নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ভীষণ একলা থাকা মানুষ আমি ভীষণ আমার ভেতর থাকি!

আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর

জীবন জুড়ে থাকা পরাজয়, হয়েছে ম্লান চিরকাল!

আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার প্রিয় সঙ্গী

২১ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:৩০

আমার জন্ম ঠিক কোন শহরের কোন ঘরে হয়েছে তা আমার মনে নেই। মানুষ যেমন তার জন্মের আগের কথা মনে করতে পারেনা,আমিও পারিনা। তবে পাতলা ট্রান্সপারেন্ট পলিথিনে মোড়ানো আমাকে প্রথম যেদিন কার্টুনে ভরে ট্রাকে করে আনা হলো সেই স্মৃতি আমার এখনো মনে আছে। সে আমার বাল্যবেলার স্মৃতি। আমি তখন একদম নতুন এক্কেবারে তরতাজা আর টগবগে একজন।

ওরা আমার বংশ পরিচয় সমুন্নত করে আলাদা করার জন্যে আমার গায়ে বিদ্ধ করলো বিরাট এক লৌহখন্ড। আমি বেশ ব্যাথা পেলাম তাতে ...আলাদাও হলাম। নিজের বংশ পরিচয় পেয়ে আমার খুশি হওয়ার কথা কিন্তু ব্যাথা এতো তীব্র ছিলো যে চিৎকার করে কাঁদছিলাম আর মনে মনে হাজারটা গালি দিচ্ছিলাম ওদেরকে। দিন দুয়েক এর মধ্যেই আমার ব্যাথা সেরে উঠলো। আমি তখন থেকে এলিট শ্রেনীর একজন! নিজেকে এলিট শ্রেনীর একজন ভেবে বেশ অহংকার জেগে উঠলো মনে মনে।

একদিন আমাকে নিয়ে আসা হয় ওয়্যারলেস মোড়, মগবাজারের একটি সুউচ্চ বিল্ডিং-এর ৪র্থ তলায়। এবার আমাকে সুদর্শনী করে প্রদর্শনী করা হলো র‍্যাকের মধ্যে। আমার পাশে দেখলাম আমার প্রজাতির আরো শতজন। সবাইকে সাজানো হয়েছে,গুছানো হয়েছে। আমাদের মধ্যে কেউ দেখতে কালো কেউ সাদা আবার কেউবা লাল কিংবা ধূসর। আমাদের সমাজে অবশ্য সাদা-কালো’র ভেদাভেদ নেই। সবাই মিলেমিশে একসাথে থেকে আনন্দে আছি।আমি সেখানে গিয়ে পৌছে প্রথম দিনেই সবার সাথে পরিচিত হয়ে গেলাম।এখানে সবাই বেশ হেল্পফুল ও রসিক। আমরা সবাই যে এলিট শ্রেনীর তা আমাদের গল্প-গুজবের মাধ্যমেই ফুটে উঠতো। সারারাত ধরে গান-কবিতা আর নাট্যকলা নিয়ে পড়ে থাকলেও দিনের বেলাতে খুব আতংকে থাকতাম। আমাদের মধ্যে কে বা কারা নাই হয়ে যাবে আজ?-এই আতংক সর্বদা আমাদের গ্রাস করে রাখতো। কেবল রাতটাতে নিজেদেরকে সবচেয়ে সেইফ মনে হতো। আমাদের কারো শরীরে ‘ওরা’ হাত দিলেই আতংকে কেঁপে উঠতাম। অন্যরা মায়া মায়া চোখে তাকিয়ে থাকতো তার দিকে। আমিও বেশ কয়েকবার ‘ওদের’ হাতে পড়েছি। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে বারবার। কিন্তু যখন আবার আমাকে নিজের জায়গায় রেখে দিয়েছে তখন মনে হয়েছে – উফফ! যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম!

আমার এই সুখ বেশীদিন কপালে সয়নি। হটাৎ এক আগুন্তুক এসে আমাকে পছন্দ করে নিয়ে গেলো। সেদিন আমার সঙ্গীদের ছেড়ে আসতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো। আগুন্তুক আমাকে নিয়ে একটি বদ্ধস্থানে রেখে পথচলা শুরু করলো । আমি আমার লোকালয় ছেড়ে আসার প্রচন্ড কষ্টে প্রচুর কেঁদেছিলাম সারাপথ।

তারপর আমি যে বাসাটাতে উঠি সেটি মালিবাগের একটি বাসা। আমাকে এনে রেখে দেওয়া হলো একটি বুকশেলফ এর উপর। আমি হাটতে পারিনা, চলতে পারিনা –আমাকে দিয়ে করবেটা কি?-এইসব সাত পাঁচ ভেবেই যাচ্ছি। এইরকম ‘ইউজল্যাস’ অবস্থায় আমি পড়ে রইলাম দু’চারদিন। হটাৎ কোন এক মধ্যদুপুরে আমি চোখে পড়ি অন্য এক আগুন্তুকের। যিনি আমাকে বয়ে নিয়ে আসলেন লোকটা আসলে সে নয় অন্য আরেকজন। আমি হতভম্ব হয়ে দেখলাম লোকটা আমাকে খুলে এদিক সেদিক করছে।আমার প্রত্যেকটা প্রকোষ্ট একটা একটা করে চ্যাক করছে!

