নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ভীষণ একলা থাকা মানুষ আমি ভীষণ আমার ভেতর থাকি!

আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর

জীবন জুড়ে থাকা পরাজয়, হয়েছে ম্লান চিরকাল!

আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইন্টারভিউ

০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:২৮

স্যার আমি পারবো
স্যার আমি টাইয়ের নট বাধঁতে পারিনা কিন্তু কোন বাস ছিদাম মুদি লেনে দাঁড়ায়
এক্ষুনি বলে দিতে পারি।
এক্ষুনি বলে দিতে পারি গুমঘর লেনটা ঠিক কোথায়
আমি শিমুল গাছের পাতা চিনি
আমার বন্ধুরা বলে আম হ্যাভি কথা বলতে পারি।
রাধা স্টোর্সের এর মালিক এর কাছ থেকে থেকে পঁচিশ টাকা চাদা একমাত্র আমিই তুলে দিতে পারি স্যার।
এখান থেকে এক টিপে ঐ ল্যাম্পপোস্টের আলো ভেঙ্গে দিতে পারি আমি এক্ষুনি
আমি দাড়ি কামাতে পারিনা
রামের সেলুনে গোবিন্দ কেটে দেয়
সপ্তাহে তিনদিন সঙ্গে মালিশ ।
আমি মাঞ্জা দিতে পারি স্যার
একটানে একবার একসঙ্গে তিনটে ঘুড়ি কেটেছিলাম
রাত্রিবেলা ঠোঙ্গার মধ্যে মোমবাতি সেট করে ঘুড়ি ওড়াতে পারি।
স্যার সাধনদের দোতলার বারান্দায় পাইপ বেয়ে উঠে বল পাড়তে হয় আমাকেই
একবার বল পাড়তে গিয়ে বিবসনা বৌদিকে দেখেও
চোখ ফিরাতে পারি।






বঙ্গ বিদ্যালয়ে পড়তাম তো- ইংরেজিটা বুঝতে পারি, বলতে পারিনা
কিন্তু একবার এক সাহেবকে নিমতলা ঘাটের রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছিলাম- বাংলাতেই!
হল কালেকশন ভালো হলে মাধ্যমিকের অঙ্কে লেটারটা পেয়ে যেতাম

তিনটে টিউশনি করি স্যার
একটা ছাত্রী এইবার ক্লাসে ফিফথ হয়েছে।
আমি একশো মিটার দূর থেকে বাসের নাম্বার ঠিক ঠিক পড়তে পারি স্যার
পেছনের গেইটে ঝুলতে পারি অনায়াসে।
জলের ট্যাংকের উপর একহাত ভর দিয়ে স্কুলের পাঁচিল টপকাতে আমার জুড়ি ছিলোনা স্যার ।

অশোককে কেন মহোমতি বলা হয়?
একবার ক্লাস ফাইভে পড়েছিলাম।
তবুও মাধ্যমিকে চারপাতা লিখেছি। এখনও পারি।

আমি মদ খাইনা
কিন্তু একবার পাড়ার স্পোর্টসে গো এস ইয়্যু লাইকে
মাতাল সেজে প্রাইজ পেয়েছিলাম।
আমি শাম্বুকে বুঝিয়ে পাতা খাওয়া ছাড়িয়ে দিয়েছি
শ্যামল আর তার দাদারা একটা নিরীহ পাগলকে বাঁশ পেটা করছিলো স্যার
আমি একা ওদের আটকেছি স্যার
পিন্টুকে মেরেছিও বাধ্য হয়ে।

আমি সাল মনে রাখতে পারিনা স্যার
১৭৫৭-তে পলাশি যুদ্ধ, ১৮৫৭-তে সিপাহী বিদ্রোহ আর ১৯৪৭-এ স্বাধিনতা ছাড়া আমার কিচ্ছু মনে নাই।
কোন সালে গ্রেজুয়েট হয়েছি সেটাও সার্টিফিকেট দেখে মনে পড়ে।

