নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্ধচোখে তাকাই, চোখাচোখি হয়.... দেখা হয়না কখনো, কোনদিন......

স্বপ্ন সতীর্থ

কাউকে না কাউকে হেরে যেতে হয়, নয়তো বিজয়ী বলে কিছু থাকত না......

স্বপ্ন সতীর্থ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অর্বাচীনের দিনলিপি

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:৩১

আমার হাতে একটা কমলালেবু। একটু আগে জিসানের সাথে পথে দেখা। অনেকগুলো কমলালেবু কিনে হলে ফিরছে সে। আমাকে দেখে একটা কমলালেবু বাড়িয়ে দিল। আমিও নিলাম। অনেকক্ষণ ধরে হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। খাব খাব করেও কেন যেন খেতে ইচ্ছে করছে না।

দাঁড়িয়ে আছি হাইকোর্টের সামনে। চার রাস্তার এই মোড়টিতে সবসময়ই ভিড় লেগে থাকে। কত ব্যস্ত মানুষজন। আমার কোন ব্যস্ততা নেই। যদিও শিল্পকলায় জুয়েল আইচের যাদু দেখতে যাব বলে বের হয়েছি। আমার মানিব্যাগে একজনের বাড়ি ফেরার ট্রেনের টিকিট। নানা হাত ঘুরে টিকিটটি আমার হাতে এসে পড়েছে। টিকিটের মালিকের জন্য অপেক্ষা করছি।
সন্ধ্যা হয়ে আসছে। পশ্চিম দিকে ধীরে ধীরে উড়ে যাচ্ছে অনেকগুলো চিল। বাড়ি ফেরার তাড়াও নেই। কী অদ্ভুত নির্মল গতি। এক চোখ কানা একটা বাস বেপরোয়া গতিতে মোড় ঘুরলো। আরেকটু হলে ভাল রকম দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। যেন রাজ্যের ব্যস্ততা সে একা নিয়ে আছে। খাটাশ ড্রাইভার।

আমার সামনে অনেকগুলো রিকশা। থেমে আছে। একজন রিকশাওয়ালা চোখ বন্ধ করে বিড়ি ফুঁকছে। সামনের রাস্তায় জ্যাম লেগে গেছে। দুই - আড়াই বছরের একটা পিচ্ছি মায়ের কোলে রিকশায় বসে আছে। দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করে।

আমি কমলাটা ছিলতে শুরু করলাম। একটা কোয়া ভেঙে মুখে দিলাম। অসম্ভব মিষ্টি কমলা। কমলার চেয়েও মিষ্টি দেখতে একজন তরুণী এসে আমার সামনের রিকশাওয়ালাকে ধানমন্ডি যাবে কিনা জিজ্ঞেস করলো। লাল শাড়ি পরায় বেশি সুন্দর লাগছে, নাকি সত্যিই এত সুন্দর!! সন্ধ্যার স্নিগ্ধ আলোয় রিনরিনে কণ্ঠের মেয়েটিকে দেখে মন ভালো হতে বাধ্য। রিকশাওয়ালা আশি টাকা চাইলো। মেয়েটি খানিকক্ষণ ইতস্তত করে উঠে বসল রিকশায়। রিকশা চলতে শুরু করেছে। সেই সাথে আমার খারাপ লাগাও। আরেকটু থাকলে পারতো। না হয় একটু দরকষাকষি করতো। আমি কমলার কোয়া চুষতে চুষতে চেয়ে আছি হুড খোলা রিকশার সন্ধ্যার রাতুল সুন্দরের দিকে।

-মামা একটু সরেন।

এক পৌঢ়া আমার পেছন থেকে বলল। তার হাতে দুইটা পোটলা। আমি সরে দাঁড়ালাম। মহিলা একটা ইট এনে রাখলেন ফুটপাথের উপর। আস্তে আস্তে পোটলা খুলে পশরা খুলে বসলেন। ইটালিয়ান হোটেল। ভাত, ভর্তা, শাক, মাছ, মুরগি আর একটা বোতল ভর্তি পাতলা ডাল। মুহূর্তেই তার ক্রেতা এসে হাজির। একজন ভবঘুরে। জিন্সের প্রায় ফাটোফাটো ব্যাগটা নামিয়ে সেটার উপরই বসে পড়ল। কাধের ঝোলা থেকে গোলাপি একটা বাটি বের করল প্লাস্টিকের। বাটিটা ভাঙা। ঢাকনার মধ্যেই ভাত নিয়ে ভর্তা মাখিয়ে খাওয়া শুরু করল। প্রচন্ডরকম ক্ষুধার্থ সে। মহিলার চোখে মায়া কাজ করছে। তিনি এক টুকরা মুরগি তুলে দিলেন। বললেন, দাম দিতে হবে না। মানুষটি কালো জোব্বার ভেতর থেকে একটা কলা বের করে মহিলাটির দিকে বাড়িয়ে ধরল। পৌঢ়া কলাটি নিলেন। শীতের এই সন্ধ্যায় যথেষ্ট উষ্ণতা ছড়ানোর মতন একটা দৃশ্য। শীতের এই সন্ধ্যাতেও মহিলাটি শুধু শাড়ি গায়ে। শীতকাল চলছে তা তার দিকে তাকালে কোনভাবেই বোঝা যাবেনা।

