নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আম জনতার একজন।

ইছামতির তী্রে

I have a dream.

ইছামতির তী্রে › বিস্তারিত পোস্টঃ

চিঠি থেকে স্ট্যাটাসঃ গল্পে গল্পে যোগাযোগ মাধ্যমের বিবর্তন (১ম পর্ব)।

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১০:২৫

যোগাযোগ হল তথ্য আদান প্রদানের উপায়। মানুষ থেকে মানুষ বা যন্ত্র থেকে যন্ত্রে তথ্য আদান প্রদান হতে পারে। অসংখ্য যোগাযোগ মাধ্যমের মধ্যে চিঠিপত্র হলো অন্যতম একটা মাধ্যম। চিঠিপত্র আবার বিভিন্ন রকমের হতে পারে। সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো প্রেমপত্র। তবে আমাদের আলোচ্য বিষয় আমাদের দৈনন্দিন জীবনে লিখিত চিঠিপত্র বা জাতীয় বিষয় নিয়ে। সময়ের কালপ্রবাহে যোগাযোগের লিখিত পন্থা কিভাবে ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তীত হয়ে আজকের অবস্থানে এসে পৌঁছেছে তারই বিশদ বিবরণ তুলে ধরতেই আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।



চিঠিঃ

চিঠি। অম্লমধুর একটি বিষয়। এক দশক আগেও চিঠিপত্র ছিল সামাজিক, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত জীবনে যোগাযোগের অন্যতম এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। চিঠি ছাড়া জীবন ছিল ধূসর মরুভূমিসম। কাগজের জমিনে কালির হরফে লেখা কিছু শব্দ বা বাক্য সমস্টি যে কত ক্ষমতাশালী ছিল তার হিসেব কখনো করা যাবে না। চিঠি কখনো বয়ে আনত মধুর কোন খবর যা পড়ে মানুষ পুলকিত হত। আবার কখনো কখনো এটি সীমাহীন বেদনার কারণ হয়ে উঠত। মোট কথা চিঠি ছিল হাসি-কান্না, ব্যথা-বেদনা, আবেগ-অনুরাগ মিশ্রিত এক অসাধারণ বিষয়।



শুধু সামাজিক, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত জীবনেই নয় বরং গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটক, সিনেমা তথা গোটা সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলেই চিঠির উল্লেখযোগ্য ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়। এমন একজন শিক্ষিত মানুষও সমাজে খুঁজে পাওয়া দুস্কর যিনি জীবনে একবার হলেও চিঠি লেখেননি বা পড়েননি। লেখাপড়া না জানা মানুষেরাও তাদের প্রিয়জনের নামে অন্যের দ্বারা চিঠি লেখিয়ে নিতেন। তবে দিন বদলেছে। চিঠি আর মানুষ লিখতে চায় না। কেননা এর অনেক বিকল্প দাঁড়িয়ে গেছে।



চিঠি ও আমিঃ

আমি যখন প্রথম চিঠি লিখি তখন খুব সম্ভবত ক্লাস নাইনে পড়ি। মেঝ ভাই পড়াশোনার উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়লে আমার চিঠি লেখার হাতেখড়ি হয়। তিনি মাসে গড়পড়তা একটা চিঠি লিখতেন। উনার চিঠিগুলো অবশ্য খুব ‘টাইপড’ ছিল। তিন-চার লাইনের চিঠির মূল কথা থাকত ‘পিতার কাছে টাকা চাহিয়া পত্র’। তাই উত্তর লিখতে খুব একটা বেগ পেতে হত না। পরের দু’বছরের মধ্যে বড় ভাই ও সেজ ভাই বাড়ি ছাড়লে আমার কাজ বেড়ে গেল। তখন মাসে একাধিক চিঠি আসত। একটা নতুন চিঠি আসত আর আমাদের কি মজা লাগত! এক চিঠি কয়েকবার করে পড়ে তবেই তার উত্তর দিতাম। আমার বড় ভাইয়ের লেখা ছিল অদ্ভুত রকমের প্যাঁচানো। আমরা মজা করে তাকে ‘দলিল লেখক’ বলতাম। তার কিছু কিছু শব্দের প্যাঁচ বুঝতে আব্বা অথবা মায়ের স্মরণাপন্ন হতে হত। অন্যদিকে সেজ ভাইয়ের চিঠিগুলো বেশ মজার ছিল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত সে। ওর ক্যাম্পাসের মজার মজার বিষয় আমাদের লিখে জানাতো। ফলে ওর চিঠির উত্তর দিতেও মজা লাগত। এভাবে কেটে যেতে লাগলো দিনগুলো। ইতিমধ্যে ‘চিঠি লেখক’ হিসেবে আমার একটা পরিচিতি হল। হাতেনাতে এর ফল পেলাম। আশেপাশের পরিচিতজনদের চিঠি লিখে দেয়ার উটকো ঝামেলা মাথায় এসে পড়ল। গত্যন্তর নেই দেখে লিখে দিতে হত। এ নিয়ে নানা মজার কান্ড ঘটেছে। সেদিকে আর গেলাম না।



