নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কবিতা প্রেমী; একটু এলোমেলো; উড়নচণ্ডী; আর বই ভালবাসি। শব্দ নিয়ে খেলা আমার বড্ড প্রিয়। গল্প-কবিতা-মুক্ত গদ্য সব লিখতেই ভালো লাগে। \"কেননা লেখার চেয়ে ভালো ফক্কিকারি কিছু জানা নেই আর।\"

শিখা রহমান

পুরনো ইমেজারির ব্যবসা করি। চিত্রকল্প সস্তায় বানাই। টান টান রিমেকশিল্প, ওপরে ঝকঝক করছে স্কাই।.........লোকে পড়ে ভাবে এ তো নতুন, আনকোরা কৌটো। কিন্তু সেই একই, সেই একই বন্দিপ্রাণ ছটফট ভ্রমর....

শিখা রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাগল হবার অপেক্ষায়

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:১৫



- আম্মু এই মানুষটা এমন কেন?
- বাবা কাছে যেয়ো না...ও মানুষ না...পাগল!!

মা ছেলের কথা শুইন্যা অনেক কষ্টে একটু চোখ মেইলা দ্যাখলাম। স্কুলডেরেস পইরা একটা চার পাঁচ বছরের ছুট্টু ছেলে মায়ের সাথে হাইটা যাইতাছে। গলির মাথায় স্কুলের মর্নিংশিফট মনে হয় শ্যাষ; তার মানে এগারটা বাইজা গ্যাছে। ঘুম আগেই ভাঙ্গছে; শীতের সকালের রোদ গায়ে পড়লে ঘুমাইতে খুবই আরাম।

মাথার এই বেজন্মা উকুন গুলির জ্বালায় ঘুম নষ্ট। রোদের তাপে মাথা জুইড়া এমন কামড়াকামড়ি লাগায় যে ঘুমানো কঠিন। মাথাডা আরাম কইরা চুলকাইতেও পারি না; লম্বা চুলে এমুন জট লাগছে যে আঙ্গুল দেয়া যায় না। সেদিন রাস্তা থেইক্যা একটা আইসক্রীমের কাঠি যোগাড় করেছিলাম। কই যে গেলো?

এইইই তো...উহহহ মাথা চুলকাইতে যে কি আরাম!!! শালা এই উকুন গুলা আমার রক্তে খাইয়া যে কি মজা পায় কে জানে? বেশীর ভাগ দিনতো তিনবেলা খাওয়াই জুটে না...রক্তে কুন ভাইটামিনতো পাওয়ার কথা না। তবে যাদের রক্ত চোষার অভ্যাস তারা আমার মতো গরীব মানুষের রক্তই বেশী বেশী খায়!!! উকুনের আর কি দোষ?

মাথাটা কামায়ে ফেলতে পারলে ভালো হইতো; উকুনের জ্বালায় আর ভালা লাগে না। শীতটা কমলেই মাথা বেল কইর‍্যা ফেলমু। চুল কেন...মাঝে মাঝেতো ইচ্ছা করে মাথাটাই কাইট্যা ফেলতে। এখুনতো শুনি চুলকাটার জইন্য নাপিতের মতো মাথা কাটার জইন্যও লোক পাওয়া যায়। তবে পাগলের মাথার আর কি দাম? দামী মাথা হইলে নিশ্চয়ই কাটার জইন্য লোকে এমনিতেই আয়া পড়তো।

আজ কি খাওয়া পামু কিনা কে জানে? মসজিদের সামনে অবশ্য খাবার আর ভিক্ষা না চাইতেই পাওয়া যায়। রাস্তার ওই পাশেই মসজিদ; মসজিদের নামাজের জায়গা বাড়াইতাছে। বৃষ্টির মওসুম থেইকাই ইটা বালু রড সুরকি আইন্যা আশেপাশে ফালাইয়া রাখছে। ভালোই করছে; ইটের পাজার ওপরে এই ঠাণ্ডায় একটু আরাম কইরা ঘুমানো যাইতাছে।

