নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

{♥ যদি কখনো নিজেকে একা ভাবো, তাহলে ঐ দূর আকাশের অসীম সীমান্তের দিকে তাকিয়ে থাকো! কখনো নিরাশ হয়ে যেও না! হয়তো বা একটা বাজপাখিও তোমার দিকে উড়ে আসতে পারে! ♥}

সাহসী সন্তান

আমাকে তোর ভালোবাসার দরকার নেই। শুধু পাশে থেকে একটু সাহস যোগাস, দেখবি তখন ভালোবাসাটা এমনিতেই চলে আসবে!!

সাহসী সন্তান › বিস্তারিত পোস্টঃ

"একটা বোকা মেয়ের ভালবাসার গল্প"

২৩ শে জুন, ২০১৫ সকাল ১১:৩৯


বিগত কয়েক দশক আগে, তথ্য আদান-প্রদানের অন্যতম জনপ্রিয় একটি মাধ্যম হিসাবে পরিচিত ছিল "চিঠি বা পত্র"। তৎকালীন সময়ে চিঠি ছাড়া দূরবর্তি কারো সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা প্রায় অসম্ভব বলে বিবেচিত হতো। কিন্তু বর্তমান সময়ে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির চাপে, সেই চিঠির কথা কল্পনা করা আর আমাবশ্যার রাতে আকাশে চাঁদ দেখতে পাওয়ার আশা করা প্রায় সমান কথা হয়ে দাড়িয়েছে। তাছাড়া বর্তমানে দেশের প্রায় সবগুলো ডাকঘর এবং ডাকবাক্সের যে বেহাল দশা, তাতে ডাকবাক্স বলে কোন বস্তু যে একসময় এই বাংলাদেশে বিদ্যমান ছিল সেটা জানা বা বোঝার জন্য, আমাদের নতুন প্রজন্মকে হয়তো অদূর ভবিষ্যতে কোন মিউজিয়াম কিংবা জাদুঘরে যেয়ে দেখতে হবে।

তবে আমার যতটুকু মনে হয়, একটি চিঠির মধ্যে যে আবেগ, যে ভালবাসা লুকিয়ে থাকে কিংবা একটি চিঠির মাধ্যমে যে ভালবাসাকে প্রকাশ করা সম্ভব হয়, তা বৈজ্ঞানীক অন্য কোন মাধ্যম দিয়ে প্রকাশ করা প্রায় অসম্ভব। তাই সেই জিনিসটা মানুষের কাছে চিঠির চেয়ে যতই জনপ্রিয় হোক না কেন। স্বীকার করি যে, আধুনিক বিজ্ঞান আমাদের কে দিয়েছে বেগ, কিন্তু সেই সাথে আমাদের কাছ থেকে সে কেড়ে নিয়ে গেছে আমাদের আবেগ আমাদের ভালবাসাকে। একটা চিঠির ভিতরে যে, কতটুকু প্রেম-ভালবাসা এবং আবেগ বিদ্যমান থাকে, তা নিচের এই চিঠিটা না পড়লে কিছুতেই বুঝতে পারবেন না। তাহলে আসুন আর দেরিনা করে ঝটপট চিঠিটা একবার মনযোগ দিয়ে পড়ে ফেলি!!