একটি বাচ্চা ছেলে বাবার সাথে রিকশা করে যাচ্ছে হাতে একটি বেলুন। হলুদ রঙের। বেলুনটি পেয়ে সে খুব খুশি। হাসতে হাসতে বাবার সাথে গল্প করতে করতে যাচ্ছে সে। ভদ্রলোকের মুখেও কেমন একটা প্রশান্তির ছাপ। ছোট ছোট ইচ্ছে গুলো পূরণ হলেই মানুষ মূলত সত্যিকারের সুখ পায়। বড় বড় আনন্দ মানুষকে সত্যি সত্যি ছুঁয়ে যেতে পারেনা। ছেলের মুখের হাসিটার দিকে তাকিয়ে ভদ্রলোক হয়তো এই মুহূর্তে সব হতাশা ভুলে আছেন। হতাশা ভুলে থাকার নামই তো সুখ, নাকি?

আরেকজন লোক এলো রিকশা ঠিক করতে। সাথে একটি বাচ্চা মেয়ে। পরনে শিশু একাডেমির পোশাক। লোকটির হাতের মুঠোয় একটা কবুতর। কেমন জড়সড়ভাবে বসে আছে। মেয়েটির কাঁধে কমলা রঙের একটা স্কুল ব্যাগ। ব্যাগের মধ্যে একটা হরিণের ছবি। মায়া মায়া চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে হরিণটি। কবুতরের চোখেও মায়া। মেয়েটি একটু পরপর কবুতরটি ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে। সাবধান একটা ভাব, যদি কামড়ে দেয়।

টিকিটের মালিক চলে এসেছে। তাকে টিকিট দিয়ে বিদায় নিলাম। যাদু দেখতে যাই। যাদুর শহরের এক সন্ধ্যায় যত যাদু দেখলাম। তারপর আর কোন যাদু ভাল লাগবে কিনা জানিনা। তবুও যাই। ইচ্ছের বাইরেই তো জীবনকে বেশি যাপন করি আমরা।

ফুটপাথ ধরে একটু হাঁটতেই দেখলাম, একটা ছোট্ট ছেলে সিটি কর্পোরেশন এর নতুন লাগানো ফুটপাতের উপর টিভিস্ক্রিনের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। কোন একটা বিজ্ঞাপন হচ্ছে। তাই দেখছে অবাক চোখে তাকিয়ে। কী মায়াভরা চেহারা। কপালে কাজলের টিপ দেয়ায় আরো মায়াময় লাগছে বাচ্চাটাকে। মুহূর্তটা বন্দী করে রাখতে ইচ্ছে হলো মুঠোফোনে। হঠাৎ মনে হলো, কেন বন্দী করব। এইসব মুহূর্ত হঠাৎ হঠাৎ দেখতে পাওয়াইতো আনন্দের।

অদ্ভুত যাদু আছে এই শহরের প্রতিটি মুহূর্তে মুহূর্তে।কেমন মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছি প্রতিক্ষণে। এ যাদুর শহর ছাড়তে সত্যিই পারবতো???

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৩:২০

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: যাদু দিয়েই ঘেরা আমাদের জীবন।। শুধু দেখার মত চোখ আর অনুভবের জন্য মন থাকতে হয়।।
নূতন বছরের শুভকামনা।।

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৭:২৩

স্বপ্ন সতীর্থ বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ। নতুন বছর মঙ্গলময় হোক। বৃহস্পতি তুঙ্গে থাকুক। শনির দশা কাটুক। শুভ কামনা।

২| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: নতুন বছরের অনেক শুভেচ্ছা ---

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.