নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আম জনতার একজন।

ইছামতির তী্রে

I have a dream.

ইছামতির তী্রে › বিস্তারিত পোস্টঃ

গোটা বিশ্বে সবচেয়ে দেশপ্রেমমূলক রঙ কোনটি?

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:১৯

পতাকা এক খণ্ড বস্ত্র বিশেষ যা কোন গোষ্ঠী, দল, জাতি, দেশ বা সংগঠনের, এমনকী বিশেষ অনুষ্ঠানের প্রতীক তথা পরিচায়ক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। সচরাচর চারকোণা একটুকরো সাদা বা রঙীন কাপড় পতাকা হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ব্যবহারকালে পতাকার এক প্রান্ত একটি দণ্ডে বাঁধা হয়। পতাকার বস্ত্রখণ্ডে বিশেষ কোনও রং, নকশা, প্রতিকৃতি এবং চিহ্নের দ্বারা কোনও আদর্শ কিংবা বার্তা উৎকীর্ণ থাকতে পারে। আধুনিক বিশ্বের প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রের একটি করে স্বতন্ত্র পতাকা আছে যা জাতীয় পতাকা হিসাবে বিবেচিত।



উপরের কথাগুলো উইকিপিডিয়া থেকে নেয়া। আপনারাই বলুন পতাকার আসল মানে কি এই? শুধু কিছু কিতাবি কথা দিয়েই কি পতাকার মাহাত্ব্য বুঝানো সম্ভব? এককথায় ‘না’। অবশ্য জাতীয় পতাকার কথা বলা হয়নি এখানে।



পতাকা একটি দেশের সত্যিকারের পরিচয় বহন করে। এর সাথে জড়িয়ে থাকে প্রচন্ড আবেগ, অপরিসীম ত্যাগ, অনেক দেশপ্রেমের কাহিনী। একে শধুমাত্র এক টুকরো কাপড় মনে করা নিছক আহাম্মকি বৈ কিছু নয়। একটি পতাকার জন্য কত অযুত প্রাণ অকাতরে বিলিয়ে দিতে হয় তা দুনিয়ার সকল দেশের ইতিহাসে রক্তের অক্ষরে লেখা হয়ে আছে। একটি পতাকা মানে একটি দেশ। এমনই মাহাত্ব্য এই এক টুকরো কাপড়ের মধ্যে। আসলে পতাকার গুণগান করে কখনো শেষ করা যাবে। তার চেয়ে চলুন একটু ভিন্ন ধরনের আলোচনায় যাই।



সবচেয়ে দেশপ্রেমমূলক রঙ কোনটি?

কেউ কি বলতে পারবেন, সবচেয়ে দেশপ্রেমমূলক রঙ কোনটি? একজন বাংলাদেশী মাত্রই হয়ত ত্বরিত উত্তর দিবেন, ‘কেন লাল-সবুজ’। আমিও তাই বলতাম। আসলেও তাই। চলুন একটু খতিয়ে দেখা যাক।



সম্প্রতি বিশ্ববিখ্যাত সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘টাইম’ (সেপ্টেম্বর ৮/সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৪ ইস্যু। এর শিরোনাম নামই The Answers Issue: Everything you never knew needed to know. সম্ভব হলে সবার সংগ্রহে রাখা উচিত। অবশ্য time.com-এ গেলেও পেতে পারেন।) এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাদের গবেষণার মূল বিষয়বস্তু ছিল বিভিন্ন দেশের জাতীয় পতাকায় ব্যবহৃত কালার বা রঙ বিশ্লেষণ করা। সারা বিশ্বের ১৯৬টি দেশের পতাকা বিশ্লেষণ করে তাদের জরিপে পাওয়া তথ্যের আলোকে দেখা যাচ্ছে যে, সবচেয়ে দেশপ্রেমমূলক রঙ হলো লাল।



গবেষণার প্রক্রিয়াঃ

প্রথমতঃ তারা ১৯৬টি দেশের পতাকা সংগ্রহ করেন। সকল পতাকা বিশ্লেষণ করে তারা দেখতে পান যে, সমস্ত দেশের পতাকাগুলোতে মোট ৫২৭টি শেড এবং ৩৬.৬ মিলিয়ন পিক্সেল ব্যবহৃত হয়েছে। কাপড়ের পতাকায় এত শেড বা পিক্সেল বোঝা যাবে না। তবে তারা পতাকার ডিজিটাল ফরমেট ব্যবহার করেছেন। যাইহোক, যাচাই-বাছাই করে তারা ৫২৭ থেকে ৬৩টি শেডে নিয়ে আসেন। এই ৬৩ রকমের রংকে তারা প্রধান প্রধান ক্যাটেগরিতে ভাগ করেন। যথাঃ সাদা, কালো, লাল, নীল, সবুজ এবং হলুদ। এগুলো হলো মূল কালার। তারা দেখতে পান যে, বিশ্বের সকল দেশের পতাকাতেই উল্লেখিত কোন এক বা একাধিক রঙ অবশ্যই বিদ্যমান আছে।



