নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্মশান ঠাকুর

শ্মশান ঠাকুর

nothing to say

শ্মশান ঠাকুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির আন্দোলনের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ও শেষ সাধারন ফলাফলঃ

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ২:২২

সরকারের নিম্নতম মজুরী বোর্ডে প্রায় দেড় ঘণ্টা দর কষাকষির পর পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের (গার্মেন্টস সেক্টর) ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা ঘোষণা দেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী ১৩ সেপ্টেম্বর'১৮ তারিখে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এ মজুরি প্রস্তাব করা হয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এতে মালিক ও শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি সম্মত হয়েছেন বলেও জানানো হয়। প্রশ্ন হচ্ছে দেড় ঘণ্টা ধরে কে কার সাথে দর-কষাকষি করল! কারন মজুরী বোর্ডের সবাই রাষ্ট্র বা সরকারের লোক, এমনকি শ্রমিক প্রতিনিধি যিনি ছিলেন তিনিও সরকারি দলের শ্রমিক নেতা!! প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাব করা হলে রাষ্ট্রীয় মজুরী বোর্ডের সরকারি প্রতিনিধিদের দর কষাকষি করার সাহসই বা কীভাবে হয়!!! এর আগে মে মাসে পোশাক শিল্পের কটন টেক্সটাইল শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করে সরকার যার আওতায় রয়েছে বিটিএমএর সদস্য স্পিনিং, উইভিং ও ডায়িং মিলগুলো, সারা দেশে নিয়োজিত ছোট ও বড় বস্ত্র মিলের শ্রমিকরাও রয়েছেন এর আওতায়। বিটিএম এর সদস্যের বাইরে এ শিল্পে ন্যূনতম ৭ হাজার কারখানা আছে। আর সারা দেশে হিসাব করলে এ খাতে শ্রমিক সংখ্যা ন্যূনতম ৫০ লাখ যাদের ন্যূনতম মজুরি ৫৭১০ টাকা ঘোষণা করেছে নিন্ম মধ্যম আয়ের দেশ হওয়া সরকার। এই হল মালিক ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার ন্যূনতম মজুরির দাবীর বিরুদ্ধে পোশাক শিল্পের এক কোটির বেশি শ্রমিকদের সাথে সাজানো নাটকের রঙ্গ তামাশা করার প্রচেষ্টা--যা রুখে দেয়ার প্রয়োজনে আমরা আর চুপ থাকতে পারলাম না।
সহযোদ্ধা শ্রমিকেরা,
পোশাক শিল্পের বিকাশ শুরু হওয়ার প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত অন্যান্য দেশের শ্রমিকদের তুলনায় এ খাতে বাংলাদেশের শ্রমিকদের মজুরি সর্ব নিন্ম। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম, বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা, যাতায়াত খরচসহ জীবন ধারনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে বারবার শ্রমিকেরা মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন করতে বাধ্য হয়েছে। এছাড়া প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন ফাক্টরিতে বকেয়া বেতন, ভাতা, ওভার টাইম এর দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলন করতে হয় । পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের আন্দোলনের আছে এক গৌরবময় ইতিহাস। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর এমন বিকাশমান, শক্তিশালী, ধারাবাহিক ও সফল আন্দোলন আর একটিও নেই। এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল পোশাক শিল্পের জন্ম লগ্ন থেকেই। শুরুতে একজন দুইজন করে বিশেষ বিশেষ শ্রমিকরা, এ কারখানা সে কারখানাই কম মজুরি, ভাতা, বকেয়া পাওনা, ওভার টাইম, নিরাপত্তা বাবস্থা সহ সকল অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে, মার খেয়েছে, মামলা খেয়েছে, চাকরি হারিয়েছে, গুম খুন হয়েছে মালিকের পোষা গুন্ডা ও কারখানা প্রশাসনের হাতে। এরপর লড়েছে গোটা ফ্যাক্টরির মেহনতিরা; তারপর একই এলাকার সব কারখানার শ্রমিকরা একজোট হয়ে লড়েছে তাদের সরাসরি শোষণকারী মালিকদের বিরুদ্ধে। বারবার আন্দোলনের অভিজ্ঞতা শ্রমিকদের শিখিয়েছে -- সব কারখানার মালিকরা আসলে একই রকম, সহজে শ্রমিকদের দাবি মানে না, দাবি আদাই করার জন্য মারমুখি আন্দোলনই একমাত্র পথ, আন্দোলনের সময় সব মালিকরা এক জোট হয়ে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে লড়ে, শ্রমিকদের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য মালিকদের নিজেদের সংগঠন আছে, শ্রমিকের সংগঠিত শক্তিকে মালিকরা ভয় পায় বলে তুচ্ছ স্বার্থের লোভ দেখিয়ে এক শ্রমিককে আর এক শ্রমিকের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দেয়। প্রথমদিকে মালিকের পোষা গুন্ডা ও কারখানা প্রশাসনের দ্বারা শ্রমিক আন্দোলন দমন করা যেত, কিন্তু আন্দোলনে শ্রমিকদের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং আন্দোলন কঠোর ও জোরালো হওয়ার কারনে মালিকরা শ্রমিকদের ন্যায্য দাবীর আন্দোলন রাষ্ট্রপক্ষের পুলিশ বিডিআর বাহিনীকে দিয়ে দমন করেছে। যে রাজনৈতিক দলই রাষ্ট্রের ক্ষমতায় থাকুক না কেন শ্রমিকরা শিখেছে পুলিশ বা রাষ্ট্র মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে সব সময় মালিকদের নিজস্ব লোক হিসেবে শ্রমিকদের দমন করে। শ্রমিকরা এও দেখেছে, তাদের আন্দোলনের শক্তি সাধারণ পুলিশ দিয়ে দমন করতে না পেরে সব মালিকরা মিলে রাষ্ট্রের মাধ্যমে বিশেষ পুলিশ (শিল্প পুলিশ) বাহিনী তৈরি করেছে। সর্বশেষে শ্রমিকরা দেখেছে মালিকরা আন্দোলন দমন করার জন্য রাষ্ট্রের সরকারের সাথে মিলে বিডিয়ার (বিজিবি) বাহিনী নামিয়েছে, নিজেরা নিজেদের কারখানায় আগুন ধরিয়ে শ্রমিকদের নামে দোষ চাপিয়েছে আন্দোলন বন্ধ করার জন্য। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পুলিশ, উকিল, আর্মি, সরকারি কর্মকর্তা, আমলাসহ সমাজের অন্যান্য পেশাজিবিদের সংগঠনগুলি শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিসহ অন্যান্য ভাতা ও বকেয়া পাওনার আন্দোলনে পাশে থাকেনি। এমনকি আমরা দেখলাম সরকারি কর্মচারীদের সংগঠনগুলিও(সিবিএ) মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে শ্রমিকদের পক্ষে থাকেনা কারন শ্রমিকদের স্বার্থের সাথে এইসব পেশাজিবিদের স্বার্থ মেলেনা। তাই ন্যূনতম মজুরির আন্দোলনে শ্রমিকরায় একমাত্র শ্রমিকদের সাথী।

