নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশায় প্রকৌশলী। অন্তর্মুখী। কবিতা ভালোবাসি ভীষণ। লিখিও

ঋতো আহমেদ

আমার হাতের দিকে বাড়ানো তোমার হাত। হাতের ভেতরে শিখা, শত্রুতার এমন রূপ! কামনা বিভীষিকা

ঋতো আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রিলকের চিঠি (দ্বিতীয় পর্ব)

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:১১



রাইনার মারিয়া রিলকে (১৮৭৫—১৯২৬)

সংক্ষিপ্ত পরিচিতি#

রাইনার মারিয়া রিলকে। ৪ঠা ডিসেম্বর, ১৮৭৫ এ প্রাগে জন্মগ্রহণ করেন। পুরো নাম রেনে কার্ল উইলহাম জোহান যোসেফ মারিয়া রিলকে। জার্মান ভাষার অন্যতম প্রধান কবি। তাঁর ভাষা ছিল জার্মান ও ফরাসি। কবিতায় আধুনিকতা আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। তিনি বোহেমিয়ান অস্ট্রিয়ান কবি ও নাট্যকার হিসেবে পরিচিত। জার্মান ভাষার লিরিকাল কবিতা ও গদ্য তাঁর অসাধারণ অবদান।

জীবনকালে সমগ্র ইউরোপ ঘুরে বেড়িয়েছেন। শেষ দিকে সুইজারল্যান্ডে স্থিতু হন। ফরাসি ভাষায় প্রায় ৪০০ কবিতা লেখেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজগুলো হচ্ছে—

দ‍্য‌া বুক অব আওয়ারস
দুইয়োনো এলিজি,
সনেটস টু অরফিয়াস,
দ‍্য‌া নোট বুকস অব মাল্টে লরিডস ব্রিগে,
লেটারস টু এ ইয়ং পোয়েট, ইত‍্য‌াদি।

আমেরিকায় তিনি এখনো অত্যন্ত জনপ্রিয় কবি। তাঁর স্ত্রী ছিলেন ক্লারা ওয়েস্থফ। ২৯শে ডিসেম্বর, ১৯২৬ সালে সুইজারল‍্য‌‌ান্ডে এই কবির মৃত্যু হয়।



রিলকের চিঠি
বাংলা রূপ : ঋতো আহমেদ

রিলকের চিঠি (প্রথম পর্ব)

১১ই সেপ্টেম্বর ১৯১৯ সালে অ‍্য‌াডেলহাইড ভন দেবার মার‌উইৎস (১৮৯৪—১৯৪৪) কে একটি চিঠি লেখেন রিলকে। অ‍্য‌াডেল ছিলেন জার্মান কবি বার্নার্ড ভন দেবার মারউইৎস (১৮৯০—১৯১৮) এর বোন। বার্নার্ড প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন। তাঁর সাথে রিলকের যোগাযোগ ছিল। তিনি প্রায়ই রিলকের কবিতা আবৃত্তি করতেন। ভাইয়ের নিয়মিত আবৃত্তি শুনে শুনে সেই সময়ে সাহিত্য সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হয়ে ওঠেন অ‍্য‌াডেল। মৃত্যুর আগে তার ভাই তাকে 'দ‍্য বুক অব ইমেজেস’ ব‌ইটি উপহার দিয়েছিলেন। উৎসর্গ-পাতায় সেখানে রিলকের একটি কবিতার উদ্ধৃতি ছিল।



