নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আম জনতার একজন।

ইছামতির তী্রে

I have a dream.

ইছামতির তী্রে › বিস্তারিত পোস্টঃ

করোনার উত্থান এবং পতন

২৭ শে মে, ২০২০ রাত ১০:১৭

গত ডিসেম্বরে চীনের উহানে করোনাভাইরাস যখন প্রথম দেখা দেয় তখন চীন ছাড়া বাকি দেশগুলোর তেমন গরজ ছিল না। চীনে যখন মানুষ মরছিল তখন বেশির ভাগ দেশের ধারণা ছিল "আমাদের এখানে আসবে না"। এমন ভাবনার কিছু যৌক্তিক কারণ ছিল। কারণ এর আগের কোন ভাইরাসই এভাবে দুনিয়াব্যাপী ছড়িয়ে পড়েনি। সেজন্য সবার মধ্যে একটা গা-ছাড়া ভাব ছিল। যাইহোক তখন কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি সামনে কি ভয়াবহ দিন অপেক্ষা করছে।

চীন প্রথমে ভড়কে গেলেও খুব দ্রুত তারা ঘুরে দাড়ায়। একনায়কতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার পুরো সুবিধা পায় দেশটি। লকডাউন মানে লকডাউন। কোন ধানাইপানাই চলবে না। সরকার নিজেই ঘরে ঘরে তালা লাগিয়ে দিয়েছিল। তাছাড়া কিট এবং অন্যান্য চিকিৎসা সামগ্রী যথেষ্ট ছিল চীনের। ফলে অল্প দিনের মধ্যেই তারা একটা ভালো অবস্থানে পৌঁছে যায়। তবুও করোনা চীনকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। ৫হাজারের কাছাকাছি মানুষ মারা যায়। যদিও আমেরিকা এ সংখ্যা পঞ্চাশ হাজার বলে ধারণা করে।

করোনার বিশ্বযাত্রাঃ
চীন থেকে ভাইরাস প্রথমে যায় ইউরোপে। ইউরোপ শুরুতে গুরুত্ব দেয়নি। এর মাশুল খুব দ্রুতই দিতে হয়। একে একে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, বেলজিয়াম, জামানীসহ অনেক দেশ টালমাটাল হয়ে যায়। ইউরোপ উন্নত বিশ্ব হিসেবে পরিচিত। কিন্তু করোনা তাদের একেবারে ৩য় বিশ্ব বানিয়ে ছেড়েছে। মনে হচ্ছে করোনা আমাদের দেশীয় নকশাল আন্দোলনের মত "ধনীক শ্রেণিকে খতম করো" মতবাদে বিশ্বাসী। যাইহোক করোনার ছোবলে এখনো ইউরোপ মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না। মোট মৃত্যুর ৮০% ইউরোপ আমেরিকার মতো উন্নতবিশ্বে। সত্যি তাদের এমন বেহাল দশা এর আগে কবে হয়েছিল তা এক গবেষণার বিষয়।

ইউরোপ থেকে করোনার নেক্সট গন্তব্য আমেরিকা। যদিও ট্রাম্প বারে বারে চীনকে দোষারোপ করছে; ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নিয়ে জলঘোলা করছে। ষর‍যন্ত্র তত্ত্ব পুরোটা রাজনৈতিক এবং প্রতিহিংসা। কিন্তু সত্যি হলো আমেরিকায় করোনার বিস্তার ঘটেছে ইউরোপ থেকে। সিএনএন এর একটা প্রোগ্রামে আমি নিজ কানে শুনেছি এটা। যাইহোক, ট্রাম্প প্রথমে এটাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়। নরমাল ফ্লু হিসেবে চিহ্নিত করে একে। সেজন্য প্রস্তুতিও যথেষ্ট ছিল না। অবশ্য কিটসহ অন্যান্য সামগ্রী তাদের ছিলও না। পরে সেই চীন থেকেই এনেছে। নরমাল ফ্লু এর মত সেই করোনা আমেরিকার মাটিতে রীতিমতো প্রলয়নাচন দেখাচ্ছে। এখনো আমেরিকার অবস্থাই সবচেয়ে খারাপ। মোট মৃত্যুর প্রায় ২৫% আমেরিকার। প্রায় লাখখানেক মানুষ ইতিমধ্যে মারা গেছে। সংখ্যা নিঃসন্দেহে আরও বাড়বে।

