নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রহস্যময়ী তনয়া

ভালবাসি ইসলাম, দেশ, ও বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম।

রহস্যময়ী তনয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইপ্সিতা ও তার বিশ্বাস

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৩৭

বন্ধুত্ব ও বিশ্বাস প্রতিশব্দ বলেই মনে করতাম।তাই আমার সব বান্ধবীরা যখন ক্লাস সেভেন পার না হতেই ভালবাসার জালে নিজেকে জড়িয়ে ফেলতে লাগল,আমি তখন শুধু বন্ধুত্বেরই জয়গান গেয়ে গেলাম।গার্লস স্কুল হলেও কোচিং,ফেসবুক এ বন্ধুর অভাব ছিল না।সবাইকে সহজেই বিশ্বাস করার ক্ষমতা থাকায় বেশ কিছু ছেলে ফ্রেন্ড হয়েছিল।এমন-ই একজন পিয়াস।ওর গ্রুপের বাকিদের সাথেও পরিচয় ছিল।ওকে কেন জানি একটু বেশিই বিশ্বাস করতাম।ওর অনুরোধে বেশ কয়েকবার ওদের গ্রুপের সাথে ঘুরতে বের হয়েছিলাম......



ঈদের পর ছুটি কাটাচ্ছি। TEST শেষ।এখন আমরা অফিসিয়ালি এস.এস.সি. পরীক্ষার্থী।তাই এবায় চিটাগাং এ ই ঈদ করলাম।ঈদের দিন জয় [পিয়াসের ফ্রেন্ড] বলেছিল ওদের সাথে দেখা করতে যেতে।কিন্তু ব্যস্ততার কারণে পারিনি।তাই ঠিক করলাম ৩০শে অক্টোবর দেখা করব।যেহেতু গ্রুপে পিয়াস আর জয় ছাড়া বাকীদের সাথে আমি খুব একটা কথা বলি না, তাই বললাম শুধু ওদেরকে আসতে।ওরা রাজী হল।



৩০ তারিখ হঠাত্‍ মেহমান আসাতে বের হতে হতে প্রায় বিকেল পেরিয়ে এল।তবু গেলাম।জয় আর পিয়াস ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ছিল।আমি রিকসা থেকে নামা মাত্রই ওরা বলল যে,একটা জায়গা দেখাতে নিয়ে যাবে।আমি দেরী হয়ে যাবে বলে আপত্তি করছিলাম,কিন্তু পিয়াসের অনুরোধ ফেলতে পারলাম না।আমরা হেটে হেটে একটা পাহাড়ে উঠতে লাগলাম।







একটু গভীরে যেতে যেতেই অন্ধকার গাঢ় হয়ে গেল।হঠাত্‍ আমার ভয় ভয় করতে লাগল।এমন সময় দেখলাম সামনে ওদের গ্রুপের শাওন,ফজল,ফাহাদ দাঁড়িয়ে।আমার একটু খটকা লাগল।উদ্দেশ্য ভাল ঠেকছিল না।আমি চলে যেতে চাচ্ছিলাম।হঠাত্‍ শাওন পকেট থেকে কি যেন বের করে ওদের সবাইকে দিল।পত্রিকায় ইয়াবা দেখেছিলাম,তাই দেখেই চিনলাম ওগুলো।ওরা সবাই ওগুলো খেল।ইয়াবার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে যথেষ্ঠ জ্ঞান থাকায় ওদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়ে গেল।বিশ্বাস ভঙ্গের আকস্মিক ধাক্কায় আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম।



পরবর্তী মূহুর্তেই বাস্তবে ফিরে এলাম।তখন-ই পিছন দিকে দৌড় দিলাম।প্রাণপণে পালাতে থাকলাম।কিন্তু কিছুক্ষণের ভিতরেই ওরা আমাকে ঘিরে ফেলল...............



