নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বই পড়তে আমি খুব ভালোবাসি। এর কোন কারন নেই । কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে কেন পড়েন তখন খুব রাগ লাগে । নতুন কিছু জানতে খুব আগ্রহ আমার ।

রূবাইয়াৎ তৃণা

রূবাইয়াৎ তৃণা › বিস্তারিত পোস্টঃ

চিহ্ন ( ছোটগল্প )

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ভোর ৫:১৭

নাম তাসলিমা । ডাকা হয় তাসলি । তাসলিমার সংক্ষেপ সংস্কার তাসলি ।
গ্রামের বাড়িতে গেলেই যখনই বাড়ির কাছাকাছি পৌছাতাম ধুলোমাটিতে খেলে বেড়ানো এই বাচ্চা মেয়েটা খালি গায়ে একটা জংলী ছাপা ঘটি প্যান্ট পরনে দৌড়ে এগিয়ে আসত আর চিৎকার করে বলত, "ও মা.....তিন আফারা আইসতেসে ! তিনা আফরা…. বড়মায়েরা আইসতেসে !"
একটা অনাত্মীয় শিশুর এই অদ্ভুত উচ্ছাসভরা অভিবাদন চমৎকার লাগত ।
গ্রামেরবাড়িতে খুব বেশি যাইনা আমি । কিন্তু গেলে তাসলির সঙ্গ আমার ভালোই লাগত । বাচ্চা একটা মেয়ে । হাসিখুশি, গঠনে হৃষ্টপুষ্ট, উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের রং, মাথাভর্তি ছোটছোট ছাটা চুল । সবসময় মুখে হাসি আর কথা লেগেই আছে । সারাক্ষন কথার খই ফুটছে যেন ।

আমরা যতদিন গ্রামের বাড়ি থাকতাম তাসলি সারাদিন আমাদের সাথেই থাকত । ওর সেইকয়েকদিনের জগৎ হয়ে উঠত আমার মা আর আমার আশেপাশে ।
কখনো মার আশেপাশে ঘুরঘুর করত আর বলত, "বড়মা ভুট্টো খাইবেন ? ও পাড়া দা মেলা ভুট্টো গাইরছে । আমি নিয়া আইসা দেই ?"
নয়ত মা যদি কোন খাবারের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত তো তাসলিও ব্যস্ত, হয়ত বলছে, "বড়মা পানি আর নাইগবো ? নিয়া আইসা দিমু ?" বা "পাতা না খাড়াই শেষ আইনা দেই ?"
ও সারাদিন এ বাড়িতেই থাকত দেখে ওর মা রাগারাগি করত । মারতোও ধরে, কিন্তু তাও আসতো ।
আর আমার চাচী বলত, "এবি কি পাস পাস আইসে ? খাইবার নাইগা পায় হে লেইগ্গা আইসে !"
হতে পারে । কারণ আমার মা এই দরিদ্র ঘরে জন্মানো অনাকাঙ্খিত অর্ধভুক্ত শিশুটিকে সাথে নিয়েই সবসময় খেতে বসতেন । তাসলির মা ছেলের আসায় গর্ভধারণ করেছিলেন কিন্তু তা হয়নি । তাই এই কন্যাশিশুটি অনাকাঙ্খিত । যদিও শেষ বয়সের সন্তান বলে সে বেশ আদরও পায় । কিন্তু দারিদ্র্য আর অভাবে শিশুটির অনেক চাওয়াই অপূর্ন ।