বাড়িতে সুখের দিন দ্রুত ফুরিয়ে এল। জীবনের তাগিদে আমাকেও বাড়ি ছাড়তে হলো। গল্পের ইট-কাঠ-পাথরের শহর ঢাকায় চলে এলাম। শুরু হলো আমার চিঠি ‘লেখার পর্ব’। এতদিন শুধু উত্তর দিয়ে গেছি। নিজে চিঠি লিখতে গিয়ে আবিস্কার করলাম চিঠি লেখা ব্যাপক কঠিন কাজ। এও বুঝলাম, মেঝ ভাই কেন ‘টাইপড’ চিঠি লিখত। যাইহোক, আব্বা-মাকে সালাম-কালাম ও কুশল বিনিময় করে চিঠি লেখা শুরু করি। কিন্তু দু’লাইন লিখে আর এগোতে পারি না। আর কিইবা লিখব। আব্বা-মা কে তো যা তা লেখা যায় না। তবু কয় তলায় তাকি, এখানকার পরিবেশ, বন্ধু-বান্ধব, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি বিষয় যোগ করে দেখা গেল প্যাডের একপাতা হয়ে গেছে। ব্যস পাঠিয়ে দাও। এভাবে দিনে দিনে চিঠি লেখার সক্ষমতা বাড়তে লাগল। হলের আমার প্রায় সকল বন্ধুরাও প্রিয়জনদের কাছে চিঠি লিখত। এক্ষেত্রে আমার এক বন্ধুর ঘটনা শেয়ার না করে পারছি না। সে ছিল একটি রাজনৈতিক দলের একজন নেতা। সঙ্গতকারণেই হলে প্রবেশ করার পর থেকেই ও খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ত। তাই ঢাকায় আসার আগে বাড়ি থেকেই ‘ভালভাবে পৌঁছেছি’ জাতীয় একটি চিঠি লিখে নিয়ে আসত। হলে ঢোকার আগে বক্সে ফেলে দিয়ে রুমে ঢুকত। হাহাহা।



হল জীবনের অভিজ্ঞতায় দেখেছি বেশীরভাগ চিঠিই আসত দুপুরের পর। এ সময় মনটা কেমন যেন আনচান করত। ‘পিয়ন মামা’ প্রতিদিনই আমাদের ফ্লোরে আসতেন। কোন একদিন আমার নামেও আসত চিঠি। আব্বার অসাধারণ সুন্দর হাতের লেখা চিঠি যখন আমার হস্তগত হত তখন প্রচন্ড আবেগে চিঠির খামটি বুকে জড়িয়ে ধরতাম। মনে হত খামের মধ্যে আব্বা-মায়ের গন্ধ পাচ্ছি। আব্বাই সবসময় আমার চিঠির উত্তর দিতেন। পরে একদিন মাকে চিঠি লেখার জন্য জিদ ধরলাম। মা একদিন সত্যি সত্যিই চিঠি লিখলেন। আহারে! কি সুন্দর মায়া জড়ানো আমার মায়ের হাতের লেখা!! চোখটা অজান্তেই ভিজে গেল। অনেক যত্নে সেটি দীর্ঘদিন আগলে রেখেছিলাম। কিন্তু কেমন করে যেন সেটি হারিয়ে গেল!