এই জায়গাতে ফকিরের আসাযাওয়াও বেশী, বিশেষ কইরা শুক্রবারে জামাতের দিনে। ভিক্ষুকরা জায়গা নিয়া ক্যাচাল করলেও আমারে কেউ ঘাটায় না...পাগল হইবার এই এক সুবিধা!!! তবে মাঝে মাঝে খুব একা লাগে। আগে আমার সাথে এইখানে আরেকটা পাগলও থাকতো। ব্যাটা সারাদিন বিড় বিড় কইরা বলতো “আম জা্ম আম জাম”; কে জানে ক্যান? আম জাম না খাইতে পাইয়া পাগল নাকি ফরমালিন দেয়া আম জাম খাইয়া পাগল কে জানে!! আর জানমুই বা ক্যামনে? সে খালি বলে “আম জাম” আর আমারতো কথাই বন্ধ। “আম জাম” মাঝে মাঝেই চৌরাস্তার মোড়ে ট্রাফিক কন্ট্রোল করতো; বেশ ভালোই করতো; জ্যাম থাকলেও ছুইট্যা যাইতো। একদিন কোত্থনে পুলিশ আইস্যা ধইরা লইয়া গেলো। আরে বেকুব ঠোলারা...এই শহরে সব রিক্সা গাড়ী যখন পাগলের মতো চলে তখন পাগলের চেয়ে ভালো ট্রাফিক কন্ট্রোল আর কে করতে পারে?

ধুর!!! হাসি পাইতাছে যে...হা হা হা!!! আচমকা হাইসা উঠতেই দুজন পথচারী লাফ দিয়া সইরা গেলো। হা হা হা!!! এদের দেখি ভয়ে চোখ মুখ শুকায়ে গ্যাছে; ব্যাটাদের ভয় দেইখ্যা আরো বেশী হাসি আসতেছে...পাগলের চীৎকারের চাইয়া যে পাগলের হাসি বেশী ডরাওলা তা আমি জানি...ক্যান কে জানে? আমিতো কখনো কাউরে বকি নাই, তাড়াও করি নাই। শুধু আমার কথা কইতে ইচ্ছা করে না, খুবই ক্লান্ত লাগে, মনে হয় কথা কইয়া কি হবে? কুন মানে নাই যে...অর্থহীন!!! পাগলে কি না কয় আর ছাগলে কি না খায়?

তবে কাউরে তাড়া করি নাই এই কথাও পুরাপুরি ঠিক না। মামারে বটি নিয়া তাড়া করালাম বইলাইতো লঞ্চে কইরা গেরাম থেইকা এই শহরে রাইখা গেলো। তাড়া করুম না? মামা্রে আইসা লোকমান মিয়া বলে “আহারে পুলাটার জবান এখুনো বন্ধ...কি মনে হয়? আর কথা কইবো না?” মামা কিনা তারে কয় “আর কইয়ো না...এই গোলমালের সুময় আমার বুন, বুন জামাইরে এত্তটুক ছেলের সামনে কুপাইয়া মারছে...ভয়ে কথা বন্ধ মনে হয়।“ “গোলমাল” কথাটা শুইনাই আমার মাথাটা গরম হয়া গেলো; আব্বা সবসময় গ্রামের সবাইরে বলতেন “খবরদার!! গোলমাল বলবা না, মুক্তিযুদ্ধ বলবা। এখন আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধ চলতেছে।“ মামী উঠানে বটি দিয়া রান্নার কাটাবাছা করতেছিলেন। আর কিছু না পাইয়া সেইটা নিয়াই মামারে দৌড়ানি দিলাম; খালে নিয়া ফেলছিলাম।

হা হা হা!!! মামার চেহারাটা মনে কইরা আবারো হাসি আসতেছে। তবে মামা মামী এমনিতে অনেক আদর করতো। আরেকবার যে কুদ্দুস মিয়ারে দা নিয়া তাড়া করছিলাম তখন কিন্তু গ্রামের লোকে বললেও মামা মামী ঘর থেকে বাইর কইরা দেয় নাই। কুদ্দুস মিয়া!!! মনে কইরাই আবার মাথাটা আউলা হইয়া যাইতাছে। সে কি ভাবছে আমি দেখি নাই, আমি জানি না। পাকসেনাদের আমাদের বাসায়তো সেই নিয়া আসলো; মা বলাতে আমি তাড়াতাড়ি শোয়ার ঘরের আলমারিতে লুকাইলাম।