এবার গ্রামের গিয়ে শুনলাম তাসলি স্কুলে যায় এখন ।
তাসলি খুব আনন্দের সাথে বলল, "আফা আমার নোল নং এগার হইসে।"
বললাম, “খুব ভালো কথা রে । মন দিয়ে পড় ।"
পরদিন সকালে বারান্দায় বসে সাজগোজ করছিলাম । দুপুরে “চেয়ারম্যান সাহেব” (!) দাওয়াত করেছেন তাই অনিচ্ছুক হলেও যেতেই হবে ।
তাসলি পায়ে পায়ে এসে দাঁড়াল । ও একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে দেখে বললাম, "কি তাসলি কি খবর ?"
ও হেসে বলল, "এবি আসি ।"
"ও ।"
তাসলি আরো কিছুক্ষন চেয়ে থেকে বলল, "আফা ইল্ল্যান নিপিষ্টিক কত হইরা ?"
"কেন রে ?"
"মেলা টেহা বান দাম ?"
"নারে মেলা টেহা নয় ।"
"কত টেহা ?"
"মেলা দাম না । এটা কমই । এটা বোধহয় সাড়ে চারশ টাকা ।"
তাসলি যেন চমকে গেল । শিশু হলেও তার পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতা তার অজ্ঞাত নয় । সাড়ে চারশ টাকা তাদের পরিবারে অনেক টাকা । আজ তাদের বাড়িতে "ইষ্টি সুমাদর" । সাড়ে চারশত টাকায় তাদের একদিনের ভালোকরে ইষ্টি সুমাদরের বাজার হবে !
যাদের মাত্রিক/পৈতৃক নিবাস উত্তরবঙ্গে তারা এই "ইষ্টি সুমাদর" ব্যাপারটির সাথে পরিচিত আশা করি । উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু জেলায় একটা বিশেষ (!) রেওয়াজ প্রচলিত । তা হল গ্রীষ্মে, নবান্নে, শীতে, নববর্ষে ও দুই ঈদে বাড়ির জামাইদের নিমন্ত্রণ করে গুরুভোজন করানো হয় ।
জামাইদের লোক পাঠিয়ে নিয়ে আসতে হয় দাওয়াত রক্ষা করে । এরপর মৌসুমভিত্তিক ভোজন সমাদর করা হয় । যেমন, গ্রীষ্মে আম-কাঁঠাল-কলা-দুধ ফলার আর ভাল সালুন (তরকারি) । নবান্নে মুড়ি, নারিকেল, সিন্নি । শীতে অন্তত দু'রকমের পিঠা ও ভাত সালুন খাওয়াতে হবে জামাইদের । সালুন অবশ্যই গরুর বা খাসির মাংসের বা হাঁস হতে হবে এবং কোন অবস্থাতেই "কুড়হা" (মুরগি) আর ডিম রান্না করা যাবে না । একান্ত অপারগ হলে "ফারমিন কুড়হা" (ফার্মের মুরগি) এনে সালুন রেঁধে দিতে হবে । মাছ রান্না হলে "চাহা মাছ " (টুকরো করা যায়) এমন মাছ আনতে হবে ।
যাক সে কথা । তাসলির এমন প্রচন্ড আগ্রহ লিপস্টিকটার প্রতি দেখে আমি অবাকই হলাম ।
বললাম, "আয় তোকে লাগিয়ে দেই ।"
ও আগ্রহে এগিয়ে এলো । লিপস্টিক লাগানোর পর বললাম, "বাহ ! খুব সুন্দর হয়েছে ।"
ও আয়না হাতে নিয়ে অনেকক্ষন দেখলো । হঠাৎ কার গলার আওয়াজ শুনে বলল, "মা ডাক পাইরতাসে আফা যাই ।''
ও কিছুদূর যাবার পর হঠাৎ কি যেন মনে হল, তাসলিকে ডেকে বললাম, "তাসলি এদিকে আয় ।"
ও দৌড়ে ফিরে এল, "আফা কি কন !"
আমি লিপস্টিকটা ওর হাতে দিয়ে বললাম, "নে এটা তোকে দিলাম ।"
তাসলি বিস্মিত হয়ে চেয়ে রইল যেন বিশ্বাস হচ্ছেনা ওর আমার কথা ।
আমি জোর দিয়ে বললাম, "আরে ধরে তো ।"
এবার হাত বাড়িয়ে নিয়ে বলল, "হাছাই দিলেন ?"
হেসে বললাম, "তো কি মিছা দিলাম ! এটা এখন তোর । যা ।"
একটা বিস্তৃত হাসি দিয়ে লাফাতে লাফাতে "ওই মা........এল্লা দেহো......তিনা আফা কি দিসে আমাক !" বলে দৌড়ে বাড়ির দিকে গেল ।
সত্যিই চমৎকৃত হলাম ওর এতটা আনন্দ দেখে । একটা পুরোনো ব্যবহৃত লিপস্টিক পেয়ে কি ফুর্তি !

সারাদিন বাইরেই ছিলাম আমরা । সন্ধ্যার পর বাবামায়ের সাথে ঘরে ফিরলাম ।
রাতে খাবার সময় কার যেন কান্না শুনলাম । কোনও বাচ্চা কাঁদছে । গ্রামে রাতের বেলা ঘুমভাঙা শিশুদের কান্না খুব স্বাভাবিক ব্যাপার ।
তাই তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে হল না ।