ঢাকায় এসে চিঠি লেখার পাশাপাশি উত্তর দেয়াও কমাতে পারলাম না। কারণ বাড়ি ছাড়ার আগে ছোট ভাই-বোন-ভাগ্নি-কাজিনদের সমন্বয়ে একদল ভক্তকূল তৈরী করে রেখে এসেছিলাম। ওরা আমার নামে এক খামেই ৫/৭টি চিঠি পাঠাত। ওদের চিঠিগুলোর উত্তর দিতে দিতে আমার দফারফা। ক্যাম্পাসের মজার আড্ডা, পড়াশোনা ও অন্যান্য কাজের পাশাপাশি সকল চিঠির উত্তর দেয়া নিয়ে এক মধুর বিরম্বনায় পড়লাম। কিন্তু ওদের কাঁচা হাতের আঁকাবাঁকা লেখায় চোখ পড়লেই মনে এক অদম্য শক্তি অনুভব করতাম। এভাবে চিঠি হয়ে উঠল আমার হল জীবনের ভালোলাগার অন্যতম এক অনুষঙ্গ। দরজার ফাঁক দিয়ে পিয়ন মামা চিঠিটি চালান করার সময় ‘শশশ্যশ’ করে যে একটা শব্দ হত এক সময়ে ওটাই হয়ে গেল আমার হলজীবনের অন্যতম মধুর শব্দ। এই শব্দ সোনার জন্য মনটা বড়ই পেরেশান থাকত। শব্দটি কর্ণকুহরে প্রবেশ করা মাত্র মনটা সীমাহীন আনন্দে ভরে উঠত।



সময়ের অমোঘ নিয়মে চিঠির উপযোগ প্রায় নিঃশেষিত। ইদানিং চিঠি লেখাই হয়ই না। আসলে প্রয়োজন পড়ে না। চিঠির অনেকগুলো সহজ ও সুন্দর বিকল্প এসে গেছে। তবু অসাধারণ সুন্দর আলপনা আঁকা রঙ্গিন প্যাডে কালারফুল কলমে চিঠি লেখার সেই সুন্দর দিনগুলোর কথা বড্ড মনে পড়ে।



চিরকুটঃ

“আমি অমুক জায়গায় যাচ্ছি। ফিরতে রাত হবে”

যারা হলে বা মেসে থাকতেন তাদের কাছে এই ধরণের ছোট্র তথ্য সম্বলিত কাগজের টুকরো মোটেও আপরিচিত নয়। এটিকে ‘চিরকুট’ বলা হয়। একসময়ে এই ‘চিরকুট’ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে বা মেসে বেশ জনপ্রিয় ও কাজের একটি জিনিষ ছিল। যখন মোবাইল ফোনের প্রচলন ছিল না তখন রুমমেট বা অন্য কোন অতিথির উদ্দেশ্যে ওইরকম কিছু তথ্য লিখে রুমের তালা বা অন্য কিছুর সাথে গুঁজে দেয়া থাকত। আমি নিজে বহুবার এমন চিরকুট ব্যবহার করেছি; বন্ধুদের ব্যবহার করতে দেখেছি। এটা ছিল তখনকার সময়ে নিজেকে সবার সাথে কানেক্ট করার একটা দারুণ প্রক্রিয়া।



চিরকুট জাতীয় বিষয় নিয়ে একটা মজার অভিজ্ঞতা আছে। তখন কলেজে পড়ি। মনটা অকারণেই সারাক্ষণ উড়ু উড়ু করে। একদিন আমার এক বান্ধবী আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এল। কোন এক ফাঁকে সে আমার হাতে ছোট্র একটা কাগজ গুঁজে দিল। এটি হাতে নেয়ার পর থেকে আমার অবস্থা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। উত্তেজনায় নিজের বাড়িই কেমন যেন অচেনা লাগলো। ‘কখন পড়ব’ এই চিন্তায় অস্থির হয়ে গেলাম। এক সুযোগে ছুটলাম বাথরুমের দিকে। প্রচন্ড উত্তেজনায় অবশেষে সেটি খুললাম। ওমা! কোথায় ‘লাভ লেটার’। এতো দেখি বিখ্যাত লোকের ৫টি স্মরণীয় বাণী লেখা!!! চিন্তা করেন অবস্থা!!!