অনেক আগে আমাদের গেরামে একটা গরু মরছিলো; আর শকুনের দল কুথা কুথা থেইকা আইসা মরা গরুটার ওপরে হামলায়ে পড়ছিলো। বিছানায় মায়ের ওপরে ওই পাকিস্তানী মিলিটারীরা ঠিক তেমনি হামলায়ে পড়ছিলো; ছিঁড়া খুইড়্যা খাওয়া শ্যাষে বেয়োনেট দিইয়া খুঁচায়া খুঁচায়া মায়েরে মারলো। বাবারে শোয়ার ঘরেই চেয়ারের সাথে বাইন্ধ্যা রাখছিলো; মাঝে মাঝে রাইফেলের বাট দিয়া মারতেছিলো। বাবা মা প্রথমদিকে চীৎকার করতেছিলেন কিন্তু একটু পরে দুইজনেই চুপ কইরা গেলেন। আমি জানি ক্যান? আমি জানিইইইই...প্রান ভিক্ষা চাইলে কাকুতি মিনতি করলে ওই বেজন্মাগুলার আনন্দ আরও বাইড়া যায়। ভয় যদি চোখে না দেখা যায়, কাকুতি যদি শোনা না যায়, তবে অত্যাচারের মজা কই?

আমি নিজের মুখ নিজে চাইপা ধইরা ছিলাম; চীৎকার যেন না হয়!!! মা আগেই বইলা দিছিলো। মা আর বাবারে মারার পরে সেই কুদ্দুস মিয়া সারা বাড়ী আমারে খুঁজছে; না পায়া শ্যাষে ভাবছে আমি বুঝি বাসায় নাই। হা হা হা!!! শালা বাঞ্চোত ভাবছে আমি জানি না, আমি দেখি নাই।

ব্যাটা হারামীর বাচ্চা মামারে আইস্যা বলে “মাসুম বাচ্চাটার এই দশা কে করলো? কথা বন্ধ...আহারে” সাথে আবার শালা চুক চুক আওয়াজও করে। দিলাম দা নিয়া দৌড়ান; প্রথমে যখন তার কাছে দা পিছুনে লুকাইয়া আউগাইছি সে বুঝে নাই...হাসিমুখে বলে “কেমুন আছো বাজান?” যখন দা দিয়া কোপ দিতে নিছি সে “ওরে বাবারে মারে...আমারে মাইরা ফেললো রে” কইয়া দৌড়...পিছে পিছে আমিও দৌড়। ব্যাটার চেলা চামুন্ডারা অবশ্য মাঝ রাস্তাতেই আমারে কব্জা করে ফালাইছিলো.....যত্তোসব!! মজাই নষ্ট!!! ইশশ রে এই একটা কারনেই গেরাম ছাইড়া আসার জন্য আফসুস হয়...গেরামে থাকলে মাঝে মাঝে কুদ্দুস আর তার মতো রাজাকারগো দৌড়ানি দিতে পারতাম। আমি ছাড়াতো গেরামে সব সুস্থ মানুষ; পাগল ছাড়া রাজাকারগো এই দ্যাশে কেউ দৌড়ানি দেয় না যে!!!

আমি কথা কই না সেই কবে থেইকা...কত্তোদিন হয়া গেলো দ্যাশ স্বাধীন হইলো...কিন্তু আসলেই কি হইলো? তাইলে কুদ্দুস মিয়ার মতো পশুগুলা বাইরে মুক্ত ঘুরে ক্যামনে? আমারে না কেউ জিগায় নাই সেইদিন কে আমার বাবা মারে মারছিলো? যে দিন কেউ আমারে জিগাবে সেই দিন আমি কথা কমু...কিন্তু আমারে কেউ জিজ্ঞাসা করে না ক্যান? সবাই কি তাইলে সব জানে? আর জাইনাও না জানার ভান করে? দ্যাশের মানুষগুলা কবে আমার মতোন পাগল হবে?