আমার স্যার দুটো জন্মদিন
একটা স্কুলের একটা বাড়ির
স্যার মিনিট পাঁচেকের মধ্যে আপনার ঘাড়ে হাত ছুঁইয়ে
সমস্ত টেনশান উধাও করে দিতে পারি
বাবার মাথাব্যাথা বলে আমি মালিশ করে দিই স্যার।
বাবা বলে- আমার হাতে জাদু আছে
আমার বাবা স্যার আমার মতো না, ভালো স্টুডেন্ট ছিলেন
বাবা ভালো বক্সিং করতেন
মা ক্লাস সেভেন পর্যন্ত
'এই করেছ ভালো নিঠুর হে' গানটা দারুন গায়
বাবার আফ্রিকা পুরা মুখস্ত।
আমি স্যার একবার সুকান্তর ছাড়পত্র মুখস্থ করেছিলাম
একটা প্রতিযোগীতায় নামও দিয়েছিলাম
প্রাইজ পাইনি- ভুলে গেছি কবিতাটা
খালি সুকান্তের গালে হাত দেওয়া ছবিটা আর 'নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গিকার' এই লাইন ছাড়া আর কিচ্ছু মনে নেই।

মেয়েদের সাথে কথা বলতে গেলে অস্বস্তি হয়
একটা মেয়ে রোজ দেখতাম দূর থেকে
ও বারান্দায় ঘুরে ঘুরে পড়তো
আর আমি নিচে ট্রাম রাস্তায়
একবার একটা চিঠি ফেলেছিলো উপর থেকে
পালিয়েছিলাম স্যার, ওপাড়ে আর যেতামই না

কলেজে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম টিটি খেলি
কেউ বিশ্বাস করতো না
টপ স্পিন করতে পারি, চপ করতে পারি
খুব তারাতারি শিখে ফেলতে পারি, সুযোগ পেলে-

আমি তবলাও ভালো বাজাতে পারি স্যার
বাড়িতে কিন্তু তবলা নেই
আমি ডেস্ক বাজাতে পারি আরো ভালো
সঞ্জু গান গাইলে আমাকেই ডেস্ক বাজাতে হয়

আমি গান গাইতে পারিনা স্যার
একবার পল সায়েন্সে ব্যাক পেয়েছিলাম
পরের বার ক্লিয়ার করে ফেলেছি
অবশ্য স্নিগ্ধা না থাকলে হতো না স্যার
ও-ই আমাকে নোটস লিখে দিতো
আমি তো ক্লাস-ফ্লাস বিশেষ কিছু করতাম না
চন্দ্রদাকে পনের টাকা দেওয়ায় আর নন-কলিজিয়েট হইনি ।
স্নিগ্ধা খুব ভালো মেয়ে স্যার
ওকে টিপ পড়লে দারুন লাগে
ও জানতো আমি গাঁজা খেতাম, তবুও কিছু বলেনি
আমাকে খারাপ ভাবেনি।
রজতকে, কৃষ্ণন্দুকে রোজ আমার কথা জিজ্ঞেস করতো স্যার
ইন্টার কলেজ ক্রিকেটে ও আমার খেলা দেখতে গিয়েছিলো
ওই একমাত্র মেয়ে দর্শক ছিলো সেদিন
ও ক্রিকেট কিচ্ছু বুঝেনা তবুও...
সবার ওকে ভালো লাগে স্যার।
ওকে একটা চিঠি দিয়েছিলাম
স্কুলে কখনো লেটার রাইটিং ট্রাই করিনি
প্রেসিটাই চেষ্টা করতাম
স্নিগ্ধা চিঠির উত্তর দিয়েছিলো
লিখেছিলো- আমি নাকি ভালো চিঠি লিখি
স্নিগ্ধা আমাকে কিছু বলেনি কিন্তু আমি গাঁজা ছেড়ে দিয়েছি স্যার
পল সায়েন্সে ব্যাক পাওয়ার পরেও ও আমার সঙ্গে ছিলো স্যার।
ওই আমাকে কাগজ থেকে এপয়েন্টমেন্ট এর বিজ্ঞাপন কেটে দেয়
স্নিগ্ধার জন্যে আমি স্যার আজকে দাড়ি কামিয়েছি
শার্টটা ইস্ত্রি করিয়েছি মাকে দিয়ে
সুজিতকে দিয়ে টাইয়ের নট বাঁধিয়েছি
টাইটা স্যার দাদুর।
দাদুর কাঠের আলমারিতে ছিলো
আমি স্যার তুবড়ি বানাতে পারি
হাতে রেখে চকলেট বোম বানাতে পারি
আমার এপ্লিকেশনটা .... বাবা লিখে দিয়েছে স্যার।