এরপর একই সাথে করোনা ল্যাতিন আমেরিকা এবং এশিয়ার অন্যান্য দেশে প্রবেশ করে। এভাবে সুপাসনিক গতিতে বিশ্বের প্রতিটি কোণে কোণে পৌঁছে গেছে করোনাভাইরাস। কোন দেশই প্রাথমিকভাবে একে গুরুত্ব দেয়নি। যখন বুঝতে পেরেছে তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ এবং করোনাঃ
বাংলাদেশও অন্যান্য দেশের মতোই প্রথম দিকে গুরুত্ব দেয়নি। তবুও অন্যান্য অনেক দেশের চেয়ে শুরুর দিকে আমাদের রেসপন্স ভালো ছিল। মার্চের একুশ তারিখে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। ভালোই চলছিল। কিন্তু গরীব দেশ হলে যায়। জীবন জীবিকা এবং সরকারের নিজের প্রয়োজনে লকডাউন শিথিল করে দিল। এটা এমন সময় করা হলো যখন পরিস্থিতি সবচেয়ে জটিল। প্রতিদিন গড়ে দেড় দুই হাজার করে শনাক্ত হচ্ছে; মারা যাচ্ছে গড়ে বিশজন মানুষ। এহেন পরিস্থিতি উপেক্ষা করে রাস্তায় প্রতিদিন যে পরিমাণ মানুষ বের হচ্ছে তাতে করোনার 'কাকে রেখে কাকে ধরব' অবস্থা। বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে করোনা নিজে লকডাউনে আছে; আর মানুষ করোনাকে খুঁজছে। আল্লাহ রহম করো।

পতন কবে?
করোনা নিয়ে সারাবিশ্বের সবার প্রেডিকশন ভুল ছিল। প্রথমে কেউই গুরুত্ব দেয়নি। এর মাশুল দিতে হচ্ছে সবাইকে। এখন আবার করোনা কখন শেষ হবে এই নিয়েও দ্বিধায় পরেছে। একবার বলা হলো 'এই তো মাস কয়েকের মধ্যে চলে যাবে'। কিন্তু করোনা যাওয়ার নামগন্ধ নেই। বরং আরও ছড়িয়ে যাচ্ছে। করোনা নিয়ে সবশেষ কথা হলো এটা সহসা যাবে না। একে নিয়েই চলতে হবে। ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে উঠে পরে লেগেছে গোটা বিশ্বের বাঘা বাঘা সব চিকিৎসা বিজ্ঞানী। কিন্তু একটা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য মিনিমাম ৯-১৮ মাস সময় লাগে। তবুও কোন কিছুই নিশ্চিত না। এর আগের অনেক ভাইরাসের টিকা এখনো পাওয়া যায়নি।

এত উৎকর্ষতা, এত উন্নত প্রযুক্তি নিয়েও কেন মানুষ পারছে না? গোটা বিশ্বে অন্তত কয়েকশো নোবেল লরিয়েট চিকিৎসা বিজ্ঞানী আছেন। কাড়ি কাড়ি টাকা ঢালা হচ্ছে। তবুও পারছে না কেন? এর একটাই কারণ; মানুষের সীমাবদ্ধতা। মানুষ চাইলেই সব পারে না। ইচ্ছে করলেই হয় না। বরং মানুষ বেশিরভাগ সময়ই প্রকৃতির কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করে। তিক্ত হলেও এটাই সত্যি।

তবে মানুষের প্রচেষ্টা অব্যহত আছে। হয়তো একদিন এসেও যাবে ভ্যাকসিন। ততদিনে হয়তো আরেকটি ভাইরাস এসে বিশ্বকে অস্থির করে তুলবে। এটা অনেকটা এমন যে, একজন সুপার ট্যালেন্ট শিক্ষক তার অনুগত, নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষার্থীকে একটা অংকের সমাধান করতে দেয়। শিক্ষার্থী সেটার সমাধান করতে না করতেই আরেকটা সমস্যা এসে হাজির। এভাবে চলছে তো চলছেই। এই খেলার যেন শেষ নেই।

