নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আম জনতার একজন।

ইছামতির তী্রে

I have a dream.

ইছামতির তী্রে › বিস্তারিত পোস্টঃ

কলম্বাস কি সত্যিই আমেরিকা আবিস্কার করেছিলেন? কলম্বাস আটলান্টিক মহাসাগর অতিক্রমকারী প্রথম ব্যক্তি ছিলেন না।

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৩৬

আমেরিকাতে অধিকাংশ স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়েদেরকে ছোটবেলাতেই একটি বিখ্যাত কবিতার সাথে পরিচিত করানো হয়, তা হলো “In 1492, Columbus sailed the ocean blue…” বস্তুত ১৪৯২ সালে কলম্বাস (যার আসল নামটি ছিল ইটালীয়ান Cristoforo Colombo) নামের এক নাবিক যিনি স্প্যানিশ রাজার নামে অসম সাহসীকতার সাথে আটলান্টিক মহাসাগরে অভিযান চালিয়েছিলেন এবং উত্তর আমেরিকার ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে নোঙ্গর ফেলেছিলেন। শত বছর ধরে এটাই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে যে, কলম্বাসই প্রথম মানুষ যিনি আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তাল জলরাশিকে পরাভূত করে আমেরিকা নামের এক নতুন দেশ ‘আবিস্কার’ করেন। যাইহোক, এই মতবাদ বর্তমান গবেষণার যুগে অচল হয়ে পড়েছে।

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, প্রকৃতপক্ষে আমেরিকা প্রথম আবিস্কার হয়েছিল আজ থেকে আনুমানিক ১২,০০০ বছর আগে আদিবাসী আমেরিকানদের (Native American) দ্বারা, যারা সম্ভবত রাশিয়া এবং আলাস্কা হয়ে উত্তর আমেরিকাতে প্রবেশ করেছিল। কাজেই ইউরোপীয়, আফ্রিকান অথবা এশীয়দের দ্বারা আমেরিকা প্রথম আবিস্কার হয়েছিল এই ‘আলোচনা’ করা আমেরিকান আদিবাসীদের অপমান করার শামিল। এটা জানা জরুরী যে, প্রথম অকোতুভয় ব্যক্তি যার নৌকা আটলান্টিক মহাসাগর অতিক্রম করেছিল এবং কলম্বাসের আবিস্কার তাদের জন্য কোন সুফল বয়ে আনতে পারেনি।

কলম্বাসের জীবদ্দশায় মানুষ ধারণা করত যে, পৃথিবীর আকার সমতল। ইহা মোটেও সত্য নয়। যদিও প্রাচীন গ্রীক পন্ডিতগণ যেমন, এরিস্টটল এবং পিথাগোরাস ধারণা করতেন পৃথিবী বস্তুত গোলাকার। মুসলিম স্বর্ণযুগে (৭৫০-১১০০ খ্রিস্টাব্দ) পৃথিবীর আকার ও আকৃতি নিয়ে আরো অগ্রসর গবেষণার কাজ শুরু হয়েছিল। অধিকাংশ মানুষের বিশ্বাস যাই হোক না কেন, ওই সময়ে, একটা সাধারণ ধারণা বিদ্যমান ছিল যে, পৃথিবী সমতল নয়। যাইহোক, মুসলিমদের কাছে পৃথিবীর আকার ও আকৃতির চেয়ে অধিকতর গুরুত্ব পেয়েছিল পৃথিবীর আয়তন। ৮০০ শতকের প্রারম্ভে, আব্বাসীয় খলিফা আল-মামুন ঐ সময়কার বিশ্বের তাবত জ্ঞানী ও পন্ডিত মানুষদেরকে বাগদাদে একত্রিত করেছিলেন, এর মধ্যে আল-খাওয়ারিজমও ছিল, যারা সমবেত প্রচেস্টার মাধ্যমে পৃথিবীর একটি সীমানা নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, ঐ সময়ে তারা যে আয়তন হিসেব করেছিলেন তা ইদানিংকালের নির্ধারণ করা মূল আয়তনের চেয়ে মাত্র ৪% কম ছিল!!