সকালে নাশতা করে একটা বই হাতে বাগানের দিকে যাচ্ছি তখন দেখলাম তাসলি ওদের বাড়ির সামনে একটা ইউক্যালিপ্টাস গাছের নিচে দাঁড়িয়ে কাঁদছে । ডাকলাম কিন্তু এলো না ।
কল্পনা আমাকে যখন চা দিতে এলো তখন জিজ্ঞাসা করলাম, "ওর কি হয়েছে রে কল্পি ? এতো কাঁদছে কেন ?"
কল্পনা বলল, "আপ্নে নাহি কাইল একটো লিপোস্টিক দিসেন ওক ওরি নাইগা ।"
"হুম কিন্তু আমি দিয়েই দিয়েছি সেটা তো কাঁদছে কেন ?"
কল্পনা বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে বলল, "এবি কি কান্দিতেসে ? ওই নিপস্টিকটো গুলাফি আফা চুরি হইরা নিয়া গেস গা !"
আমি শুনে হতভম্ব ! তাসলিদের পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে গোলাপি সবচেয়ে বড় | সে দুই সন্তানের জননী । কিন্তু গোলাপিকে আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব অপছন্দ করি কারণ সে কুটিল স্বভাবের মানুষ । গোলাপি প্রায় সারাবছরই তার মায়ের বাড়ি পরে থাকে । শশুরবাড়ি যায়না পরিশ্রমের ভয়ে । তাদের বড় গেরস্ত । অনেক কাজকর্ম ।
দুপুরে তাসলিকে ডেকে এনে অনেক বুঝিয়ে ভাত খাওয়ালাম আমাদের সাথে । আমার অন্য লিপস্টিক সাধলাম কিন্তু ওর ওটাই ভালো লেগেছে ! তবে আমার কম্প্যাক্ট পাউডারটা ওর পছন্দ হয়েছে | ওর ভাষায় "ডাহাওয়ালা বাটির মুদ্দত আইনা" (ঢাকনা দেয়া বাতির বাটির ভেতর আয়না) । তাই ওকে ওটা দিয়েদিলাম । আর এমনিতেও ওটা আমি পার্সে রাখতাম আয়না হিসেবে ।

এরপর প্রায় চারবছর পর গেলাম গ্রামে । এবারও এলো তাসলি । ও বেশ বড় হয়েছে । শুনলাম ক্লাস সিক্সে পড়ে । ওর খুব ইচ্ছা পড়ার কিন্তু ওর বাবামা দেবে না । বিয়ের ঘর দেখছে ওর ।
আমি রাগ হয়ে ওর বাবাকে বললাম, "চাচা এগুলো কি বলেন ? চৌদ্দ বছরের একটা বাচ্চার বিয়ে দেবেন ? কি কথা এগুলো !"
ওর বাবা গোলাই খুব গোয়ার মানুষ । পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে বলে সবাই ডাকে গোলাই মুন্সি । সে আমাকে মুখ বিকৃত করে উত্তর দিল, "তোমাগের তো হিসেবেই ভেন্ন তোমরা হৈলাগা টাউনের সলপোল ! তোমাগের দেগি আঙ্গের বিটিগোর সাইজপো !"
অনেক বুঝালাম তাকে । সে শুনবে না ।
গ্রামে শিক্ষা বিনামূল্যে এমনকি মেয়েদের পড়াশুনার জন্য উপবৃত্তি দেয়া হয় । এরপরেও প্রান্তিক লোকজন এতটা অনাগ্রহী তাদের সন্তানদের শিক্ষার বিষয়ে ।
সেবার চলে আসার সময় তাসলি অনেক কাঁদলো । ওর কান্না দেখে নিজের মনটাও খুব খারাপ হল ।

এরপর গেলাম আরো দুইবছর পর । এবার গিয়ে পেলাম না তাসলিকে । শুনলাম পাঁচমাস আগে তার বিয়ে হয়ে গিয়েছে । মনটা সত্যিই ভারী হয়ে গেল । এমন হাসিখুশি উচ্ছল একটা মেয়ে তাকে এমন করে ধরে বেঁধে বিয়ে দিয়ে দিল । আশ্চর্য !
তখন আমার প্রথম মাস্টার্স চলছে । কোর্স মাত্র আর একটা বাকি কিন্তু থিসিসের অনেক কাজ বাকি তাই ফার্স্ট কালচার রিপোর্টের রাফ কপি তৈরী করার জন্য ল্যাবনোটের কপিগুলো নিয়ে গিয়েছি । সেগুলোই দেখছি । এমন সময় তাসলি এলো । "আফা .....তিনা আফা" বলে হাসিমুখে দ্রুতপায়ে হেটে আসতে লাগল আমার দিকে ।
আমি ওকে দেখে চমকেই গেলাম । বোধহয় এটা ওর বিয়ের শাড়ি । উজ্জ্বল লাল জমিনে সোনালী সুতোর জবঢ়রং জংলী কাজ করা । রোদে ওর দিকে তাকিয়ে আক্ষরিকভাবেই চোখ ঝলসে গেল যেন । সারা গায়ে ইমিটেশনের ভারী গ্রাম্য নকশার গহনা, হাতভর্তি লাল রেশমি চুড়ি । পায়ে টিয়া রঙের প্লাস্টিকের স্যান্ডেল ।
ও এসে সালাম করতে গেল । আমি দ্রুত তুলে ধরে একটু বকা দিয়েই বললাম, "হেই পাগল ! আমাকে কিজন্য সালাম ? এতো বুড়ি হয়ে গেছি আমি !"
তাসলি গালভর্তি হেসে বলল, "আফনে বড় আফা হেনিগা ।"
"বাবা আমায় সালাম টালাম করিস না । যা যেয়ে আমার মাকে সালাম কর ।"
"বড়মা আইচ্ছে ?"
"হুম ।"
ও ভেতরবাড়ির দিকে গেল ।
আমি কল্পনাকে বললাম, "মহা খুশি দেখি ও !"
কল্পনা আমাকে বলল, " ওর স্বমী ডো ভালা । হোসুর হরিও ভালা ! কিন্তু ননসাস টো......মাগি সিব্বা জাইরার জাইরা |"
(বদ চরিত্রের মানুষকে সম্বোধন করতে এই 'জাইরা' শব্দটি আমাদের অঞ্চলে ব্যবহৃত হয়)
যাক জীবনসঙ্গীটা সে ভালো পেয়েছে জেনে ভালো লাগল । আমি আবার ব্যস্ত হলাম আমার "ভিব্রিও কলেরি ১৩১" নিয়ে ।

