নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্ধচোখে তাকাই, চোখাচোখি হয়.... দেখা হয়না কখনো, কোনদিন......

স্বপ্ন সতীর্থ

কাউকে না কাউকে হেরে যেতে হয়, নয়তো বিজয়ী বলে কিছু থাকত না......

স্বপ্ন সতীর্থ › বিস্তারিত পোস্টঃ

দুপুরজল

১৫ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৪:৪৭

দুপুর। কড়া রোদ পড়েছে আজ। পিঠ চিড়বিড় করা রোদ। রাস্তার পিচ গলে গলে যাচ্ছে। আমি শান্তিনগর মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি। রাস্তায় প্রচণ্ড জ্যাম। বাসে বসে থাকা মুখগুলোতে ব্যস্ততার ছাপ। ফুটপাতে একজন এক ঝাঁকা পেয়ারা নিয়ে বসেছে। আমি গোটা দুই পেয়ারা কিনে হাঁটতে লাগলাম।
নগরীর মধ্যে সম্ভবত বেইলী রোডেই সবচে বেশি ছায়া পড়ে গাছের। রমনা পার্কের গেট অবধি রাস্তাটা দেখলেই কেমন শান্তি শান্তি লাগে। আকাশে তাকালাম। এখান থেকে আকাশ দেখা যায় না। গাছে ঢেকে রেখেছে। রোদের তীব্রতায় কেমন ঝিমুচ্ছে গাছগুলো। আজ বাংলা কত তারিখ? আষাঢ় মাসের শেষদিন হবার কথা। ঠিক মনে পড়ছে না। অনেকদিন হয় এসবের খবর রাখা হয় না।
রমনা পার্কের গেটে একটা ছোট জটলা। এগিয়ে গেলাম। একটা বাচ্চা ছেলেকে ধরে রেখেছে একজন। নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে। ময়লা টিশার্টটাও ছিঁড়ে গেছে। ভাল রকম মেরেছে মনে হচ্ছে। একজন গালে ঠাস করে একটা চড় লাগিয়ে বলল, " মানিব্যাগ কই রাখছস ক, নাইলে জানে মাইরা ফালামু!" ছেলেটা ফুঁপিয়ে উঠলো, " আমি মানিব্যাগ নেই নাই!" ছেলেটার চোখ সত্য বলছে। লোকটা এবার আরো জোরে চড় মারতে তেড়ে উঠলো।
"মায়াবন বিহারিণী হরিণী, গহনও স্বপন সঞ্চারিণী " লোকটা পকেটে মোবাইল বেজে উঠলো। মারা বন্ধ করে পকেট থেকে ফোনটা বের করল। জরুরি কারো ফোন বোধহয়। কেমন ব্যস্ত হয়ে উঠলো লোকটা। ছেলেটার চোখে অসহায়ত্ব ফুটে উঠছে। নাক দিয়ে এখনো রক্ত ঝরছে। আমি অবাক হচ্ছি যার ফোনে রবীন্দ্র সঙ্গীত বাজে সে মানুষ মারতে পারে!!
লোকটার মানিব্যাগ পাওয়া গেছে। ভুলে অফিসে ফেলে বের হয়ে গেছে। অফিসের কাজে কোথায় গিয়েছিল, ওখানে ফেলে এসেছে। ছেলেটাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। জটলা পাকানো লোকগুলো চলে যাওয়া শুরু করেছে। আনন্দ আহরণ শেষ। একটা তরুণ ছেলে এগিয়ে গিয়ে লোকটার কলার চেপে ধরল।ছিপছিপে গড়ন ছেলেটার। চোখের মধ্যে কী যেন একটা আছে।
-মানিব্যাগ হারাইছে, শিওর না হয়ে এই বাচ্চা ছেলেটাকে এমন ভাবে পেটালি ক্যান?
- ওরে সন্দেহ জনক মনে হইছে।
- তোকেও তো আমার সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। এখন তোকে পিটাই।
লোকগুলো আবার ফিরতে শুরু করেছে। নতুন নাটক শুরু হয়ে গেছে। লোকটার চোখে মুখে অসহায় একটা ভাব ফুটে উঠেছে। তারপরও সে প্রতিবাদ করে উঠলো।
-আমার মানিব্যাগের জন্য আমি ওকে মারব না কাটব সেটা আমি বুঝব। আপনারা বলার কে?
এবার আরো কয়েকজন এগিয়ে আসলো। লোকগুলোর চোখে হিংস্রতা। হাতাহাতি শুরু হয়ে গেছে। একটু আগেই যে লোকগুলো তার পক্ষ নিয়ে একটা বাচ্চাকে পেটাচ্ছিল। এখন তারাই তাকে পেটাচ্ছে।
বড় অদ্ভুত দুনিয়া।
এই ভীড়ের ফাঁকে ছেলেটা বের হয়ে গেছে। বেশি দূর যেতে পারেনি। দেখা যাচ্ছে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে। আমি একটু দ্রুত হেঁটে ধরে ফেললাম। আমাকে দেখে একটু ভয় পেল। কাঁধে হাত রাখলাম।
-নাম কী?
-বাদশা।
-ধরা খাইলি ক্যামনে?
- আমি এমনিতেই দৌঁড়তেছিলাম হঠাৎ করে এই লোকটা আমারে ধইরা পিটানো শুরু করে। আর মানিব্যাগ চাইতে থাকে। কিন্তু আমি মানিব্যাগ নেই নাই। ছাড়েন যাই।
-নে এই পেয়ারাটা খাইস। হাঁটতে পারবি?
- হুম...

আমি দাঁড়িয়ে আছি। ছেলেটা হাঁটছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। ছেঁড়া নীল টিশার্টের মধ্যে রোদ পড়েছে। রমনা পার্কের পাশ ঘেঁষে ছেলেটি হেঁটেই চলেছে। দৃশ্যটা বাঁধিয়ে রাখতে পারলে হতো...

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হুম। এমন সন্দেহ আর অনুমানে মরে যাওয়ার ঘটনাও কম নয়!


পেয়ারা খাওয়ানোয় ধন্যবাদ! ইট্টু অষুধের পয়সাও দিতে পারতেন ;) হা হা হা

++++

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ২:২১

স্বপ্ন সতীর্থ বলেছেন: তা পারতাম। শিখে রাখলাম পরে কোন সময় আবার সুযোগ হলে কাজে লাগবে। ধন্যবাদ

২| ১৬ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ৯:৩৩

পদ্মপুকুর বলেছেন: আজব! এ রকম সুন্দর একটা লেখা পঠিত হয়েছে মাত্র ৩৭বার আর মন্তব্য করেছেন মাত্র একজন।
ব্লগে তাইলে মানুষ কি পড়ে?

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ২:২০

স্বপ্ন সতীর্থ বলেছেন: একজন পড়লেও ভাল লাগে। ধন্যবাদ, চমৎকার মন্তব্যের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.