অল্পক্ষন পরে আমাকে নিয়ে আসা আগুন্তুকের সাথে সেই লোকের কথোপকথন শুনে বুঝে ফেললাম আজ থেকে আমি কার অধিকারে।
তারপর থেকেই শুরু আমার কষ্টের জীবন। আমার দূর্দশাপূর্ন সংগ্রামী জীবন। আমি সেদিন অবাক হয়ে লক্ষ করেছিলাম যে অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই আমার মধ্যে রাখা হলো বেশ কাগজপত্র। আমিও তখনো বিভিন্ন কাগজের মধ্যে পার্থ্যক্য ও তাদের গুরুত্ব অনুধাবন করতে শিখিনি। কিন্তু যেহেতু আমি চালাক ছিলাম তাই এই পার্থ্যক্য বুঝতে আমার বেশী সময় লাগেনি।
যখন পুরোটা বুঝে গিয়েছিলাম তখন থেকে নিজেকে গুরুত্বপূর্ন ভাবা শুরু করলাম। আমার মনিব যেখানেই যান সেখানেই আমি ওনার সাথে ট্রাভেল করি। লোকাল বাস ,রিক্সা, ট্রেন কিংবা লঞ্চ সব যানবাহনেই আমার যাতায়াত হয়েছে। ঢাকা থেকে খুলনা কিংবা রাজশাহী থেকে পাবনা সব জায়গাতেই তার সাথে আমার বিচরন। এমনকি ওনার মেয়েবন্ধুর সাথে সাক্ষাতের সময়গুলোতেও আমি ছিলাম ওনার সাথে। আমি ওনার জীবনের বহু ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী। আমাকে এতোটা গুরুত্ব দেয়া হবে বাল্যকালে সেটা চিন্তাও করিনি। করবোই বা কিভাবে?-আমাদের মুরব্বিদের সাথে আমাদের সাক্ষাত হওয়ার সুযোগ থাকেনা। মুরব্বিদের বুড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথে যখন অকেজো হয়ে যায় তখন তাদের স্থান হয় ডাস্টবিনে। সেখানে ডাস্টবিনের পচা গন্ধে নিজেদের না টিকাতে পেরে অনেকেই আত্মহত্যা করে। সারাটা জীবন আমাদেরকে এতোটা সম্মান আর গুরুত্ব দিয়ে শেষ কালে এসে এই পরিনতি হয় ভাবলেই কষ্ট লাগে।
তবে একটা বিষয় দেখে অবাক হয়েছি আমার ভিতর যখন ফাঁকা থাকে তখন আমার মনিব কষ্টে থাকেন। তার এই কষ্ট দেখতে আমার ভালোলাগেনা, তবুও আমার কিছু করার থাকেনা। আমি তাই সবসময় নিজেকে রিষ্টপুষ্ট রাখতে চাই-থাকতে চাই। চাইলেই যে সব কিছু পাওয়া যায়না তা হারে হারে বুঝেছি আমার জীবদ্দশায়।

আমি এখন জীবনের অন্তিমে এসে পৌছেছি। আমি যে বুড়িয়ে গিয়েছি তা আমার জীর্ণ-শীর্ন অবস্থা দেখেই বুঝতে পারি। আমার মনিব আমাকে এখনো আগলে রেখেছেন-আর ক’দিন রাখবেন জানিনা। যদি সম্ভব হতো আমি তাকে দাবী নিয়ে বলতাম- আমাকে ডাস্টবিনে ফেলবেন না প্লিজ! আমি আপনার পকেটে স্থান পেতে না পারি অন্তত রুমের ড্রয়ারটাতে স্থান দিয়েন।
জানি, এই ইচ্ছে আমার পূরন হবেনা। আমার গল্পও একদিন শেষ হবে আমার অগ্রজদের মতো করে কোন এক ডাস্টবিনে,নর্দমায় সাথে মিশে অযত্নে –অবহেলায়!
P.S: আমার প্রিয় সঙ্গী মানিব্যাগ যদি কখনো বলতে পারতো তবে এই কথাগুলো হয়ত এইভাবেই আমাকে বলতো।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:৫৭

এম.এ.জি তালুকদার বলেছেন: স্মৃতির স্মারকসম -------------------------------------। স্বাগতম

২২ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:২৮

আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর বলেছেন: ধন্যবাদ তালুকদার ভাই ।

২| ৩০ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:৪৯

আশেকুল আরেফিন বলেছেন: ভাল লাগল।

৩০ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:২৮

আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর বলেছেন: ধন্যবাদ আশেকুল ভাই ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.