যেহেতু সবাই জেনে গিয়েছিল যে পৃথিবী গোলাকার, এবং এর মোট আয়তন সম্মন্ধেও জানা গেল (স্মরণযোগ্য যে, বর্তমান সময়ের প্রযুক্তিগত সাহায্য ছাড়াই তারা তা করেছিলেন), কাজেই কিছু অকোতুভয় মুসলিম কলম্বাসের শত শত বছর আগেই পৃথিবী পরিভ্রমনের ঝুঁকি নিয়ে থাকবেন। সে অভিযানের প্রমাণ আমাদের সামনে। নিচে দেখুন এই ম্যাপটি।

মুসলিম স্পেনঃ



এটি ৯৫৬ খ্রীষ্টাব্দে আল-মাসউদী কর্তৃক অঙ্কিত পৃথিবীর মানচিত্র। এখানে আটলান্টিকের আড়াআড়ি ও আফ্রিকার উল্টো দিকে অবস্থিত একটি “unknown land” দেখা যাচ্ছে।

৯৫৬ সালে প্রখ্যাত মুসলিম ঐতিহাসিক ও ভূগোলবিদ আবুল হাসান আল-মাসউদী ৮৮৯ সালের এক সমুদ্র অভিযানের কথা লিখেছিলেন যেটি যাত্রা করেছিল আল-আন্দালুসিয়া (মুসলিম স্পেন) থেকে। অভিযাত্রীগণ তাদের যাত্রা শুরু করেছিল ডেলবা বন্দর থেকে (সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো কলম্বাসও ঠিক একই জায়গা থেকেই যাত্রা করেছিলেন) এবং মাসের পর মাস তারা পশ্চিমের দিকে চলেছিলেন। অবশেষে তারা মহাসাগরের আড়াআড়ি একটি বৃহৎ দ্বীপ দেখতে পেলেন সেখানে তারা আদিবাসীদের সাথে বাণিজ্য করলেন এবং পরে ইউরোপে ফিরে আসলেন। আল-মাসউদী তার বিখ্যাত মানচিত্রে মহাসাগরের আড়াআড়ি অবস্থিত এই ভূমিকে চিহ্নিত করেছিলেন এবং এটাকেই তিনি “the unknown land” হিসেবে নির্দেশ করেছেন।

ইতিহাসে মুসলিম স্পেন থেকে আমেরিকা অভিমূখে পরিচালিত আরও দুটি অভিযাত্রী দলের রেকর্ড পাওয়া যায়। এর একটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন গ্রানাডা নিবাসী ইবনে ফাররুখ। অন্যটির রেকর্ড লিপিবদ্ধ হয়েছিল প্রখ্যাত ভূগোলবিদ আল-ইদরীসি কর্তৃক ১১০০ শতকে, যিনি কাজ করতেন বহু সংস্কৃতি ও ধর্মীয়ভাবে অনেক সহনশীল সিসিলি রাজা রজার দ্বিতীয় এর দরবারে। তিনি লিখেছিলেন এক দল মুসলিম লিসবন থেকে পশ্চিমে যাত্রা করে ৩১ দিন চলার পরে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের একটি দ্বীপে নোঙ্গর করেছিলেন। তারা আদিবাসী আমেরিকানদের দ্বারা ওই দ্বীপে কয়েকদিন বন্দি অবস্থায় ছিলেন। অবশেষে আদিবাসীদের সাথে বসবাসকারী একজন দোভাষীর প্রচেস্টায় তারা মুক্ত হয়েছিলেন, যিনি আরবীতে কথা বলতেন। পরিশেষে, তারা আল-আন্দালুসিয়াতে ফিরে আসলেন এবং তাদের গল্প অন্যান্যকে বললেন। এখানে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, আদিবাসীদের মধ্যে আরবী ভাষী লোকের উপস্থিতি এটাই ইঙ্গিত করে যে, সেখানে ‘অবশ্যই’ আরব বিশ্ব ও আমেরিকার মধ্যে আরও অনেক unrecorded তথ্য আছে।

