নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৌরভ দাস

সৌরভ দাস ১৯৯৫

চলুন, সবাই কথা বলি

সৌরভ দাস ১৯৯৫ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর লুটেরা মহল ও একজন দেবাশীষের আত্মহত্যা

১৭ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:০৮


কী হলো! দেবাশীষ মারা গেলো বাংলাদেশ এত নিশ্চুপ কেন? দেবাশীষ কেন মারা গেল জানেন? শুনলে আপনাদের সবার গা শিউড়ে উঠবে। আমাদের সমাজে পাশবিকতার যে চূড়ান্ত স্ফূরণ ঘটেছে তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ দেবাশীষের এই মুত্য। শুনো বাংলাদেশ, দেবাশীষের কোন স্বাভাবিক মৃত্যু হয় নি। দেবাশীষ আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যা করেছে আমাদের পুরো সিস্টেমের উপর তীব্র ঘৃণা পোষণ করে। তার এই মৃত্যুতে পুরো দেশজুড়ে নিউজে সয়লাব হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কারণ এর থেকে বড় পাশবিকতা আর কিছু হতে পারে না। কী পরিমাণ যন্ত্রলার স্বীকার হলে দেবাশীষের মত ছেলেরাও আত্মহত্যার মত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। অথচ এটা নিয়ে বাংলাদেশ নিশ্চুপ!

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) পড়াশোনা করেছিল দেবাশীস মণ্ডল। মৃত্তিকাবিজ্ঞানের এই ছাত্রের স্বপ্ন ছিল পবিপ্রবির শিক্ষক হবে। সেভাবেই তিনি নিজেকে প্রস্তুত করেছিল। অনার্স ও মাস্টার্সে সে ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট হয়েছে। মাঝখানে কিছুদিনের জন্য তিনি কুষ্টিয়ার রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগে লেকচারার হিসেবে যোগ দেয়। এরই মাঝে পবিপ্রবির মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগে লেকচারার নিয়োগের প্রক্রিয়াও শুরু হয়। সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল। তার মৌখিক পরীক্ষাও ভালো হয়েছে। চাকরি পাওয়ার শর্তে কর্তৃপক্ষের ঘুষের আবদার পূরণে ১৫ লাখ টাকা জোগাড়ও করে ফেলেছিল সে। কিন্তু শেষের দিকে অদৃশ্য সুতার টানে সব আটকে যায়। চাকরি না হওয়ার কথা জানতে পেরে রাগে-ক্ষোভে-অভিমানে এই মেধাবী ছাত্র ১৪ মে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

দেবাশীষের জায়গায় সেদিন স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার ভাইজিকে নিয়োগ দেয়া হয় । যেটির জন্য দেবাশীষের থেকে যোগ্যতম আর কেউ ছিল না। অথচ ক্ষমতা নামক এক ঘাতকের কাছে দেবাশীষের অপমৃত্যু ঘটে গেল। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়। তাই তার ভাইজির যোগ্যতা সবার থেকে উপরে। এটিই বোধ হয় নিয়ম!

শিক্ষক নিয়োগের নামে পুরো বাংলাদেশ জুড়েই এখন এক প্রকার লীলা খেলা চলে। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এর মাত্রা আরো বেশি। ২০ টা নিয়োগ হলে সেটার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসি, প্রক্টর, রেজিস্টার, ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন, স্থানীয় এমপি, মন্ত্রী সবাই কেমন যেন উন্মাদ হয়ে যায়। তারা সবাই এক টেবিলে বসে দর কষাকষি শুরু করে। কে কয়টা নিবে এ নিয়ে চলে নানান ধরনের খেল। এজন্য কেউ মেকি আন্দোলন গড়ে তুলে কেউ তার ক্ষমতার দম্ভ দেখায়। এসবের মাধ্যমে শেষমেষ একটি ফয়সালার মাধ্যমে এই ভাগ বাটোয়ারা শেষ হয়। তারপর যে যত রেটে পারে তার অংশটি বিক্রি করে। কেউ বিশ লক্ষ কেউ পনের লক্ষ । এভাবেই এই নিয়োগ বাণিজ্যের সমাপ্তি ঘটে। দিন শেষে সবাই বড় অংকের টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরেন আর মাঝখান দিয়ে হাহাকার করে কিছু সাধারণ পরিবার। পড়ে থাকে দেবাশীষের মত মেধাবীদের লাশ!

