নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখি: কবিতা, প্রবন্ধ। প্রশংসা, নিন্দা- সবই ভুলে যাই।

সরওয়ার ফারুকী

লিখি।

সরওয়ার ফারুকী › বিস্তারিত পোস্টঃ

কালো রাত কালো শকুন

২১ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৯

কালো রাত কালো শকুন

(প্রথম দৃশ্য)

(হীমালয়ের পাদদেশে কোন এক শতাব্দীপ্রাচীন বটবৃক্ষাশ্রয়ে এক জ্যোতিষী শকুনের চারপাশ ঘিরে রয়েছে শতশত শকুন বুদ্ধিজীবী। এ শকুন-সম্মেলনের মধ্যমনি এক বৃদ্ধ জ্যোতিষী শকুন।)

জ্যোতিষী: দূর আকাশে আমি অফুরান খাদ্যের সুঘ্রান পাচ্ছি।
শকুন বুদ্ধিজীবী ১মঃ আমরা তো অনেকদিন ধরে আপনার ভবিষ্যৎ গণনার খবর নিয়েই তো পড়ে আছি।
শকুন বুদ্ধিজীবী ২য়ঃ আমরা বুদ্ধিজীবীরা পৃথিবীর কোথায় কি প্রকার কতটুকু খাবার আছে তা জানি কিন্তু ভবিষ্যতের ব্যাপারে আমাদের জ্যোতিষী গুরুই একমাত্র আশ্রয়।
জ্যোতিষীঃ এক শতাব্দী ধরে আমি তোমাদের নির্ভূলভাবে ঠিকানায় ঠিকানায় পঠিয়েছি নতুন খাবারের সন্ধানে। আজও আমি তোমাদের বলছি, আমি দুর শ্যামল মাটির এক দেশে বেঁচে থাকার সন্ধান দিচ্ছি।
কবি শকুন গেয়ে ওঠে-
“কেমন করে চিনব তারে
যার কথা বলছ বারে বারে
তার গাঁয়ে কি আছে কোন কাজল রেখার টান
আছে কি তার কন্ঠে কোন নতুন দিনের গান।”
শকুন বুদ্ধিজীবী ১মঃ দেখুন জ্যোতিষী বাবু, বিগত এক জরিপে দেখা গেছে পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুত বিলুপ্ত প্রজাতির মধ্যে আমাদের স্থান প্রথম।
শকুন ২য়ঃ এ অবস্থায় আমাদের টিকে থাকতে হলে নতুন কোন আশ্রয়ের একান্ত প্রয়োজন। প্রয়োজন নতুন খাদ্য ভান্ডারের।
শকুন কবিঃ
"ঐ দেশে কি আছে কোনো
দোয়েল শ্যামা ময়না কোকিল টিয়ে?
বিশ্রি সুরে উঠছে যারা গেয়ে।

আছে কি গো মন ভুলানো কুকুর-শেয়াল হাঁক
না কি আছে লক্ষ কাকের ঝাক?"

জ্যোতিষীঃ আমি কি খবর দেইনি হিরশিমা-নাগাশাকির ঝলসানো কাবাবের। আমি কি সন্ধান দেইনি অর্ধশতাব্দী আগে ভিয়েতনামের ধুসরিত পথে অফুরান খাদ্য ভান্ডারের।
শকুন বুদ্ধিজীবী ১মঃ সে তো আমাদের পূর্বসুরীদের কাছে শুনা গল্প।
শকুন বুদ্ধিজীবী ২য়ঃ অবশ্য জ্যোতিষী গুরুর আরও অনেক স্মরনীয় কাজ রয়েছে উল্লেখ করার মত।
জ্যোতিষীঃ কেন? আমি কি পঠাইনি তোমাদের কচি কচি আফগান শিশুদের নরম মাংসের সন্ধানে। পাহাড়ের খাদে খাদে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা টুকরো টুকরো মাংসের সুগন্ধে মন-ভুলানো রকমারী খাবারগুলো যেখানে পড়ে রয়েছিল।
কবি শকুনঃ
আহা! গন্ধে আমার চক্ষু বুঝে আসে
কচি কাচার পুষ্ট দেহ যখন ঠোঁটে হাসে।
বলছি আমি একটি ভোরের কথা
একটি শিশুর সুডোল চক্ষু যখন
আমার ঠোঁঠের আলতো ছোয়ায়
উগলে দিয়ে যায়-
আমি নৃত্য করি তখন।

শকুন বুদ্ধিজীবী ২য়ঃ সুতরাং এ অবস্থায় আগামী কালই জাতীয় সম্মেলনের আহবান করা হউক। জ্যোতিষী গুরু জাতীয় সম্মেলনে প্রত্যেকের করনীয় দায়িত্ব দিয়ে দিবেন।
সভার সমাপ্তি।

(দ্বিতীয় দৃশ্য)