পশ্চিম আফ্রিকা

মুসলিম বিশ্বের অন্য আর একটি অংশ যাদের সাথে কলম্বাসের আগে আমেরিকার যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছিল। ১৩০০ শতকে পশ্চিম আফ্রিকায় ‘মালি’ নামে একটি শক্তিশালী ও অবিশ্বাস্য সম্পদশালী সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিল। এই সাম্রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ নেতা ছিলেন সম্রাট মানসা (রাজা) মুসা (যিনি সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপে বিশ্বের ইতিহাসে এযাবতকালের সেরা ধনী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন)। তাঁর শাসনামলের সবচেয়ে স্মরণীয় ও উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো ১৩২৪ সালে তাঁর মহা হজ্জ্ব যাত্রা। পবিত্র হজ্বযাত্রার পথে তাঁর ৬০,০০০ এর বেশী সঙ্গী সাথীর কাফেলাটি যেসকল স্থান অতিক্রম করেছিল তার সবখানেই ব্যাপক সাড়া পড়েছিল, উদাহরণস্বরুপ মিশর, যেখানে মানসা মুসা তাঁর নিজের ক্ষমতায় আরোহণের গল্প বলেছিলেন। তাঁর ভাই আবু বকর ছিলেন তাঁর আগের মানসা বা রাজা। তাঁর রাজত্বকালে,(আবু বকর) তিনি ৪০০ জাহাজের একটি নৌবহরকে আটলান্টিক মহাসাগর সম্মন্ধে তথ্য সংগ্রহের জন্য পাঠিয়েছিলেন। পরে মাত্র ১টি জাহাজ ফিরে এসেছিল, তবে তারা তাকে জানিয়েছিল মহাসাগরের আড়াআড়ি একটি বড়সড় ভূমির সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। মানসা আবু বকর তখন ২০০০ জাহাজের একটি বিশাল নৌবহরকে সুসজ্জিত করে নিজে স্বয়ং যাত্রা করলেন; তারা মহাসাগরের পশ্চিমে যাত্রা করেছিলেন। এরপরে তাদের আর কোন খবর শোনা যায় নি।

মালিতে সেই অভিযাত্রী দলের ফেরার কোন খবর বা নথি পাওয়া না গেলেও তাদের আমেরিকা আগমনের অনেক তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকাতে অসংখ্য প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন বিদ্যমান আছে যেগুলো মালিয়ান উপস্থিতির সাক্ষ্য বহন করে। প্রারম্ভিক যুগের স্পেনীয় অনুসন্ধানী দল ও জলদস্যুরা ব্রাজিলের কিছু পরিত্যক্ত শহরে পাথরে খোদিত কিংবা মুদ্রা বা পদকে অঙ্কিত এমন কিছু শব্দাবলীর দেখা পেয়েছিলেন যেগুলো আসলে মানদিঙ্কা(মালির অধিবাসী)ভাষায়। আমেরিকাতেও মানদিঙ্কা ভাষায় লিখিত এমন অনেক চিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল। মিসিসিপি নদীর কাছে অনেক অভিলিখনের (inscription)অস্তিত্ব তাদের আমেরিকা অনুসন্ধানের সাক্ষ্য বহন করে। আরিজোনাতে এমন একটা inscription পাওয়া গিয়েছিল যেখানে লেখা ছিল “The elephants are sick and angry. At present there are many sick elephants”. এখানে হাতির একটা rough sketch-ও যুক্ত ছিল। হাতি আমেরিকার স্থানীয় প্রাণী ‘নয়’। এগুলো মালির লোকজন আমেরিকায় নিয়ে গিয়েছিলেন। আর এসকল প্রমাণাদি দেখে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, মানসা আবু বকর ও তাঁর নৌবহর সাফল্যজনকভাবে কলম্বাসের ১০০ বছর আগেই আমেরিকায় অবতরণ করেছিলেন।

অটোমান সাম্রাজ্যঃ

১৯২৯ সালে তুরুস্কের ইস্তাম্বুলে একটি বিস্ময়কর আবিস্কারের ঘটনা ঘটে। ১৫১৩ সালে অটোমান মানচিত্রকর (Cartographer) পিরি রেইস (Piri Reis) কর্তৃক অঙ্কিত একটি মানচিত্র পাওয়া গিয়েছিল। পিরি রেইস লিখেছিলেন যে, এটি প্রাচীণ গ্রীক এবং আরবীয় মানচিত্রের উপর ভিত্তি করে অঙ্কিত হয়েছিল। এমনকি কলম্বাসের মানচিত্র থেকেও সাহায্য নেয়া হয়েছিল যিনি এর মাত্র ২১ বছর আগেই নৌ অভিযানে বের হয়েছিলেন। এই ম্যাপের উল্লেখযোগ্য দিক হলো এর বিস্তারিত বর্ণনা, যেটি ঐতিহাসিকদের বাধ্য করবে কলম্বাসের আমেরিকার আবিস্কারের থিওরীকে পুণর্মূল্যায়ন করতে।