টেলিগ্রামঃমাদার ইজ ইল, কাম শার্প’’।

একসময়ের বহুল ব্যবহৃত ও জনপ্রিয় একটি ক্ষুদে বার্তা। আর এটি ব্যবহৃত হত টেলিগ্রাম নামক এক যোগাযোগ মাধ্যমে। আজকের টেলেক্স অথবা ফ্যাক্স মেশিনের পথিকৃতই ছিল এই টেলিগ্রাফ যন্ত্র। মিলিটারি, শিপিং অপারেটর এবং সাধারণ মানুষের দ্রত যোগাযোগের ক্ষেত্রে সেই আমলে এটাই ছিল অন্ধের যষ্টি। তবে আজকাল এর দেখা মেলাই ভার। ১৮৩২ ইতালীয় লাগরিক এফ. বি. মোর্স-এর আবিস্কৃত টেলিগ্রাম একসময় প্রচন্ড জনপ্রিয় একটি যোগাযোগ মাধ্যম ছিল। ১৬০ বছরের পুরনো টেলিগ্রামের যুগ প্রায় শেষ হয়েছে। নিভু নিভু অবস্থায় এখনো আমাদের দেশে এটি টিকে আছে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে টেলিগ্রাম কখনো ব্যবহার করিনি।



‘নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন নাইরে টেলিগ্রাম

বন্ধুর কাছে মনের খবর কেমনে পৌঁছাইতাম’




প্রখ্যাত শিল্পী পাপিয়া সারোয়ারের সুপরিচিত এই গানটিকে একেবারে পথে বসিয়ে এ সময়ে যোগাযোগের দিগন্তে উদিত হয়েছে অনেক নতুন নতুন তারকা। চলুন এখন সেগুলো নিয়েই আলোচনা হোক।



ফ্যাক্সঃ

এটি ইংরেজি ফ্যাকসিমিলি শব্দের সংক্ষেপ। Telecopying, Telefax, Fax যেভাবেই আমরা বলি এই মেশিনটির সাথে আমরা কমবেশি পরিচিত। স্কটিশ মেকানিক Alexandar Bain ১৮৪৩ সালে ফ্যাক্স মেশিন আবিস্কার করেন। সম্পুর্ন ডেভেলপ করার পর আমরা এটি একটি ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র যা কোন কাগজ বা দলিলের ছবি ডিজিটাল পদ্ধতির টেলিফোন তারের সহায়তায় দূরমুদ্রণে সক্ষম। কোন কাগজে লিখিত তথ্য অবিকৃত অবস্থায় দ্রুততম সময়ে দুর দুরান্তে পাঠানোর পদ্ধতি। বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে টেলেক্স ও টেলিগ্রাম ব্যবহার প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। পরিবর্তে ফ্যাক্স-এর ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধি পায়।



আমি নিজে এটা ব্যবহার করেছি। অতি দ্রুত ও নিরাপদে এটি আপনার বক্তব্য আপনার কাঙ্খিত ব্যক্তির নিকট পৌঁছে দিবে। তবে খরচ একটু বেশী বিধায় এটা অফিসিয়াল যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবেই বেশী পরিচিত। অফিসিয়ালি এখন বেশ দাপটের সাথে ফ্যাক্সের ব্যবহার চলছে।



ই-মেইলঃ

সময় দ্রুত গতিতে বয়ে যেতে লাগল। সময়ের স্রোতে নানারকম প্রযুক্তি এসে জীবনকে নানাভাবে সাজিয়ে তুলতে লাগলো। ১৯৯৯ সালের দিকে আমার কাজিনদের মধ্যে একটা পরিবার চলে গেল সুদূর আমেরিকাতে। ওরা ছিল আমার খুব প্রিয় কিছু মানুষ। তেমনি আমাকেও ওরা খুব ফিল করত। দেশে থাকতে নিয়মিত চিঠি আদান-প্রদান হত। ওরা আমেরিকা যাওয়ার একমাসের মধ্যেই ওদের চিঠি পেলাম। আমার উত্তর দেয়ার পালায় এবার যোগ হলো নীল-সাদা এয়ার মেইল খামে ভরা চিঠি। ওদের চিঠির খাম দেখেই যেন অনুভব করতাম আমেরিকান গন্ধ। ওরা চিঠিতে ওখানকার জীবযাত্রার চিত্র দিত যতটা সম্ভব। পড়ে নতুন নতুন তথ্য জানতে পারতাম। আমিও নানা কিছু জিজ্ঞেস করতাম ইয়াঙ্কিদের সমন্ধে। এভাবে ওদের সাথে চিঠি চালাচালি চলতে থাকল। ওরা আমেরিকা যাওয়ার মাস ছয়েক পরে আমাকে জানালো যে, আমি যেন একটা ইমেইল আইডি খুলি। তখন অবধি ই-মেইলের নাম শুনলেও ব্যবহার করা হয়ে ওঠেনি। আসলে প্রয়োজন পড়েনি। এবার সুযোগ এলো।