গবেষণার ফলাফলঃ

গবেষণার চুড়ান্ত ফলাফলে দেখা যাচ্ছে যে, সবচেয়ে দেশপ্রেমমূলক পতাকার রঙ হলো ‘লাল’। সারা বিশ্বের প্রায় ৩১% দেশের পতাকার রঙ ‘লাল’। একটা ব্যাপার মনে রাখা দরকার। লাল মানে এই নয় যে, তাদের পতাকার পুরো অংশটাই বুঝি লাল। আসলে তা না। এক কথায় ৩১% দেশের পতাকায় অন্যান্য রঙের পাশাপাশি লাল রঙ কমন আছে। আর একটা ব্যাপার লাল মানে শুধু পিওর লাল রংকেই বোঝানো হয়নি। লাল রঙকে বৃহত্তর পরিসরে বিবেচনা করা হয়েছে। কারণ শুধুমাত্র লাল রঙেরই ৩৬টি শেড আছে।



এভাবে নীল আছে দ্বিতীয় স্থানে। শতকরা ২১% দেশের পতাকার রঙ নীল বা নীল জাতীয় রঙ ব্যবহার করা হয়েছে। সাদা আছে ১৮% দেশের পতাকায়। সবুজ আছে ১৫% দেশের পতাকায়। এরপর যথাক্রমে হলুদ ১০% এবং কালো সবশেষে ৫%।



দেশভেদে বিভিন্ন রঙ ব্যবহারের ব্যাখ্যাঃ

প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশের পতাকায় লাল রঙ সংযোজনের কারণ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বেশ কয়েকটি দেশের পতাকার কথা বলা হয়েছে। প্রতিটি দেশে লাল রঙ ব্যবহারের নিজস্ব যুক্তি আছে। যেমনঃ



গাম্বিয়াঃ তাদের জাতীয় পতাকায় লাল, নীল এবং সবুজ এই তিনটি রঙ বিদ্যমান। অন্য দুটি রঙের পাশাপাশি লাল্ রঙের মানে হলো গাম্বিয়া নদীর উপর দিয়ে উদীয়মান সূর্য। উল্লেখ্য গাম্বিয়া নদীর বিচিত্র পাখপাখালি দেখতে পর্যটকেরা গাম্বিয়াতে আসেন।



আইসল্যান্ডঃ তাদের চারকোণা বিশিস্ট নীল রঙের পতাকায় দুপাশে আড়াআড়িভাবে লাল রঙের রেখা টানা আছে। তাদের কাছে এই লাল রঙ আইসল্যান্ডের আগ্নেয়গিরি সমূহের আগুন এবং লাভার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত।



জর্ডানঃ এদের পতাকায় কালো, সাদা, ও সবুজ বর্ণের তিনটি অনুভূমিক অংশ রয়েছে। এগুলি বাম দিকে একটি লাল ত্রিভূজের দ্বারা সংযুক্ত। অনুভূমিক অংশগুলি আব্বাসীয়, উমাইয়া, ও ফাতেমীয় খেলাফতের প্রতীক। লাল অংশটি হাশেমীয় রাজবংশ ও আরব বিপ্লবের প্রতীক।



লিশটেনষ্টাইনঃ এটি একটি রাজপুত্র-রাজ্য (principality), অর্থাৎ একজন রাজপুত্র এলাকাটি শাসন করেন। লিশটেনষ্টাইনের জাতীয় পতাকা লাল এবং নীল রঙের। উপরে নীল রঙের বাম পাশে রাজমুকুটের ছবি। এখানে লাল রঙ পুরাতন রাজপুত্র রাজত্বের অফিসিয়াল রঙের প্রতীক।



উত্তর কোরিয়াঃ কমিউনিজমের প্রতীক লাল তারকাটি পতাকার মধ্যস্থলে সাদা বৃত্তের মধ্যে অবস্থিত। বৃত্তটি সম্ভবত কোরীয় সংস্কৃতির ইন-ইয়াং এর প্রতীক। লাল বর্ণটি বিপ্লবী দেশপ্রেম, নীল অংশগুলি সারা বিশ্বের বিপ্লবী জনতার সাথে কোরীয় জনগণের একাত্মতার এবং স্বাধীনতা, বন্ধুত্ব, ও শান্তির জন্য যুদ্ধ করার প্রতীক।



মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেঃ তারকা আর স্ট্রাইপে ভরা জাতীয় মার্কিনিদের জাতীয় পতাকায় তিনটি রঙ আছে। সেগুলো হল লাল, সাদা এবং নীল। এতে মোট ১৩টি অনুভূমিক স্ট্রাইপ আছে যার মধ্যে ৭টি লাল রঙের; বাকী ৬টি সাদা। আরো আছে নীল জমিনে ৫০টি পঞ্চমূখি তারকা। প্রতিটি লাইনে পর্যায়ক্রমে ৬টি এবং ৫টি করে তারকা আছে। এখানে লাল রঙ সাহস বা মনোবল, গভীর অনুভূতি এবং ঐকান্তিক ভালোবাসা বোঝাচ্ছে।



সকল দেশের পতাকা দেখতে দেখুনঃ View this link



অন্যান্য রঙের মধ্যে নীল রঙের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, নীল বলতে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে মানুষ ও অঞ্চলকে বোঝানো হয়েছে যেগুলো একটি দেশ গঠন করে।



সাদা সাধারণতঃ বিশুদ্ধতা, একতা এবং স্বাধীনতার প্রতীক। পক্ষান্তরে সবুজ বলতে বোঝায় পৃথিবী, উর্বরতা অথবা মুসলিম বিশ্বাস। পবিত্র কুরআনের সুরা ইনসানে জান্নাতী লোকদের পোশাকের বর্ণনায় আল্লাহ এ রঙের কথা উল্লেখ করেছেন। উল্লেখ্য, এই সুরার অপর নামদ্বয় হলো সুরা-দাহর ও সুরা আবরার।



তাদের আবরণ হবে সূক্ষ্ম বা মোটা সবুজ রেশম এবং তাদেরকে পরিধান করানো হবে রৌপ্য নির্মিত কঙ্কণ এবং তাদের প্রতিপালক তাদেরকে পান করাবেন ‘শরাবান-তাহুরা (বিশুদ্ধ পানীয়)।(সুরা: ইনসান, আয়াত-২১।)



হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসুল (সা.) এর প্রিয় রং হিসেবে সবুজ রঙের কথা এসেছে।



বিশেষ করে দ্বীপবিশিস্ট দেশগুলোতে হলুদ রঙ প্রায়শই সূর্য এবং বালির প্রতীকী হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। আর সবশেষে কালো বলতে শত্রুর পরাজয়কে বোঝানো হয়েছে।



বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা







বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা সবুজ আয়তক্ষেত্রের মধ্যে লাল বৃত্ত। সবুজ রং বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি ও তারুণ্যের প্রতীক, বৃত্তের লাল রং উদিয়মান সূর্য, স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারীদের রক্তের প্রতীক। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার এই রূপটি ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি সরকারীভাবে গৃহীত হয়।



সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।







রেফারেন্সঃ

১. http://time.com/patriotic-flag-colors/

২. সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘টাইম’ (সেপ্টেম্বর ৮/সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৪ ইস্যু।

৩. উইকিপিডিয়া







মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০১

এস,এম,মনিরুজ্জামান মিন্টু বলেছেন: ধন্যবাদ

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:০৩

ইছামতির তী্রে বলেছেন: মন্তব্যের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।

২| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১৫

হাসান মাহবুব বলেছেন: ইন্টারেস্টিং গবেষণা।

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:০৪

ইছামতির তী্রে বলেছেন: সত্যিই খুব ইন্টারেস্টিং গবেষণা।

৩| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৩৫

স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: হাসান মাহবুব বলেছেন: ইন্টারেস্টিং গবেষণা।

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:০৫

ইছামতির তী্রে বলেছেন: সত্যিই খুব ইন্টারেস্টিং গবেষণা।

৪| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৩৮

আয়রন ম্যান বলেছেন: গবেষনাটা বড়ই ইন্টারেষ্টিং।

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:০৬

ইছামতির তী্রে বলেছেন: এক টুকরো কাপড় দেশের কথা বলে।

৫| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:২৫

স্বপ্নচারী গ্রানমা বলেছেন:
চমৎকার, আর মন ভালো করা পোস্ট ! ++

ভালো আছেন তো ভাই ইছামতি তীর !

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:৪৩

ইছামতির তী্রে বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। আলহামদুলিল্লাহ।

আশা করি আপনিও ভাল আছেন।

৬| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৩৯

যাযাবর বেদুঈন বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ। পোস্টটা সংগ্রহে রেখে দিলাম।

এক টুকরো কাপড় দেশের কথা বলে। বলে সমগ্র জাতির কথা।

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:২৩

ইছামতির তী্রে বলেছেন: মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.