পিরি রেইস এর ম্যাপ ১৫১৩

মানচিত্রটি দক্ষিণ আমেরিকার পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলকে স্পস্টভাবে দেখাচ্ছে, যেটি আফ্রিকা থেকে একদম সঠিক জায়গায় অবস্থিত। ব্রাজিলের উপকূলকে অবিশ্বাস্য স্পস্টভাবে দেখা যাচ্ছে, এমনকি অনেকগুলো নদী মানচিত্রে নিখুঁতভাবে ফুটে উঠেছে। আগেই বলা হয়েছে যে, রেইস কলম্বাসের তৈরী মানচিত্রকেও এর ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু এটা সত্য কলম্বাস কখনো দক্ষিণ আমেরিকায় যাননি। তাহলে এখানে একটা প্রশ্ন এসে যায় ‘তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার এত খুঁটিনাটি হিসেব কোথায় পেলেন’। কাজেই ধরেই নেয়া যায়, তিনি প্রাচীন মুসলিম মানচিত্র থেকে এ সকল তথ্য পেয়েছিলেন যেটিও তার মানচিত্রের ভিত্তি হিসেবে নেয়া হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, রেইস এর মানচিত্রে আন্দিজ পর্বতমালাও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, যেটি রেইসের মানচিত্রের পূর্ণ এক দশক পরে, মানে ১৫২০ সালের আগে কোন ইউরোপীয় কর্তৃক তা চোখে পড়েনি!

এই মানচিত্রটি সম্ভবত বাহ্যিকভাবে মুসলিমদের কাছে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ যে, তারা কলম্বাসের আগে আমেরিকার সন্ধান পেয়েছিলেন।

কলম্বাস কি বলেছিলেন?

১৪৯২ সালে কলম্বাসের সমুদ্রযাত্রার আগেই মুসলিমদের আমেরিকা আবিস্কারের সকল প্রমাণাদির ফলে এটা অনুমান করা দোষের হবে না কলম্বাস স্বয়ং জানতেন যে, তিনিই প্রথম ছিলেন না। স্পেনে মুসলিমদের শেষ রাজবংশের পতনের বছরেই কলম্বাস তার যাত্রা শুরু করেছিলেন। আইবেরিয়ার মানুষের মধ্যে তখনো অনেক মুসলিম ছিলেন এবং মুসলিম স্বর্ণযুগের জ্ঞানের সাক্ষ্য বহন করছিলেন। কলম্বাসের অভিযাত্রী দলের মধ্যে অসংখ্য মরিস্ক(মরিস্ক বলতে ঐসব মুসলিমকে বোঝায় যারা স্পেন এবং পর্তুগাল ত্যাগ না করে বরং খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। ঐ সময় মরিস্ক টার্মটি নিন্দাসূচক অর্থে ব্যবহৃত হত। তবে জোড় করে ধর্মান্তরিত করা হলেও সবাই মনে করত এরা চুপিচুপি ইসলাম ধর্মই পালন করত। এদের আরেক নাম হলো মুর) ছিলেন, যাদের কে জোড় করে ক্যাথলিক করা হয়েছিল অন্যথায় তারা মারা পরতেন। মুসলিমগণ ‘নতুন বিশ্ব’ আবিস্কার করেছিলেন এই কথা কলম্বাস অবশ্যই শুনে থাকবেন। এজন্যই তিনিও অভিযানের ব্যাপারে উতসাহিত বোধ করেছিলেন।

একদা যখন তিনি আমেরিকা পৌঁছলেন তখন তিনি অনেক দৃষ্টান্তই দেখলেন যাতে বোঝা যায় মুসলিমগণ ইতিমধ্যে সেখানে আছেন। তিনি আদিবাসীদের কাছে থাকা সোনা দেখে মন্তব্য করেছিলেন যে, এটা একই পদ্ধতিতে তৈরী, কিছু খাদ মেশানো ঠিক যেমনটি পশ্চিম আফ্রিকার মুসলিমগণ করত। উপরন্ত কলম্বাস উল্লেখ করেছিলেন যে, আদিবাসীদের কাছে সোনা পরিচিত ছিল guanin নামে যেটি মানদিঙ্কা শব্দ ghanin-র সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আর এই ghanin শব্দটি খুব সম্ভবত আরবী শব্দ ghina থেকে এসেছে। যার মানে সম্পদ।

