নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আম জনতার একজন।

ইছামতির তী্রে

I have a dream.

ইছামতির তী্রে › বিস্তারিত পোস্টঃ

দুনিয়ার সবচেয়ে মহত্তম এক পেশার গল্প।

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১১

এক ভদ্র মহিলা পাসপোর্ট অফিসে এসেছেন পাসপোর্ট করাতে। অফিসার জানতে চাইলেন- আপনার পেশা কি?
মহিলা বললেন, আমি একজন মা।



আসলে, শুধু মা তো কোনো পেশা হতে পারেনা। যাক, আমি লিখে দিচ্ছি আপনি একজন গৃহিনী। মহিলা খুব খুশী হলেন। পাসপোর্টের কাজ কোনো ঝামেলা ছাড়াই শেষ হলো। মহিলা সন্তানের চিকিৎসা নিতে বিদেশ গেলেন। সন্তান সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আসলো।

অনেকদিন পরে, মহিলা দেখলেন পাসপোর্টটা নবায়ন করা দরকার। যেকোনো সময় কাজে লাগতে পারে। আবার পাসপোর্ট অফিসে আসলেন। দেখেন আগের সেই অফিসার নেই। খুব ভারিক্কি, দাম্ভিক, রুক্ষ মেজাজের এক লোক বসে আছেন। যথারীতি ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে অফিসার জানতে চাইলেন- আপনার পেশা কি?

মহিলা কিছু একটা বলতে গিয়েও একবার থেমে গিয়ে বললেন-
আমি একজন গবেষক। নানারকম চ্যালেঞ্জিং প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করি। শিশুর মানসিক এবং শারিরীক বিকাশ সাধন পর্যবেক্ষণ করে,সে অনুযায়ী পরিকল্পণা প্রণয়ন করি। বয়স্কদের নিবিড় পরিচর্যার দিকে খেয়াল রাখি। সুস্থ পরিবার ও সমাজ বিনির্মাণে নিরলস শ্রম দিয়ে রাষ্ট্রের কাঠামোগত ভিত মজবুত করি। প্রতিটি মূহুর্তেই আমাকে নানারকমের চ্যালেঞ্জের ভিতর দিয়ে যেতে হয় এবং অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তা মোকাবিলা করতে হয়। কারণ,আমার সামান্য ভুলের জন্য যে বিশাল ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

মহিলার কথা শুনে অফিসার একটু নড়ে চড়ে বসলেন। মহিলার দিকে এবার যেন একটু শ্রদ্ধা আর বিশেষ নজরে তাকালেন। এবার অফিসার জানতে চাইলেন-

আসলে আপনার মূল পেশাটি কি? যদি আরেকটু বিশদভাবে বলতেন। লোকটির আগ্রহ এবার বেড়ে গেলো।

আসলে, পৃথিবীর গুণীজনেরা বলেন - আমার প্রকল্পের কাজ এতো বেশি দূরহ আর কষ্ট সাধ্য যে, দিনের পর দিন আঙুলের নখ দিয়ে সুবিশাল একটি দীঘি খনন করা নাকি তার চেয়ে অনেক সহজ।

আমার রিসার্চ প্রজেক্ট তো আসলে অনেকদিন ধরেই চলছে। সর্বক্ষণ আমাকে ল্যাবরেটরি এবং ল্যাবরেটরীর বাইরেও কাজ করতে হয়। আহার,নিদ্রা করারও আমার সময়ের ঠিক নেই। সব সময় আমাকে কাজের প্রতি সজাগ থাকতে হয়। দুজন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অধীনে মূলত আমার প্রকল্পের কাজ নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে চলছে।

মহিলা মনে মনে বলেন, দুজনের কাউকে অবশ্য সরাসরি দেখা যায়না। (একজন হলেন, আমার স্রষ্টা আরেকজন হলো বিবেক)। আমার নিরলস কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ আমি তিনবার স্বর্ণপদকে ভূষিত হয়েছি। (মহিলার তিন জন কন্যা সন্তান ছিল।)

এখন আমি সমাজবিজ্ঞান, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান আর পারিবারিক বিজ্ঞান এ তিনটি ক্ষেত্রেই একসাথে কাজ করছি, যা পৃথিবীর সবচেয়ে জটিলতম প্রকল্পের বিষয় বলা যায়। প্রকল্পের চ্যালেঞ্জ হিসাবে একটি অটিস্টিক শিশুর পরিচর্যা করে মানুষ হিসাবে গড়ে তুলছি, প্রতিটি মুহুর্তের জন্য।