© শিখা রহমান

মন্তব্য ১৭ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১০

মাহবুবুল আজাদ বলেছেন: অনেক চমৎকার লিখেছেন। অসংখ্য ভাল লাগা রইল।

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:১২

শিখা রহমান বলেছেন: Thanks a bunch. New at this blog. Thanks for reading. :-)

২| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৪৯

বনমহুয়া বলেছেন: দারুন লেখা আপা। কুদ্দুসমিয়াদের শাস্তি হোক।

৩| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:০৭

শিখা রহমান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য আর আপনার মন্তব্যের জন্য। আসলেই শাস্তির অপেক্ষায়, পাগল হবার অপেক্ষায়।

৪| ১৬ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:৫১

বিজন রয় বলেছেন: আপনার লেখার হাত আছে।
লিখুন।

শুভব্লগিং।
ভাল থাকুন, শুভকামনা।

৫| ১৭ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ২:০৬

শিখা রহমান বলেছেন: আপনার মন্তব্য আমাকে লিখতে অনুপ্রাণিত করবে। অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য। :-)

৬| ১৮ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:৩৬

রুদ্র জাহেদ বলেছেন: দ্যাশের মানুষগুলা কবে আমার মতোন পাগল হবে?খুব সুন্দর লিখেছেন।এই কুদ্দুসমিয়াদের শাস্তি হবেই হবে

১৮ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:২১

শিখা রহমান বলেছেন: রুদ্র্ তাই যেন হয়। দেশের মানুষগুলা পাগল হোক।

৭| ২৩ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:২০

খায়রুল আহসান বলেছেন: তবে যাদের রক্ত চোষার অভ্যাস তারা আমার মতো গরীব মানুষের রক্তই বেশী বেশী খায়!!! উকুনের আর কি দোষ? -- বাহ! চমৎকার বলেছেন কথাগুলো...
আরে বেকুব ঠোলারা...এই শহরে সব রিক্সা গাড়ী যখন পাগলের মতো চলে তখন পাগলের চেয়ে ভালো ট্রাফিক কন্ট্রোল আর কে করতে পারে? -- :)
গল্পের অভিনবত্বে মুগ্ধ হ'লাম।
'আইসক্রীমের কাঠি' দিয়ে চুলের জট খোলা যায় কি খুব সহজে?

২৪ শে মার্চ, ২০১৬ ভোর ৫:০৮

শিখা রহমান বলেছেন: খায়রুল আহসান ধন্যবাদ আপনার সুচিন্তিত মন্তব্যের জন্য। বোঝাই যাচ্ছে আপনি বেশ মন দিয়ে গল্পটা পড়েছেন। 'আইসক্রীমের কাঠি' আসলে চুলের জট খোলার জন্য নয়। কাঠি দিয়ে জটের ফাঁকে ফাঁকে মাথা চুলকানো যায়। ভালো থাকবেন। :)

৮| ২৪ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:০৩

খায়রুল আহসান বলেছেন: কাঠি দিয়ে জটের ফাঁকে ফাঁকে মাথা চুলকানো যায়। ভালো থাকবেন। -- :)

৯| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:১৩

মনিরা সুলতানা বলেছেন: কবে যে হবে !!

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৯

শিখা রহমান বলেছেন: মনিরা সুলতানা নীরা অনেক অনেক বছর অপেক্ষা করে আছি আমরা তাই না?? পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

১০| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৪৯

দৃষ্টিসীমানা বলেছেন: আপনার প্রথম লিখাটি পড়ে নিলাম , চমৎকার লিখেন , ভাল থাকুন সারাক্ষন সারাবেলা :)

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:১৭

শিখা রহমান বলেছেন: দৃষ্টিসীমানা আমার লেখায় স্বাগতম। আপনি যে আমার প্রথম লেখাটি খুঁজে পড়েছেন সেজন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।

মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম। মাঝে মাঝে লেখায় আপনাকে পাবো আশা করছি।

আপনিও ভালো থাকুন সবসময়। দেখা হবে কোন গল্প বা কবিতায়।

১১| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৭:১৫

কি করি আজ ভেবে না পাই বলেছেন: বাহ,
'পাগলা' দিয়েই ব্লগিং শুরু.......

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:২৬

শিখা রহমান বলেছেন: কি করি আজ ভেবে না পাই হুউউউ...তেমনটাই তো হওয়ার কথা তাই না? :)

আমার প্রথম লেখাটি খুঁজে পড়ার জন্যে ধন্যবাদ। ভালো থেকো ছেলে। দেখা হবে কোন গল্প বা কবিতায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.