যে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক নিয়োগের এই হাল সেই দেশের পক্ষে জ্ঞানে বিজ্ঞানে অগ্রসর হওয়া বেশ কঠিন বটে। আমরা বোধ হয় এসব কারণেই বারবার আটকে যাচ্ছি। আমি বলছি না সব শিক্ষকই এভাবে নিয়োগ হয়। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একবার পা দিয়েছে এরকম কেউ একেবারে চোখ বুঝে বলে দিতে পারে এসব নিয়োগের ৯০ ভাগই হয়ে থাকে টাকার বিনিময়ে। এজন্য ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট একটা ছেলেকে বাদ দিয়ে ক্লাসের গাধা ছাত্রটিকেও শিক্ষক বানাতে এসব লুটেরাদের হাত কাঁপে না।

এভাবে একটি দেবাশীষ নয়। অসংখ্য দেবাশীষকে এই লুটেরারা মানসিকভাবে প্রতিনিয়ত মারছে। তাদের এই অন্যায়ের কথা সবাই জানে। কিন্তু মুখ খোলা বারণ। কারণ তারা সবার মুখে কুলুপ এঁটে দিয়েছে। যে কারণে পুরো দেশ জুড়ে এখন এক অদ্ভুত নীরবতা। সবাই এখন একটা কথা বলার আগে পঞ্চাশ বার ভাবে। ফলে দেবাশীষরাও একটা ক্ষোভ নিয়ে সারাটি জীবন পার করে দেয়। এরকম দেবাশীষের সংখ্যা বাংলাদেশে অসংখ্য। তারা একটি স্বাধীন বাংলাদেশে একদল হারামি কর্তৃক লাঞ্চিত, অপমানিত। ছি: বাংলাদেশ! আমরা তো তোমাকে এমনটি দেখতে চাই নি।

সৌরভ দাস
সভাপতি
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাকৃবি শাখা।

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:২৭

সুমন আকরাম বলেছেন: সমাজ ধ্বংসের পিছনে আমাদের নীরবতা সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমাজটাকে সুন্দর ও পরিপাটি করি। এটা আমাদেরই দায়িত্ব।

২| ১৭ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৩

কানিজ রিনা বলেছেন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়গে দূর্নীতি অনেক আগে
থেকেই চলছে সরকারী বেসকারী সকল
নিয়োগে। প্রকৃত শিক্ষার্থীর মেথা টাকার
কাছে যোগ্যতা হারাচ্ছে। ননমেধাবীরা টাকা
দিয়ে নিয়োগ পাচ্ছে, এই যদি হয় শিক্ষাঙ্গন
প্রতিষ্ঠান তাহলে ননমেধাবী শিক্ষক দেশের
শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার মান বাড়বে কেমনে?
এইত সবে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দলন
হয়ে গেল কোটায় ননমেধাবীরা চাকুরী পায়
মেধাবীরা পিছিয়ে যায়।
এখন ছাত্ররা জাগ্রত হলে শিক্ষাঙ্গন থেকে
এসব দুর্নীতি নির্মুল করা সম্ভব হবে বলে
ধারনা। দেবাশীষরা চাকুরী পাবেনা কেন
আত্বহত্যার পথ বেছে নিবে। দেশের শিক্ষাঙ্গনের
দুর্নীতি মুলো উৎপাটনে ছাত্ররা এগিয়ে আসতে
হবে। ধন্যবাদ।

৩| ১৭ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৫০

ঢাবিয়ান বলেছেন: খুব খারাপ লাগলো খবরটা পড়ে। চাকুরিতে নিয়োগ পাওয়াটা এখন পুরোপুরি রাজনৈতিক হয়ে গেছে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের প্রকাশ্যে ছাত্রলীগ খুন করার হুমকি দিচ্ছে অথচ থানায় জিডি করতে গেলে মামলা নেয়া হয় না।