প্রিয় হাদারাম,
আজও আপনাকে দেখলাম; কলাভবনের সামনের রাস্তা ধরে প্রতিদিনকার মতোই মাথা নিচু করে ভ্যাবলার মতো হেঁটে যাচ্ছেন লাইব্রেরির দিকে। পিঠে সেই বহুল পরিচিত ছাইরঙা ব্যাগ আর গায়ে সেই ফতুয়াটা। আচ্ছা, আপনি সব সময় ফতুয়া পরেন কেন একটু বলতে পারেন? আপনার কোন শার্ট নেই? আপনি কি জানেন, ফতুয়া পরলে আপনাকে মেয়েদের মত লাগে? আপনার চোখের গড়নটাও অনেকটা মেয়েদের মত, লম্বা টানা টানা ভ্রু। এমন ছেলে আমার একদম পছন্দ না! ছেলেরা কেন মেয়েদের মত হবে! কাল থেকে আপনি আর ফতুয়া পরবেন না! আর হাঁটার সময় অত মাথা নিচু করে হাঁটতে হবে কেন? আশে পাশে কে আছে সেটা দেখলে খুব অন্যায় হয়ে যায় বুঝি? কি ভাবেন নিজেকে?? খুব 'নরম-সরম' মানুষ ভেবে মেয়েরা আপনার প্রেমে পড়ে যাবে? মেয়েরা এত বে-আক্কেল না, বুঝেছেন? আপনি যতই ভাব নেন না কেন, আপনার মত হাদারাম ছেলের প্রেমে কোন মেয়েই পড়বে না! এমনিতেই তো খুব ভাব নিয়ে থাকেন।

ওহঃ, আর একটা কথা! আপনার ক্লাসমেট জিনিয়া আপুর সাথে এত হেসে কথা বলা হয় কেন? আর কোন দিন যদি ঐ মেয়ের সাথে হাসাহাসি করতে দেখি, তাহলে মুখে চুলের কাঁটা গেঁথে দেব। সেদিনই বুঝবেন, হাসি কোথা দিয়ে কেমন করে বের হয়!

দেখেন, আমি কিন্তু খুব একটা খারাপ মেয়ে না। দেখতে তো মোটামুটি ভালই। নাইবা হলাম জিনিয়া আপুর মত এত ফরসা! তাতে কি (?) আমিতো আর লম্বা মুখো না। আমার চোখ দুটো নাকি অসম্ভব সুন্দর! আমি না, অনেক ছেলেই এটা বলেছে। কি, বিশ্বাস হচ্ছেনা বুঝি? আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে আমার ক্লাসমেটদের কাছে আপনি শুনে দেখেন। তাছাড়া আমার চুলের কারনে তো আমার রুমমেটরা সবাই আমাকে 'বনলতা সেন' বলেই ডাকে।

আচ্ছা ক্লাসের ব্যালকনিতে যখন দাঁড়িয়ে থাকেন, তখন একবার একটু আশে পাশে তাকালে কি হয়? আমার চোখে চোখ পড়লে বুঝি আপনার চোখ উঠবে? সেদিন তো শেষ রাতে ঠিকই আমার স্বপ্নের মধ্যে আসলেন! ছি! ছি! কি লজ্জা! সে কথা ভাবলে তো এখনো আমার কান লাল হয়ে যাচ্ছে। আপনি কি জানেন (?) তার পরের দুই দিন আমি আয়নায় তাকাতে পারিনি! এমনকি আপনার দিকেও তাকাতে পারিনি।

ওহঃ পরশু সকালে ডিপার্টমেন্টের সামনে এত মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন কেন? আপনাকে এত মন খারাপ অবস্থায় দেখলে, অন্য কারও বুঝি খারাপ লাগে না? জানেন, আপনার হাসি মুখটা দেখলে আমার বুকের ভিতরের প্রজাপতিটা উড়ে উড়ে রং ছড়ায়, জীবনটাই যেন রঙ্গীন হয়ে ওঠে! আমি কিন্তু ঠিকই ঐদিনে আপনার মন খারাপের কারণ বের করে ফেলেছি। আচ্ছা একটা পরীক্ষায় একটু কম নাম্বার পেলে বুঝি এতটা মন খারাপ করতে হয়? আপনি না, এখনো পর্যন্ত সেই বাচ্চাদের মতই রয়ে গেলেন! কেন, বড় হবেন না?