প্রতি: অ‍্য‌াডেলহাইড ভন দেবার মার‌উইৎস

সোগলিও(বারজেল, গ্রবানডেন) থেকে
১১ই সেপ্টেম্বর, ১৯১৯

প্রিয় অনুজ বন্ধু,
তোমার এই চিঠি যে আনন্দ এনে দিয়েছে আমাকে তার অনেকগুলো দিক আছে: সেগুলোর অন্তত কয়েকটি আমাকে বলতে দাও। প্রথমত, যে বিষয়টি আমরা সাদরে গ্রহণ করছি এখন, তা হচ্ছে, মানুষেরা এখান থেকেই একটি নতুন পথচলার সূচনা করেছে এবং গড়ে তুলছে শাশ্বত হৃদয়ের শক্তি ও বিশ্বাস থেকে সম্পূর্ণ নতুন এক জীবন। এছাড়াও কিছু মানুষ আছে, যদিও চেষ্টা করতে পারতো, কিন্তু, তা না-করে ওখানেই স্থবির হয়ে আছে, দেখছে আর বুঝতে চেষ্টা করছে, এবং এদের জন্য বিষাদ ও জড়তায় সব সম্পূর্ণ রূপে অসম্ভব হয়ে উঠছে। আর এটা যদিও অনুভব ও তার বহিঃপ্রকাশের উপর নির্ভরশীল, কেবল একটি ব‍্যপার খুব দ্রুত প্রয়োজন এখন: নিজেকে শর্তহীনভাবে কোথাও প্রকৃতির সাথে সম্পর্কিত করা, যা কিনা শক্তিশালী, সংগ্রামী এবং উজ্জ্বল, আর যা এগিয়ে যাবে সামনের দিকে অকপট, এমনকি দৈনন্দিন জীবনের কম গুরুত্বের কিছুও যদি হয়। প্রতিবার আনন্দের সাথে সবকিছু সামাল দিই আমরা, প্রতিবার আমরা চোখ খুলি অধরা কোনো দূরত্বে, তাকাই আর মূহূর্তকে রূপান্তর করি—শুধু এই মুহুর্তটি নয়, পরের মূহুর্তকেও, এবং আমরা আমাদের অতীতকে মনের ভেতর নতুন করে সাজাই। সত‍্য‌িকার সামঞ্জস্যতাকে না জেনেই হয়তো বাইরের যন্ত্রণাকে বিলীন করে দিই, অথবা খুঁজে দেখি না কতোটুকু(হয়তোবা) জীবন-যথার্থ প্রেরণা দেয় তা। মিশে যায়, আমাদের রক্তে।



