নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আম জনতার একজন।

ইছামতির তী্রে

I have a dream.

ইছামতির তী্রে › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলা ভাষা ও ‘আন্তর্জাতিক ভাষা’ ভাবনা

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:৪০

গতকাল ছিল মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ভাষা শহীদদের স্মরণে দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়েছে। বিষয়টি আমাদের জন্য সত্যি খুব গর্বের এবং সম্মানের। মহান ভাষা শহীদগণের আত্মত্যাগ বিফলে যায়নি।



আনুষ্টানিকতার ব্যাপারটা ভালই। তবে সামগ্রিকভাবে বিশ্বের বুকে মাতৃভাষা বাংলার অবস্থান কোথায়? আরো স্পস্ট করে বললে, বাংলা ভাষাভাষী মানুষের বাইরে বাংলা ভাষার গুরুত্ব বা প্রভাব কতটুকু? দুঃখজনক হলেও সত্য, বিশ্ব পরিমন্ডলে বাংলার ভাষার গুরুত্ব, মর্যাদা, প্রভাব নাই বললেই চলে। এটি বিশ্বের বুকে স্রেফ ‘একটি দিবসেই’ সীমাবদ্ধ।

ভাষা মহান আল্লাহর শ্রেষ্ট নেয়ামত। ভাষার সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং আল্লাহ। কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে 'নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডল সৃষ্টি এবং তোমাদের স্ব স্ব (মাতৃ) ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য, তাঁর (আল্লাহর) নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্যতম (৩০:২২)’। সারা বিশ্বে হাজার হাজার ভাষা আছে। শুধু ভারতেই প্রায় তিন হাজারের মত ভাষা বিদ্যমান। তবে সারাবিশ্বের অসংখ্য ভাষার মধ্যে মাত্র গুটিকয়েক ভাষাই ‘আন্তর্জাতিক ভাষা’ হয়ে ওঠে। সিংহভাগ ভাষাই নিজ গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। একটা ভাষা কিভাবে প্রভাবশালী এবং ‘আন্তর্জাতিক ভাষা’ হয়ে ওঠে?

আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান মতে, মোটা দাগে একটা ভাষার ‘আন্তর্জাতিক ভাষা’ হয়ে ওঠার পেছনে মূল নিয়ামক হিসেবে কাজ করে তিনটি বিষয়, যথাঃ সামরিক শক্তি, জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং অর্থনীতি। এই তিনটি উপাদান ছাড়া কোন ভাষাই বিশ্বের বুকে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয় না। ইতিহাস এর সাক্ষ্য দেয়। এই তিনটি উপাদান যথেষ্ট পরিমাণে বিদ্যমান ছিল বলেই প্রাচীনযুগে হিব্রু, গ্রীক ও ল্যাটিন ভাষা; মধ্যযুগে আরবি, ফার্সি, টার্কিশ, স্প্যানীশ বা পর্তুগীজ ভাষা খুবই প্রভাবশালী ছিল। স্ব স্ব সময়ে উল্লেখিত প্রতিটি ভাষাই বিশ্বের বহু অঞ্চলে প্রতাপের সাথে রাজত্ব করেছে। এমনকি এসব ভাষার প্রভাব এখনো বিদ্যমান। আবার একই কারণে আধুনিক যুগে এসে ইংরেজী, ফ্রেঞ্চ এবং অধুনা চাইনিজ ভাষা বিশ্বের প্রভাবশালী ভাষা হিসেবে স্বীকৃত। ভাষার শক্তি, মাহাত্ব্য, মর্যাদা, প্রভাব সবকিছুই এই তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। এর হেরফের হলে ভাষা তার অবস্থান ও মর্যাদা দ্রুত হারিয়ে ফেলে। উদাহরণস্বরুপ, এই ১৯৩৫ সালেও উপমহাদেশের সরকারী ভাষা ছিল ফার্সি; আবার এক সময় আরবীর প্রভাবে ফার্সির মত শক্তিশালী ভাষা পারস্য অঞ্চল থেকে হারিয়ে যেতে বসেছিল। এক সময় বিশ্বের সকল প্রান্তে ল্যাটিন আর গ্রীকের ব্যাপক প্রভাব ছিল। বোধগম্য কারণেই এখন সেটা নাই। আরবী ভাষা অবশ্য স্বমহিমায় টিকে আছে। কারণ এটা ধর্মীয় ভাষাও বটে। আবার বিপরীত উদাহরণও আছে। সামরিক শক্তি অপরিমেয় থাকা সত্বেও জ্ঞান-বিজ্ঞানের ঘাটতি থাকায় পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা চেঙ্গিস খানের মঙ্গোলীয় ভাষা কেউই গ্রহণ করেনি।



