। নিজের মৃত্যু চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। হঠাৎ করে আমার প্রাণপ্রিয় মায়ের সেই ‘শেষ যন্ত্রণা’র কথা মনে পরে গেল। আমার প্রাণপ্রিয় ‘মা’ আমার বুকের মধ্যেই একটা শেষ ঝাঁকি দিয়ে চিরতরে নিথর, নিস্তব্দ হয়ে গেল। চোখে যেন হঠাৎ করে প্রমত্তা পদ্মার ফেনিল জলরাশির অস্তিত্ব টের পেলাম।



আচ্ছা লঞ্চটি যখন পুরোপুরি ডুবে গেল তখন কি ঘটেছিল ঐসব হতভাগ্য যাত্রীদের কপালে? লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার সাথে সাথে এক ভয়াবহ ‘তরল অন্ধকার’ তাদের সবাইকে গ্রাস করল। তারা প্রাণপণে চিত্কার করতে চাচ্ছে। কিন্তু মুখ হা করতেই স্রোতের মত পানি এসে তাদের কন্ঠকে চিরতরে রুদ্ধ করে দিয়েছিল। তারা দাপাদাপি করতে চেস্টা করছিল। কিন্তু প্রবল স্রোত এসে তাদের খরকুটোর মত অজানার উদ্দেশ্যে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। এরপরের ঘটনা অতি ‘সরল’। মাত্র মিনিট খানেকের মধ্যেই অনেকগুলো হতভাগা মানুষ একসাথে হয়ে গেল ‘কেয়ামতের যাত্রী’।



আমি আমার প্রাণপ্রিয় ‘মা’য়ের নিথর দেহখানি নিজের বুকের মধ্যেই পেয়েছিলাম। পরে যথাযোগ্য মর্যাদায়, চোখের জলে আমরা তাঁকে সাড়ে তিন হাত লম্বা এবং পৌনে দুই হাত গভীরতার এক অন্ধকার কবরে চিরতরে শুইয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু এমএল পিনাক-৬ নামের লঞ্চটির ডুবে যাওয়া যাত্রীদের অসহায় ও হতভাগ্য স্বজনেরা কি নিয়ে বাড়ি ফিরবে???



আল্লাহ আমার প্রাণপ্রিয় ‘মা’সহ এমএল পিনাক-৬ নামের লঞ্চের ডুবে যাওয়া সকল যাত্রীদের (মূলত যারা আর বেঁচে নেই) আত্বার মাগফেরাত দান করুন- এই কামনা করি।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:৫৪

অদ্বিত বলেছেন: অসাধারণ। আপনার অভিব্যক্তি খুবই ভাল লাগল। লঞ্চে যতজন যাত্রী উঠে ঠিক ততজনের জন্য প্রয়োজনীয় লাইফজ্যাকেট কি থাকে না ? সকল যাত্রীর জন্য লাইফজ্যাকেট থাকলে তো একজনেরও মারা যাওয়ার কথা না। সত্যিই ব্যাপারটা খুবই দুঃখজনক যে একজন না, দইজন না। একেবারে দুইশজন মানুষ একসাথে..................... । ইশ্। যাত্রীদের মধ্যে কেউই কি লঞ্চটা যাতে ডুবে না যায় সেই চেষ্টা করতে পারল না ? আহারে.......................।

০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:৩০

ইছামতির তী্রে বলেছেন: ধারণ ক্ষমতার অনেক বেশী যাত্রী উঠানো হয়েছিল। সেজন্য লাইফজ্যাকেটেও কাজ হত না। তাছাড়া ছোটখাটো এসব লঞ্চে লাইফজ্যাকেট তেমন একটা থাকেও না।

শোনা যাচ্ছে বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য অনেক যাত্রী এক পাশে গিয়ে ভীড় করেছিল। এটাও এই দুঃখজনক ঘটনার একটা কারণ।

এই সিজন আসলেই বাংলাদেশে দু-চারটা এমন লঞ্চ ডোবে। এতে কারো মধ্যে তেমন কোন মাথাব্যথা লক্ষ্য করা যায় না। এসব আমাদের নিয়তি বলে মেনে নেয়া ছাড়া আর কিইবা করার আছে।

মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।



২| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:৪৮

স্বপ্নচারী গ্রানমা বলেছেন:
তারা প্রাণপণে চিত্কার করতে চাচ্ছে। কিন্তু মুখ হা করতেই স্রোতের মত পানি এসে তাদের কন্ঠকে চিরতরে রুদ্ধ করে দিয়েছিল। তারা দাপাদাপি করতে চেস্টা করছিল। কিন্তু প্রবল স্রোত এসে তাদের খরকুটোর মত অজানার উদ্দেশ্যে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। এরপরের ঘটনা অতি ‘সরল’। মাত্র মিনিট খানেকের মধ্যেই অনেকগুলো হতভাগা মানুষ একসাথে হয়ে গেল ‘কেয়ামতের যাত্রী’।

হৃদয় বিদারক, নির্মম !! এর শেষ কোথায় ???

০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৮

ইছামতির তী্রে বলেছেন: এর শেষ দেখা যাচ্ছে না। প্রতি সিজনেই দু-চারটা এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে।

ঈদ মোবারক। কেমন আছেন স্বপ্নচারী গ্রানমা?

মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

৩| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:৫৬

মুদ্‌দাকির বলেছেন: বড় নদী গুলো থেকে ছোট লঞ্চ গুলো ব্যান করে দেয়া উচিৎ

০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:৪০

ইছামতির তী্রে বলেছেন: কার ঠ্যাকা পরেছে ব্যান মানার?

ঈদ মোবারক। কেমন আছেন মুদ্‌দাকির ভাই?

ও হ্যা, আপনার এই প্রোপিকটার মানে আমি জানি কিন্তু।

মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

৪| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:৫০

তিক্তভাষী বলেছেন: আপনার পোস্ট পড়ে একটি জবাব আমি দাঁড় করিয়েছি, এখানে

০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:২৮

ইছামতির তী্রে বলেছেন: আপনার লেখাটি পড়লাম। হ্যা, এভাবেই আমাদের অনুভূতিগুলোকে কবর দিতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশে বসবাস করা অসম্ভব।

আমার ব্লগ বাড়িতে আপনাকে স্বাগতম।

৫| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৫

লেখোয়াড় বলেছেন:
এটা শুধু কল্পনাকে হার মানায়।

সো সরি।

০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:৩১

ইছামতির তী্রে বলেছেন: ঐ যে একটা কথা আছে না 'truth is stranger than fiction' আসলেই কথাটি কতটুকু সত্য তা টের পেলাম।

মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

৬| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:২৩

খাটাস বলেছেন: কিছু বলার নাই

০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:৩১

ইছামতির তী্রে বলেছেন: সত্যই কিছু বলার নাই

৭| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৭

কম্পমান বলেছেন: So Sad, its unpredictable.

০৭ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:২৫

ইছামতির তী্রে বলেছেন: Thanks for comment.

৮| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:৪৬

অতঃপর জাহিদ বলেছেন: কিছু বলার নাই, আর কত?

০৭ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:২১

ইছামতির তী্রে বলেছেন: তাদের জন্য দোয়া করুন।

মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

৯| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:৫১

মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেছেন: আল্লাহ যারা চলে গেছেন তাদের মাফ করে দিন এবং জান্নাতে স্থান দিন, আমিন।

০৭ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:২২

ইছামতির তী্রে বলেছেন: আমিন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.