‘ঊষর মরুর ধূসর বুকে, ছোট্ট যদি শহর গড়ো,
একটি শিশু মানুষ করা তার চাইতেও অনেক বড়'।

অফিসার মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে মহিলার কথা শুনলেন । এ যেন এক বিস্ময়কর মহিলা। প্রথমে দেখেতো একেবারে পাত্তাই দিতে মনে হয়নি।

প্রতিদিন আমাকে ১৪ থেকে ১৬ ঘন্টা আবার কোনো কোনো দিন আমাকে ২৪ ঘন্টাই আমার ল্যাবে কাজ করতে হয়। কাজে এতো বেশি ব্যস্ত থাকতে হয় যে, কবে যে শেষবার ভালো করে ঘুমিয়ে ছিলাম কোনো রাতে,তাও আমার মনে নেই। অনেক সময় নিজের আহারের কথা ভুলে যাই।আবার অনেক সময় মনে থাকলেও সবার মুখে অন্ন তুলে না দিয়ে খাওয়ার ফুরসত হয়না । অথবা সবাইকে না খাইয়ে নিজে খেলে পরিতৃপ্তি পাই না। পৃথিবীর সব পেশাতেই কাজের পর ছুটি বলে যে কথাটি আছে আমার পেশাতে সেটা একেবারেই নেই। ২৪ ঘন্টাই আমার অন কল ডিউটি।

এরপর আমার আরো দুটি প্রকল্প আছে। একটা হলো বয়স্ক শিশুদের ক্লিনিক, যা আমাকে নিবিড়ভাবে পরিচর্যা করতে হয়। সেখানেও প্রতিমুহুর্তে শ্রম দিতে হয়। আমার নিরলস কাজের আর গবেষণার কোনো শেষ নেই ।

আপনার হয়তো বা জানতে ইচ্ছে করছে, এ চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প পরিচালনায় আমার বেতন কেমন হতে পারে। আমার বেতন ভাতা হলো- পরিবারের সবার মুখে হাসি আর পারিবারিক প্রশান্তি। এর চেয়ে বড় অর্জন আর বড় প্রাপ্তি যে কিছুই নেই। এবার আমি বলি, আমার পেশা কি?

আমি একজন মা। এই পৃথিবীর অতিসাধারণ এক মা।

মহিলার কথা শুনে অফিসারের চোখ জলে ভরে আসে। অফিসার ধীরে ধীরে চেয়ার ছেড়ে ওঠেন। নিজের মায়ের মুখ চোখের সামনে ভেসে ওঠে।তিনি খুব সুন্দর করে ফর্মের সব কাজ শেষ করে, মহিলাকে নমস্কার করে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দেন। তারপর নিজের অফিস রুমে এসে একটি ধূসর হয়ে যাওয়া ছবি বের করে -ছবিটির দিকে অপলক চেয়ে থাকেন। নিজের অজান্তেই চোখের জল টপ টপ করে ছবিটির ওপর পড়তে থাকে।

আসলে "মা"-এর মাঝে যেন নেই কোনো বড় উপাধির চমক।বড় কোনো পেশাদারিত্বের করপোরেট চকচকে ভাব।কিন্তু কত সহজেই পৃথিবীর সব মা নিঃস্বার্থ ভাবে প্রতিটি পরিবারে নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। মাতৃত্বের গবেষানাগারে প্রতিনিয়ত তিলেতিলে গড়ে তুলছেন একেকটি মানবিক নক্ষত্র।

সেই মা সবচেয়ে খুশি হন কখন জানেন? যখন সন্তান প্রকৃতই মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে ধনে নয়, সম্পদে নয়,বিত্তে নয়, ঐশ্বর্যে নয় শুধু চরিত্রে আর সততায় একজন খাঁটি মানুষ হয়।

দুনিয়ার সকল মায়ের প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।

সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।

[ইন্টারনেট থেকে পাওয়া]

মন্তব্য ২৩ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৩

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: অসাধারন! মুগ্ধতা একরাশ

মায়ের জন্য অন্তহীন শ্রদ্ধা আর ভালবাসা

+++

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৭

ইছামতির তী্রে বলেছেন: সত্যি অসাধারণ। আমি পড়ে একেবারে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলাম। তাই শেয়ার দিলাম।