বাংলাদেশে বেচেঁ থাকার পুর্বশর্ত হয়েছে এখন নিশ্চুপ থাকা।

৪| ১৭ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১:২৪

আল ইফরান বলেছেন: শিক্ষক না হতে পারার যন্ত্রণা ঢাকতে আত্নহননের পথ বেছে নিয়ে এই ছেলে তো প্রকারান্তে এই বর্বর সমাজ ব্যবস্থার জয়-জয়কারের ঘোষণা দিয়ে গেলো।
তার কি উচিত ছিলো বা ছিলো না সেইটা নিয়ে কথা বলাটা এখন কোন গুরুত্ব বহন করে না।
কিন্তু আমার কেন যেন মনে হয় এই ছেলের কাছে আমাদের পৃথিবীবাসীর অনেক কিছু পাওয়ার ছিলো।
আমি এই ধরনের অনেকগুলো কেইস জানি যেখানে কেউই নিজেকে এভাবে বিসর্জন দেন নি, দাতে দাত চেপে সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন ও জীবনে অভুতপুর্ব সাফল্য লাভ করেছেন।
আমি নিজেও এই সিস্টেমের ভিকটিম বলতে পারেন, পার্থক্য এই যে আমি এখনো মাথা নুয়ে দেই নাই এদের অন্যায়ের সামনে ও একাডেমিক স্ট্রাগল চালিয়ে যাচ্ছি।

৫| ১৭ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১:৩৬

সুমন কর বলেছেন: দুঃখজনক এবং এ প্রক্রিয়ার কোন পরিবর্তন হবে না !!

৬| ১৭ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১:৫১

অনন্য দায়িত্বশীল আমি বলেছেন: দুঃখজনক কিন্তু এগুলো বিচার আদৌ কি হবে?

৭| ১৭ ই মে, ২০১৮ দুপুর ২:০৩

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: আহারে

৮| ১৭ ই মে, ২০১৮ দুপুর ২:২০

জগতারন বলেছেন:
প্রতিশ্রুতিশীল ও প্রতিভাময়ী এই যুবক অকাল প্রয়াণে এখন দুখ প্রকাশ করা ছাড়া আমরা আর কি-ই বা করতে পারি!
কিন্তু দেশের প্রশাসন ও রাজনৈতিক ব্যাক্তি এবং সমাজের সকল ব্যাক্তি বর্গ সচেতন একান্তভাবে কাম্য।

৯| ১৭ ই মে, ২০১৮ দুপুর ২:৫২

আরইউ বলেছেন: মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে কিছু বলা উচিত না; তারপরও আপনার লেখার প্রেক্ষিতে বলছি - পৃথিবীতে ওনার চেয়ে খারাপ অবস্থায় থেকেও অনেকে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। ওনার দৃষ্টিভংগিটা এমন হওয়া উচিত ছিল যে আমি পৃথিবীর সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে প্রমান করে দেবো আমার মূল্য কত বেশি ছিল। উনি ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছেন- উনি ভুল করেছেন।

১০| ১৭ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৩:০৫

অগ্নিবেশ বলেছেন: দুঃখের সাথে জানাচ্ছি, সে মেধাবী হইলে নিজেরে শেষ করতো না। লগে দুই চাইরটা নিয়েই যাইতো।

১১| ১৭ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৩:২২

কুহুক বলেছেন: আরও বেশি বেশি প্রতিবাদ হয়া উচিত ছিল

১২| ১৭ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৪

কামরুননাহার কলি বলেছেন: মরছিলো যখন তখন ওদের মেরে মরলো না কেনো। আহারে আর কত দেবাশিষ এভাবে মরবে কে জানে।

১৩| ১৭ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৩:৪১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আমাদের একজন মাহাথির দরকার
যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দ্বায়িত্ব নিতে পারবে।

১৪| ১৭ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৪:০১

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
কি হচ্ছে এসব দেশে ?

কে ধরবে হাল ?

১৫| ১৭ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৫:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: দেখুন, গরীবের কথা বাসি হলে সত্যি হয়। বিদ্বজ্জন। আবার বিদ্বজ্জন। এটা কি হতে দেবেন? তাদের ভাব তারা প্রকাশ করুন। কিন্তু আপনি নিজের মাথা কারো হাতে তুলে দেবেন না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.