আমরা সবাই জানি ই-মেইল তথা ইলেক্ট্রনিক মেইল হল ডিজিটাল বার্তা যা কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়। আমার কাছে নতুন হলেও এটি কিন্তু মোটেও তা নয়। এর শুরু হয়েছিল আজ থেক প্রায় ৪২ বছর আগে মানে ১৯৭২ সালে আমেরিকাতে। তবে আমি এর শুরু করি ২০০০ সালের দিকে।



ই-মেইল’ অধ্যায়ঃ

আমার কাজিনদের কথামত একদিন নীলক্ষেতের এক দোকান থেকে ‘হটমেইল’-এ একটা আইডি খুললাম। আইডি খোলার পর কেমন যেন নিজেকে একটু ‘হট’ ‘হট’ লাগছিল। কেন না বন্ধুদের মধ্যে আমি যে প্রথম! হাহাহা। যাইহোক, চিঠিতে ওদের আমার নতুন ইমেইল আইডি জানিয়ে দিলাম। পরের চিঠিতে ওরা ধন্যবাদের পাশাপাশি আরো জানালো যে, ‘এখন থেকে তোমাকে ই-মেইল করব। নিয়মিত চেক করো’। ল্যাও ঠ্যালা। কি আর করা। আমার জীবনে শুরু হলো যোগাযোগের নতুন এক মাধ্যম, ‘ই-মেইল’ অধ্যায়। এই নিয়ে এক মহা ঝামেলায় পড়ে গেলাম। ২০০০ সালের দিকে এখনকার মত ইন্টারনেট কানেকশন এত সহজলভ্য ছিল না। আর লাইনগুলো এত স্লো ছিল যে কি আর বলব। কি আর করা। নীলক্ষেতে তখন হাতে গোনা কয়েকটা দোকানে ইন্টারনেট সংযোগ ছিল। আমি এর মধ্যে একটাকে সিলেক্ট করলাম। মেইল করতে গিয়ে আরেক ঝামেলা হাজির হল। প্রতি মেইল ২০টাকা গুণতে হবে। ঘন্টা হিসেবের আগেই এমনই ছিল। শুধু কি ২০টাকা। প্রথমে মেইল চেক করতে হবে। পরে তো তার উত্তর। সাথে আবার প্রিণ্ট নিয়ে পড়ে দেখে তবেই তো উত্তর দিতে হবে। এবার হিসেব করেন কত টাকা লাগে। এমন হতো না যদি এটা সাইবার ক্যাফে হত। ঐ দোকানে কম্পিউটার ছিল মাত্র একটি কি দুটি। এগুলো দিয়েই কম্পোজ থেকে শুরু করে ইন্টারনেট সেবা মানে সবকিছুই চলত। আর সংযোগ অফলাইনে থাকত। কেউ ডিমান্ড করলে লাইন সংযোগ স্থাপন করে সেবা দেয়া হত। সংযোগ স্থাপন প্রক্রিয়া ছিল দেখার মত একটা ব্যাপার।



যাইহোক, প্রথম মেইলের কথা শেয়ার করি আপনাদের সাথে। আগেই প্রিন্ট আউট নিয়েছিলাম। এসেছি উত্তর দিতে। হাতে একপাতার একটা চিঠি। অবশ্যই ইংরেজীতে। কারণ ওরা ইংরেজীতেই লিখেছে। ‘দুই দিনের বৈরাগী ভাতেরে কয় অন্ন’। কিন্তু কিছু করার নাই। খরচ বিবেচনা করে ওরা আমাকে আগে Ms Word-এ চিঠিটি কম্পোজ করে নিতে বলল। আমি লিখতে বসলাম। ওরা আমার কিবোর্ড চালনা দেখে হেসে কুটপাট। কারণ আমি দুই আঙ্গুল দিয়ে অক্ষর খুঁজে খুঁজে লিখছি। ফলে এক লাইন লিখতেই কয়েক মিনিট লেগে যাচ্ছে। ওরা লিখে দেয়ার প্রস্তাব দিল। গত্যন্তর না দেখে রাজী হয়ে গেলাম। ওদের একজন ঝড়ের বেগে আমার চিঠিটি কম্পোজ করে দিল। আমি অবাক হয়ে তার কাজ-কারবার দেখতে লাগলাম।যাইহোক, ওরাই আমার দেয়া এড্রেসে তা মেইলও করে দিল। আমি ধন্যবাদসহ ২০ টাকা দিয়ে হল অভিমূখে যাত্রা করলাম।