মৃত্যু, বিশেষত সম্পূর্ণ অনুভূত ও অভিজ্ঞতা লব্ধ মৃত্যু, কোনো জীবিত ব্যক্তির পথে কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় না, কারণ এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য আমাদের জন্য প্রতিকূল নয়(যেহেতু কেউ কেউ হয়তো তা ভাবতে পারেন), নিছক বেঁচে থাকার চে বরং মৃত্যু আমাদের জীবনকে আরও গভীরভাবে জানতে শেখায়। সবসময়ই আমার মনে হয় প্রচণ্ড চাপের বিশাল এক ভার নিয়ে মৃত্যু যে কাজটি করে তা হলো জীবনের গভীর থেকে গভীরতর স্তরে ঠেলে দেয় আমাদের যেন আমরা সেখান থেকে আর‌ও প্রতিধ্বনিশীল ও উর্বর হয়ে উঠে আসতে পারি। বিভিন্ন পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে গিয়ে এইসব অভিজ্ঞতা আমি অর্জন করেছি আমার জীবনের একেবারে প্রথম দিকে, নিশ্চিত হয়েছি যন্ত্রণার পর যন্ত্রণায়: যা এখন, এখানে আছে, যদিও, আমাদের দেয়া হয়েছিলো, যা আমরা আশা করে থাকি, সমস্ত ঘটনাই আসলে আমাদের একটি নতুন পরিচয় ও বন্ধুত্বে রূপান্তর করে ফেলার উদ্যোগ নিতে হবে। অত‍্য‌ান্ত সুন্দর পরিকল্পনার মাধ্যমে উপলব্ধি ও আয়ত্ত করা আমাদের চেতনাকে অন‍্য আর কোথায় কাজে লাগাবো, যা এখানে আছে? কীভাবে আমরা এড়িয়ে যাবো সেই কর্তব্য যা নিয়ে ঈশ্বর আমাদের উপর ভরসা করেছেন? এজন্য অবশ্যই সম্পূর্ণ তৈরি হতে হবে, সমস্ত ভবিষ্যত ও শাশ্বত প্রশংসায় নিজেকে তৈরি করতে হবে! তাই, যদি আমি তোমার প্রাণবন্ত ও প্রফুল্লময় কথাদের এমনি চেতনায় উপলব্ধি করতে পারি এবং গ্রহন করতে পারি চরম সম্মতির সাথে, তবে আমার আনন্দের সাথে এ-ও যোগ হবে—পরিষ্কার ভাবে তোমাকে চিনতে চেয়েছি আমি। ভেবেছিলাম এইসব তুমি অবধারিতভাবে অতিক্রম করে আসবে। তোমার আগের চিঠিগুলো পড়ে, এভাবেই—এখন আমি একধরনের গর্ব ও তৃপ্তি অনুভব করছি একটু সময় নিয়ে আরো ভালো করে বুঝতে পারছি তোমাকে। তোমার শৈশব ও যৌবনের পরিচিত পরিমন্ডলে যেখানে তুমি অনেক বছর ধরে বেড়ে উঠেছো সেখানেই নিজেকে নতুনভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হচ্ছো। সেখানে আনন্দ পাচ্ছো আবার নতুনভাবে কাজকর্ম সামলে আর যা করতে চেয়েছিলে এবং এভাবে প্রতিদিন কিছু না কিছু অর্জনের উদ্দীপনা তোমাকে নতুন ধাঁচের বাঁচার অভিজ্ঞতা দিচ্ছে। এ এমন তীব্র যে তোমার এই বন্ধুর আর কোনো উপদেশ দেয়ার প্রয়োজন নেই কেবল ভাবছি সব যেন এমন‌ই থাকে সবসময়। তোমার যৌবন, তোমার সংকল্প, হৃদয়ানুভুতি আর সাহসিকতার সাথে বেছে নেয়া তোমার সেই পথের স্বভাবিক গতি এই সবকিছুই সমর্থন করছে সেই সম্ভাবনাকে, এটাই হচ্ছে বিষয়। মানে হলো, তুমি এখন নিজেকে সম্পূর্ণ নিয়োজিত করতে পারো তোমার সময়ের মানুষের কর্মকাণ্ডের সাথে যারা তোমার আকাঙ্ক্ষা/চিন্তা-চেতনাকে মহৎ ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ হিসেবে গ্রহণ করবে, আর তুমি তো ইতোমধ্যে বুঝতে পারছো এই প্রচেষ্টা কীভাবে সুফল বয়ে আনছে তোমার ভেতর। তুমি যা লিখেছো তাতে তোমাদের ঐ ছোট স্পন্দনশীল ও মধুর দলটির প্রতি স্নেহ জন্মেছে আমার। তোমার খাতিরে আমিও ওদের সাথে সমব‍্যথী মনে করছি নিজেকে। তোমাদের সাথে একটি ঘন্টা কাটাতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করব। ভালো লাগবে যদি নিজের কিছু দিতে পারি তোমাদেরকে আর বিনিময়ে কিছু পাই তোমাদের কাছ থেকেও। কিছুটা আনন্দ আর সুখ ভাগ করে নিতে পারবো।