একটা কথা, ক্লাস শেষে বারান্দায় আর ওভাবে দাঁড়াবেন না। জুনিয়র মেয়েরা নোট চাইলেই বুঝি সঙ্গে সঙ্গে গলে যেতে হয়? এরপর নোট হাতে কোন দিন বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে না, সব নোট পুড়িয়ে দেব! খোঁচা খোঁচা দাড়িতে কিন্তু আপনাকে বেশ লাগে! এত ঘন ঘন শেভ করার কি আছে! বেশি রাত জাগবেন না, আপনার চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে! আর এখন থেকে নীল রঙের জিনস্ প্যান্টটা আর পরবেন না! পায়ের নিচের অংশে ছিঁড়ে সুতো বেরিয়ে গেছে। এখন থেকে সব সময় টি-শার্ট পরবেন! মাঝে মাঝে ফতুয়াও পরতে পারেন, কোন অসুবিধা নেই। ফতুয়াতে আপনাকে সামান্য একটু মেয়ে মেয়ে লাগলেও, দেখতে কিন্তু হেব্বি লাগে!!

মাস্টার্স তো প্রায় শেষের দিকে। এবার একটা চাকরির জন্য চেষ্টা করুন। নাকি সারা জীবন ঐভাবেই কাটিয়ে দেবেন? দেখেন, আমাকে কিন্তু অনার্স পড়া শেষ হলেই বিয়ে দিয়ে দেবে। তখন সারা জীবন কে সামলাবে আপনার মত হাদারামকে? শুনেছি সংসার জীবন নাকি খুবই কঠিন হয়। আমি অন্য কারও উপরে ভরসা করে তো আর আপনাকে ছেড়ে দিতে পারি না! সত্যি বলছি, আপনার চাকরি পাওয়াটা না খুবই জরুরী। আমি জানি, আমাকে ছাড়া আপনারও এক মুহুর্ত্ব চলবে না! তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দু'জনকে তো এক হওয়ার চেষ্টা করতে হবে! ভাল থাকবেন!!

ইতি আপনার
'বনলতা সেন'

পুনশ্চঃ- "চিঠিটা পাওয়ার পর এই বোকা মেয়েটাকে খুঁজে নিয়েন। এই বোকা মেয়েটা আপনার কাঁধে মাথা রেখে শরতের চাঁদ দেখতে চায়। আপনার বুকে মাথা রেখে শান্তির নীড় রচনা করতে চায়। আমাকে আপনি সেই সুযোগ টুকু দেবেন না? সত্যি বলছি, আপনি খুঁজে না নিলে, আর কোন দিনও আড়াল থেকে দেখব না আপনাকে! ভালবাসি বলে সব দায় কি শুধুই আমার"???

বিঃ দ্রঃ- গত তিন বছর আগে কোন এক সন্ধ্যায় মল চত্বরে হাঁটতে গিয়ে ঠিকানাবিহীন একটা নীল খামসমেত এই চিঠিটা কুড়িয়ে পাই। জানি না, সেই ছেলেটা বোকা মেয়েটাকে খুঁজে পেয়েছিল কিনা! জানি না, মেয়েটির এই পবিত্র ভালবাসা পূর্নতা লাভ করতে পেরেছিল কিনা! পৃথিবীতে কত ঘটনাইতো অজানা থেকে যায়................!!!

সূত্রঃ- 'চিঠিটা প্রথম আলোর ম্যাগাজিন পেপার "ছুটির দিন" হতে সংগৃহীত এবং সামান্য সংযোজিত!'

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫১

আলোরিকা বলেছেন: কোন মন্তব্য নেই - অবাক :-* এই হৃদয়স্পর্শী চিঠিটা আমি আগেও পড়েছিলাম ,আপনার বদৌলতে আবার পড়া হল :)
ধন্যবাদ ।

১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৯

সাহসী সন্তান বলেছেন: আসলেই আপনিই প্রথম মন্তব্য করলেন এই পোস্টে! চিঠিটা আমিও যখন প্রথম পড়েছিলাম তখন আমার কাছেও ভীষন ভাল লেগেছিল, তাই এখানে প্রকাশ করেছিলাম! তাছাড়া তখন ব্লগে নতুন ছিলাম তো তাই হয়তো কেউ মন্তব্য করেনি! আর সব থেকে বড় কথা হলো, সবার কাছে তো সব কিছু ভাল নাও লাগতে পারে?