মায়ের জন্য অন্তহীন শ্রদ্ধা আর ভালবাসা।

ধন্যবাদ ভাই।

২| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪২

জাইদী রেজা বলেছেন: এক কথায় অসাধারণ ।
unparalleled

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫০

ইছামতির তী্রে বলেছেন: হুম। অসাধারণ গল্প, অসাধারণ ও অদ্বিতীয় পেশা।

ধন্যবাদ ভাই।

৩| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৭

মনিরা সুলতানা বলেছেন: আপনি নেটে পেয়েছেন !! বেশ !
এটা আমাদের ই এক ব্লগারের লেখা "খেয়া ঘাট

চমৎকার লেখা টি আপনার জন্য আবার পড়া হল ।

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫২

ইছামতির তী্রে বলেছেন: 'খেয়া ঘাট' ভাইয়ের লেখা?? উনার সাথে ব্লগেই আমার কথা হয়েছে। সেও অবশ্য অনেকদিন আগে।

আমি অবশ্য আজই আমাদের ফ্রেন্ডদের এক গ্রুপে দেখলাম। সেখানে কোন রেফারেন্স নেই। কিন্তু আমি নিশ্চিত ছিলাম সেটা তার লেখা না। তাই আমি রেফারেন্স হিসেবে 'ইন্টারনেট' ব্যবহার করেছি। এছাড়া আমার উপায় ছিল না।

ধন্যবাদ আপনাকে।

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৫

ইছামতির তী্রে বলেছেন: @মনিরা সুলতানা, আপা উনার লেখার লিঙ্কটা থাকলে শেয়ার দিন, প্লিজ। আমিও দেখছি।

৪| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৭

তারেক ফাহিম বলেছেন: মায়ের জন্য অন্তহীন শ্রদ্ধা।

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:০৪

ইছামতির তী্রে বলেছেন: মায়ের জন্য অন্তহীন শ্রদ্ধা।

ধন্যবাদ ভাই

৫| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:০০

মনিরা সুলতানা বলেছেন: ফেসবুকে দেখেন উনার ফেসবুকে ই আছে ।

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:০৫

ইছামতির তী্রে বলেছেন: ফেসবুকে উনার সাথে আমি কানেক্টেড না। আইডি কি খেয়াঘাট নামেই?

৬| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:৩৩

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: আমার প্রকল্পের কাজ এতো বেশি দূরহ আর কষ্ট সাধ্য যে, দিনের পর দিন আঙুলের নখ দিয়ে সুবিশাল একটি দীঘি খনন করা নাকি তার চেয়ে অনেক সহজ। একদম সত্য।

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:০৬

ইছামতির তী্রে বলেছেন: এই উপমা দিয়েও মায়ের কাজকে বোঝানো সম্ভব না।

ধন্যবাদ ভাই।

৭| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:৫৪

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: চমৎকার পোস্ট। মা'দের মর্যাদা সত্যি বিশাল পর্বত সমান বললে ভুল হবে তার কোন তোলনায় হয়না।

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:০৭

ইছামতির তী্রে বলেছেন: মায়ের অবদানের তুলনা হয় না।

ধন্যবাদ ভাই।

৮| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:৫৩

রাজীব নুর বলেছেন: পড়েছি আগে।

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:০৮

ইছামতির তী্রে বলেছেন: আমি কালকেই প্রথম দেখেছি। ফেসবুকের একটা গ্রুপ পেজে।

ধন্যবাদ ভাই।

৯| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৩৮

সুমন কর বলেছেন: চমৎকার !! শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:০৯

ইছামতির তী্রে বলেছেন: সত্যি চমৎকার। এই লেখাটা নাকি ব্লগার 'খেয়া ঘাট' ভাইয়ের। আগে জানা ছিল না।

ধন্যবাদ ভাই।

১০| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৫৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: মায়ের চেয়ে মর্যাদার ও সম্মানের মানুষ পৃথিবীতে আর কেউ নেই। পৃথিবীর সকল মায়ের প্রতি অতল শ্রদ্ধা।

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:১০

ইছামতির তী্রে বলেছেন: একদম সত্যি।

পৃথিবীর সকল মায়ের প্রতি অতল শ্রদ্ধা। ধন্যবাদ ভাই।

১১| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:৩৬

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: অসাধারন!মুগ্ধতা রেখেগেলাম।বাবামায়ের স্মৃতি মনেআসা নিয়ে ব্লগ ছাড়লাম।শুভেচ্ছা রইল।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:৩৮

ইছামতির তী্রে বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.