আমি এখনও ফলপ্রসূ কাজে ফিরে আসতে পারি নি। শেষ কয়েক বছরের অধঃপতন কাটিয়ে উঠতে যে বৃক্ষ রোপন করার প্রয়োজন ছিল, যে ডালপালা/পাতালতা বিস্তার করার দরকার ছিল ইতোমধ্যে তার কিছুই করতে পারি নি বলে নিজেকেই ভর্ৎসনা দিচ্ছি আর শাস্তি দিচ্ছি এখনও। হয়তোবা কোথাও ঠেলে দিয়েছি যেখানে আছে কেবল ভাঙা পাথর আর ক্ষয়িষ্ণুতা, যেখানে নতুন জীবনের কোনো চিহ্ন‌ই নেই। আমার উচিৎ এখুনি শুরু করা, যেকোনো যায়গা থেকে, আজই, তৎক্ষণাৎ, কিন্তু কি, এটা আসলে আমার খুঁতখুঁতে হ‌ওয়ার মতো কোনো ব‍্যপার না যখন, বুঝতে পেরেছি, আমাকে যথাযথ সাপোর্ট দেবে এমন একটি নির্দিষ্ট অবস্থার জন্য আমি অপেক্ষা করছি। আমি একটি ছোট, পুরনো বাড়ির আশায় আছি, একটি পুরনো বাগান, যেখানে আমি আত্ম অংশে বিভক্ত হয়ে দীর্ঘ এক সময়ের ভেতরে ঢুকে যেতে পারবো, প্রকৃতির কাছাকাছি আর কিছু অতীত স্মৃতির মৃদু গুনগুন রোমন্থনের ভেতর। এরকম পরিবেশ ছাড়া মনে হয় না আমি ধ‍্য‌ানমগ্ন হতে পারবো যাতে আমার ভেতরের গভীর নৈঃশব্দ্যকে উন্মোচিত করবে, উন্মোচিত করবে আমার ভেতরের আগলে রাখা সেই স্বকীয়তাকে যেখানে জেগে উঠবে নতুনত্বের একেকটি উৎসমুখ। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে তোমার ভাই বানির সাথে আমার কথা হয়েছে। সে সম্পূর্ণ রূপে হৃদয়ে উপলব্ধি করতে পেরেছে!



এখন শুধু একটু খুঁজে বের করতে হবে এমন জায়গা কোথায় আছে। অনেকটা এইরকম এখন যেখানে আছি তা সাময়িক। ইতালির সীমান্ত থেকে এক ঘন্টার রাস্তা। পাহাড়ের চূড়ায় একটা পুরনো পালাযো সালিস। এর বংশানুক্রমিক গৃহসজ্জার সৌন্দর্য আর পুরনো বাগান আমাকে ধরে রেখেছে এখানে। অবশ্য এক যুগ আগেই এটাকে একটা হোটেল বানানো হয়েছে। এর ছাদের ঘরে পুরনো একটি পাঠাগার আছে। যদিও অতিথিদের প্রবেশ সীমাবদ্ধ, আমাকে তারা অনুমতি দিয়েছে। পাঠাগার এমনভাবে সাজানো মনে হলো আমার অন্তরের পছন্দ অনুযায়ী সব, সমস্ত আয়োজন যেন আগে থেকে এভাবে আমার স্বাচ্ছন্দ্যকে খেয়াল রেখে করা। নিজের যত্ন নিও। যতদিন ভালো লাগে সুইজারল্যান্ডেই থাকবো, এই ঠিকানায়—উত্তর দিও।

বন্ধুত্বের বন্ধনে,
রিলকে


ছবি সূত্র : ইন্টারনেট।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৮

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



কবির এ পর্বের চিটি তো আরো দুর্দান্ত; আর সুন্দর ও সাবলীল অনুবাদের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ৷ +++

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৫

ঋতো আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ কাওসার ভাই। সুন্দর মন্তব্য ও প্লাসে অনুপ্রাণীত হয়েছি। শুভ কামনা জানবেন।

২| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৫৯

সনেট কবি বলেছেন: ভাল লিখেছেন।

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৬

ঋতো আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ ফরিদ ভাই। ভালো থাকবেন।

৩| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৫২

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: সুন্দর।

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৭

ঋতো আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ মাইদুল সরকার। পড়েছেন জেনে ভালো লাগলো।

৪| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৬

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর চিঠি।
সবিনয় নিবেদন পড়েছেন? বুদ্ধদেব গুহ'র?

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৮

ঋতো আহমেদ বলেছেন: জি, ব্রো.. পড়েছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.