আমি পারবো স্যার
স্নিগ্ধা আজ বিবেকানন্দ রোডে দাড়াবে বলেছে
এখান থেকে ওখানে যাবো স্যার
ও খুব টেনশানে আছে স্যার
কিছু না বুঝতে পারলে ও সব বুঝিয়ে দেবে
ও অনেক কিছু জানে
শ্যাম বেনেগালের ল্যাটেস্ট ছবির নাম ও জানে
সমরেশ বসুর লেখা, সুনীল গাঙ্গুলির উপন্যাস ও পড়েছে স্যার
ভিক্টোরিয়া ওকম্পোর কথা ওই আমাকে বলেছে স্যার।

আমি স্যার ঘুড়ি, ক্রিকেট, গাঁজা, ডেস্কবাজানো, কবিতা, আড্ডা ছাড়া আর কিছুই পারিনা।
কিন্তু স্নিগ্ধার জন্যে সব করতে ইচ্ছে করে।
ওর জন্যে একদিন আমি দিলরুবার সামনে দুঘন্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম স্যার
ওর জন্যে আমি রাত জেগে চিঠি লিখার চেষ্টা করি স্যার
অনেক সাহস পাই স্যার
ওর জন্য অনেক কিছু জানতে পারি
শান্তি পাই, বুকের ভিতর পায়রা ওড়ার শব্দ পাই
ওর চোখের দিকে তাকালে কিসের যেন ডাক শুনতে চাই
স্নিগ্ধার জন্যে এত কিছু পারি স্যার এতো কিছু পাই স্যার
একটা চাকরি পাবোনা??

** কবিতার নামঃ ইন্টারভিউ, কবি- শিলাজিৎ মজুমদার **
কবিতার আবৃত্তি শুনি প্রথমে ইয়্যুটিউবে। এতো ভালো লাগে, এত্তো ভালো লেগেছে যে পুরোটা নিজেই টাইপ করেছি।এক বসাতে। গুগলে সার্চ করে পাইনি, তাই।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৭:১৬

ধূসর অস্তরাগ বলেছেন: কবিতাটা দারুন লাগলো ভাই। ইউটিউবে সার্চ দিয়ে দেখি পাই কিনা। ভীষণ আবৃতি শুনতে ইচ্ছে করছে। আর আপনি এত বড় কবিতা কিভাবে টাইপ করে লিখেছেন? আশ্চর্য হয়ে গেছি।

১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৪৮

আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর বলেছেন: https://www.youtube.com/watch?v=bQwJIb13FlI

২| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৭:৩০

মোঃ আমানউল্লাহ বলেছেন: আমার কবিতা পড়তে ভাল লাগেনা,
বাট,কবিতাটি দারুন লাগছে....
ধন্যবাদ

১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৪৮

আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর বলেছেন: ইয়্যুটিউবে গিয়ে আবৃত্তিটা শুনে আসুন।

লিঙ্কঃ https://www.youtube.com/watch?v=bQwJIb13FlI

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.