বিকেলে আমি "মেমব্রেন রিপোর্ট" দেখছি একমনে । সত্যিই কোনদিকে লক্ষ ছিলনা । হঠাৎ পিঠে কেউ টোকা দিতে ফিরে তাকালাম ।দেখলাম তাসলি দাঁড়িয়ে আর তার একটু দূরে লজ্জিত লজ্জিত দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে এক যুবক ।
তাসলি লাজুকহাসি হেসে বলল, "আফা আপনার সাত এল্লা দেহা হৈরবর চায় !"
আমি বুঝলাম এই তাসলির স্বামী । আমি তাসলিকে বললাম, "এখানে কেন বাড়ি নিয়ে গিয়ে বসা উনাকে । আমি আসছি ।"
তাসলি উচ্ছাসিতভাবে যুবকটিকে নিয়ে বাড়ির দিকে গেল ।
আমি কাগজপত্র ব্যাগে রেখে গেলাম তাসলির অনুরোধ রক্ষায় ।
হালকাপাতলা গড়নের, মাঝারি উচ্চতা, কালো গায়ের রং আর মুখচেহারা সাধারণ । বয়স বড়জোর পঁচিশ হতে পারে । নাম সোবাহান ।
মা তাদের বসিয়ে আপ্যায়ন করলেন । শখ করে সে স্বামীকে সাথে নিয়ে এসেছে তাই মা চেষ্টা করলেন তার মানরক্ষার । মা পরদিন দুপুরে খেতে বললেন ওদের । তাসলির খুশি যেন বাঁধ মানছেনা এই নিমন্ত্রনে । সে সাগ্রহে রাজি হল ।
পরদিন দুপুরের কিছু আগে তাসলির মা তরিকা এলো । সে এসে আমার মাকে বলল, "আপ্নে কয় তাসলিক ওর স্বমীর সাত হইরা খাইবের নাইগা কৈসন ?"
মা বলল, "হ্যা ।"
"আমার বিটিরা ব্যাক জানেই না । অগের কৈই নাই । ওরা কুহুন বান আইসা হাইরব ! তায় এল্লা উপায়ই হরেন ! দুফারহার্ডও (দুপুরের খাবারটা) আইতে ( রাতে ) খিলান । ওরা ব্যাক ভাটিবেলাদা ( বিকেল বেলা ) আসপিয়ানে (এসে পড়বে )!"
মা বিস্মিত হয়ে বলল, "আমি তো শুধু তাসলিকেই বলেছি । বাকিদের তো না ।''
"না খিলালি ব্যাহিক খিলান নাইগপো !"
আমার চাচী রেগে বললেন, "গাও জ্বালাইনা কতা যেন কও না ! তোমার বিটি আর বড় ভাবীরই ঠেহা !"
তরিকা গজগজ করতে করতে চলে গেল ।
চাচী বলল, "স্বমিকদা বৌ ! দোনোজোনেই সোমাইন জাইরা !"
তাসলি কিন্তু খেতে এল স্বামীকে নিয়ে । খুব আনন্দের সাথে স্বামীকে নিয়ে খেয়ে গেল ।
পরদিন সবার কাছে আমাদের কাছে বিদায় নিয়ে তাসলি চলে গেল ওর স্বামীর সাথে ।
সেই শেষবার দেখেছিলাম ওর স্বামীকে ।

এর পরেরবার বছরখানেক পর যখন যাই একটা মর্মান্তিক দুঃসংবাদ শুনলাম । ওর স্বামী সোবহান মারা গেছে দিন পনেরো আগে ।
তাসলিকে দেখে চমকে গেলাম আমি । স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে গেছে, গায়ের রং একেবারে কালো হয়ে গেছে, চেহারাও ভেঙে গেছে ।যেন চেনাই যায়না ।
দ্যাখা করতে এসে একটু পর "ও......আফা......গো....." বলে করুন বিলাপ করে কাঁদতে শুরু করল ।
কি দেব ওকে সান্তনা ? আমার তো এর ভাষা জানা নেই ।
ও কাঁদছে আর বলছে "মানুষটো.......আফা......মানুষটো.....এই দেইখ্লাম কেবলি.......চোহের সামানে......হাইসল.....পানি নিয়া আইসা দিল......আমাক.......আমাক বাতাস দিবার নিয়া......আফাগো.......কেবা হইরা কি অইল" !
দীর্ঘক্ষণ বসে কাঁদল ও ।

