নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ না... শুধু ঘুরে বেড়াইতে ভালো লাগে...

রুবাইয়াত শোভন

রুবাইয়াত শোভন › বিস্তারিত পোস্টঃ

লাদাখ ভ্রমনঃ(৪র্থ পর্ব) - মানালির পথে

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:৫১

লাদাখ ভ্রমণ - ৩য় পর্ব

লাদাখ ভ্রমণ - সবগুলো পর্ব

মানালি এবং কুল্লু নিয়ে আমাদের দেশের লোকজনের একটা ভুল ধারণা আছে। অনেকেই কুল্লু কে মানালি জেলার মধ্যে ধরে নেয়, কিন্তু মানালি হল কুল্লু জেলার অন্তর্গত একটি উপত্যকা শহর।

আমরা শিমলা থেকে সকাল সাড়ে ৮ টায় আবারও একবার কিছু না খেয়েই বাস এ করে মানালির উদ্দেশ্যে রওনা দেই। আমাদের কাছ থেকে মানালি যাওয়ার বাস ভাড়া নিয়েছিল ৪০০ রুপি করে জন প্রতি। শিমলা হল পাহাড়ের উপরের একটা শহর। বাস কিছুক্ষণ চলার পর ই আঁকা বাঁকা পাহাড়ি পথ বেয়ে নিচের দিকে নামতে লাগল। শিমলা থেকে মানালি যাওয়ার শুরুতেই ঘুরানো পথে অনেক নিচে নামতে হয়। এবং বাস খুব দ্রুত নেমে যাওয়ার কারণে এই সময় অনেকেরই বমি বমি লাগে। আমাদের অবশ্য তেমন কোনও সমস্যা হয় নাই।


বাস এ সোহাগ একটি অসম্ভব মিষ্টি স্থানীয় বাচ্চা কে কোলে নিয়ে


শিমলা থেকে নিচে নেমে যাওয়ার পর

বাস যতই নিচের দিকে নামতে লাগল, মেঘের পরিমাণ ততই কমতে লাগল। সাথে সাথে চারপাশের প্রকৃতি স্পষ্ট হতে লাগল। এভাবে সাড়ে ৯ টা পর্যন্ত চলার বাস এক জায়গায় ৫ মিনিটের জন্য থামলে আমি নেমে পানি আর বিস্কুট কিনে নিলাম। সকাল থেকে না খেয়ে আছি, তাই বিস্কুট চিবাতে থাকলাম এবং জানালা দিয়ে চারপাশ দেখতে লাগলাম। এভাবে দুই পাশের অপরূপ দৃশ্য দেখতে দেখতে দুপুর সাড়ে ১২ টা নাগাদ আমাদের বাস একটা রেস্টুরেন্ট এ খাওয়ার জন্য থামল। আমরা বাস থেকে নেমে ঐখানে জিরা রাইস, আলু পরোটা খেয়ে নিলাম। সেই সাথে কিছু ফল ও পানি কিনে নিলাম, কারণ মানালি পৌঁছাতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যাবে আর এর মধ্যে বাস আর কোথাও বিরতি দিবে না।


মানালির পথে একটি বাঁধ

বাঁধের উপর থেকে


আবার উপরের দিকে ওঠা শুরু

বেলা আড়াই টার দিকে আমাদের বাস মান্ডি নামক একটা জায়গায় এসে থামল। বাস এর অনেক লোক জন ই এখানে নেমে গেল। আবার কিছু লোক উঠল। আমরা বসেছিলাম পিছনের দিকে, তেমন লোক ছিল না। তিনজন ই আলাদা ভাবে জানালার পাশে গিয়ে বসলাম। বাস এর লোক আমাকে বুদ্ধি ডান দিকের জানালার পাশে বসতে, তাহলে ভালো ভিউ পাওয়া যাবে। আমরা তার কথা মতো ডান দিকের জানালার পাশে গিয়ে বসলাম। কিছু দূর পর ডান দিকে শুরু হল বিয়াস(বাংলায় বিপাশা) নদীর অপরূপ সৌন্দর্য। নদীর স্রোতের গর্জনের সাথে পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে শ্বেত শুভ্র মেঘের ভেলা। মাঝে মাঝে পাহাড়ের গা বেয়ে ঝর্ণার পানি গিয়ে আবার বিয়াস এর স্রোতের সাথে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছিল অনন্তকাল ধরে এই রাস্তার পাশ দিয়ে চলা যায়।