যাইহোক, আমাদের বাংলা ভাষা কি কখনো বিশ্বের বুকে প্রভাবশালী কিংবা ‘আন্তর্জাতিক ভাষা’ হয়ে উঠতে পারবে? ইতিহাসই এটা বলে দেবে। তবে আপাতদৃষ্টিতে এর দূরতম সম্ভাবনাও পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

তাহলে, বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষ কি বরাবর পিছিয়েই থাকবে? নিজেদের উন্নত করার অন্য কোন উপায় আছে কি? অবশ্যই আছে।

এজন্য আজকের বিশ্বে যে ভাষাটা ছড়ি ঘুড়াচ্ছে তা ভালভাবে রপ্ত করা আবশ্যক। আমরা সবাই জানি ইংরেজীই এখন বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ভাষা। তাই এটি উত্তমরূপে রপ্ত করার বিকল্প নেই। ইংরেজীর উপর ভর করেই আমরা বহুদুর এগিয়ে যেতে পারব। শুধুমাত্র ভাষার সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা দেশে বা দেশের বাইরে বহু পিছিয়ে আছি। প্রবাসী ভাই-বোনদের দেখলেই বোঝা যায় ভাষার সীমাবদ্ধতা তাদের কতটা পিছিয়ে রেখেছে। তারা কঠোর পরিশ্রম করেও আয় করে সামান্য, আর অন্য দেশের মানুষ শুধুমাত্র ইংরেজী ভাষা ভাল জানার কারণে বড় বড় পদ-পদবি বাগিয়ে বেশী আয় করছে। এই সীমাবদ্ধতা না পেরোলে ভাষা দিবসের চেতনা বিশেষ কোন কাজে আসবে বলে আমার মনে হয় না।

চীনা ভাষায় একটা প্রবাদ আছে। বাংলায় অনুবাদ করলে প্রবাদটির অর্থ দাঁড়ায় এমন: নতুন একটা ভাষা শেখা মানে হলো পৃথিবীটা একটা নতুন জানালা দিয়ে দেখা। সত্যিই তো! পৃথিবীতে অসংখ্য ভাষা আছে, আর আমাদের সামনেও আছে অসংখ্য বন্ধ জানালা।
কাজেই শুধুমাত্র মাতৃভাষার মধ্যে সীমাবদ্ধতা আমাদের দুনিয়াকে ছোট করে দিতে পারে। অস্ট্রীয় দার্শনিক লুডভিগ ভিটগেনস্টাইন বলেছেন, ‘The limits of my language mean the limits of my world.” আর ভিন্ন ভাষা আমাদের ভবিষ্যত চলার পথকে আরও মসৃণ করতে পারে। ইংল্যান্ডের সমসাময়িক মনোবিজ্ঞানী ফ্রাঙ্ক স্মিথ এর কথা এর সত্যতা মেলে। তিনি বলেছেন, “One language sets you in a corridor for life. Two languages open every door along the way.”



তাই আমাদের ইংরেজী বা অন্য কোন প্রভাবশালী ভাষা শেখায় মনোযোগী হতে হবে। একটা নতুন ভাষা আমাদের শুধু অর্থনৈতিকভাবেই নয় সামাজিকভাবেও লাভবান করবে। মহামতি নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছেন, "যদি তুমি কারো সাথে তোমার ভাষায় কথা বল, তার কাছে যেতে পারবে; যদি তার ভাষায় কথা বল, তার হৃদয়ে প্রবেশ করতে পারবে"।

এর মানে কিন্তু এই না যে, বাংলা ভাষার প্রতি আমার শ্রদ্ধা নেই। শ্রদ্ধা-ভালবাসা যথেষ্ট পরিমাণই আছে। আসলে আমাদের বাস্তববাদী হতে হবে। আমাদের নিজেদের সামরিক শক্তি, শিক্ষা-দীক্ষা এবং অর্থনৈতিক শক্তি যেহেতু দুর্বল সেহেতু আমাদের অন্যের ভাষায় ভর দিয়ে নিজেদের বৈতরণী পার হতে হবে। আর অর্থনৈতিক শক্তি আমাদের ভাষাকেও শক্তিশালী করবে।

আমাদের সকল ভাষা শহীদগণের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। তাদের আত্বার মাগফেরাতের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করছি।

সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:২৬

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: আত্মত্যাগ, আত্মার - বানান দু'টো এমন হওয়া উচিৎ।

গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট। তবে এখন অনেক এই ব্যাপারে সচেতন হয়েছে। ইংলিশ মিডিয়ামগুলোতে ছেলেমেয়েদের পড়ানোর যে প্রবণতা এখনকার বাবামা'দের মধ্যে দেখা যাচ্ছে, তা এর প্রমাণ বহন করে।