শেষ কথাঃ
মানুষ যেটা ভাবে, যেটা প্রেডিকশন করে সেভাবে কিছু হয় না। মানুষ শুধু বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে অনুমান করতে পারে, ধারণা দিতে পারে। কিন্তু এটা 'ঘটবেই' বা 'হবে না' এটা জোর দিয়ে বলতে পারে না। বরং মহান স্রস্টা যেটা ভাবেন সেভাবেই সব হয়। পবিত্র কুরআনের সুরা আল্লাহ বলেছেন, "

“তোমাদের ইচ্ছে করলেই হবে না, যদি বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ ইচ্ছে না করেন"। [সূরা তাকবীর, আয়াত: ২৯
আল্লাহর ইচ্ছেগুলো অন্যরকম। সূরা আল বাকারা (البقرة), আয়াত: ১১৭ এ আল্লাহ বলেনঃ

অর্থঃ তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের উদ্ভাবক। যখন তিনি কোন কার্য সম্পাদনের সিন্ধান্ত নেন, তখন সেটিকে একথাই বলেন, ‘হয়ে যাও’ তৎক্ষণাৎ তা হয়ে যায়।

করোনার ছোবল থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করো প্রভু!

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে মে, ২০২০ রাত ১০:৪৬

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: করোনা নিজে লকডাউনে আছে; আর মানুষ করোনাকে খুঁজছে।
............................................................................................
আমরা সবাই করোনা নিয়ে তামাশা করছি, নিউজিল্যান্ড,জাপান,তাইওয়ান
তা করেনি , তাই তারা আজ বিপদমুক্ত ।

২৯ শে মে, ২০২০ রাত ১:০০

ইছামতির তী্রে বলেছেন: হুম। আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না একদ। কি যে হবে আল্লাহ জানেন।
মন্তব্য করার জন্য ধন্যবা।

২| ২৭ শে মে, ২০২০ রাত ১১:০৩

আধাপাগল বলেছেন: করোনার বিশ্বযাত্রা
চীন থেকে ভাইরাসটি প্রথমে ইউরোপে যায়।

ভাইরাসটা তৈরী হইছে কোথায় - এ নিয়াও তর্কের শেষ নাই। কেউ বলে চিনে তৈরী হইছে। কেউ বলে আম্রিকায় তৈরী করছে। কেউ বলে প্রাকৃতিক। এখনো ১০০% সঠিকভাবে বিষয়টার সমাধাণ হয় নাই, হবেও না ইনশাআল্লাহ।

আপনি যে বললেন, ভাইরাসটি চিন থেকে প্রথমে ইউরোপ ও আম্রিকায় যায়। কিন্তু কেন? এই প্রশ্নের উত্তর কি কেউ খুজছে? প্রথমে তো চিনে দেখা দিল। পরে সেটা জাপানেও ঢুকতে পারতো। অথবা চিনের চতুর্দিকে যে সমস্ত দেশ আছে সেগুলোতেও ঢুকতে পারতো। কিন্তু ইউরোপ ও আম্রিকায় কেন গেল?

দ্বিতীয় প্রশ্ন হল, ইউরোপ ও আম্রিকার মত উন্নত দেশগুলিতে যেভাবে ধরছে ও মারছে সেই তুলনায় আমাদের উপমহাদেশে এবং মধ্য প্রাচ্যে বলতে পারেন অনেক কম। এবার প্রশ্ন করুন, কেন কম? উপমহাদেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যে কি আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে পারদর্শী? না।

এই ২টা প্রশ্ন নিয়ে মাথা ঘামানো দরকার নয় কি? দেখুনতো গ্রহণযোগ্য কোনো উত্তর পাওয়া যায় কিনা।

লক ডাউন
আরেকটা জিনিস দেখবেন, যাদের পকেট ভরা তারা সারাটা জীবন লক ডাউনের পক্ষে। কারণ তাদের পকেটে ও ব্যাংকে মাল আছে। আগামী ১শ বছর যাবৎ যদি নাতি পুতি মিলে খায় তবুও শেষ হবে না, এই রকম মাল। ফলে তারা লক ডাউন - লক ডাউন করে গলা ফাটাইতেছে।