মান্ডির পর বিয়াস এর বয়ে চলা

এভাবে চলতে চলতে কখন যে কুল্লু চলে আসলাম তা টের ই পেলাম না। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৪ টা বেজে গেছে। আমাদের বাস কুল্লু বাস স্ট্যান্ড এ ৫ মিনিটের জন্য থামল। আমি বাস থেকে নেমে চার পাশে একটু হেঁটে আসলাম। এখান থেকে মানালি যেতে বেশি হলে এক ঘণ্টা লাগবে। কুল্লু থেকে রওনা দেয়ার পর আবার ও আমরা বিয়াস এর রুপে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম। কিছু দূর যাওয়ার পর রাস্তার দুই পাশে আপেল বাগানের সারি চোখে পড়ল। আমার জীবনে প্রথম আপেল বাগান দেখা। ভালই লাগছিল কিন্তু মন উসখুস করছিল বিয়াস এর জন্য। কিছুক্ষণ পরে আবার বিয়াস এর দেখা পাওয়া গেল। আসলে মান্ডি থেকে মানালি পর্যন্ত প্রায় পুরোটা পথ ই বিয়াস নদী হাতের ডান পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়। আমরা বিয়াস এর রুপ সুধা পান করতে করতে বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে মানালি বাস স্ট্যান্ড এ পৌঁছে গেলাম। ঝির ঝির বৃষ্টি আমাদের কে মানালি বাস স্ট্যান্ড এ স্বাগতম জানালো।


কুল্লু বাস স্ট্যান্ড




কুল্লু শহর থেকে বের হবার পর মুহূর্ত


রাস্তার পাশের আপেল বাগান


পাহাড়ের ফাঁকে মেঘের লুকোচুরি


কুল্লু পার হওয়ার পর বাস থেকে বিয়াস নদী

আমরা কোথাও কোনও হোটেল বুকিং দিয়ে যাই নাই। শিমলার অভিজ্ঞতা থেকে বাস থেকে নামার সময় তিনজন বুদ্ধি করে নিলাম এবার কোনও দালাল জিজ্ঞেস করলে বলব যে আমাদের রুম বুকিং করা আছে, তারপর তিনজন আলাদা ভাবে হোটেল খুঁজবো। বৃষ্টির মধ্যে আমরা ম্যাল রোড এর পিছনে চলে গেলাম হোটেল খুঁজতে। প্রায় ৩০ মিনিট পর আমরা হোটেল তাশিলা তে ৭০০ রুপি করে তিন জনের জন্য একটা রুম পেয়ে গেলাম। আমাদের হোটেল টা খুব ই পছন্দ হয়েছিল এবং ম্যাল থেকে মাত্র ২ মিনিটের হাঁটা দূরত্বে ছিল। আমরা ৩০ মিনিটের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে বাইরে ঘুরতে বের হলাম। প্রথমে একটা রেস্টুরেন্ট এ গিয়ে চিকেন তান্দুরি, নান, রাইস খেয়ে নিলাম। তারপর হাঁটতে হাঁটতে ম্যাল এ চলে গেলাম।


মানালির ম্যাপ




রাতের ম্যাল রোড এবং আমরা তিনজন

মানালির ম্যাল রোড এর দুই পাশে বেশিরভাগ ই হোটেল, রেস্টুরেন্ট আর অনেক ট্যুর অপারেটর দের দোকান। আমরা সোজা চলে গেলাম হিমাচল প্রদেশের ট্যুরিস্ট সেন্টার এ লাদাখ যাওয়ার বাস এর খোঁজ খবর নিতে। ওরা জানালো যে, ওদের বাস পরের দিন ছেড়ে যাবে। তারপর ওদের স্বাধীনতা দিবস এর জন্য ৪ দিন বাস বন্ধ থাকবে। অবশ্য এতে আমাদের মন খারাপের কিছু ছিল না। কারণ আমাদের প্ল্যান ছিল রিজার্ভ ট্যাক্সি করে লাদাখ যাওয়ার। এতে করে সুবিধা হল আমাদের যখন মন চায় তখন থামতে পারব। কোনও বাধা ধরা নিয়ম এ চলতে হয় না। এর পর আমরা কয়েকটা ট্যুর অপারেটর এর দোকান এ গিয়ে লাদাখ যাওয়ার ট্যাক্সি ভাড়ার তথ্য নিলাম। কখন যে রাত ১০ টা বেজে গেল টের ই পেলাম না। রাস্তা ঘাট ফাঁকা হতে শুরু করল। আমরাও কিছু হাল্কা খাবার কিনে হোটেল এ চলে আসলাম।

বিয়াস এর আরও কিছু ছবি









[img|http://s3.amazonaws.com/somewherein/pictures/RubaiatShovan/RubaiatShovan-1488218857-f32a82b_xlarge.jpg