পরে সবকথা শুনলাম তাসলির চাচীশাশুড়ির কাছে । সোবাহান একটা সাধারণ গ্রাম্য মানুষ । কিন্তু ভালো মনের মানুষ । এজন্যই তাসলির তাকে জানতে, ভালোবাসতে দেরি হয়নি । ওদের গেরস্ত বাড়ি । সোবাহানের মা, বাবা, আর তারা দুজন এই নিয়ে সংসার | কিন্তু সোবাহানের বড়বোন হেনা এখানেই থাকে বেশিরভাগ সময় । কারণ তার অত্যাধিক মুখরা স্বভাবের জন্য একেবারেই তাকে সহ্য করতে পারেনা তার স্বামী ও শশুড়বাড়ির লোকেরা । তাই সে বাপের বাড়িই পরে থাকে আর বাবা, মা ও আশেপাশের মানুষের সাথে ঝগড়া করে সারাদিন ।
সোবাহানের বিয়ের পর শুরু হয় তাসলির প্রতি তার অত্যাচার । হেনা নিজে অসুখী মানুষ তাই সে এই নবীন সুখী দম্পত্তির সুখ সহ্যই করতে পারেনা । সবসময় ঝগড়া করার সুযোগ খোঁজে আর প্রায়ই হাত তোলে তাসলির গায়ে । একেকসময় সোবহান এর প্রতিবাদ করে আর তখনই বিষম ঝগড়া শুরু হয় । সোবহানের মা তাসলিকে এই বলে বুঝ দেয় যে, ওর স্বামী থাকেনা সাথে, ওর মনে শান্তি নেই তাই অমন করে ও । তুমি মনে নিও না ।
মাঝে মাঝে সোবহানের বাবা খুব রাগ হয় মেয়ের প্রতি । রাগ হয়ে বলে, "তুই ম্যাসল মাইনসের জাতই না ! তোক তোর স্বমী নিব কেবা হইরা ? সেই চোপা তোর ?"
এই কথার জের পরে তাসলির প্রতি ।
হেনার সবচেয়ে রাগ হয় যখন সে দেখে সোবাহান প্রায় রাতে লুকিয়ে তার স্ত্রীর জন্য এটাসেটা ফল-সদাই আনে । যেমন, একটা কাগজে পেঁচিয়ে অল্পকিছু গজা, খুরমা, নিমচি, জিলাপি বা কখনো দুটা গোল্লা (মিষ্টিকে গোল্লা বলা হয়) কি সন্দেশ, কখনও দুটো আপেল বা কমলা কি একহালি কলা এনে দেয় । তাসলি হেনার মেয়েকে দিয়েই খায় । কিন্তু সোবাহান কেন আনবে বৌয়ের জন্য এসব ? আর আনলেও হেনার হাতে কেন দেয়না ? এই নিয়ে প্রায় ঝগড়া ।
তাসলি হেনার এতো জঘন্য ব্যবহারের পরেও চুপ থাকে সোবাহানের জন্য । ওই কয় তো কি ? কোইগ্গা ! মানুষটো সেবা ভালোমানুষ ।
এই ভালোমানুষটার মায়ায় তাসলি পড়ে থাকে ।
তখন "খোন্দ" চলছে (ধানকাটার সময়)। আটি বারিকরা, মাড়াই দেয়া, চিটা ঝাড়া, ধান তোলা, খড় মাড়া দেয়া, ধানসিদ্ধকরা, ধান পাইর দেয়া অনেক কাজ । ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিশ্রাম নেই ।

সেদিন খুব গরম । একবার টেবিলফ্যানের কাছে গিয়ে তাসলি বসেছিল দেখে তাকে গালাগাল করে হেনা উঠিয়ে দিয়েছে । এবং যাতে আর ফ্যান ছাড়তে না পারে তাই তারটা ছিঁড়ে ফেলল । তাসলি আবার কাজে লেগে গেল । কিন্তু হেনার দুর্বুদ্ধি সেদিন সত্যিই মারাত্মক হয়ে উঠেছে । সে একটা ভয়ংকর কাজ করল । হেনা ছেঁড়া তারের প্লাগটা তার বাবার ঘরের সকেটে লাগিয়ে এল । সেসময় সোবাহানের বাবা মা দুজনেই ঘরেই ছিল ।
সোবাহানের মা বলল, "ফ্যানডো চালু দা দেগা ।"
হেনা মুখ খিচিয়ে বলল, "এহঃ ! ফ্যান চালু দা দিব্বো ! আইজকা মাগিক এব্বা জব্দ হরমু দেইহেনি ।"
তাসলি একমনে ঘেমে নেয়ে কাজ করে যাচ্ছে । ওদিকে হেনা রান্নাঘরের দরজায় খেতে বসল ।
সে একবার চিৎকার করে বলল তাসলিকে, "ফ্যান সারোস তো তার জোড়া দে নেগা ।"
তাসলি তার দুর্বুদ্ধির কিছুই জানেনা । কিন্তু সে ঝগড়া এড়াতেই আর ফ্যানের কথা ভাবল না ।