পালাবার পথ না পেয়ে,শেষ ভরসা হিসেবে আমি আমার বেস্টফ্রেন্ড পিয়াস-কে আকুল হয়ে অনুরোধ করলাম আমাকে ছেড়ে দিতে।কিন্তু বন্ধুত্বের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসা সেই নরপশু আমাকে ছাড়ল না।



প্রথমে পিয়াস,এরপর একে একে বাকি চারজন আমাকে নিঃশেষ করে দিল।একসময় চিত্‍কার করার শক্তি ও হারিয়ে ফেললাম।কিছুই চিন্তা করতে পারছিলাম না।প্রায় অবচেতন অবস্থায় ওরা ধরাধরি করে আমাকে নিয়ে যাচ্ছিল।এরপর কখন যে জ্ঞান হারিয়েছি মনে নেই।চোখ মেলে নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করলাম।



জানতে পারলাম,ওদেরকে এরেস্ট করা হয়েছে।জানতে পারলাম,আঠার বছরের নিচের "শিশু"-দের জন্য আইনের শিথিলতা আছে।জানলাম,পত্রিকায় ও অনলাইন মিডিয়ায় খুব হইচই হচ্ছে।জানলাম যে,ওদের চেয়ে আমার অপরাধ বেশী কারণ আমি মেয়ে হয়েও এত রাত পর্যন্ত বাইরে ছিলাম..........কিছুই বলতে পারলাম না।আমাকে যখন ওরা ভোগ করছিল তখন তো মনে হয় নি যে ওরা "শিশু"....হয়তো ওদের বিচার আমার সম্ভ্রম ফিরিয়ে দিতে পারবে না,কিন্তু আমার মানুষের উপর বিশ্বাস তো ফিরিয়ে দিতে পারে।ওদের বিচারের পর হয়তো আমাকে আর শুনতে হবে না যে,আমার সম্ভ্রম হারানোর পিছে আমি ই দায়ী।



তাই ওদের শাস্তি ছাড়া এই দেশের কাছে আর কিছুই চাওয়ার নেই....................



(৩০ অক্টোবর ২০১২ তারিখে চট্টগ্রাম নাসিরাবাদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ইপ্সিতা-কে তারই পাঁচ বন্ধু ধর্ষণ করে। আমি এই গল্প-টি লিখেছিলাম তার একমাস পর। গল্পের চরিত্রের নামগুলো ছাড়া বাকি সব ঘটনাই কাল্পনিক। ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে একটি আন্দোলনকারী দলকে উজ্জীবিত করার উদ্দেশ্যে এই গল্পটি লিখা হয়েছিল। আন্দোলনের পর পুলিশ কথা দিয়েছিল তাদের শাস্তি পুনর্বিবেচনা করা হবে। তারপর আমরা আর কোনো খোঁজ পাইনি। তবে আরো প্রায় এক বছর পর শুনেছি, ওদের আর কোনো শাস্তি হয়নি। ওরা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে সেই বছরেই এবং ভালোভাবে পাস করেছে। আর ইপ্সিতা! সে হাসপাতাল থেকে আর ছাড়া পায়নি। এই পৃথিবীর প্রতি অভিমান নিয়ে সে বিদায় নিয়েছে... )

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:১৩

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: এসব শুনে শুনে দেখে দেখে খুব হতাশায় ভুগী । তবে মেয়েদেরও যতটুকু সম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ ।
ভালো থাকুন ।

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:১৭

রহস্যময়ী তনয়া বলেছেন: আমিও মনে করি মেয়েদের সতর্ক থাকা উচিত। কিন্তু অপ-সংস্কৃতির কারণে আসলে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা না বুঝেই অনেক কিছু করে ফেলছে। সবারই সচেতন হওয়া উচিত।
মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।

২| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৬

তামিম ইবনে আমান বলেছেন: প্রত্যেক মানুষের ভিতরেই পাশবিকতা বাস করে। কারো মানবিকতা পাশবিকতার চেয়ে বেশি, আর কারো কম।

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৫২

রহস্যময়ী তনয়া বলেছেন: ভালো বলেছেন। মানবিকতা দিয়ে পাশবিকতাটা ঢেকে রাখতে পারলেই তাকে মানুষ বলা হয়। বাকিরা তো পশু (বা, তার থেকেও অধম)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.