লাদাখ ভ্রমন(৫ম পর্ব): হিমাচলের প্রাণ অপরুপা মানালি

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:১৫

অবহেলিত বন্ধু বলেছেন: আপনার পূর্বের লেখা গুলিও পড়লাম ভাল লাগল।
বর্ণনার সাথে সাথে যদি খরচ সমূহ বিস্তারিত দিতেন আমার মত বাজেট ট্রাভেলারদের জন্য সুবিধা হত।
আপনারা সিমলাতে যে হোটেলে ছিলেন ৩ জন এর জন্য ১০০০ রুপি ছিল নাকি এক এক জন ১০০০ রুপি? একই ব্যাপার কি মানালির ক্ষেত্রে? ৭০০ কি ৩ জন এর জন্য নাকি ৭০০ এক এক জন মোট ২১০০ তিন জন?
তথ্য গুলো দিয়ে সহায়তা করবেন আশা করছি।

পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
ধন্যবাদ
:)

০২ রা মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:০২

রুবাইয়াত শোভন বলেছেন: ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য। আমি যে ভাড়াগুলোর কথা বলেছি তা তিনজনের মোট ভাড়া। শিমলা তে জনপ্রতি ৩৩৩.৩৩ রুপি পড়ছে আর মানালিতে জন প্রতি ২৩৩.৩৩ রুপি প্রতিদিন। আর বিস্তারিত খরচ একদম সব লেখার শেষ এ দেয়ার ইচ্ছে আছে। এর মধ্যে আপান্র কিছু জানার দরকার হলে আমাকে নক কইরেন। সাহায্য করার সাধ্যমত চেষ্টা করবো।

২| ০২ রা মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:২৯

অবহেলিত বন্ধু বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই। B:-/

০৩ রা মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:৩১

রুবাইয়াত শোভন বলেছেন: আপনাকেও স্বাগতম ভাই। ;)

৩| ০২ রা মার্চ, ২০১৭ রাত ১:৩৪

শাহিন-৯৯ বলেছেন: ভাই লাদাখ কবে পৌঁছাবো

০৩ রা মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:৩৩

রুবাইয়াত শোভন বলেছেন: মানালি থেকে কিলং তারপর লাদাখ। বেশি দূর তো নয় ভাই, মাত্র ৪৮০ কিলোমিটার আর দুই দিন পরেই পৌঁছে যাবেন আশা করি। B-)

৪| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:০৫

শাহিন-৯৯ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে

৫| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১:৫৪

আমি গাডডুর বাপ বলেছেন: আমি আপনার লেখার শুরু থেকে আছি। কিন্তু আজকে প্রথম কমেন্ট করলাম।
আপনার লেখা ভালো লাগছে।

আপনার আগে আরও দুই ব্লগার ভাই এই একই রুট ধরে ভ্রমন করেছে এবং তার বর্ণনা ব্লগে লিখেছে। কিন্তু তারা কেউই ভ্রমন কাহিনীটার শেষ করেননি।

আশাকরি আপনি অব্যশই এই সিরিজটা শেষ করবেন।

আর ভারতের এই অংশের খুব বেশি ইনফো আমাদের জানা নেই তাই চেষ্টা করবেন আরও বেশি তথ্য উল্লেখ্য করতে যাতে আমরা যারা এই জায়গায় যেতে চাই তাদের উপকারে লাগে। (যেমন- গাড়ি ভাড়া, হোটেল ভাড়া, কোথায় ভালো হোটেল পাওয়া যায়, গাড়ি কোথায় থেকে ঠিক করতে হবে ইত্যাদি)

ভালো থাকবেন।

০৫ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:৪৮

রুবাইয়াত শোভন বলেছেন: ভাই, শুরু থেকে সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। আমার ইচ্ছে আছে সিরিজটা শেষ করার, কিন্তু সময়ের বড্ড অভাব। দোয়া করবেন যেন শেষ করতে পারি। আর আমি সবসময় ই তথ্য দেয়ার চেষ্টা করি, এবং সিরিজ এর শেষ এ যতটুকু মনে আছে সকল খরচের একটা হিসাব দেয়ার চেষ্টা করব।

৬| ১২ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:৫৯

বাকি বিল্লাহ বলেছেন: পরের পর্বের অপেক্ষায়...

১৩ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৩:২১

রুবাইয়াত শোভন বলেছেন: অপেক্ষার ফল সুমিষ্ট হবে কি না তা বলতে পারছি না ভাই, তিতা হলে ক্ষমা করে দিয়েন। B-)

৭| ১৭ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:২৯

শেখ মাসুদুর রহমান বলেছেন: অপেক্ষায় আছি ভাই।:-)

২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১২:৩৯

রুবাইয়াত শোভন বলেছেন: অপেক্ষার প্রহর অনেক কঠিন ভাই। B-)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.