পোশাক শ্রমিকদের জন্য ৬২৭ টাকা নিন্মতম মজুরি নির্ধারণ করে ১৯৮৪ সালে প্রথম নিন্মতম মজুরী বোর্ড গঠন করেছিল সরকার। পরে ১৯৯৪ সালে ৯৩০ টাকা, ২০০৬ সালে এক হাজার ৬৬২ টাকা ৫০ পয়সা এবং ২০১০ সালে তিন হাজার টাকা এবং সর্বশেষ ২০১৩ সালে পাঁচ হাজার ৩শ’ টাকা নিন্মতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়। প্রতিবারই শ্রমিকদের আন্দোলনের মাধ্যমেই ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ হয়। বিশেষতঃ ২০০৬, ২০১০ ও ২০১৩ সালে শ্রমিকরা ন্যূনতম মজুরির যে শক্তিশালী আন্দোলন করেছিল তা অভূতপূর্ব। এমনকি ২০১৬ সালের শেষের দিকে মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনও ছিল খুবই শক্তিশালী যার ফলাফল হিসাবে সরকার শ্রমিকদের কাছে দ্রুত ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করবে বলে ওয়াদা করেছিল। বিগত সময়ের তুলনায় এই আন্দোলনগুলি ছিল অনেক বেশি পরিপক্ক ও পরিকল্পিত। শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়া, আন্দোলনে শ্রমিকদের দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ও মারমুখী অংশগ্রহন, একযোগে সব এলাকায় মিছিল করা, আন্দোলনের সময় প্রতিদিন শক্তি বৃদ্ধি, শ্রমিকদের দলে দলে অংশগ্রহন দেখে আন্দোলনের তোপের মুখে মালিকদের আতংক ও ভীতি, সর্বদিকে বিশাল সংখ্যক শ্রমিকদের মিছিল পুলিশ বিডিআর দিয়ে রুখতে না পেড়ে মালিকী রাষ্ট্র ব্যবস্থার হতাশা ইত্যাদি প্রমান করে দেশে আজ আন্দোলন করে দাবি আদায় করার জন্য এবং রাষ্ট্র ও সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করার জন্য শ্রমিকরা সবচে বড় শক্তি।