হঠাৎ সোবাহান এলো ক্ষেত থেকে । সে তার স্ত্রীকে এত কষ্টকরে কাজ করতে দেখে বলল, "ঘাইমা না গোসল দিসো ।”
"তো কি হৈরব । আফা তার ডো সিরা হাইল দিসে ।"
সেদিকে চেয়ে সোবহান বলল, "বুইড়াডোগরা ম্যাসল, সোল মাইনসের নেখলা কাইজ্যা হরে ।"
সোবহানের মা তখন ঘর থেকে বলছে, "ও সবু বৌয়েক কও ভা...দিবার নাইগা |"
সোবাহান "কৈয়ারও" বলে জবাব দিয়ে তারটা জোড়া লাগাতেই গেল ।
হেনা কলের পাড়ে হাত ধুতে গিয়েছিল । সে ফিরে ভাইকে সেদিকে বসতে দেখে চিৎকার করে বলল, "ও সবু......ধইসনা.......সোনা.....ধইসনা !" বলে সেখানে দৌড়ে যেতে যেতেই সোবহান একসাথে দুটো তারে হাত দিয়ে বসল ।
হঠাৎ যেন ভেলকি হল কোনো । সোবহান ছিটকে এসে উঠানের মাঝখানে পড়ল । পরেই "উহ্হঃ" জাতীয় একটা শব্দ করেই একেবারে নিশ্চুপ হয়ে গেল ।
তাসলি কিছুক্ষন বোবা দাঁড়িয়ে থেকে হঠাৎ একটা প্রচন্ড চিৎকার করে স্বামীর নিথর দেহের দিকে দৌড়ে গেল ।
সেদিন বিকালেই সোবহানের দাফন সম্পন্ন হল ।

রাতে তাসলি পাথরের মূর্তি হয়ে বসেছিল । হেনা কি যেন চাইছিল সে কোনো উত্তর দিচ্ছিল না । একসময় হেনা "এ মাগি কতা কসনা কে !" বলে ধাক্কা দিতে সে মেঝেতে শুয়ে পড়ল ।
এমন সময় এসব দেখে সোবহানের মা উঠে চলে গেল । সে রান্নাঘরের লাকড়ির থেকে একটা চ্যালা কাঠ এনে ভাত খেতে বসা হেনার পিঠে প্রচন্ড জোরে এক বাড়ি দিয়ে বলল, "আমার সোল ডোক মাইরা হাইলদিলু তুই মাগি । ফের ওক ধরোস । তোক আমি আইজকা জোবো দিমু ! মাগি তুমি কি হইচ্চো আমি দেহি নাই না ? আমার বেটাক মাইরাহাইলদিসু ।"
সোবাহানের মা বেদম মারধর করল মেয়েকে কিন্তু কোনো কথাই বলল না তাসলি । শুধু তার চোখের পানি কোনো বাধা মানলো না ।
কল্পনার কাছে কথাগুলো শুনে বুকটা হুহু করে উঠল ।