এরপর থেকে… লুজ মোশন হলে মানুষ যেমন ঘন ঘন ‘যাতায়াত’ করে তেমনই ঐ দোকানে আমারো যাতায়াত বহুগূনে বেড়ে গেল। পকেটের টাকাও ভালই যেতে লাগলো। বিড়ি-সিগারেট-সিনেমা দেখার নেশা না থেকেও বাপের কস্টের টাকা ‘হাওয়ায়’ উড়াতে লাগলাম। যদিও ই-মেইলে চিঠির সেই আবেদন অনুভব করিনা। তবু ধীরে ধীরে এই যান্ত্রিক প্রক্রিয়ার লেনদেনে এক সময়ে অভ্যস্ত হয়ে পড়লাম। কিছুদিনের মধ্যে নীলক্ষেতে অনেকগুলো সাইবার ক্যাফে হয়ে গেল। আমি নিয়মিত যাতায়াত করতে লাগলাম রাফিন প্লাজার তিনতলায় অবস্থিত এক সাইবার ক্যাফেতে। এখন আর আর কাউকে লিখে দেয়া লাগে না। নিজেই লিখি। অতি জরুরী মেইলগুলোর প্রিণ্ট আউট নেই। নিজের মনকে বোঝাই ‘হাওয়া থেকে পাওয়া’ চিঠিগুলো একেবারে হাওয়ায় ভেসে আসেনি। সুদূর আমেরিকা থেকে তোমার কিছু প্রিয়জনই দিয়েছে। সত্যি বলছি, ই-মেইলকে আমি খুবই ভালবেসে ফেললাম। চিঠি মিস হবার সম্ভাবনা নেই, সময়ের হিসাব নেই, চিঠি অন্যের হাতে পড়ার সম্ভাবনা নেই। মোটকথা অনেকগুলো সুবিধা সম্বলিত এই ই-মেইল হয়ে গেল আমার প্রিয় বন্ধুর মত।



আগামীকাল ইনশাআল্লাহ এর ২য় বা শেষ পর্ব দেয়া হবে।



বিঃদ্রঃ লেখাটি তৈরী করতে উইকিপিডিয়া থেকে ব্যাপক সাহায্য নেয়া হয়েছে।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:২৫

দীপংকর চন্দ বলেছেন: অনেক ভালো লাগলো ভাই।

শুভকামনা। অনিঃশেষ। সবসময়।

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৯:২০

ইছামতির তী্রে বলেছেন: আপনার প্রতিও রইল অনেক অনেক শুভকামনা। সবসময়।

মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

২| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:২৯

তুষার কাব্য বলেছেন: ভালো লাগলো ...

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৯:২১

ইছামতির তী্রে বলেছেন: মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

৩| ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:২৫

স্বপ্নচারী গ্রানমা বলেছেন:
আপনার তথ্যবহুল আর গোছানো পোস্টে স্মৃতিকাতর হলাম !
সেই পিয়ন, সেই চিঠি, সেইসব নানা রঙের মোলায়েম দিনগুলি !

অনেক ভালোলাগা রইল প্রিয় ভ্রাতা ! ++

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৯:২৪

ইছামতির তী্রে বলেছেন: স্মৃতিকাতরতাই এই লেখার মূল কারণ। আসলেই অসাধারণ ছিল সেইসব দিনগুলো।

আপনার প্রতিও অনেক ভালোলাগা রইল।

৪| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:২৭

কলমের কালি শেষ বলেছেন: চমৎকার বিষয়ে লেখনী । ভাল লাগলো । :)

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৫:০২

ইছামতির তী্রে বলেছেন: আপনার ভাল লেগেছে জেনে খুশি হলাম। লেখাটা বেশী বড় হয়ে গেছে।

মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.