(জ্যোতিষী গুরুর সভাপতিত্বে শকুনদের জাতীয় সম্মেলন। বহুমুখী দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন গুরু)

শকুন বুদ্ধিজীবী ১মঃ জ্যোতিষী গুরুর ভবিষ্যৎ-বাণীর সহায়তায় আমরা এ জাতিকে দিক নির্দেশনা দিচ্ছি।
শকুন বুদ্ধিজীবী ২য়ঃ আমি আমার জাতিকে বলছি, আমরা পৃথিবীতে অতিদ্রুত বিলুপ্ত সম্প্রদায়ের অন্যতম। দিকে দিকে আমাদের বিরুদ্ধে একটি পুরাতন শক্তি নতুনভাবে গর্জে উঠছে। এমতাবস্থায় গুরুর নির্দেশনা যতাযতভাবে পালন করা প্রত্যেকের নৈতিক দায়িত্ব।
কবি শকুনঃ
আমরা আবার গুরুর কথায়
ঝাঁক বেঁধে সব যাব আবার নতুন স্বাদের আশায়।

জ্যোতিষীঃ স্মরণ কর ইরাকের কথা। ফুল-ফলের দুর্গন্ধে যার পাশ দিয়েও চলা যেত না। অথচ আমি কি বলিনি সেখানেও রয়েছে গুপ্ত ভান্ডার। একটি ভোরের সকাল কিভাবে দিয়েছিল তোমাদের দু’হাত ভরে, তা কি ভুলে গিয়েছ?
শকুন বুদ্ধিজীবী ২য়ঃ আহা মনে পড়ে সেই ইরাকী কিশোরির কথা, যে একাকী নবজাত শিশুকে নিয়ে মরুভুমির মধ্য দিয়ে চলছিল অজানার দিকে- কিন্তু কি চমৎকার একটি বুলেট এসে তার চলমান দেহটিকে থামিয়ে দিল।
শকুন বুদ্ধিজীবী ১মঃ হ্যা গো হ্যা। জীবন্ত সেই শিশুটি যখন আমার ছোবলে পড়ল। আহা! ওর স্বাদে এখনও আমার চোখ বুজে আসে।
জ্যোতিষীঃ তবে শুন। পদ্মা, মেঘনা, সুরমার কূল ঘেষে ময়না, টিয়ের কলকাকলিতে মুখরিত এক দেশ। নদীর পানি যেখানে সুরের মুর্ছা জাগায়। সেখানে তোমরা চলে যাও। আমি বঙ্গোপসাগরের ধেয়ে আসা বাতাসে কোটি কোটি কঙ্কালের সুঘ্রান পাচ্ছি।
বুদ্ধিজীবী ২য়ঃ আজ রাতেই আমাদের পাঁচ হাজার প্রতিনিধি যাবে নতুন সে দেশে সব রকমের তথ্য নিয়ে আসতে।

(তৃতীয় দৃশ্য)

(বাংলাদেশের একটি আম বাগান। দোয়েল, টিয়ে, ময়না কোকিলের কলরবে মুখরিত এ বাগান। দুটি বৃদ্ধ ময়না ও একটি বৃদ্ধ কোকিল কোন এক গাছের ডালে কথা বলছে।)

ময়নাঃ গতরাতে একটি নতুন দুর্গন্ধ নাকে এসে লেগেছিল। বড় উৎকট, বড়ই ভয় ধরানো এ দুর্গন্ধ।
কোকিলঃ সে দুর্গন্ধ আর নতুন এক ঝাপটানো শব্দ আমার কানেও এসেছে। আমার ডানা কাপছে। এই শব্দ আর দুর্গন্ধ আমার নাকে লেগেছিল আজ থেকে আড়াইশ বছর আগে পলাশির আমবাগানে। আমি সে শব্দের ভিতিকর আওয়াজ আজও ভুলিনি।
ময়না ২য়ঃ এ কি নতুন কোন দুর্যোগের অশুভ লক্ষন? এ কি আবার মায়ের কান্না, বোনের আর্তনাদের আগমনি আওয়াজ? এ কি মজলুমের অসহায় চিৎকার ? কি সে?

(একটি টিয়ের আগমন।)
টিয়েঃ আপনারা এখানে কি করছেন? আজ রাতে আমাদের ধানক্ষেতের বেশ কিছু অংশ উঠিয়ে ফেলে দিয়েছে কে বা কারা। জন্মের পর হতে কখনও তো এমন ক্ষতি দেখিনি।
কোকিলঃ কি! এমন সংবাদ তো আমি ছিয়াত্তরের মন্মন্তরের পূর্ভাবাস বলে ভাবছি! সে দিনের উজাড় করা মাটের চিত্র আজও আমার বুকে কাপন ধরিয়ে দেয়। মৃত হাড্ডিসার পাখ-পাখালির দেহের দুর্গন্ধে বাংলার আকাশ বাতাস ভরে উঠেছিল সেদিন।
দূর হতে ভেসে আসছে এক অচেনা পাখির সুরে কান্না ভেজা কন্ঠের গান,
‘‘হায়রে আমার দেশ
কন্ঠে তোমার জড়িয়ে গেছে দুঃখ ভরা কেশ।
দূর পাহাড়ের দেশে
পুড়বে তোমার কপাল ওরে কঠিন ভয়াল শীসে।
ফুল পাখিদের গান
গুনগুনিয়ে তুলবেনা আর সুরের কলতান।
গানের সুর শুনে শুনে একে একে সবাই যার যার পথে চলে যায়।