চলে আসার কিছুদিন পর জমিজমা সংক্রান্ত কিছু জটিলতার জন্য দু'মাসের মধ্যে আবার যেতে হল গ্রামে । তাসলি দেখা করতে এল । কিছু কথার পর নীরবে কাঁদতে লাগল ।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, "কিছু বলবি ?"
তাসলি কেঁদে কেঁদে বলল, "আফা আমার প্যাটের মদদে সল ।"
আমি অবাক হয়ে বললাম, "তুই প্রেগনেন্ট !"
"যে মাসে মানুষটো মইরচে হে মাসের থেন আমার শরীর বন । ও পাড়া কমিটিত গেস্লাম । কৈল তখনি কইবো । কেবা এক কাটি দে কি হৈল্লো । কৈল প্যাডের মইদ্দে সল । মানুষটোর সল ।"
ও আরো একটু বেশিই কান্না শুরু করল । বলল, "আর নাই মানুষটো । সল ডো থুইয়া গেসে ।"
স্বামীহারা এক কিশোরী যে তার স্বামীর শেষ চিহ্ন যা তার গর্ভে রয়েছে সেটা নিয়ে একই সাথে আনন্দিত ও দুঃখে জর্জরিত ।
ও পেটের উপর হাতটা রেখে বলল, "বরপা বিয়া আইনচে একটো ।"
"তুই কি বলিস ?"
তাসলি হাউমাউ করে কেঁদে বলল, "আমি হরমুনা আফা । আমি মানুষটোক খালি খোবে দেহি । হাইসতেসে ।"
ও কাঁদতে লাগল, বুঝলাম সে এখনও স্বামীকে প্রচন্ড ভালোবাসে ।
তাসলি বলল, "আমি আব্বাক কই মাক কই আমার সল ডো নিয়া আমি এবি থাইকা পারমু । আমাক বিয়া দিও না । তা হুইনবো না ।"
আমি ওর হাতটা ধরে বললাম, "তুই আমার সাথে ঢাকা চল । ওখানে আমি ঘরে থাকি । তুই থাকবি সাথে ।"
ও অবাক হয়ে বলল, "হাচাই নিয়া যাইবেন ?"
"হ্যা ! চল ।''
ও চোখ মুছে বলল, "আব্বা কয় মা কয় সল ডো ফাইল দে । আফা এল্লা কন । মানুষটোর সল আমি কেবা হইরা মাইরা হাইল দেই । আর কি কিসু থাইকপো মানুষটোর !" বলে আবার ঝরঝর করে কাঁদা শুরু করল ।
বলল, "আমাক মাইচ্ছে ধইরা ফালাম না দেহি ! আমি কেব্বা হইরা মানুষটোর সল ফাইল দেই ।"

পরের দিন ওর বাবামাকে অনেক বোঝালাম, তারা শুনবেই না কিছু । তারা সব কথা দিয়ে ফেলেছে বিয়ে তারা দেবেই । বললাম ও ওর স্বামীর শেষ চিহ্ন নষ্ট করতে চায়না ।
ওরা বলল স্বামী নেই তো তার চিহ্ন দিয়ে হবে কি !
কোনভাবেই তাদের বোঝাতে পারলাম না ।
রাতে হঠাৎ তাসলি আমাদের ঘরে এসে পড়ল ।
অবাক হয়ে বললাম, "কি হয়েছে ?"
কান্নাকাটি করে বলল যে যে বাড়িতে ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে তারা এসেছে । ঘন্টাখানেক পর ওর বাবা অনেক হৈচৈ করে ওকে নিয়ে গেল ।
আমার ঘুম হল না সারারাত ।
পরদিন আমি ওদের জানালাম যে আমি ওকে নিয়ে যেতে চাই সাথে ।
শুনে তাসলির বাবামা খুব খারাপ কিছু কথা বলল, যার একটা এমন যে , যেহেতু আমার এখনো বিয়ে হয়নি তাই আমার বয়সে ছোট যারা তাদের সংসার দেখে আমার মনে জ্বালাপোড়া করছে ।
এই কথায় আমার চাচী রাগ হয়ে তাদের বলল, নিয়ে যাও তোমাদের মেয়ে । তোমাদের জাতের কোনদিন ভালো করতে পারবে না কেউ ।
আমি এরপরেও চেষ্টা করলাম ওকে আমার সাথে নিয়ে আসার জন্য । কিন্তু তা হল না ।

শেষ যেবার গ্রামে গিয়েছি তখন তাসলি এসেছিল ।
আমি পুকুরপাড়ে বসেছিলাম ও এসে দাঁড়াল ।
ওকে হাত ধরে বসিয়ে বললাম, "কেমন আছিস ?"
ও শান্তভাবে বলল, "ভালো । বড়মার কতা হুইনলাম আফা ।"
"হুমমম ।"
"আপ্নে কেবা আসেন ?"
"ভালো ।"
"আমার ফের বিয়া হইসে আফা ।"
"তাতো দেখছি । আরো একটা জিনিস দেখছি ।"
তাসলি মলিন হেসে বলল, "সাতমাস পৈড়ল ।"
"সাবধানে থাকবি ।"
"ব্যাটা হব ।''
"খুব ভালো কথা । তোর স্বামী খুশি ?"
"হো ।"
তাসলি চুপচাপ বসে রইল কিছুক্ষন, তারপর মৃদুস্বরে বলল, "মানুষটোর সল ডো আসিল বিটি ।"
আমি হেসে বললাম, "তুই জানিস কেমনে ?"
"আমাক মানুষটো খালি কৈত আমার একটো বিটি হইবো এককের তোমার নাহাল । ফের না আফা আমি খোবে দেহি মানুষটো একটো বিটিসলের সাত খেলাইতেসে ।"
আর কিছু বললাম না আমি । দেখলাম ওকে । কত বদলে গেছে । সেই হাসিখুশি উচ্ছল মেয়েটির জায়গায় ধীরস্থির চুপচাপ সম্পূর্ণ অন্যকেউ যেন বসে আছে ।
কিছুক্ষন নীরব বসে থেকে তাসলি বলল, "যাই আফা ।"
"আচ্ছা ভালো থাকিস ।''
তাসলি কিছুদূর গিয়ে আবার ফিরে এসে আমি বাধা দেবার আগেই ঝট করে সালাম করল আমাকে, ওকে বকতে গিয়েও পারলাম না ।
দেখি ওর চোখে টলটলে অশ্রু ।
ভেজাকণ্ঠে বলল, "বড় মা আর নাই তাই আপনেকে সালাম হৈইলাম । আর কেউলই নাই ।"
ওর মাথায় হাত রেখে বললাম, "ভালো থাকিস রে পাগলী ! আমার মত সামান্য মানুষের দোয়া আল্লাহ শুনবে কিনা জানিনা তাও মন থেকে বলছি তোর জন্য, ভালো থাকিস তুই ।"
তাসলি ধীর পায়ে চলে গেল ।
আমি তাকিয়ে রইলাম পুকুরের দিকে ।
কিছুই থাকেনা চিরদিন, কোনকিছুনা । সব হারিয়ে যায় । সময় হারিয়ে যায়, মানুষগুলো হারিয়ে যায়, দিনগুলোও হারিয়ে যায় । সাধে কি রবিবাবু আক্ষেপ করে বলছেন, "দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইলোনা, সে যে আমার নানা রঙের দিনগুলি ।"
সত্যিই থাকেনা কিছু । কিন্তু সেই দিনের চিহ্নগুলো এক অদ্ভুত দাগ কেটে রেখে যায় যা মেটেনা কোনদিন ।