মালিক শ্রমিকের আসল সম্পর্কঃ
____________________
মালিক শ্রমিকের ভেতরের আসল সম্পর্ক অনেক শ্রমিক জানেনা বলে মিষ্টি ও সুন্দর সুন্দর কথায় অনেক সময় আশাবাদি ও বিভ্রান্ত হয়। মালিকদের সুন্দর ও মিষ্টি কথার আসল উদ্দেশ্য হল সবচেয়ে বেশি মুনাফা করা। আর কারখানার মালিকরা সবচেয়ে বেশি মুনাফা করতে পারে তিনটি উপায়েঃ
(ক) শ্রমিকের মজুরি কমিয়ে দিয়ে
(খ) শ্রমিকের কর্মঘণ্টা বাড়িয়ে দিয়ে
(গ) শ্রমিকের কাজের ঘনত্ব বাড়িয়ে দিয়ে - অর্থাৎ যন্ত্রপাতির এমন সিস্টেম সে তৈরি করে বা মানসিকভাবে শ্রমিককে গালাগালিসহ এমন অবস্থা তৈরি করে যাতে প্রোডাকশন ঘণ্টা প্রতি আগের চাইতে অনেক বেশি হয়। অপরদিকে শ্রমিকদের উদ্দেশ্য থাকে মালিকদের এই তিন উদ্দেশ্যর উল্টাটা। সুতরাং মালিক শ্রমিক ভাই ভাই হবার কোন সম্ভাবনা নেই। পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের শোষণকারী তিন ধরনের মালিক আছেঃ
(১) দেশি কারখানার মালিক - যে শ্রমিককে মজুরি দেয়
(২) বিদেশি মালিকরা - যাদের নিকট থেকে কারখানার মালিকরা বিদেশি সিন্ডিকেট নির্ধারিত চড়া দামে কাঁচামাল থেকে শুরু করে এক্সেসরিজ, মেশিনপত্রসহ উৎপাদন করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল মালামাল ক্রয় করে
(৩) বিদেশি বায়ার বা ক্রেতা মালিক - যারা কারখানার মালিকদের থেকে উৎপাদিত পণ্য ক্রয় করে ৪/৫ গুন বেশি দামে বিক্রয় করে । তিন ধরনের মালিকের মুল উদ্দেশ্য থাকে সবচেয়ে বেশি মুনাফা ফলে তাদের মুনাফার জোয়ালটা পড়ে শ্রমিকের ঘাড়ে। তিন ধরনের মালিকের কোন মুনাফা হবেনা যদি শ্রমিকরা কোন শ্রম না দেয়, কারন শুধুমাত্র শ্রমিকের শ্রমই মূল্য তৈরি করে। শ্রম ছাড়া কোন জিনিসের মূল্য তৈরি হয়না, ফলে কোন নতুন সম্পদও তৈরি হয়না। অথচ আমরা দেখি, যারা কোন শ্রম দেয় না তারাই বেশিরভাগ সম্পদের মালিক। তাই বুঝা যায়, এই অর্থনৈতিক সিস্টেমের ভিতর বড় ধরনের ঘাপলা আছে। শ্রমিকদের আজ শ্রেনি সচেতন হয়ে সেই ঘাপলাটি বুঝতে হবে।
সহযোদ্ধারা ভাবুন,
বারবার আন্দোলন করতে বহু শ্রমিক খুন, গুম, পঙ্গু হয়েছে, চাকরি হারিয়েছে, মামলা খেয়েছে। এছাড়া রানা প্লাজা, তাজরিন ফ্যাশান এর মত অসংখ্য ঘটনাতে কত শ্রমিকের জীবন গেছে ও প্রতিদিন যাচ্ছে তার কোন হিসাব নেই। কত নারী শ্রমিককে যে অসম্মানিত হতে হয়েছে তারও কোন হিসাব নেই। মানুষ হয়েও মানুষের মত জীবন কাটানোর অধিকার শ্রমিকদের নেই। অনেক রক্ত আর ত্যাগের বিনিময়ে ন্যূনতম মজুরির আন্দোলন সফল হলেও কিছুদিন পর বাড়ি ভাড়া ও জীবনধারণের প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বেড়ে শ্রমিকের প্রকৃত মজুরি যায় কমে। শ্রমিকরা জানে, যে ন্যূনতম মজুরির জন্য শ্রমিকরা আন্দোলন করছে সেই মজুরিও যদি তারা পায় তবু তাদের সব সমস্যার সমাধান হবেনাঃ বড় বড় অট্টালিকাতে থাকা মানুষদের মত শ্রমিক ও তার সন্তানের জীবন হবেনা, দেশের সবচেয়ে ভাল ভাল স্কুল গুলিতে শ্রমিকের সন্তানের জায়গা হবেনা, সবচেয়ে পরিশ্রমী মানুষ হিসাবে পুষ্টিকর মানের খাবার শ্রমিকদের জুটবে না, মানুষের মত বসবাসের জন্য যেটুকু আবাসন দরকার তা পাওয়া হবেনা শ্রমিকের। শ্রমিকের অধিকার বাস্তবায়নের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ ১০টি দেশের তালিকায় প্রথম স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক শ্রম অধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ভিয়েনাভিত্তিক ‘বৈশ্বিক শ্রম অধিকার ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন’ (আইটিইউসি) প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। অথচ মালিক ও মালিকদের রাষ্ট্রের হর্তা কর্তারা শ্রমিকদের বেলায় টাকা নেই গরিব দেশ বলে চিৎকার করে। আসলেই কি তাই? ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষনা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অর্থ পাচার হয়েছে ৭ হাজার ৫৮৫ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬ লাখ ৬ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা৷ স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশগুলোর মধ্যে অর্থ পাচার সবচেয়ে বেশি হয়েছে বাংলাদেশ থেকেই৷ বাংলাদেশ থেকে গড়ে প্রতি বছর ৭৫৮ কোটি ডলার বা ৬৩৬৭২ কোটি টাকা পাচার হয় বলে তথ্য মেলে৷ বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন পর্যন্ত দেশে ঋণখেলাপির সংখ্যা ২ লাখ ৩০ হাজার ৬৫৮ জন। তাদের কাছে অনাদায়ি অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা এই তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী। ২০১২ সালে করা অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩৩ থেকে ৮৩ শতাংশই হচ্ছে কালো টাকা। গত অর্থ বছরে জিডিপির আকার ছিল ১৫ লাখ ১৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এ হিসাবে ওই সময়ে দেশের অর্থনীতিতে কালো টাকার সর্বনিম্ন পরিমাণ ছিল ৫ লাখ সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়েলথএক্সের প্রতিবেদন বলছে, গত পাঁচ বছরে (২০১২-১৭) ধনীদের সম্পদ বৃদ্ধির বিবেচনায় শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। এটাই মালিকদের রাষ্ট্রের আসল চেহারা। মালিকরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে মেরে দিলে, অবৈধ সম্পদ ও কালো টাকার পাহাড় গড়লে, টাকা পাচার করলে কোন সমস্যা হয়না, অথচ কোনোমতে বেঁচে থাকার জন্য শ্রমিকরা দিন-রাত খেটে মরছে। আন্দোলন ছাড়া কখনও মজুরি বেড়েছে এমন কোনো নজির নেই। শ্রমিক আন্দোলন দমনের জন্য মালিকদের আক্রোশ ও প্রচেষ্টা দেখে শ্রমিকরা বুঝেছে আসলে মালিক, রাষ্ট্র, সরকার, সরকারে থাকা রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ, সরকারি আমলাসহ রাষ্ট্র ও সরকারের সকল প্রভাবশালীরা একই স্বার্থের টানে বাঁধা একটা গোষ্ঠী। যে গোষ্ঠী সবসময় নিজেরা একে অপরের স্বার্থ রক্ষা করে চলে এবং মুখে মিষ্টি কথা বললেও তলে তলে শ্রমিকদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে একজোট। রাজনৈতিক দলগুলি এই গোষ্ঠীরই একটা অঙ্গ। তাইতো শ্রমিকরা দেখেছে, জাতীয় নির্বাচনের সময় দেশের সব রাজনৈতিক দল সব মানুষের সমান অধিকারের কথা বললেও খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, কাজ, নিরাপত্তাসহ কোন গনতান্ত্রিক অধিকার শ্রমিকদের নেই, আছে শুধু মালিকদের জন্য। এইভাবেই কি বারবার মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন করে চলতে থাকবে শ্রমিকের জীবন, নাকি দরকার একটি স্থায়ী সমাধান।
খেয়াল করুন সহযোদ্ধা শ্রমিক ভাইরা,
বাজারে কোন জিনিসের দাম কত হবে তা বাজেট ঘোষণা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে রাষ্ট্র, ইস্কুল কলেজ তৈরি ও নিয়ন্ত্রণ করে মালিকী ব্যবস্থার রাষ্ট্র, দেশের মানুষের সকল অর্থনৈতিক কাজ নিয়ন্ত্রণ করে মালিকদের তৈরি রাষ্ট্র, যে পুলিশ বিডিআর ও রাষ্ট্রীয় অন্যান্য বাহিনী মালিকের পক্ষে শ্রমিকের ন্যায্য আন্দোলন দমন করে তাদেরও নিয়ন্ত্রণ করে এই মালিকের রাষ্ট্র, প্রশাসন-আইন কানুন-কোর্ট কাচারি-সরকারি বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান-হাসপাতালসহ সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে এই মালিকের তৈরি রাষ্ট্র ব্যবস্থা, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে যে মজুরী বোর্ড সেটাও রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠান, এমনকি পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা সরকারি চাকরি না করলেও ন্যূনতম মজুরির দাবিও করে এই রাষ্ট্রের কাছে কারন সব শ্রমিক জানে তাদের ন্যূনতম মজুরিসহ অন্যান্য দাবি পূরণ ও নিয়ন্ত্রণ করে মালিকদের তৈরি এই রাষ্ট্র ব্যবস্থা। আর এই মালিকদের তৈরি রাষ্ট্র পরিচালনা করে মালিকদের তৈরি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তাইত দেখা যায় মালিকদের