অন্য দিকে যারা রোজ গতর খাটায়ে কামাই করে রোজ খাদ্য কিনে আনতে হয় তাদের কি হাত পা গুটিয়ে ঘরের মধ্যে লক ডাউন হয়ে বসে থাকা সাজে? তারা বাইরে কামে গেলেও মরন, ঘরে বসে থাকলেও ক্ষুধায় মরন।

সবাই যার যার স্বার্থে। জনস্বার্থে কেউই না।

২৯ শে মে, ২০২০ রাত ১:০৯

ইছামতির তী্রে বলেছেন: আপনার কমেন্ট পড়লা। বহুল প্রচারিত তত্ত্ব। আসলে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। বিশেষ করে ট্রাম্প নিজের উইকনেস ঢাকতে এটা খুব বলছেন। করোনা প্রতিরোধ করতে চীন ছাড়া বাকি সব দেশ হাতে যথেষ্ট সময় পেয়েছিল। চীন গোপনে এতদিন ধরে এতকিছু করলো আর বাকি বিশ্ব কিছুই বুঝলো না। ধরে নিলাম চীন লোক পাঠিয়েছে। কিন্তু বাকি দেশগুলো আটকালেই হতো। তা করেনি কেন? কারণ তারা গুরুত্ব দেয়নি। এখন চীনের প্রতি যা বলা হচ্ছে তার পুরোটাই রাজনৈতিক। আর হ্যাঁ বিজ্ঞানীরা একমত যে করোনা কোন ল্যাবে তৈরি হয়নি। এটা প্রাকৃতি।

জীবন নাকি জীবিক? এর সদুত্তর নেই।

মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

৩| ২৭ শে মে, ২০২০ রাত ১১:৩৭

ওমেরা বলেছেন: একজন খ্রিষ্টন আমাকে বলেছিল , সৃষ্টিকর্তা এমন কোন সমস্যা দেয়নি যার কোন সমাধান নেই।তবে সঠিক পথ খুঁজে পেতে আমাদের সময় লাগে।
করোনাকে মানুষ অবশ্যই পরাজিত করবে আল্লাহর দেয়া মেধা দিয়েই একটু সময়ের ব্যাপার।

২৯ শে মে, ২০২০ রাত ১:১১

ইছামতির তী্রে বলেছেন: তিনি সত্যি বলেছেন। কুরআনেও সেটা বলা আছে। তবে সময় লাগবে। কতদিন লাগবে এটা অনিশ্চিত।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ

৪| ২৮ শে মে, ২০২০ রাত ১২:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: আমাদের দেশের মানুষ সব কিছুতেই সরকারের দোষ দেয়।
লকডাউন না দিলে সরকারের দোষ। লকডাউন খুলে দিলেও সরকারের দোষ। সরকার যাবে কোথায়?

২৯ শে মে, ২০২০ রাত ১:১৩

ইছামতির তী্রে বলেছেন: সত্য। সরকার যথেষ্ট চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমরা সচেতন না।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ

৫| ২৮ শে মে, ২০২০ রাত ১২:১০

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: প্রযুক্তির বেশি ব্যবহার করেছে মানুষ মারার জন্য,বাঁচার জন্য করেছে কম।

২৯ শে মে, ২০২০ রাত ১:১৪

ইছামতির তী্রে বলেছেন: হুম। পুজিবাদী বিশ্বে বাস করি আমরা। দিনের শেষে লাভ লোকসানই মুখ্য।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ

৬| ২৮ শে মে, ২০২০ রাত ১২:২১

শূন্য সারমর্ম বলেছেন: করোনা সম্পর্কিত সত্য এখনো কেউ জানে না..

২৯ শে মে, ২০২০ রাত ১:১৫

ইছামতির তী্রে বলেছেন: এখন অবধি বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত এটা প্রাকৃতিক।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ

৭| ২৮ শে মে, ২০২০ রাত ১০:১২

সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: বিধাতাই শেষ ভরসা।

২৯ শে মে, ২০২০ রাত ১:১৬

ইছামতির তী্রে বলেছেন: নিঃসন্দেহে। মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.