(শেষ দৃশ্য)

(নতুন দেশ হতে একশ’ প্রতিনিধি ফিরে গেছে নিজ দেশে। উৎসুক জাতীয় শকুন নেতৃবৃন্দ তাদের রিপোর্ট শুনে করনীয় পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করছে।)

বুদ্ধিজীবী ১মঃ আজ আমরা নতুন দেশের খবর শুনব এবং এ ব্যাপারে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।
শকুন বুদ্ধিজীবী ২য়ঃ আমি প্রতিনিধি দলের নেতাকে তার রিপোর্ট পেশ করতে অনুরোধ করছি।
প্রতিনিধি নেতাঃ সে এক আজব দেশ। সে এক সুন্দর দেশ। পৃথিবীর বহু দেশ ঘুরে এসে আমি আজ শপথ করে বলছি, সে এক নতুন সুরের দেশ। কিন্তু সেখানে আমরা হব প্রতিরোধহীন, প্রতিবাদহীন। সেখানে ময়দান আমাদের জন্য একেবারেই পরিষ্কার।
শকুন বুদ্ধিজীবী ২য়ঃ কেমন ?
প্রতিনিধি নেতাঃ সেখানে আমাদের আগে আরও অনেক দেশের শকুন ভায়েরা এসে কাজ শুরু করে দিয়েছে। আমি দেখেছি সেখানে কেউ ইতিহাস জানে না। ওরা জানেনা অতিতের কোন বাকা গলি দিয়ে সুখ-দুঃখ প্রবাহিত হয়েছিল। আর এখানেই আমি আশার আলো দেখতে পাই। যারা ইতিহাস জানে না তাদের উপর বিজয়ী হতে আমাদের কোন বেগ পেতে হবে না বলে আমার বিশ্বাস।
শকুন বুদ্ধিজীবী ২য়ঃ তুমি ঠিকই বলেছ। এখনই আমাদের ঝাপিয়ে পড়তে হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
জ্যোতিষীঃ হ্যা, অতি দ্রুত ঝাপিয়ে পড়তে হবে। বাংলার মাট-ঘাট, শহর-বন্দর লক্ষ-কোটি ডানার ঝাপটায় শেষ করে দিতে হবে।
শকুন কবি গেয়ে ওঠেঃ
“ওরে দুলছে আমার মন
সেথায় যাব কতক্ষন
মনটা আমার নাচে সারাক্ষণ।”

জ্যোতিষীঃ সে দেশ হবে আমাদের দেশ। সেখানের জল-স্থল, মাট-ঘাট হবে আমাদের স্থায়ী আশ্রয়।
শকুন বুদ্ধিজীবী ১মঃ আজ রাতেই লক্ষলক্ষ শকুনের হাজার হাজার ঝাক বাংলাদেশের দিকে যাত্রা করবে। সকলে প্রস্তুত হও।
জ্যোতিষীঃ হ্যা, আজ রাতেই আমাদের যাত্রা শুরু।
কবি শকুনেরা সুর ধরে গায়ঃ

“অনেক দিনের পরে
বৃষ্টি এলো ওরে
ময়না, টিয়ে, শ্যামা, কোকিল
যেথায় বসত করে।
থাকবে ওরা সুখের আশায় দুঃখের বাসর ঘরে!”

(বাংলার আকাশে লক্ষলক্ষ শকুনের ঝাঁক আসছে। দেশের আকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘঠা। এক অনিশ্চিত অন্ধকারে এদেশের আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠছে। কালো শকুনের ভয়াল থাবায় টুকরো টুকরো হয়ে যাবে এদেশের সব স্বপ্ন-স্বাধ। রাতের অন্ধকারে হারিয়ে যাবে ময়না, কোকিল, শ্যামা, টিয়ের গান। এ শকুনদের থামাতে হবে।)

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪০

খন্দকার আঃ মোমিন বলেছেন: হাঁ আমি আখন্সেই শুঁকুন এর আগমনের প্রহর গুনছি ।

২| ২১ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এ শকুনদের থামাতে হবে !!!

৩| ২১ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৭

আহমেদ জী এস বলেছেন: সরওয়ার ফারুকী ,




দারুন একটা রূপক হলেও একটি কঠিন সত্য বলে ফেলেছেন -------------------- সেখানে কেউ ইতিহাস জানে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.