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:২১

ইছামতির তী্রে বলেছেন: হায়! আমি বানানটা একদম খেয়ালই করিনি। ধন্যবাদ।

ঠিকই বলেছেন। এখন সবাই বেশ সচেতন হয়েছে।

ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

২| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৫

আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেছেন: সুন্দর বলেছেন

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৪

ইছামতির তী্রে বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

৩| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৬

আখেনাটেন বলেছেন: দেশের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড শক্তিশালী হলে জাতির অন্য বিষয়গুলোও তখন এমনিতেই বৈশ্বিক রূপ নিবে। কোরিয়ান, মালয়, তার্কিশরা এর জ্বলন্ত উদাহরণ।

জাতিকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রসরগামী করে তুলুন। আর ফলটা দেখুন। ভাষা গেল, জাত গেল, সংস্কৃতি গেল ইত্যাদি চিল্লা-ফাল্লা করে মানুষকে জানাতে হবে না।

তা বাংলাদেশে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা কি বাংলা ভাষা উৎকর্ষের সহায়ক?

ভালো লিখেছেন।

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৬

ইছামতির তী্রে বলেছেন: একমত। সব কিছুতেই জাত যায় না।

ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

৪| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:০২

টারজান০০০০৭ বলেছেন: কি হইত , জিন্নাহ যদি একালের হইতেন, আর ঘোষণা করিতেন,"English, and English shall be the state language of Pakistan"?

সময় পাইলে দেখিয়া আইসেন !

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৬

ইছামতির তী্রে বলেছেন: শিরোনামটা দারুণ হয়েছে। অবশ্যই পড়ব ইনশাআল্লাহ।

ধন্যবাদ।

৫| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৮:২৮

মলাসইলমুইনা বলেছেন: আপনার লেখার থিমটার সাথে আমি একমত হলাম | কিন্তু এখানে কিন্তু আরো কিছু কথা আছে যেমন ইংরেজি ভাষা আমাদের জানা দরকার এটা আমাদের জ্ঞান অর্জনে খুবই সহায়ক হবে | কিন্তু আমাদের কিন্তু জনসংখা অনেক |আমাদের শ্রম শক্তিকে নিজের দেশে ব্যবহার করেই কিন্তু আমাদের হবে না | আমাদের শ্রমশক্তিকে বিদেশে রপ্তানি করতেও হবে | এখন রপ্তানি করার জায়গা বা দেশ গুলোতে কি শুধু ইংরেজিই ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয় ? এই প্রশ্নটাও কিন্তু ভাবতে হবে | মধ্যপ্রাচ্য আমাদের শ্রম শক্তির জন্য একটা বিরাট জায়গা | যদিও সেখানে সুযোগ সংকুচিত হয়ে আসছে তবুও আমার মনে হয় আরো অনেকদিন এখানে শ্রম রপ্তানির সুযোগ এখনো আছে আমাদের যেহেতু এই দেশগুলো তাদের উন্নয়ন কার্যক্রম দেখো বাড়ানোর চেষ্টা করছে শুধু তেলের উপর নির্ভরতা কমিয়ে | তাই আরবি ভাষাটা শেখানো দরকার আমাদের টার্গেট গ্রূপকে | সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যে রাষ্ট্রগুলো হয়েছে এদের অনেক দেশই কিন্তু এখনো ভালো সুযোগ আছে শ্রম রপ্তানির জন্য | আফ্রিকার অনেক দেশেও ভাষার সীমাববদ্ধতাটা কাটিয়ে উঠা গেলে আমাদের সুযোগ আছে বলেই আমি জানি | তাই শিক্ষাব্যবস্থাটা এমন করা দরকার তা যেন বেকার উৎপাদনের মেশিন না হয়ে যায় | মানুষকে প্রয়োজনীয় স্কিলগুলো শিক্ষার মাধ্যমে প্রোভাইড করতে হবে | তাতেই উন্নয়নের সবচেয়ে জরুরি শর্তটা পূরণ হবে | উন্নয়নের কন্ডিশনটা তৈরী করতে পারলে উন্নয়ন হওয়া কষ্টকর কোনো ব্যাপার না |

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:৪২

ইছামতির তী্রে বলেছেন: খুবই যৌক্তিক কথা বলেছেন। আমি আপনার সঙ্গে একমত। শুধু একাডেমিক দিকটা ভাবলেই হবে না। সকল স্তরের কথাই ভাবতে হবে। মোট কথা, যেখানে যেটুকু দরকার আমাদের সেটাই করতে হবে। সেক্ষেত্রে আরবি, ইংরেজী, চাইনিজ, কোরিয়ান ইত্যাদি ভাষাগুলো আগে আসবে। কারণ এই কয়েকটা ভাষা আয়ত্বে থাকলে গোটা বিশ্বই একটা দেশ মনে হবে।

ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.