আপনার মন্তব্যটা অনেক ভাল লাগলো! আপনাকেও ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য!

২| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:১৫

এহসান সাবির বলেছেন: ভালো শেয়ার ছিল।

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৬

সাহসী সন্তান বলেছেন: হুম ধন্যবাদ সাবির ভাই!

৩| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৫

জুন বলেছেন: হারিয়ে যাওয়া চিঠি সাহসী অনেক ভালোলাগা
+

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৮

সাহসী সন্তান বলেছেন: একদম ঠিক আপু! আপনার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা!

৪| ১৯ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:২২

অগ্নি সারথি বলেছেন: একটা সময় আমিও প্রচুর চিঠি লিখেছি জানেন। আজ আপনার পোস্ট পড়বার পর কিঞ্চিত নস্টালজিক হয়ে গেলাম। সত্যি বলতে কি সেই আবেগ এখন আর আসতেই চায় না। বিজ্ঞানের নব আবিস্কারের কল্যানে একভাবে যন্ত্র মানবে পরিনত হয়েছি। শেয়ার করবার জন্য ধন্যবাদ সাহসী ভাই।

১৯ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:৪৭

সাহসী সন্তান বলেছেন: আমিও এইটা পড়লে মাঝে-মাঝে খুবই নষ্টালজিক হয়ে পড়ি! স্কুল কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় অনুভূতি সমৃদ্ধ বেশ কয়েকটা চিঠি আমিও লিখেছিলাম! তবে সব থেকে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি একবার একটা চিঠির কথা মনে পড়লে!

বাবা চাকরিজীবী মানুষ ছিলেন! আর আমরা থাকতাম বাবাকে ছাড়া শতশত মাইল দূরে! তখনও আমাদের কোন মোবাইল ফোন ছিল না! আমি তখন ক্লাস সিক্স কি সেভেনে পড়তাম! তো একবার বাবাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছিল! তাই আম্মার চোখ ফাঁকি দিয়ে বাবাকে একটা চিঠি লিখেছিলাম! গ্রামে আমাদের বাসার প্রায় কাছাকাছি ছিল ডাকবাক্স! তো চিঠি লেখার পরে সেখানে গিয়ে পোস্ট করে আসি!

যেহেতু বাবার সাথে মেজরিটি পার্সেন্টই আমাদের কথা হতো চিঠির মাধ্যমে! যার সব গুলোই আম্মা লিখতেন! তবে সেগুলো পোস্ট করতাম আমি! তো চিঠি পোস্ট করার এক সপ্তাহের মাথায় দেখি বাবা বাড়িতে এসে হাজির! সেদিন আমার যে কি খুশি লাগছিল, সত্যিই সেটা ভাষায় প্রকাশ করার মত না!

অনেক পুরানো পোস্ট! তারপরেও খুঁজে নিয়ে পড়া এবং মতামত শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ সারথি ভাই! শুভ কামনা জানবেন!

৫| ২৩ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:০৫

মিঃ অলিম্পিক বলেছেন: বেসম্ভব একটা চিঠি । কমেন্ট করবো বলেই লগ ইন করলাম।
ড়াইরেক প্রিওতে---

২৩ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:৩৫

সাহসী সন্তান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই! আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে মনে করছি! শুভ কামনা রইলো!

৬| ২৪ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১১:৫৩

তামান্না তাবাসসুম বলেছেন: দুষ্টু-মিষ্টি চিঠি!

ভাললাগা রেখে গেলাম :)

২৫ শে জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৪:২৮

সাহসী সন্তান বলেছেন: ধন্যবাদ! শুভেচ্ছা রইলো!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.