পক্ষে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে দেয় রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী। এখন শ্রমিকরা যদি মনে করে ন্যূনতম মজুরিসহ অন্যান্য যে সব দাবিতে তারা আন্দোলন করে তা কোন রাজনৈতিক আন্দোলন নয়, এটা শুধু পেটের দায়ে আন্দোলন - তবে তা মস্ত ভুল হবে। কারন রাষ্ট্রের কাছে আন্দোলনের দাবি জানানো মানে, যে রাজনৈতিক দল রাষ্ট্র ক্ষমতায় আছে তার কাছে দাবি করা, আর রাজনৈতিক দলের কাছে আন্দোলনের দাবি করা মানে হচ্ছে সেটা একটি রাজনৈতিক দাবি। শ্রমিকদের নিজেদের রাজনৈতিক দল নেই অথচ তারা রাষ্ট্রের কাছে রাজনৈতিক দাবি নিয়ে হাজির হচ্ছে এবং মালিক শ্রেণীর রাজনিতি দ্বারা অজান্তেই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। শ্রমিকরা শ্রেনি সচেতন না হওয়ার কারনে ন্যূনতম মজুরিসহ অন্যান্য যে সব দাবিতে তারা আন্দোলন করে তা যে শ্রমিকশ্রেনির একটি স্বতঃস্ফূর্ত অসচেতন রাজনৈতিক আন্দোলন তা শ্রমিকরা জানেনা। আর এই অসচেতনতার কারনে দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় মালিকদের রাজনৈতিক দলকে বসিয়ে শ্রমিকরা যদি মনে করে তাদের সব দাবি দাওয়া মালিকী রাষ্ট্রের সরকার মেনে নেবে তবে তা হবে বোকার স্বর্গে বাস করা। হাঁ, শ্রমিক সহযোদ্ধারা,
কৃষি শ্রমিকসহ ধরলে দেশের বেশিরভাগ মানুষ হচ্ছে শ্রমিক ও তার পরিবারের লোকজন, আর গ্রামে শ্রমিকদের যে ছোট ও গরিব কৃষক আত্মীয় স্বজনরা আছে তাদেরসহ ধরলে সেটা হয় মোট জনসংখ্যার ৯২% এবং এই শ্রমিকরায় মালিকদের রাজনৈতিক দলগুলিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসায় শ্রমিকশ্রেনির রাজনিতি সম্পর্কে সচেতন না থাকার জন্য। তাই ন্যূনতম মজুরির আন্দোলন শ্রমিকরা অবশ্যই করবে ভয়ানক মারমুখি ও তেজিভাব নিয়ে, আন্দোলনের আশু উদ্দেশ্য হবে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া যতবেশি সম্ভব আদায় করা তবে এই আন্দোলনে শ্রমিকদের আসল বা মূল টার্গেট হবে রাষ্ট্র ক্ষমতা। বুঝতে হবে এমনকি আশু দাবি দাওয়া পূরণ করার জন্য শ্রমিকদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হচ্ছে শ্রমিকদের নিজেদের গড়ে তোলা রাজনৈতিক পার্টি। যদি সচেতন শ্রমিকশ্রেনির সব সেক্টরের, সব এলাকার, সব কারখানার আন্দোলনের ভিতর দিয়ে গড়ে উঠা পরিক্ষিত শ্রমিক প্রতিনিধি নিয়ে শ্রমিকদের নিজেদের রাজনৈতিক পার্টি গড়ে তুলে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়া যেত তবে সকল সমস্যার স্থায়ী সমাধান হত। সময় এসেছে শ্রমিকদের সকলের সামনে স্বতঃস্ফূর্ততার জায়গায় আত্মসচেতনতার এবং অসচেতনতার জায়গায় সুপরিকল্পিত আন্দোলনের মাধ্যমে নিজেদের রাজনৈতিক পার্টির জন্ম দেয়ার।
সহযোদ্ধা শ্রমিক বন্ধুরা,
শ্র্রমিকশ্রেণীকে নিজদের স্বার্থ, নিজেদের সমস্যা সংকট মিটানোর লড়াইয়ে, অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে নিজেদেরই আত্মসচতেন হয়ে নামতে হবে। বাইর থেকে এসে শ্রমিকদের সমস্যা দূর করতে পারবনো; বড়জোর একটু আহা! উহা!! করতে পারে। পরিবহন শ্রমিক, গার্মেন্টস শ্রমিক, পাটকল, সুতাকল, হোসিয়ারি, টক্সেটাইল, চিনিকল, ট্যানারি, ইস্পাত, নির্মাণ, হোটেল শ্রমিক এবং অসংখ্য ফ্যাক্টরি শ্রমিক, দিনমজুর, ক্ষেতমজুর, গ্রামীণ শ্রমিকসহ সকল শ্রমিকের স্বার্থ এক, সুখ-দুঃখ, সমস্যা একইরকম। শ্রমিকদের আজ বুঝতে হবে শুধু ফ্যাক্টরি মালিকদের বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদের সমস্যা দূর হবেনা। এই মালিকরা অন্যান্য সেক্টরের মালিকদের সাথে একজোট। তাই সব মালিকদের বিরুদ্ধেই সব শ্রমিকদের একজোট হয়ে লড়াই করতে হবে। অন্য সব সেক্টরের শ্রমিকদেরও ন্যূনতম মজুরিসহ অন্যান্য দাবি দাওয়া রয়েছে। তাই অন্যান্য দাবীর সাথে ন্যূনতম মজুরির দাবি আজ সকল সেক্টরের শ্রমিকদের জন্য কমন দাবি। পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের আজ বুঝতে হবে দেশের সকল সেক্টরের শ্রমিকদের একজোট করে বৃহত্তর শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষমতা একমাত্র তাদেরই আছে। কারন পোশাক শিল্পের শ্রমিকদেরই আছে সুদীর্ঘ, ধারাবাহিক, মারমুখি ও বিশাল সংখ্যক শ্রমিক জমায়েত করে গৌরব উজ্জ্বল আন্দোলনের ইতিহাস। তাছাড়া দেশের বেশিরভাগ পোশাক শিল্পের কারখানা ঢাকা ও এর আশেপাশে হওয়ার কারনে এবং এক একটি কারখানায় গড়ে একত্রে হাজারের উপর শ্রমিক কাজ করে বলে ঢাকা ও এর আশেপাশে বিশাল সংখ্যক শ্রমিক জমায়েত করা সম্ভব হয়েছে। পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের আন্দোলনের বিশাল বিশাল মিছিল অন্যান্য সেক্টরের শ্রমিকদের অনুপ্রানিত ও আন্দলিত করেছে। ফলে আমরা দেখেছি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের আন্দোলনের সময় কিছু কিছু জায়গায় অন্যান্য সেক্টরের শ্রমিকদের আন্দোলনে নামতে। ঢাকা দেশের আন্দোলনের প্রাণ কেন্দ্র হওয়ায় সব সেক্টরের শ্রমিকদের নিয়ে ঢাকাতে বিশাল আন্দোলন গড়ে তুললে সেই আন্দোলন ছড়িয়ে যাবে সারা দেশের শ্রমিকদের ভিতর।
আগামীতে পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের মতো পরিবহন শ্রমিকরাও জোরদার আন্দোলন করতে যাচ্ছে। মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে সড়ক পরিবহন আইন সংসদে ১৯ সেপ্টেম্বর পাস হয়েছে। এই আইনকে কেন্দ্র করে ২ কোটিরও বেশি পরিবহন শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে দীর্ঘদিন ধরে। এছাড়া নন্মি মজুরি, বিদ্যমান সড়ক পরবিহন ব্যবস্থা এবং বাংলাদশে শ্রম আইন ২০১৮ (সংশোধন) নিয়ে পরবিহন শ্রমকিদরে ভতির ক্ষোভ রয়েছে। এখন অধিকতর সংগঠিত পোশাক শিল্প শ্রমিক যদি পরিবহন শ্রমিকদের সাথে নিয়ে বৃহত্তর শ্রমিক আন্দোলন গড়তে পারে তাহলে সরকার শ্রমিকদের সব দাবি মানতে বাধ্য। পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের মত আজ সব সেক্টরের শ্রমিকদের বুঝতে হবে একজন দুইজন মালিক নয় বরং সব মালিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন যে রাষ্ট্র বা মালিকী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াই করেই তাদের দাবি আদায় করা সম্ভব। তাইত পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা তাদের ন্যূনতম মজুরিসহ অন্যান্য দাবি কারখানার মালিকদের কাছে করেনি, করেছে রাষ্ট্রের কাছে। আর রাষ্ট্র চালাই রাজনৈতিক পার্টি। দাবি পূরণ করে এবং রাষ্ট্র পরিচালনা করেও রাজনৈতিক দল। স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতার স্বাদ পাওয়া আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামাত, জাতীয় পাটিসহ কোন দলই শ্রমিকদের স্বার্থ দেখেনি, শ্রমিকদের বিরুদ্ধেই তাদের অবস্থান। কারণ তারা মালিকশ্রেণীর রাজনৈতিক দল। শ্রমিকদের একই সাথে সাবধান থাকতে হবে সেই সকল সংগঠন থেকে যারা শ্রমিকদের কাছে আসে, চটকদার কথা বলে শ্রমিকদের শুধু মজুরি-ভাতা বাড়ানোর আন্দোলনে সীমাবদ্ধ রাখে যাতে সাময়িক সমস্যার সমাধান হয়। ফলে শ্রমিকদের শক্তির কারনে আন্দোলনে জয় যুক্ত হয়ে মজুরি-ভাতা বৃদ্ধি পেলেও জিনিসপত্রের দাম বেড়ে শেষ বিচারে আন্দোলন সম্পর্কে শ্রমিকদের হতাশ করার মধ্যদিয়ে শ্রমিকদের ক্ষোভ থেকে মালিকদের রক্ষা করে। এই মিষ্টি কথাধারীরা মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে শ্রমিকদের খুব উৎসাহ দেয়, শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার জন্য সুন্দর সুন্দর কথা বলে, কোথাও শ্রমিকরা নিজেদের শক্তিতে মজুরি-ভাতা-বকেয়া পাওনার আন্দোলন শুরু করলে এরা ব্যানারসহ দুই চারজন লোক নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে মিডিয়াতে মুখ দেখানোর জন্য; ভাবটা এমন যেন তারাই নেতৃত্ব দিয়ে আন্দোলন করিয়েছে শ্রমিকদের। এদের চটকদার কথায় মুগ্ধ হয়ে অল্প কিছু শ্রমিক তাদের সংগঠনে যোগ দেয় হয়ত ভাল কিছু হবে এই আশায়। কিন্তু সব সেক্টরের শ্রমিকরা একসাথে হয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলে শ্রমিকরা যাতে নিজেদের রাজনৈতিক দল নিজেরাই তৈরি করতে পারে এবং শ্রমিকদের মজুরি ভাতার আন্দোলন যে শেষ বিচারে একটি রাজনৈতিক আন্দোলন -- এই বিষয়ে শ্রমিকদের তারা রাজনৈতিক সচেতন করেনা। বুঝতে হবে যার কষ্ট তারচেয়ে যদি অন্য লোকে বেশি কাঁদে তবে সেই কান্নায় ভেজাল আছে। তারা আছে শুধু তাদের ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থ নিয়ে যেটাকে তারা শ্রমিক শ্রেণীর রাজনিতি মনে করে। আদতে বড় বড় বুলির আড়ালে তাদের কাজ কারবারে শ্রমিক আন্দোলনের মারমুখি তেজিভাব নষ্ট হয় কারন বছরের পর বছর এরা শ্রমিকদের শুধুমাত্র মজুরি ভাতা বাড়ানোর আন্দোলনে আটকে রাখতে চায়, বড়জোর তাদের সংগঠন করার জন্য শ্রমিকদের উৎসাহ দেয়। কিন্তু শ্রমিকরা ঐসব সংগঠন বাদ দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক সংগঠন নিজেরা যতক্ষণ গড়ে না তুলবে ততক্ষণ শ্রমিকদের মূল সমস্যার সমাধান হওয়া সম্ভব নয়। শ্রমিকদের কাছে স্পষ্ট, সকল ট্রেড ইউনিয়ন আজ মালিক বা মালিক পক্ষের রাজনৈতিক দলের নিয়ন্ত্রণে। শ্রমিকরা নতুন করে ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তুললেও দেশের রাষ্ট্রীয় সিস্টেমের কারনে সেটা মালিকদের পকেটে যেতে খুব একটা সময় লাগেনা। তাই ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ বাদ দিয়েই ভিতরে ভিতরে শ্রমিকদের সংগঠিত হতে হবে। যে রাষ্ট্র বারবার পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঠিক করে দিচ্ছে সেই রাষ্ট্রের ক্ষমতা শ্রমিকদের হাতে না আসা পর্যন্ত টাকার অংকে যতই তাদের মজুরি বাড়ুক না কেন, জিনিসপত্রের দামসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং রাষ্ট্র ব্যবস্থা মালিকরা নিয়ন্ত্রণ করে বলে দাম বাড়িয়ে দিয়ে শ্রমিকদের জীবনমান আবার আগের চাইতে খারাপ অবস্থায় নিয়ে আসে। একই কথা পরিবহন শ্রমিকদের জন্য। শুধুমাত্র পরিবহন শ্রমিকদের একক শক্তি দিয়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব নয়, তাই তাদের আজ জোট বাধতে হবে পোশাক শিল্পের শ্রমিকসহ অন্যান্য পেশার শ্রমিকদের সাথে। মানবিকভাবে বেচে থাকার জন্য ন্যূনতম মজুরি আজ সকল সেক্টরের শ্রমিকদের চাহিদা। সব সেক্টরের শ্রমিকদের আজ একজোট হয়ে ন্যূনতম মজুরিসহ অন্যান্য দাবিতে সারা দেশব্যাপী বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তারপর আন্দোলনের ভিতর থেকেই সব সেক্টরের, সব এলাকার, সব কারখানার আন্দোলনে পরিক্ষিত শ্রমিক প্রতিনিধি নিয়ে গড়ে তুলতে হবে শ্রমিকদের নিজেদের রাজনৈতিক পার্টি। সকল শ্রমিককে রাজনৈতিক সচেতন ও শ্রেনি সচেতন হতে হবে তা নাহলে মালিকদের চর, ভুয়া শ্রমিকনেতা সেজে শ্রমিকদের ধোঁকা দেবে। মনে রাখতে হবে আন্দোলনের ভিতর থেকেই পরিক্ষিত শ্রমিক প্রতিনিধি চেনা যাবে। শ্রমিকদের বুঝতে হবে দেশের ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে কৃষি শ্রমিকসহ বেশিরভাগ হচ্ছে শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্য। এই বিশাল শ্রমিকগোষ্ঠী এক থাকলে কোনো শক্তিই শ্রমিকশ্রেণীর সাথে পারবে না। শুধুমাত্র পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের আন্দোলনে রাষ্ট্র দাবি মানতে বাধ্য হয়েছে এবং যে আন্দোলন কোন কাকুতি মিনতি মার্কা আন্দোলন ছিলনা। ভাবুন, সব শ্রমিক এক হলে কি হবে! রাষ্ট্রকে আন্দোলনের দাবি মানতে বাধ্য করার মত শক্তি অন্যান্য শ্রেনি বা পেশাজীবীদের নেই। আজকে দেশে শ্রমিকরা হল সেই শক্তি যারা নিজেদের দাবিসহ যেকোনো ন্যায্য দাবি মানতে মালিকী রাষ্ট্র বাবস্থার সরকারকে বাধ্য করতে পারে। এটা মালিকরাও জানে। তাই শ্রেনিস্বার্থের কারনে মালিকরা এক শ্রমিককে আর এক শ্রমিকদের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দেয়। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামাতে ইসলাম, জাতীয় পার্টি সহ অন্যান্য যে সব দল রাষ্ট্র ক্ষমতার স্বাদ নিয়েছে তারা শ্রমিকদের সমর্থন ছাড়া শূন্য। এমনকি তাদের কোন সভা সমাবেশ হবেনা শ্রমিকরা না গেলে। তবে কেন ক্ষুদ্র কারনে শ্রমিকরা বিভক্ত হয়ে থাকবে, আর কতকাল মালিকদের রাজনৈতিক দলকে সমর্থন দেবে। নিজেদের সমস্যা দূর করার জন্য নিজেদের রাজনৈতিক পার্টি শ্রমিকদের নিজেদেরই তৈরি করতে হবে সব সেক্টরের শ্রমিকদের একতার মাধ্যমে, অন্যান্য সক্টেররে শ্রমকিদের সাথে সংগঠিত হওয়ার মাধ্যমে, সবশেষে দুর্বার আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শ্রমিকদের রাজনতৈকি দল গড়ে তুলে শ্রমিক সরকার কায়েমের মাধ্যমে।
পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের দাবিনামা
 অবিলম্বে শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি স্কলে ১৬ হাজার টাকার সাথে ২০% বাৎসরকি ইনক্রমিন্টে ও ৮০% বাড়ি ভাড়া ভাতা, সরকারি চাকরজিীবীদরে মত সমান হারে চিকিৎসা ভাতা, নবর্বষ ভাতা, ঈদ-পূজা বোনাস সহ অন্যান্য সকল ভাতা চালু কর। আহার-বিশ্রামসহ দৈনিক কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টা বাস্তবায়ন কর। সব শ্রমিককে নিয়োগপত্র দিতে হবে।
 শ্রম আইনে থাকা মজুরিসহ একদিন সাপ্তাহিক ছুটি, বছরে ৫৩ দিনের মজুরিসহ ছুটি চালু কর। দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকের চিকিৎসার সম্পূর্ণ খরচ মালিককে দিতে হবে। প্রতি বছর চাকররি জন্য দুই মাসরে মূল মজুররি গ্র্যাচুইটি চালু কর।
 প্রতি মাসে বেসিকের ৫ শতাংশ হারে যাতায়াত ভাতা, ১ শতাংশ হারে ধোলাই ভাতা, ৫ শতাংশ হারে টিফিন ভাতা, মূল মজুরির ১০ শতাংশ হারে রোটেটিং শিফট ডিউটি ভাতা এবং ১০ শতাংশ হারে ঝুঁকি ভাতা চালু কর।
 শ্রমিকদের জন্য গ্রুপ ইন্সুরেন্স সুবিধা চালু কর। শ্রমিকের সন্তানসহ সকলের জন্য একই মানের রাষ্ট্র কর্তৃক বিনামূল্যে শিক্ষা ও চিকিৎসা বাবস্থা চালু কর। নারী শ্রমিকদের জন্য ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি বেতনসহ চালু কর।
উপরোক্ত দাবিসহ অন্যান্য দাবিতে পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের আশু কার্যক্রম নিন্মরুপঃ
১। পরিবহন শ্রমিকদের দাবীর সাথে সমন্বয় করে একজোট হয়ে সারা দেশব্যাপী যৌথ আন্দোলন গড়ে তোলা।
২। চিনিকল, ট্যানারি, ইস্পাত, নির্মাণ, হোটেল, পাটকল, ঔষধ, ফ্যাক্টরি শ্রমিক, দিনমজুর, ক্ষেতমজুর, কৃষি শ্রমিকসহ সকল শ্রমিকের দাবিগুলি একত্র করে সারা দশেব্যাপী সকল সেক্টেরে শ্রমিকদের বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা।
৩। আন্দোলনরে ভিতর থেকে সব সেক্টেরের, সব এলাকার, সব কারখানার শ্রমিক প্রতিনিধি নিয়ে শ্রমিকদের রাজনতৈকি পার্টি গড়ে তোলা।
******************
এক জীবন এক বাজি
বাংলাদেশ ভালবাসি
মৌলিক বাংলা

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ২:২৮

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: আমি বুঝিনা,অনিশ্চিত এই ঢাকা শহরে এই মানুষগুলো আটহাজার টাকা দিয়ে কিভাবে ঘরসংসার চালায়?

২| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৪২

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: মালিকদের সুন্দর ও মিষ্টি কথার আসল উদ্দেশ্য হল সবচেয়ে বেশি মুনাফা করা।
বাস্তব কথা, কিন্ত আমাদের দেশে আইন করেও কাঙ্খিত অর্জন হয়না
তাহলে "সুনাগরিক ও সুশাসন এর দেখা মিলবে কবে ???
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

৩| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:২৮

সনেট কবি বলেছেন: এভাবে জীবন চলেনা।

৪| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:২০

রাজীব নুর বলেছেন: অল্প কিছু মানুষ ছাড়া এই শহরে কেউ ভালো নেই।

৫| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৩৩

ফারিহা হোসেন প্রভা বলেছেন: তারা কিন্তু আমাদের দেশের এক গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। তাদের প্রতি অনীহা জাতি মেনে নিবে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.