..................
শব্দার্থ
...........................

আইসতেসে - আসছে
বড়মা - উত্তরবঙ্গের অনেক জেলায় বড়চাচীকে "বড়মা" বলা হয়
পাড়া - এলাকা বা মহল্লা
গাইরছে - রোপন করা হয়েছে
নাইগবো - লাগবে
খাড়াই - এরই মধ্যে
এবি - এমনি
পাস্ পাস্ - পিছন পিছন
আইসে - আসে
খাইবার - খাবার
নাইগা , লেইগ্গা - জন্য
নোল - রোল
ইল্ল্যান - এইসব
নিপিষ্টিক - লিপিস্টিক
হইরা - করে
টেহা - টাকা
মেলা - অনেক
পাইরতাসে - দিচ্ছে
কন - বলেন
হাছাই - সত্যিই
এল্লা - একটু
ভেন্ন - ভিন্ন
হৈলাগা - হলে গিয়ে
টাউনের - শহরের
সলপোল - ছেলেপেলে
দেগি - সাথে
আঙ্গের - আমাদের
বিটিগোর - মেয়েদের
সাইজপো - তুলনা
হেনিগা - সেই জন্য
হোসুর হোরি - শশুর শাশুড়ি
নোনাস - স্বামীর বড়বোন
সিব্বা - সেইরকম, প্রচন্ড
সাত - সাথে
দেহা - দেখা
হৈরবর - করতে
কৈসন - বলেছেন
ব্যাক - সবাই
কৈই - জানানো
কুহুন - কখন
নাইগপো - লাগবে
ব্যাহিক - সবাইকে
ঠেহা - দায়
দোনোজোনেই - দুজনেই
সোমাইন - সমান
ম্যাসল - মেয়েমানুষ
চোপা - ব্যবহার
দেইহেনি - দেখেনিও
বুইড়াডোগরা - বর্ষীয়সী
কৈয়ারও - বলছি
ধইসনা - ধরিসনা
সোল্ - সন্তান
জোবো - জবাই
হইচ্চো - করেছিস
শরীর বন - মেনস্ট্রুয়েশন পিরিয়ড স্থগিত
খোবে - স্বপ্নে
মাইচ্ছে - মেরেছে
ফাইল দে - গর্ভপাত
কেব্বা - কেমন
এককের - একেবারে
নাহাল - মত

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৭:১৯

Sujon Mahmud বলেছেন: সময় সল্পতার কারণ সব টুকো পড়তে পারছিনা। তবে গল্পটা ভালো লাগছে

২| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৮:১৩

সামিউল ইসলাম বাবু বলেছেন: অনিন্দ্য সুন্দর।

শুভ সকাল।

৩| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৮:২৭

আবু তালেব শেখ বলেছেন: যদিও এতোবড় লেখা পড়িনা তবে পড়তে পড়তে ভালো লেগেছে তাই পুরোটা পড়লাম ,,,,,,,,, লেখার ধরন অকল্পনীয়

৪| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:৩০

অংকুর জেসফি বলেছেন: ভাল হয়েছে, শুভকামনা :)

৫| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১:৫৭

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: গল্পটি পাঠে একটুও বিরক্ত হইনি। এতে মনে হয়েছে পাঠক সমাদৃত আপনার গল্পটি। ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.