১৪৯৪ সালে কলম্বাস রেকর্ড করেছিলেন যে, তিনি নানাপ্রকার দ্রব্যাদি বোঝাই একটি জাহাজ দেখেছিলেন যেটি আমেরিকা অভিমূখে যাচ্ছিল, আফ্রিকার অধিবাসী দ্বারা সেটি পূর্ণ ছিল, যারা সম্ভবত আদিবাসী আমেরিকানদের সাথে বাণিজ্য যাত্রার পথে ছিল। কলম্বাস তার জার্নালে আরো লিখেছিলেন যে, আদিবাসী আমেরিকানরা তাকে আফ্রিকার কালো মানুষেদের কথা বলেছিল যারা নিয়মিতভাবে তাদের এখানে বাণিজ্যিক কাজে আসতেন।

অতি সম্প্রতি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েব এরদোগান বলেছেন, কলম্বাস নয়, মুসলমানরাই আমেরিকা আবিস্কার করেছিলেন। কলম্বাসের একটি ডায়রির উদ্ধৃতি দিয়ে এরদোগান বলেন, ‘ইসলাম ও লাতিন আমেরিকার মধ্যে পরিচয় হয়েছে বারো শতাব্দি থেকে। ১১৭৮ সালে মুসলমানরা আমেরিকা আবিষ্কার করেছেন; ক্রিস্টোফার কলম্বাস নন।’

আমেরিকার আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের কর্ণধান ইতিহাসবেত্তা ড. ইউসেফ মরুই ১৯৯৬ সালে এক নিবন্ধে লিখেছেন, ‘কলম্বাস তার নিবন্ধে স্বীকার করেছেন যে ১৯৪২ সালের ২১ অক্টোবর সোমবার তার জাহাজ যখন কিউবার উত্তর-পূর্ব উপকূলের জিবারা অতিক্রম করছিল তখন একটি সুন্দর পাহাড়ের চূড়ায় তিনি একটি মসজিদ দেখতে পান।’ যদিও অনেকেই বলে থাকেন কলম্বাস নাকি উপমা হিসেবে মসজিদের নাম ব্যবহার করেছেন।

এ সম্মন্ধে আরো বিস্তারিত জানতে এই লিঙ্ক দেখুন

কাজেই দেখা যাচ্ছে যে, এমনকি কলম্বাসও জানতেন আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেয়া প্রথম ব্যক্তি তিনি নন।

উপসংহারঃ

এটা খুব স্পস্টভাবে প্রমাণিত যে, কলম্বাসের আমেরিকা আবিস্কারের থিওরী একটি পুরাতন গাল-গল্প বৈ কিছু নয়, যা সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই যে, কলম্বাসের যুগ ছিল পৃথিবীর ইতিহাসের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সময় যেটি আমেরিকা এবং ইউরোপের মানুষের জীবনযাত্রার ধরণ চিরতরে পাল্টে দিয়েছিল। যাইহোক, তিনিই প্রথম ব্যক্তি ছিলেন না যিনি আমেরিকার সন্ধান পেয়েছিলেন। আরব, পশ্চিম আফ্রিকা এবং অটোমান মুসলিমদের কাছে এ সংক্রান্ত যথেস্ট তথ্য প্রমাণাদি আছে যার দ্বারা প্রমাণ হয় যে, কলম্বাস ও ইউরোপীয়দের বহু আগে তাদের নৌযান আমেরিকায় পৌঁছেছিল। যেকোন কারণেই হোক, বিভিন্ন দেশের পাঠ্যবইয়ে এখনো কলম্বাস ও তার নাবিকদের ব্যাপক প্রশংসা করা হয় এবং বলা হয় যে, কলম্বাসই ‘প্রথম’ যিনি আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে ‘নতুন বিশ্ব’ আবিস্কার করেছিলেন। প্রাথমিক যুগের মুসলিমদের অনুসন্ধানের প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে এই ধারণার পুনর্মূল্যায়ন করে সাধারণ মানুষকে তাদের অবদানের কথা জানানো এখন সময়ের দাবী।

সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।

বিশেষ দ্রস্টব্যঃ এটি একটি অনুবাদকর্ম। নিচে মূল লেখার লিঙ্ক দেয়া আছে। অনুবাদের মধ্যে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকা বিচিত্র নয়। আশা করি সবাই বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

আর একটা কথা, এই লেখাটি বেশ আগেই লেখা ছিল। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েব এরদোগান সাহেবের বক্তব্যের পরে অনেকেই এটা নিয়ে আলোচনা করছেন। আমিও যোগ দিলাম।

রেফারেন্সঃ মূল লেখা

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৪৬

হরিপদ কেরাণী বলেছেন: লেখাটি অনেক তথ্যবহুল। অজানা অনেক তথ্য জানতে পারলাম। আপনার অনুবাদের মানও ভালো হয়েছে। ধন্যবাদ।

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:২৯

ইছামতির তী্রে বলেছেন: অনুপ্রেরণামূলক মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।

২| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৪

এহসান সাবির বলেছেন: ভালো লেগেছে অনুবাদ।

চমৎকার পোস্ট।

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৪১

ইছামতির তী্রে বলেছেন: আপনাদের মন্তব্যে ভীতি দূর হলো। যাইহোক, মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

৩| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৫

পদ্মপুকুর বলেছেন: মুসলিমরা যেন তাদের ইতিহাস ঐতিহ্য ভূলে যায় এবং অজ্ঞানভিত্তিক জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, সে লক্ষে রেনেসাঁ পরবর্তি ইয়োরোপ যথেষ্ট সাধনা করেছে। এবং তারা উল্লেখযোগ্যভাবে সফলও হয়েছে।
তার ধারাবাহিকতায় আমরা সেটাই জানি, সেটাই শিখি, যা তারা আমাদের শেখায়। শুধু আমেরিকায় নয়, আমরাও শিখেছি যে কলম্বাস প্রথম আমেরিকা আবিষ্কার করেন।

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৪

ইছামতির তী্রে বলেছেন: একমত।

আসলে যেদিন মুসলিমগণ তাদের মূল পরিচয় থেকে দূরে সরে গেছে সেদিন থেকেই তাদের পেছনে ফেরার শুরু।

আমি মন থেকে বিশ্বাস করি, আবার সুদিন আসবে। কবে, সেটাই প্রশ্ন।

সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

৪| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৯

হরিপদ কেরাণী বলেছেন: লেখাটি 'প্রিয় 'তে নিলাম।

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:১৮

ইছামতির তী্রে বলেছেন: শুনে খুব ভাল লাগলো। ভাল থাকবেন।

৫| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:১০

নীল আকাশ ২০১৪ বলেছেন: পৃথিবী যে গোল - এই ধারণা ৫/৬ হাজার বছর আগেও মিশরীয়রা পোষণ করতেন। তাদের তৈরি সমস্ত প্রত্নতাত্তিক কীর্তি এই ধারণার উপরে ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছিল।

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৩১

ইছামতির তী্রে বলেছেন: প্রাচীন সভ্যতাসমূহের অন্যতম একটি হলো মিশরীয় সভ্যতা। সভ্যতার ক্রমবিকাশে তাদের দান বা কৃতিত্ব অপরিসীম। মিশরের সভ্যতা সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে এখনো বিশ্ববাসীর সম্মুখে নতুন রূপে ধরা দিচ্ছে।

যাইহোক, আপনার তথ্যটি জেনে খুব ভাল লাগলো।

সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

৬| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৩

 বলেছেন: চমৎকার পোস্ট

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৫

ইছামতির তী্রে বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আচ্ছা  মানে কি? :) :)

৭| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:১৬

নতুন নকিব বলেছেন:



এক কথায় অসাধারন!

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৭

ইছামতির তী্রে বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

৮| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৭:৩৩

রিফাত হোসেন বলেছেন: আমার ঠিক মনে নাই। আমার তুর্কি কলিগের কাছে নাকি ব্লগে পড়েছিলাম যে তুর্কীরা কলম্বাস এর স্থলে আরেকজনকে স্বীকৃতি দিয়েছে আবিষ্কারক হিসেবে।

উফ... মনে করতেই পারছি না। গোল্ড ফিস মেমোরী নিয়ে বিপদেই আছি। :(
তবে জনাব রেইস কিনা তাও মনে আসছে না।

পোষ্টটা ++

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৭

ইছামতির তী্রে বলেছেন: আমার মনে হয় নামটি পিরি রেইস হবে। আমিও এমনটাই শুনেছিলাম। তবে আমি লেখাটি দাড় করিয়েছি 'Lost Islamic History' পেজের একটা লেখা থেকে। লেখার শেষে এর লিঙ্কও দেয়া আছে।

সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.